একটা প্রবাদ আছে, "আপনা হাত জগন্নাথ।" মানুষ তার নিজের শক্তিতেই শক্তিমান। জীবন চলার পথে কেউ উৎসাহিত করতে পারে, প্রেরণাপ্রদীপ্ত করতে পারে কিন্তু দিনশেষে নিজের কাজ নিজেকেই করতে হয় এবং সে কাজের ভাল মন্দ কর্মফল নিজেকেই ভোগ করতে হয়।জীবনে আত্মবিশ্বাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ আত্মবিশ্বাস এবং প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি মানুষের জীবনের অনেক অসাধ্যকে সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসে। নিজেকে যথাযথভাবে চিনে নিজের উপরে আত্মবিশ্বাস থাকলে আর অন্যের প্রতি নির্ভরশীল হতে হয় না। জগতে অন্যের ভরসা এবং অন্যের শক্তিতে বসে থাকার মত বোকামি আর নেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন- যদি চারিদিক অন্ধকার হয়ে জীবনের সকল আলো চলে চায়, মানুষ ভয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়, তবে বজ্রানলে বুকের পাঁজরকে জ্বালিয়ে দিতে হবে। পথে কেউ যদি না থাকে, তবে একলা হলেও চলতে হবে। নিজের অভ্যন্তরে আত্মশক্তির বজ্রানলে প্রজ্জ্বলিত হয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
"যদি আলো না ধরে,
ওরে ওরে ও অভাগা,
যদি ঝড়-বাদলে আঁধার রাতে
দুয়ার দেয় ঘরে -তবে বজ্রানলে
আপন বুকের পাঁজর জ্বালিয়ে নিয়ে একলা জ্বলো রে॥"
মনুসংহিতায় যে যে কাজ পরের উপর নির্ভরশীল, তা সযত্নে বর্জন করতে বলা হয়েছে।যে সকল কাজ নিজের আয়ত্তে এবং নিজেই করা যায়; তাই অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে করা উচিত। পরের শক্তির ভরসায় নির্ভরশীল থাকলে, লক্ষ্যে পৌছানো যায় না।উল্টো সেই কর্ম থেকে সম্মুখে বিপদ চলে আসে। তাই যে দায়িত্ব কর্তব্য যে রূপেই সামনে উপস্থিত হবে, তা সকলই আনন্দের সাথে করা প্রয়োজন।
যদ্ যৎপরবশং কর্ম তত্তদ্ যত্নেন বর্জয়েৎ।
যদ্ যদাত্মবশন্তু স্যাৎ তৎ তৎ সেবেত যত্নতঃ॥
সর্বং পরবশং দুঃখং সর্বমাত্মবশং সুখম্ ।
এতদ্বিদ্যাৎ সমাসেন লক্ষণং সুখদুঃখয়োঃ ॥
যৎকর্ম কুৰ্বতোঽস্য স্যাৎ পরিতোষোঽন্তরাত্মনঃ।
তৎ প্রযত্নেন কুর্বীত বিপরীতন্তু বর্জয়েৎ ॥
(মনুসংহিতা:৪.১৫৯-১৬১)
"যে যে কাজ পরের উপর নির্ভরশীল, তা সযত্নে বর্জন করবে। যা যা নিজের আয়ত্তে, তা যত্নসহকারে করবে।
সকল পরবশ কর্ম দুঃখজনক, নিজায়ত্ত কর্ম সুখকর। সংক্ষেপে সুখদুঃখের এই লক্ষণ জানবে।
যে কর্ম করতে মনের সন্তোষ হয়, তা সযত্নে করবে, এর বিপরীত কর্ম বর্জন করবে।"
শাস্ত্র নিজের উপরে নির্ভরশীল হতে বলেছে। কিন্তু বর্তমানে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে অন্যের উপরে নির্ভরশীলতা অত্যধিক। তারা জাতিগতভাবে সচেতন নয়। রাজনৈতিকভাবে একদমই নয়। তাদের স্বজাতীয় গৌরব সম্পর্কে অধিকাংশই অজ্ঞ। তাই দেখা যায়, ইতিহাসে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি বারবার করেছে।কোন জাতির যদি রাজনৈতিক অজ্ঞতা থাকে, তবে সেই অজ্ঞতার সুযোগ অন্যরা নিবেই। এটাই স্বাভাবিক। অন্যান্যদের দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমান প্ররোচনায় হিন্দু সম্প্রদায় আজ সামান্য বিষয় নিয়েও আত্মকলহে লিপ্ত।বিষয়টি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।