আমাদের দেহের অভ্যন্তরে সুষুম্না নাড়ীর পথে অতি সূক্ষ্ম পদ্মাকৃতিমূলাধার, স্বাধিষ্ঠান, মণিপুর, অনাহত, বিশুদ্ধ ও আজ্ঞা-ছয়টি চক্র আছে, যাকে ষটচক্র বলে।সকলের উর্দ্ধে আছে সহস্র পাপড়ির সহস্রার পদ্ম। সাধক যখন মুক্তি লাভ করে তখন এই সহস্র পাপড়ির পদ্মটির একটি একটি পাপড়ি প্রস্ফুটিত হচ্ছে এমন একটি গভীর উপলব্ধি হয়। আমাদের শরীরে সূক্ষ্ম সুতার মত প্রাণশক্তির মূল কুলকুণ্ডলিনী শক্তি ব্রহ্মদ্বারের মুখ আবৃত করে জননেন্দ্রিয় ও গুহ্যদেশের মধ্যবর্তী কুন্দস্থানে সর্বদা রয়েছে। এ শক্তিকে একটি ঘুমন্ত সাপের সাথে তুলনা করা হয়, এ স্থানকে বলে মূলাধারচক্র। এ চক্রটি হল সুষুম্না নাড়ীর একটি গ্রন্থি। শাস্ত্রকারদের মতে মেরুদণ্ডের বামদিকে ইড়া, মধ্যে সুষুম্না ও ডানদিকে পিঙ্গলা নাড়ী বিরাজমান। আমাদের প্রাণবায়ু ইড়া-পিঙ্গলা নাড়ীর মধ্যে দিয়ে চক্রাকারে সতত আবর্তিত হচ্ছে। সুষুম্না একটি অতি সূক্ষ্ম, জ্যোতির্ময়, সূত্রাকার ও পথ, মেরুদণ্ডের মধ্যে যার সুক্ষ্ম অবস্থান। সুষুম্না নাড়ীর এ প্রাণময় পথে ছয়টি স্থানে ছয়টি চক্র বিরাজ করছে, যাকে ষটচক্র বলা হয়।এ চক্রগুলো হল:
১.মূলাধার চক্র : এ চক্র থেকেই সাধকের কুলকুণ্ডলিনী শাক্তি জাগ্রত হয়ে পথচলা শুরু করে। জননেন্দ্রিয় ও গুহ্যদেশের মাঝখানে এর অবস্থান। এ স্থান থেকেই ইড়া, পিঙ্গলা, সুষুম্না, কুহূ, শঙ্খিনী প্রভৃতি প্রধান প্রধান নাড়িগুলো উৎপন্ন হয়। শরীরের পদ্মসূত্রের মতো সূক্ষ্ম আদ্যাশক্তি ও প্রাণশক্তির মূল কুলকুণ্ডলিনী শক্তি এ মূলাধার চক্রেই সুপ্ত থাকে। যোগীরা এই কুণ্ডলিনী শক্তিকে জাগরিত করে সিদ্ধিলাভ করার চেষ্টা করে থাকেন। এ চক্রে পৃথিবীতত্ত্বের প্রাধান্য।
২. স্বাধিষ্ঠান চক্র : এর অবস্থান নাভিচক্রের নিচে এবং লিঙ্গের মূলস্থানে। এরমধ্যে বরুণতত্ত্বের প্রাধান্য।
৩.মণিপুর চক্র : নাভিদেশে এ চক্রের অবস্থান। এ চক্রে অসীম শক্তিশালী তেজ অবস্থান করে, তাই এতে অগ্নিতত্ত্বের প্রাধাণ্য। এই তেজকে মণির সাথে কল্পনা করে এর নামকরণ করা হয়েছে মণিপুরচক্র।
৪.অনাহত চক্র : হৃদপিণ্ড বুকে এই চক্রটি অবস্থিত। এতে বায়ুতত্ত্বের প্রাধান্য। এ চক্রের উত্তরণে সাধকরা অনাহত নাদ শুনতে পায়। রক্তিম বর্ণের বৃহৎ অনাহত চক্রের স্পর্শে ভালবাসার বৃদ্ধি ঘটে।
৫.বিশুদ্ধচক্র : এর অবস্থান মেরদণ্ড সংলগ্ন কণ্ঠমূল বরাবর। এ চক্রের অবস্থানে সাধক শুদ্ধ হয়। এতে আকাশতত্ত্বের প্রাধান্য।
৬.আজ্ঞাচক্র : এ চক্রটি দু'ভ্রূরুর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। এ চক্র থেকে রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ ইত্যাদির অনুভূতি নিয়ন্ত্রিত হয়। এ চক্রতেই জ্যোতি দর্শন হয়ে সাধকের অনির্বচনীয় আজ্ঞা বা নির্দেশ আসে। এ কারণে এর নাম আজ্ঞাচক্র।এখানে বায়ুক্রিয়ার অন্ত হয়ে ইড়া পিঙ্গলা, সুষুম্না নাড়ির মিলন হয়, তখন তাকে সাধকের ত্রিবেণী সঙ্গম বলে। এ স্তরে যোগী প্রকৃতির বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যায়।
কুলকুণ্ডলিনী শক্তি জাগরিত হওয়ার প্রত্যেকের লক্ষণ এক নয়। অধিকারী ভেদে আলাদা আলাদা। কুলকুণ্ডলিনী শক্তি যেহেতু অচিন্ত্য। তাই এ শক্তি সাধকের দেহে কিছুটা প্রস্ফুটিত হয়ে গেলে এর প্রকাশও বিবিধ প্রকারের হয়। এই শক্তি জাগরিত হতে থাকলে বিষামৃত অনুভূতি হয়। যেমন অমৃতের মত আনন্দ হয়, তেমনি যুগপৎ জগতের কিছুকিছু বিষয় বিষবৎ অনুভব হয়। এই বিষয়ে আমি আমার প্রত্যক্ষ একটি কুলকুণ্ডলিনী সামান্যতম জাগরিত হওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছি। অভিজ্ঞতাটি একটি যুবকের।প্রথম প্রথম সেই যুবকের কাছে আর পাঁচটা মানুষের মতই জাতি,বর্ণ,ভাষা ভেদ ছিল। মানুষে পশুতে ভেদ ছিল। মানুষের মধ্যে আবার দেহানুসারে শিশু, তরুণ, যুবক, বৃদ্ধ এবং নারীপুরুষ বিবিধ ভেদ ছিল।কিন্তু আস্তে আস্তে যখন সে সুগভীর যোগের মাধ্যমে আধ্যাত্মিকতায় প্রবেশ করল; তখন তার এ সকল ভেদরেখা নাশ হতে থাকল। মিলিয়ে একাকার হতে শুরু করলো জাতি,বর্ণ,ভাষার সকল ভেদরেখা। সে সবার মাঝে এবং আশেপাশে শুধু নিজেকেই দেখতে পেল। শুক্ল যজুর্বেদ সংহিতাতেও ঠিক এমন সমদর্শী ভাব বর্ণিত হয়েছে।
যস্তু সর্বাণি ভূতান্যাত্মন্নেবানু পশ্যতি।
সর্বভূতেষু চাত্মানং ততো ন বিচিকিৎসতি।।
(শুক্ল যজুর্বেদ সংহিতা: ৪০.৬)
"যে ব্যক্তি সমস্ত জীবেই ঈশ্বরে অবস্থিত- এরূপ দর্শন করেন, অনুভব করেন এবং সমস্ত জীবের মধ্যে ঈশ্বরের বাস দেখেন তখন তিনি কারও প্রতি বিদ্বেষ করেন না।"
নিয়মিত যথাসম্ভব ধ্যান শুরু করে সে।ঈশ্বরকে জানার এবং উপলব্ধি করার তীব্র এক আকাঙ্ক্ষা করে সে। কিসের যেন অস্বস্তি, যন্ত্রণা দেহের অভ্যন্তরে। প্রায় সর্বদা "ওঁ নমঃ শিবায়" মন্ত্র জপ করতে করতে তার চোখে অশ্রুসিক্ত হয়ে যেত। সে উপলব্ধি করলো, তার দেহ ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। সে শাস্ত্রপাঠে জানতে পারে, জগতের সকল আধার আদিপরাশক্তি বা আদ্যাশক্তি। সেই আদ্যাশক্তি থেকেই জগতের সৃষ্টি,স্থিতি এবং লয়। জগতের পুরুষ এবং প্রকৃতিরূপ শিবশক্তি অভেদ। সেই অভেদ এক শক্তিকে মাতৃরূপে অনুধাবন করে মনকে সে ইষ্টে কেন্দ্রীভূত করে। তার সমস্ত প্রচেষ্টা দিয়ে সে সেই অচিন্ত্য শক্তিকে 'মা' নামে উপাসনা শুরু করে। মন-মুখ সর্বদাই মা নামে ডাকতে ডাকতে ভাবে সে বিভোর হয়ে যেতে থাকে। একবার তার মনে হতে থাকে, "আমার তো পরিবার পরিজন আছে, তাদের প্রতি আমার দায়িত্ব কর্তব্য আছে"। আবার পরক্ষণেই তার মুমুক্ষত্ব বুদ্ধি বলে, "আমি আনন্দে আছি, আমি সর্বদা মায়ের সাথেই যুক্ত থাকতে চাই"। তখন তার কাছে জগতের সমস্তই জগন্মাতা চিন্ময়ী মাকালী রূপে অনুভূত হতে থাকল। ঘরের দেয়াল, পড়ার টেবিল, ল্যাপটপ সহ দৃশ্যমান সকলই সবকিছুই মাতৃরূপে বোধ হতে থাকল। নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ তার কমে যেতে থাকল।সে তখন আর নিজের মাঝে, নিজের ইচ্ছানুসারে থাকতে পারছিল না। জগতের সকল কিছুই তার কাছে মার্তৃরূপে ধরা দিচ্ছিল।
এরই ধারাবাহিকতায় একদিন এ মাতৃভাবটা তীব্র হয়ে ভর উঠার মত করে উন্মত্ততা তৈরি করে দেহে।এভাবে অনেকক্ষণ পরে সে অনুভব করে তার একটু ঘুমানো প্রয়োজন। সে ঘুমানোর চেষ্টা করে। সেখানেও তার মনে এবং মুখে মায়ের স্মরণ চলতে থাকে।এরপরে বিছানায় আস্তে আস্তে শরীরটা উন্মত্ততা পরিত্যাগ করে স্বাভাবিক হচ্ছিল। তখন মনে অনুভব হতে থাকে, তার পিছনে কেউ দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে। সে আতঙ্কিত বারবার পেছনে তাকিয়েও কাউকে দেখতে পায় না। সে চোখ বন্ধ করেই জগন্মাতাকে ডাকছিল। এমনি অবস্থায় অকস্মাৎ সে সময় অনুভব করল, তার জননাঙ্গে বিদ্যুতের মত কম্পন অনুভব করলো। তার মনে হল, লিঙ্গ অণ্ডকোষ ও পায়ুপথের মাঝ বরাবর স্থান; যেই স্থানকে শাস্ত্রে মূলাধার বা সকল শক্তির আধার বলা বলা হয় সেই স্থানে হঠাৎ একটি ঘুমন্ত সাপ জেগে উঠে নড়াচড়া শুরু করেছে। একবার সে চোখখুলে দেখতে চাইলো, পরক্ষণেই তার ভেতর থেকে বললো, "চোখ খুলিশ না, নড়াচড়া করিস না, চুপ করে থাক"। এক চৌম্বকীয় শক্তি লিঙ্গ পায়ুপথের মাঝ বরাবর স্থান, মূলাধার থেকে প্রবেশ করলো বলে বোধ হল। এই শক্তির জাগরণে তার সম্পূর্ণ শরীরটিতে মোবাইলে ভাইব্রেশনের মত কম্পন শুরু হয়ে আস্তেধীরে তা সারা শরীরে সঞ্চারিত হল। চোখ বন্ধ থাকায়, স্বপ্নের মত অবিশ্বাস্য বোধ হতে থাকল। বিষয়টি স্বপ্ন কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য সে শরীরকে নাড়াচাড়া দিতে থাকে।ডান হাত তোলার চেষ্টা করে অনেক কষ্টে সামান্য তুলতে পারে। সম্পূর্ণ শরীর তার নিজের নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যায়। এভাবে কয়েক মিনিট থাকার পরে তার শরীরের কম্পনটি হঠাৎ করে কিছুটা থেমে যায়। যুবকটি চোখ খুলে এদিক ওইদিক তাকিয়ে কিছুই দেখতে পায় না। তখন গভীর রাত্রি। তার গা ছেড়ে দিয়ে প্রচণ্ড ঘুম চলে আসে, সে ঘুমিয়ে পরে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে সে অনুভব করে তার কপালের দুইভ্রুর মাঝখানে যোগশাস্ত্রে যে স্থানটিকে আজ্ঞাচক্র বলে; সেই স্থানটির ভিতর থেকে কিছু একটা নিঃসৃত হচ্ছে। যা বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে না এবং ভাষায় প্রকাশ করা যাচ্ছে না। সেই আজ্ঞাচক্র থেকে রসের নিঃসরণে তার প্রচণ্ড মাত্রায় সুখ অনুভব হতে থাকল। সেই সুখের অনুভূতিটি অভূতপূর্ব, অচিন্ত্য। এমন বিরল অনুভূতি জীবনেও কখনও অনুভব হয়নি তার। এরই ধারাবাহিকতা একদিন সে অনুভব করে, আমি আশেপাশের সকল কিছুকেই ভাল লাগছে। মানুষ, বিড়াল, গাছপালা সবকিছুই মধুময় লাগছে।ঋগ্বেদের মধুমতী সূক্তের মত। তার ভেতরের কুলকুণ্ডলিনী শক্তির মধু জাগরিত হয়ে উঠছে।
মধু বাতা ঋতায়তে মধু ক্ষরন্তি সিন্ধবঃ।
মাধ্বীর্ন সন্ত্বোষধীঃ৷।
মধু নক্তমুতােষসাে মধুমৎ পার্থিবং রজঃ।
মধু দ্যৌরস্তু নঃ পিতা ৷৷
মধুমান্নো বনস্পতির্মধুমাঁ অস্তু সূর্য্যঃ।
মাধ্বীর্গাবাে ভবন্তু নঃ।।
(ঋগ্বেদ সংহিতা:১.৯০.৬-৮)
"সত্যময় পুরুষের জন্য বায়ু ও নদীসমূহ মধু বর্ষণ করছে। আমাদের প্রতি ওষধী সমূহ মধুময় হোক।
আমাদের রাত্রি ও ঊষাকাল মধুময় হোক। পৃথিবীর ধূলিকণা মধুময় হোক, বর্ষণশীল পুষ্টিকারী দ্যুলােক মধুময় হোক।বনস্পতি আমাদের প্রতি মধুর হোক, সূর্য মধুর হোক, ধেনুসকল মধুর হোক।"
এভাবেই কেটে যায় প্রায় একমাস। এরপরে দিনেদিনে তার ধ্যানের তীব্রতা বাড়তে থাকে। ঈশ্বরের বাহ্যিক উপাসনার থেকে সে জগত প্রকৃতিতেই ঈশ্বরের উপস্থিতি অনুভব করতে থাকে। সর্বদা আনন্দ অনুভব হতে থাকে তার।সে নির্ভীক হয়ে যায়, ভয়ের সম্পূর্ণ মৃত্যু হয়ে যায় তার দেহমনের মধ্য থেকে। আস্তে আস্তে হঠাৎ একদিন সে কপালে দুই ভ্রুর মাঝে আজ্ঞাচক্রে প্রায় সর্বদাই একটি চাপ অনুভব করতে থাকে।ধ্যানের সময়ে বিষয়টি বেশি হয়। সর্বদা তার ধ্যান করতেই ভাল লাগে, ধ্যান থেকে উঠার পরে তার দেহ নেশাগ্রস্থ মদ্যপদের মত টালমাটাল হয়ে যায়। এরপরে সে সবসময়ই চোখ খোলা অবস্থাতেই ধ্যান শুরু করে।
ধীরেধীরে তার জগতের সবকিছুকে একটি একক শক্তির বৈচিত্র্যময় প্রকাশ হিসেবে অনুভূত হতে থাকে। সে মানুষ, পশু সবকিছুকেই শক্তি হিসেবে দেখতে থাকে। জগতের স্বতন্ত্রতা গুলিয়ে গিয়ে একাকার হয়ে যেতে থাকে। হৃদয়ের ভিতর থেকে তার "আমি এবং আমার ভাব" প্রায় শূন্য হয়ে যেতে থাকে। একদিন একটি মাঠে হেটে বেড়াতে তার মনে হচ্ছিল, এই জগত, এই গাছপালা, বায়ু, মানুষ, কুকুর এদের সাথেই তার কোন একটি নিবিড় সম্পর্ক আছে। এরপর থেকে সে জগতের জীব এবং বস্তুর প্রতি তীব্রভাবে করুণা, প্রেম, ভালোবাসা অনুভব করতে শুরু করে। সবাইকেই বুকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করে। তার বুকের অনাহত চক্র তীব্রভাবে ভালবাসার আলিঙ্গন কামনা করতে থাকে। তার বোধ হয়, একের ভাব বা সমভাব সেটাই ভালোবাসা, সেটাই প্রেম। সে সম্পূর্ণ সমর্পিত হয় জগতের নিয়ন্তা শক্তির কাছে। প্রত্যেকটি জীবের মধ্যেই যেহেতু ব্রহ্মের উপস্থিতি, তাই নিজেকে জানার এক প্রচণ্ড আকাঙ্ক্ষা উৎপন্ন হয় তার হৃদয়ে। আমি কে? কি আবার অস্তিত্ব? নিজেকেই জানার ইচ্ছার আরেকটি কারণ হল, আমার মাধ্যমেই জগৎ আছে; তাই আমি বলতে প্রকৃতপক্ষে কি? এই জীবন সত্যিকার অর্থে কি, তা জানার এক ব্যাকুল ইচ্ছা শুরু হয় মনে।হয়ত মরে যাওয়া সহজ কিন্তু আমিত্ব ভাবকে সম্পূর্ণ আত্মাহুতি দেয়া বা আমিত্বকে সম্পূর্ণ সমর্পিত করে দেয়াটা অত্যন্ত কঠিনসাধ্য বিষয়। সে বুঝতে পারে ত্যাগের প্রকৃত অর্থ।কোন কিছু ছেড়ে দেওয়া বা দান করাই ত্যাগ নয়। ত্যাগ মানুষকে উচ্চস্তরে উন্নীত করে। তাই উপনিষদ বলেছে, অন্যের ধনে লোভ করে ত্যাগের সাথে ভোগ করতে।
ঈশাবাস্যমিদং সর্বং যৎ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ ৷
তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্যস্বিদ্ ধনম্ ৷৷
"এই গতিশীল বিশ্বে যাহা কিছু চলমান বস্তু আছে তা ঈশ্বরের বাসের নিমিত্ত মনে করবে। ঈশ্বর দ্বারা জগতের বস্তুসমূহ আচ্ছাদিত মনে করবে। ত্যাগের সহত ভোগ করবে; কারো ধনে লোভ করবে না।"
মূলাধারচক্র থেকে আজ্ঞাচক্র এবং পরিশেষে সহস্রারপদ্মে সুষুম্না নাড়ীর মধ্যে চলাচলকারী ঊর্ধ্বগামী কুলকুণ্ডলিনী শক্তি যথাযথ প্রক্রিয়ার জাগরিত হতে হয়। তা না হলে এই কুলকুণ্ডলিনী শক্তির সাধন ভয়ংকর বিপদজনক হতে পারে। শরীরের অভ্যন্তরীণ এ অতুল্য শক্তি একবার জাগরিত হলে, যদি তা নিয়ন্ত্রিত করা না যায়; তবে সাধকের ব্যক্তিজীবন, পারিবারিকজীবন, সামাজিকজীবন প্রায় সম্পূর্ণ এলোমেলো হয়ে যায়।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।