-->

ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

"যাবজ্জননং তাবন্মরণং"; জীবন পদ্মপাতায় জলের মত।

"যাবজ্জননং তাবন্মরণং";  জীবন পদ্মপাতায় জলের মত  মানুষের স্বপ্ন, মানুষের কর্ম,মানুষের কীর্তিই মানুষকে অমর করে তোলে। মানুষের জীবন পদ্মপাতায় রাখা জলের মত,  সর্বদা চঞ্চল এবং ক্ষণস্থায়ী। দুর্লভতম মনুষ্য জন্ম পেয়েও জগতের অধিকাংশ মানুষ মুক্তির পথে অগ্রসর না। কেবলমাত্র নিজের শারীরিক মানসিক সুখের নামে অপ্রয়োজনীয় নিরবচ্ছিন্ন ভোগের লিপ্ত হয়। জীবনে ভোগের প্রয়োজন আছে। কিন্তু ভোগটি হতে হতে হবে ত্যাগকে সাথে নিয়ে। ত্যাগবিহীন অতিরিক্ত ভোগ মানুষের ভোগের আকাঙ্ক্ষাকে দিনেদিনে বাড়িয়ে দেয়। জগতে প্রতি ক্ষণে ক্ষণে অসংখ্য প্রাণী মৃত্যুবরণ করছে। আবার প্রত্যহ জন্মগ্রহণ করছে। এ জন্মৃত্যুর চক্রেই আবর্তিত হচ্ছে এ অনিত্য সংসারে। শ্রীমদ্ভগবদগীতায় এ জন্মমৃত্যুর আবর্তন করা সংসারকে অনিত্য দুঃখের আলয় নামে অবিহিত করা হয়েছে। যারা ভগবানকে লাভ করেন, সেই মহাত্মাগণই সম্পূর্ণভাবে এ দুঃখের আলয় সংসারের জন্মমৃত্যুর আবর্তন থেকে মুক্ত হয়ে যান। মামুপেত্য পুনৰ্জ্জন্ম দুঃখালয়মশাশ্বতম্।  নাপ্নুবন্তি মহাত্মানঃ সংসিদ্ধিং পরমাং গতাঃ।।  (শ্রীমদ্ভগবদগীতা:৮.১৫) "পরম সিদ্ধি প্রাপ্ত মহাত্মগণ আমাকে পাওয়ার পর, এই দুঃখপূর্ণ অনিত্য সংসারে আর জন্মগ্রহণ করেন না। " যমালয়ে যাচ্ছে, এ দেখেও আশেপাশের  অবশিষ্ট প্রাণীরা নিজের চিরস্থায়িত্বের আশা করে সকল ভোগ্যবস্তুকে চিরকাল আকরে থাকতে চায়। কিন্তু তারা না যে, জগতের কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয়। মুক্তিকে বাদ দিয়ে এ সংসার নিয়েই সে মুগ্ধ হয়ে আছে।  অহন্যহনি ভূতানি গচ্ছন্তি যমমন্দিরম্ । শেষাঃ স্থিরত্বমিচ্ছন্তি কিমাশ্চর্য্যমতঃ পরম্ ॥ (মহাভারত: বনপর্ব, ২৬৭.৮৩) "জগতের সকল প্রাণী প্রত্যহই যমালয়ে যাচ্ছে, এ দেখেও অবশিষ্ট প্রাণীরা চিরস্থায়িত্বের আশা করে ; এর থেকে আশ্চর্যজনক আর কিছুই নেই।" অনিত্য মানুষের জীবনের একটি চরম সত্য। এরপরেও মানুষ পদ্মপাতার টলমলে জীবনকে হাতে নিয়েও আমিত্বের সর্বক্ষণ বড়াই করে বেড়ায়। মানুষের এ ক্ষণিকের আমিত্বে ঈশ্বর মৃদু হাসেন। বিষয়টি শ্রীরামকৃষ্ণকথামৃতের দ্বিতীয় ভাগের দশম খণ্ডে অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় বর্ণিত হয়েছে। ২৮ নভেম্বর ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে কেশবসেনের সাথে কথোপকথনে অনিত্য মানুষের আমিত্ব প্রসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেন: “ঈশ্বর দুইবার হাসেন। একবার হাসেন যখন দুই ভাই জমি বখরা করে; আর দড়ি মেপে বলে, ‘এ-দিক্‌টা আমার, ও-দিক্‌টা তোমার’! ঈশ্বর এই ভেবে হাসেন, আমার জগৎ, তার খানিকটা মাটি নিয়ে করছে এ-দিক্‌টা আমার ও-দিক্‌টা তোমার! “ঈশ্বর আর-একবার হাসেন। ছেলের অসুখ সঙ্কটাপন্ন। মা কাঁদছে। বৈদ্য এসে বলছে, ‘ভয় কি মা, আমি ভাল করব। ’বৈদ্য জানে না ঈশ্বর যদি মারেন, কার সাধ্য রক্ষা করে।”  মানবজীবন পদ্মপাতার জলের মত অত্যন্ত চঞ্চল। এরপরেও আমরা ক্ষণস্থায়ী চঞ্চল জীবনকে আমরা আমাদের মত করে দীর্ঘস্থায়ী করার চেষ্টা করে অনন্তকাল বেঁচে থাকতে চাই। কিন্তু হয়ত অনেকেই জানি না কি করলে অনন্তকাল বেঁচে অমর হতে পারব। মানুষের স্বপ্ন, মানুষের কর্ম,মানুষের কীর্তিই মানুষকে অমর করে তোলে। চঞ্চলজীবনে ক্ষণকালের জন্যেও যদি প্রকৃত সজ্জনসঙ্গ বা সাধুসংসর্গ হয় তবে তা মুক্তির নৌকাস্বরূপ হতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য জগতের অধিকাংশ মানুষের সঙ্গই সজ্জনসঙ্গ নয়; তাদের সঙ্গ পরনিন্দা, পরচর্চা এবং আত্মকেন্দ্রিকতা। নলিনীদলগতজলমতিতরলং তদ্বজ্জীবনমতিশয় চপলম্। ক্ষণমপি সজ্জনসঙ্গতিরেকা ভবতি ভবার্ণবতরণে নৌকা।। (মোহমুদগর :৪) "এ মানবজীবন পদ্মপাতার জলের মত অত্যন্ত চঞ্চল, এ চঞ্চলজীবনে ক্ষণকালের জন্যেও যদি প্রকৃত সাধুসংসর্গ হয় তবে তাহাই হয় এ ভবসাগর পারের একমাত্র নৌকাস্বরূপ।" বেদান্তের বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে, জন্ম হলেই মৃত্যু হবে এবং প্রত্যেকবার মৃত্যুর পরে পুনরায় জন্ম হবে। জীব যতদিন মুক্ত না হয়, তার জন্মমৃত্যুর এই চক্র চলতেই থাকে। মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত অনন্ত মায়ের গর্ভেই বারংবার জন্ম নিতে হবে। জীবের চূড়ান্ত লক্ষ্য যে মুক্তি, সেই মুক্তিকে বাদ দিয়ে আমরা ভ্রমের বশে এ সংসার নিয়েই অহেতুক মুগ্ধ হয়ে আছি। যাবজ্জননং তাবন্মরণং তাবজ্জননীজঠরে শয়নম্। ইতি সংসারে স্ফুটতরদোষঃ  কথমিহ মানব তব সন্তোষঃ।। (মোহমুদগর :৫) "জন্ম হলেই মৃত্যু হবে এবং প্রত্যেকবার মৃত্যুর পরে আবার জন্ম নিয়ে বারংবার জননীজঠরে শয়ন করতে হবে; মুক্তির আগে পর্যন্ত এ সংসারের এটাই একমাত্র দৃশ্যমান দোষ। তাই হে মানব মুক্তিকে বাদ দিয়ে এ সংসার নিয়েই কেন অহেতুক এতটা মুগ্ধ হয়ে আছো?" বাংলা কবিতায় আধুনিকতার যিনি রূপকার, সেই মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর 'বঙ্গভূমির প্রতি' কবিতায় মানুষের অনিত্য জীবন সম্পর্কে বলেছেন: "জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে, চিরস্থির কবে নীর, হায় রে, জীবন-নদে?" অনিত্য, চঞ্চল, ক্ষণিকের এ জীবনে মৃত্যু অবধারিত।  জন্মগ্রহণ করলে মৃত্যুবরণ করতেই হয়। তাই মৃত্যুকে ভয় না পেয়ে নির্ভীক চিত্তে অমৃতের পথে এগিয়ে যেতে হবে।  কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী  সহকারী অধ্যাপক,  সংস্কৃত বিভাগ,  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
মানুষের স্বপ্ন, মানুষের কর্ম,মানুষের কীর্তিই মানুষকে অমর করে তোলে। মানুষের জীবন পদ্মপাতায় রাখা জলের মত, সর্বদা চঞ্চল এবং ক্ষণস্থায়ী। দুর্লভতম মনুষ্য জন্ম পেয়েও জগতের অধিকাংশ মানুষ মুক্তির পথে অগ্রসর না। কেবলমাত্র নিজের শারীরিক মানসিক সুখের নামে অপ্রয়োজনীয় নিরবচ্ছিন্ন ভোগের লিপ্ত হয়। জীবনে ভোগের প্রয়োজন আছে। কিন্তু ভোগটি হতে হতে হবে ত্যাগকে সাথে নিয়ে। ত্যাগবিহীন অতিরিক্ত ভোগ মানুষের ভোগের আকাঙ্ক্ষাকে দিনেদিনে বাড়িয়ে দেয়। জগতে প্রতি ক্ষণে ক্ষণে অসংখ্য প্রাণী মৃত্যুবরণ করছে। আবার প্রত্যহ জন্মগ্রহণ করছে। এ জন্মৃত্যুর চক্রেই আবর্তিত হচ্ছে এ অনিত্য সংসারে। শ্রীমদ্ভগবদগীতায় এ জন্মমৃত্যুর আবর্তন করা সংসারকে অনিত্য দুঃখের আলয় নামে অবিহিত করা হয়েছে। যারা ভগবানকে লাভ করেন, সেই মহাত্মাগণই সম্পূর্ণভাবে এ দুঃখের আলয় সংসারের জন্মমৃত্যুর আবর্তন থেকে মুক্ত হয়ে যান।
মামুপেত্য পুনৰ্জ্জন্ম দুঃখালয়মশাশ্বতম্।
নাপ্নুবন্তি মহাত্মানঃ সংসিদ্ধিং পরমাং গতাঃ।।
(শ্রীমদ্ভগবদগীতা:৮.১৫)
"পরম সিদ্ধি প্রাপ্ত মহাত্মগণ আমাকে পাওয়ার পর, এই দুঃখপূর্ণ অনিত্য সংসারে আর জন্মগ্রহণ করেন না। "
যমালয়ে যাচ্ছে, এ দেখেও আশেপাশের অবশিষ্ট প্রাণীরা নিজের চিরস্থায়িত্বের আশা করে সকল ভোগ্যবস্তুকে চিরকাল আকরে থাকতে চায়। কিন্তু তারা না যে, জগতের কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয়। মুক্তিকে বাদ দিয়ে এ সংসার নিয়েই সে মুগ্ধ হয়ে আছে।
অহন্যহনি ভূতানি গচ্ছন্তি যমমন্দিরম্ ।
শেষাঃ স্থিরত্বমিচ্ছন্তি কিমাশ্চর্য্যমতঃ পরম্ ॥
(মহাভারত: বনপর্ব, ২৬৭.৮৩)
"জগতের সকল প্রাণী প্রত্যহই যমালয়ে যাচ্ছে, এ দেখেও অবশিষ্ট প্রাণীরা চিরস্থায়িত্বের আশা করে ; এর থেকে আশ্চর্যজনক আর কিছুই নেই।"
অনিত্য মানুষের জীবনের একটি চরম সত্য। এরপরেও মানুষ পদ্মপাতার টলমলে জীবনকে হাতে নিয়েও আমিত্বের সর্বক্ষণ বড়াই করে বেড়ায়। মানুষের এ ক্ষণিকের আমিত্বে ঈশ্বর মৃদু হাসেন। বিষয়টি শ্রীরামকৃষ্ণকথামৃতের দ্বিতীয় ভাগের দশম খণ্ডে অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় বর্ণিত হয়েছে। ২৮ নভেম্বর ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে কেশবসেনের সাথে কথোপকথনে অনিত্য মানুষের আমিত্ব প্রসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেন:
“ঈশ্বর দুইবার হাসেন। একবার হাসেন যখন দুই ভাই জমি বখরা করে; আর দড়ি মেপে বলে, ‘এ-দিক্‌টা আমার, ও-দিক্‌টা তোমার’! ঈশ্বর এই ভেবে হাসেন, আমার জগৎ, তার খানিকটা মাটি নিয়ে করছে এ-দিক্‌টা আমার ও-দিক্‌টা তোমার!
“ঈশ্বর আর-একবার হাসেন। ছেলের অসুখ সঙ্কটাপন্ন। মা কাঁদছে। বৈদ্য এসে বলছে, ‘ভয় কি মা, আমি ভাল করব। ’বৈদ্য জানে না ঈশ্বর যদি মারেন, কার সাধ্য রক্ষা করে।”
মানবজীবন পদ্মপাতার জলের মত অত্যন্ত চঞ্চল। এরপরেও আমরা ক্ষণস্থায়ী চঞ্চল জীবনকে আমরা আমাদের মত করে দীর্ঘস্থায়ী করার চেষ্টা করে অনন্তকাল বেঁচে থাকতে চাই। কিন্তু হয়ত অনেকেই জানি না কি করলে অনন্তকাল বেঁচে অমর হতে পারব। মানুষের স্বপ্ন, মানুষের কর্ম,মানুষের কীর্তিই মানুষকে অমর করে তোলে। চঞ্চলজীবনে ক্ষণকালের জন্যেও যদি প্রকৃত সজ্জনসঙ্গ বা সাধুসংসর্গ হয় তবে তা মুক্তির নৌকাস্বরূপ হতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য জগতের অধিকাংশ মানুষের সঙ্গই সজ্জনসঙ্গ নয়; তাদের সঙ্গ পরনিন্দা, পরচর্চা এবং আত্মকেন্দ্রিকতা।
নলিনীদলগতজলমতিতরলং
তদ্বজ্জীবনমতিশয় চপলম্।
ক্ষণমপি সজ্জনসঙ্গতিরেকা
ভবতি ভবার্ণবতরণে নৌকা।।
(মোহমুদগর :৪)
"এ মানবজীবন পদ্মপাতার জলের মত অত্যন্ত চঞ্চল, এ চঞ্চলজীবনে ক্ষণকালের জন্যেও যদি প্রকৃত সাধুসংসর্গ হয় তবে তাহাই হয় এ ভবসাগর পারের একমাত্র নৌকাস্বরূপ।"
বেদান্তের বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে, জন্ম হলেই মৃত্যু হবে এবং প্রত্যেকবার মৃত্যুর পরে পুনরায় জন্ম হবে। জীব যতদিন মুক্ত না হয়, তার জন্মমৃত্যুর এই চক্র চলতেই থাকে। মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত অনন্ত মায়ের গর্ভেই বারংবার জন্ম নিতে হবে। জীবের চূড়ান্ত লক্ষ্য যে মুক্তি, সেই মুক্তিকে বাদ দিয়ে আমরা ভ্রমের বশে এ সংসার নিয়েই অহেতুক মুগ্ধ হয়ে আছি।
যাবজ্জননং তাবন্মরণং
তাবজ্জননীজঠরে শয়নম্।
ইতি সংসারে স্ফুটতরদোষঃ
কথমিহ মানব তব সন্তোষঃ।।
(মোহমুদগর :৫)
"জন্ম হলেই মৃত্যু হবে এবং প্রত্যেকবার মৃত্যুর পরে আবার জন্ম নিয়ে বারংবার জননীজঠরে শয়ন করতে হবে; মুক্তির আগে পর্যন্ত এ সংসারের এটাই একমাত্র দৃশ্যমান দোষ। তাই হে মানব মুক্তিকে বাদ দিয়ে এ সংসার নিয়েই কেন অহেতুক এতটা মুগ্ধ হয়ে আছো?"
বাংলা কবিতায় আধুনিকতার যিনি রূপকার, সেই মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর 'বঙ্গভূমির প্রতি' কবিতায় মানুষের অনিত্য জীবন সম্পর্কে বলেছেন:
"জন্মিলে মরিতে হবে,
অমর কে কোথা কবে,
চিরস্থির কবে নীর, হায় রে, জীবন-নদে?"
অনিত্য, চঞ্চল, ক্ষণিকের এ জীবনে মৃত্যু অবধারিত। জন্মগ্রহণ করলে মৃত্যুবরণ করতেই হয়। তাই মৃত্যুকে ভয় না পেয়ে নির্ভীক চিত্তে অমৃতের পথে এগিয়ে যেতে হবে।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।

মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁