-->

ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

"যোগশ্চিত্তবৃত্তি নিরোধঃ"; যোগ সাধককে যুক্ত করে ।

"যোগশ্চিত্তবৃত্তি নিরোধঃ";  যোগ সাধককে যুক্ত করে  মহর্ষি পতঞ্জলির যোগসূত্রের শুরুতেই যোগ বিষয়ক বলতে গিয়ে মহর্ষি পতঞ্জলি যোগের সংজ্ঞায় বলেছেন, যোগ হলো চিত্তবৃত্তির নিরোধ। অর্থাৎ যোগ শব্দের অর্থ চিত্তবৃত্তির নিরোধ করে পরমেশ্বরের সাথে যুক্ত হওয়া।  অথ যোগানুশাসনম্। যোগশ্চিত্তবৃত্তি নিরোধঃ। (যোগসূত্র : সমাধিপাদ, ১-২) সমাধিপাদে জগতের সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের গুণের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। ঈশ্বরের প্রতি একনিষ্ঠতা বা ভক্তির দ্বারা সমাধিলাভ হয়। ঈশ্বরকে সুখ-দুঃখসহ কোন ভাব স্পর্শ করতে পারে না। তিনি কর্ম এবং কর্মফলের বন্ধনের ঊর্ধ্বে। ঈশ্বরই মধ্যেই অনন্ত সর্বজ্ঞত্বের বীজ বর্তমান। অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সকলই তিনি জ্ঞান। কাল বা সময় তাঁকে সীমাবদ্ধ করতে পারে না। তিনি কালের থেকে অবিচ্ছিন্ন হয়ে অনাদিকাল থেকে পূর্ব পূর্ববর্তীদেরও গুরু। যোগদর্শনের মত বেদাদি শাস্ত্রের বহুস্থানেই ভগবানকে গুরু বা জগদগুরু বলা হয়েছে, কারণ সকল জ্ঞানের উৎস তিনি। জীবকে সৃষ্টি করেছেন তিনি, সকল জ্ঞানের উৎসও তিনি, তাই তাকে জগদগুরু বলা হয়। তাঁকে জানার শ্রেষ্ঠ অবলম্বন হলো প্রণব বা ওঁকার। এই ব্রহ্মবাচক ওঙ্কারের সদা ধ্যান এবং জপেই ঈশ্বরকে পাওয়া যায়। ঈশ্বরপ্রণিধানাদ্বা। ক্লেশকর্মবিপাকাশয়ৈরপরামৃষ্টঃ পুরুষবিশেষ ঈশ্বরঃ। তত্র নিরতিশয়ং সর্বজ্ঞবীজম্। স পূর্বেষামপি গুরুঃ কালেন অনবচ্ছেদাৎ। তস্য বাচকঃ প্রণবঃ।  তজ্জপস্তদর্থভাবনম্। (যোগসূত্র : সমাধিপাদ,২৩-২৮) "ঈশ্বরের প্রতি প্রণিধান বা একনিষ্ঠতার দ্বারা সমাধিলাভ হয়। দুঃখ, কর্ম, কর্মফল বা বাসনা যাঁকে স্পর্শ করতে পারে না, তিনিই ঈশ্বর।ঈশ্বরই নিরতিশয়ত্ব প্রাপ্ত সর্বজ্ঞবীজ।তিনি কালের দ্বারা অবিচ্ছিন্ন পূর্ব পূর্ববর্তী অনাদিকাল থেকেই গুরু। প্রণব বা ওঁকারই তাঁর বাচক। এই ওঙ্কারের সদা জপ এবং ধ্যানেই সমাধিলাভ হয়।" যোগদর্শনের মধ্যে একজন যোগীর সাধনজগতের পথে চলতে করণীয় সম্পূর্ণ পদ্ধতি প্রসঙ্গে যোগের এ আটটি অঙ্গের কথা বিস্তৃতভাবে বর্ণিত হয়েছে। এ আটটি অঙ্গকে অবলম্বন করেই একজন সাধক সাধনার পথে অগ্রসর হয়। এ আটটি অঙ্গ পর্যায়ক্রমিক সিঁড়ির মত। ধাপে ধাপে এ পথে অগ্রসর হয়ে সাধক মুক্ত হয়। যোগের আটটি অঙ্গ হলো : যম-নিয়মাসন-প্রাণায়াম-প্রত্যাহার-ধারণা-ধ্যানসমাধয়োঽষ্টাবঙ্গানি।। (পাতঞ্জলযোগসূত্র: সাধনপাদ, ২৯) ‌ ‌"যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি-এই আটটি যোগের অঙ্গসরূপ।" ‌ ‌অহিংসা সত্যাস্তেয়-ব্রহ্মচর্যাপরিগ্রহা যমাঃ। ‌(পাতঞ্জলযোগসূত্র: সাধনপাদ, ৩০) ‌ ‌"অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, ব্রহ্মচর্য ও অপরিগ্রহ-এইগুলিকে যম বলে।" ‌ ‌শৌচ-সন্তোষ-তপঃ-স্বাধ্যায়েশ্বরপ্রণিধানানি নিয়মাঃ। ‌(পাতঞ্জলযোগসূত্র: সাধনপাদ, ৩২) ‌ ‌"শৌচ, সন্তোষ, তপ, স্বাধ্যায় ও ঈশ্বর-প্রণিধান-এইগুলি নিয়ম।" ‌ ‌স্থিরসুখমাসনম্। ‌(পাতঞ্জলযোগসূত্র:সাধনপাদ, ৪৬) ‌ ‌"যে অবস্থায় অনেকক্ষণ স্থিরভাবে ও সুখে বসা যায়, তাহার নাম আসন।" ‌ ‌তস্মিন্ সতি শ্বাসপ্রশ্বাসয়োর্গতিবিচ্ছেদঃ প্রাণায়ামঃ। ‌(পাতঞ্জলযোগসূত্র: সাধনপাদ, ৪৯) ‌ ‌"আসন জয়ের পর শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি সংযম করাকে প্রাণয়াম বলে।" ‌ ‌স্বস্ববিষয়াসম্প্রয়োগে চিত্ত-স্বরূপানুকার ইবেন্দ্রিয়াণাং প্রত্যাহারঃ। ‌(পাতঞ্জলযোগসূত্র: সাধনপাদ, ৫৪) ‌ ‌"ইন্দ্রিয়গুলি যখন নিজ নিজ বিষয় ত্যাগ করিয়া চিত্তের স্বরূপ গ্রহণ করে তখন তাহাকে প্রত্যাহার বলে।" ‌ ‌দেশবন্ধশ্চিত্তস্য ধারণা। ‌(পাতঞ্জলযোগসূত্র: বিভূতিপাদ, ১) ‌ ‌"চিত্তকে কোন বিশেষ বস্তুতে সংলগ্ন রাখাকে 'ধারণা' বলে।" ‌ ‌তত্র প্রত্যয়ৈকতানতা ধ্যানম্। ‌(পাতঞ্জলযোগসূত্র: বিভূতিপাদ, ২) ‌ ‌"সেই বস্তুবিষয়ক জ্ঞান সর্বদা একইভাবে প্রবাহিত হইলে তাহাকে 'ধ্যান' বলে।" ‌ ‌তদেবার্থমাত্রনির্ভাসং স্বরূপশূন্যমিব সমাধিঃ। ‌(পাতঞ্জলযোগসূত্র: বিভূতিপাদ, ৩) ‌ ‌"ধ্যানের দ্বারা বাহ্য উপাধি পরিত্যাগপূর্বক কেবলমাত্র অর্থ প্রকাশিত হইলে তাহাকে "সমাধি' বলে।" যোগ শব্দের অর্থ ঈশ্বরের সাথে যুক্ত হওয়া। যিনি যোগ করেন, তাঁকেই  যোগী বলে। যে কোন পথেই ঈশ্বরের পথে যুক্ত হওয়া যায়। তাই সনাতন সাধনা পদ্ধতির সকল পথের সাথেই যোগ শব্দটি ব্যবহৃত। যেমন : জ্ঞানযোগ, কর্মযোগ, ভক্তিযোগ, রাজযোগ ইত্যাদি। নদী বিভিন্ন স্থান পরিভ্রমণ করে সমুদ্রের সাথে মিলিত হয়ে একাকার হয়ে যায়, তেমনি সিদ্ধযোগীও যোগের বিভিন্ন পথকে অবলম্বন করে কৈবল্যমুক্তি লাভ করেন। শ্রীকুশল বরণ চক্রবর্ত্তী সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
মহর্ষি পতঞ্জলির যোগসূত্রের শুরুতেই যোগ বিষয়ক বলতে গিয়ে মহর্ষি পতঞ্জলি যোগের সংজ্ঞায় বলেছেন, যোগ হলো চিত্তবৃত্তির নিরোধ। অর্থাৎ যোগ শব্দের অর্থ চিত্তবৃত্তির নিরোধ করে পরমেশ্বরের সাথে যুক্ত হওয়া।
অথ যোগানুশাসনম্।
যোগশ্চিত্তবৃত্তি নিরোধঃ।
(যোগসূত্র : সমাধিপাদ, ১-২)
সমাধিপাদে জগতের সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের গুণের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। ঈশ্বরের প্রতি একনিষ্ঠতা বা ভক্তির দ্বারা সমাধিলাভ হয়। ঈশ্বরকে সুখ-দুঃখসহ কোন ভাব স্পর্শ করতে পারে না। তিনি কর্ম এবং কর্মফলের বন্ধনের ঊর্ধ্বে। ঈশ্বরই মধ্যেই অনন্ত সর্বজ্ঞত্বের বীজ বর্তমান। অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ সকলই তিনি জ্ঞান। কাল বা সময় তাঁকে সীমাবদ্ধ করতে পারে না। তিনি কালের থেকে অবিচ্ছিন্ন হয়ে অনাদিকাল থেকে পূর্ব পূর্ববর্তীদেরও গুরু। যোগদর্শনের মত বেদাদি শাস্ত্রের বহুস্থানেই ভগবানকে গুরু বা জগদগুরু বলা হয়েছে, কারণ সকল জ্ঞানের উৎস তিনি। জীবকে সৃষ্টি করেছেন তিনি, সকল জ্ঞানের উৎসও তিনি, তাই তাকে জগদগুরু বলা হয়। তাঁকে জানার শ্রেষ্ঠ অবলম্বন হলো প্রণব বা ওঁকার। এই ব্রহ্মবাচক ওঙ্কারের সদা ধ্যান এবং জপেই ঈশ্বরকে পাওয়া যায়।
ঈশ্বরপ্রণিধানাদ্বা।
ক্লেশকর্মবিপাকাশয়ৈরপরামৃষ্টঃ পুরুষবিশেষ ঈশ্বরঃ।
তত্র নিরতিশয়ং সর্বজ্ঞবীজম্।
স পূর্বেষামপি গুরুঃ কালেন অনবচ্ছেদাৎ।
তস্য বাচকঃ প্রণবঃ।
তজ্জপস্তদর্থভাবনম্।
(যোগসূত্র : সমাধিপাদ,২৩-২৮)
"ঈশ্বরের প্রতি প্রণিধান বা একনিষ্ঠতার দ্বারা সমাধিলাভ হয়। দুঃখ, কর্ম, কর্মফল বা বাসনা যাঁকে স্পর্শ করতে পারে না, তিনিই ঈশ্বর।ঈশ্বরই নিরতিশয়ত্ব প্রাপ্ত সর্বজ্ঞবীজ।তিনি কালের দ্বারা অবিচ্ছিন্ন পূর্ব পূর্ববর্তী অনাদিকাল থেকেই গুরু। প্রণব বা ওঁকারই তাঁর বাচক। এই ওঙ্কারের সদা জপ এবং ধ্যানেই সমাধিলাভ হয়।"
যোগদর্শনের মধ্যে একজন যোগীর সাধনজগতের পথে চলতে করণীয় সম্পূর্ণ পদ্ধতি প্রসঙ্গে যোগের এ আটটি অঙ্গের কথা বিস্তৃতভাবে বর্ণিত হয়েছে। এ আটটি অঙ্গকে অবলম্বন করেই একজন সাধক সাধনার পথে অগ্রসর হয়। এ আটটি অঙ্গ পর্যায়ক্রমিক সিঁড়ির মত। ধাপে ধাপে এ পথে অগ্রসর হয়ে সাধক মুক্ত হয়। যোগের আটটি অঙ্গ হলো :
যম-নিয়মাসন-প্রাণায়াম-প্রত্যাহার-ধারণা-ধ্যানসমাধয়োঽষ্টাবঙ্গানি।।
(পাতঞ্জলযোগসূত্র: সাধনপাদ, ২৯)
‌"যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি-এই আটটি যোগের অঙ্গসরূপ।"
‌অহিংসা সত্যাস্তেয়-ব্রহ্মচর্যাপরিগ্রহা যমাঃ।
‌(পাতঞ্জলযোগসূত্র: সাধনপাদ, ৩০)
‌"অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, ব্রহ্মচর্য ও অপরিগ্রহ-এইগুলিকে যম বলে।"
‌শৌচ-সন্তোষ-তপঃ-স্বাধ্যায়েশ্বরপ্রণিধানানি নিয়মাঃ।
‌(পাতঞ্জলযোগসূত্র: সাধনপাদ, ৩২)
‌"শৌচ, সন্তোষ, তপ, স্বাধ্যায় ও ঈশ্বর-প্রণিধান-এইগুলি নিয়ম।"
‌স্থিরসুখমাসনম্।
‌(পাতঞ্জলযোগসূত্র:সাধনপাদ, ৪৬)
‌"যে অবস্থায় অনেকক্ষণ স্থিরভাবে ও সুখে বসা যায়, তাহার নাম আসন।"
‌তস্মিন্ সতি শ্বাসপ্রশ্বাসয়োর্গতিবিচ্ছেদঃ প্রাণায়ামঃ।
‌(পাতঞ্জলযোগসূত্র: সাধনপাদ, ৪৯)
‌"আসন জয়ের পর শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি সংযম করাকে প্রাণয়াম বলে।"
‌স্বস্ববিষয়াসম্প্রয়োগে চিত্ত-স্বরূপানুকার ইবেন্দ্রিয়াণাং প্রত্যাহারঃ।
‌(পাতঞ্জলযোগসূত্র: সাধনপাদ, ৫৪)
‌"ইন্দ্রিয়গুলি যখন নিজ নিজ বিষয় ত্যাগ করিয়া চিত্তের স্বরূপ গ্রহণ করে তখন তাহাকে প্রত্যাহার বলে।"
‌দেশবন্ধশ্চিত্তস্য ধারণা।
‌(পাতঞ্জলযোগসূত্র: বিভূতিপাদ, ১)
‌"চিত্তকে কোন বিশেষ বস্তুতে সংলগ্ন রাখাকে 'ধারণা' বলে।"
‌তত্র প্রত্যয়ৈকতানতা ধ্যানম্।
‌(পাতঞ্জলযোগসূত্র: বিভূতিপাদ, ২)
‌"সেই বস্তুবিষয়ক জ্ঞান সর্বদা একইভাবে প্রবাহিত হইলে তাহাকে 'ধ্যান' বলে।"
‌তদেবার্থমাত্রনির্ভাসং স্বরূপশূন্যমিব সমাধিঃ।
‌(পাতঞ্জলযোগসূত্র: বিভূতিপাদ, ৩)
"ধ্যানের দ্বারা বাহ্য উপাধি পরিত্যাগপূর্বক কেবলমাত্র অর্থ প্রকাশিত হইলে তাহাকে "সমাধি' বলে।"

যোগ শব্দের অর্থ ঈশ্বরের সাথে যুক্ত হওয়া। যিনি যোগ করেন, তাঁকেই যোগী বলে। যে কোন পথেই ঈশ্বরের পথে যুক্ত হওয়া যায়। তাই সনাতন সাধনা পদ্ধতির সকল পথের সাথেই যোগ শব্দটি ব্যবহৃত। যেমন : জ্ঞানযোগ, কর্মযোগ, ভক্তিযোগ, রাজযোগ ইত্যাদি। নদী বিভিন্ন স্থান পরিভ্রমণ করে সমুদ্রের সাথে মিলিত হয়ে একাকার হয়ে যায়, তেমনি সিদ্ধযোগীও যোগের বিভিন্ন পথকে অবলম্বন করে কৈবল্যমুক্তি লাভ করেন।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।

মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁