-->

ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

"ভয় কি মরণে" স্বদেশী সংগীতটি, চারণ কবি মুকুন্দদাসের অমর সৃষ্টি।

"ভয় কি মরণে" স্বদেশী সংগীতটি,  চারণ কবি মুকুন্দদাসের অমর সৃষ্টি  পরাধীন ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে চারণ কবি মুকুন্দদাসের সংগীত এক অন্য মাত্রা তৈরি করেছিলো। গণসংগীতের মাধ্যমে বিপ্লবীদের রক্তে অগ্নিমন্ত্রের সার্থকভাবে সঞ্চারিত করতে পেরেছিলেন কবি মুকুন্দদাস। তাঁর সংগীত ব্রিটিশ বিরোধীতায় এক দুর্বার গতি সঞ্চার করেছিল। তাঁর অসংখ্য সংগীততের মধ্যে, "ভয় কি মরণে রাখিতে সন্তানে" এ সংগীতটি এক অগ্নিস্ফুলিঙ্গ তৈরি করেছিলো। এই সংগীতে আদ্যাশক্তি মহামায়া এবং দেশমাতৃকা একাকার হয়ে গিয়েছিলো। আদ্যাশক্তি মাতঙ্গীশক্তিকে সম্বল করে, মৃত্যু ভয় বিদূরিত করে, ধর্মযুদ্ধ স্বরূপ বিদেশি সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়ায় এক সুতীব্র আহ্বান ব্যক্ত হয়েছে সংগীতটিতে। বৃহত্তর বঙ্গে এমন বাঙালি হয়তো খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, যিনি মুকুন্দদাসের লিখিত "ভয় কি মরণে" সংগীতটি শোনেননি। শ্রীচণ্ডীতে বলা হয়েছে, জগতে দানবদের প্রাদুর্ভাবে যখন বিভিন্ন প্রকারের বিঘ্নবাধা উৎপন্ন হবে, তখই আদ্যাশক্তি মাতঙ্গী দেবী বিভিন্নরূপে এ জগতে আবির্ভূতা হয়ে অসুরদের বিনাশ করবেন। ইত্থং যদা যদা বাধা দানবোত্থা ভবিষ্যতি । তদা তদাবতীর্য্যাহং করিষ্যাম্যরিসংক্ষয়ম্‌ ।। (শ্রীচণ্ডী:১১.৫৪-৫৫) "এই প্রকারে যখনই দানবদের প্রাদুর্ভাবে বিবিধ প্রকারের বিঘ্নবাধা উৎপন্ন হবে, তখনই আমি আবির্ভূতা হয়ে দেবশত্রু অসুরদের বিনাশ করব।" শ্রীচণ্ডীতে দেবীর প্রতিশ্রুত এ ভাবটিই পাওয়া যায় মুকুন্দদাসের লিখিত "ভয় কি মরণে" সংগীতে। কবি সংগীতটিতে শব্দের বিন্যাস অসাধারণভাবে করেছেন। বিশেষ করে সংগীতটির,"তা থৈ তা থৈ থৈ দিমি দিমি দ্রম দ্রম" অংশটি। মনে হয় যেন দামামা বাজছে, ডমরু বাজছে, জয়ঢাক বাজছে, রণভেরী বাজছে, শঙখ বাজছে। আর এই সকল প্রলয়ঙ্কারী বাদ্যের তালে তালে মহাকাল এবং মহাকালী উন্মাদিনী হয়ে নাচছে।সাথে রয়েছে ভূত, পিশাচ এবং যোগিনীগণ। সে এক অভূতপূর্ব দানবদলনী নৃত্য। "ভয় কি মরণে রাখিতে সন্তানে মাতঙ্গী মেতেছে আজ সমর রঙ্গে তা থৈ তা থৈ থৈ দিমি দিমি দ্রম দ্রম ।। ভূত পিশাচ নাচে যোগিনী সঙ্গে ।। ভয় কি মরণে রাখিতে সন্তানে মাতঙ্গী মেতেছে আজ সমর রঙ্গে।। দানব দলনী হয়ে উন্মাদিনী আর কি দানব থাকিবে বঙ্গে ।।" ১৮৮৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মুকুন্দ দাস জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্বদেশী ও অসহযোগ আন্দোলনের সময় বহু স্বদেশী বিপ্লবাত্মক গান ও নাটক রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি ছিলেন স্বদেশী যাত্রার স্বার্থক প্রবর্তক। তিনি সারা দেশময় ঘুরে ঘুরে সবাইকে সংগীতের মাথমে সবাইকে বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষিত করতেন, তাই তাঁকে 'চারণকবি' নামে অবিহিত করা হয়।তাঁর পিতার নাম গুরুদয়াল দে এবং মাতার নাম শ্যামাসুন্দরী দেবী।তাঁর নাম ছিল যজ্ঞেশ্বর দে বা যজ্ঞা। তাঁদের আদিনিবাস বিক্রমপুরের বানরী গ্রামে। পরবর্তীতে গ্রামটি পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায়, তারা সপরিবারে বরিশাল শহরে এসে বসবাস শুরু করেন। অঅশ্বিনীকুমার দত্ত প্রতিষ্ঠিত বরিশালের ব্রজমোহন স্কুলে তার শিক্ষা শুরু হয়। বরিশালের বৈষ্ণব সন্ন্যাসী রামানন্দ অবধূত যজ্ঞেশ্বরের গলায় হরিসংকীর্তন ও শ্যামাসঙ্গীত শুনে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে শিষ্যত্ব প্রদান করে নাম রাখেন মুকুন্দদাস। উনিশ বছরের বয়সের মধ্যে মুকুন্দদাস সাধন-সঙ্গীত নামে একশখানি গান সমৃদ্ধ একখানি বই রচনা করেন। তিনি বরিশাল হিতৈষী পত্রিকায় লিখতেন। স্বদেশী যাত্রাগানে বরিশাল সহ সমগ্র বঙ্গকে মাতিয়ে রাখতেন।১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই মে শুক্রবার মুকুন্দদাস মৃত্যু বরণ করেন।মুকুন্দদাসের শ্রেষ্ঠ রচনা হলো: মাতৃপূজা, সমাজ, আদর্শ, পল্লীসেবা, সাথী, কর্মক্ষেত্র, ব্রহ্মচারিণী, পথ ইত্যাদি। শ্রীকুশল বরণ চক্রবর্ত্তী সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
পরাধীন ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে চারণ কবি মুকুন্দদাসের সংগীত এক অন্য মাত্রা তৈরি করেছিলো। গণসংগীতের মাধ্যমে বিপ্লবীদের রক্তে অগ্নিমন্ত্রের সার্থকভাবে সঞ্চারিত করতে পেরেছিলেন কবি মুকুন্দদাস। তাঁর সংগীত ব্রিটিশ বিরোধীতায় এক দুর্বার গতি সঞ্চার করেছিল। তাঁর অসংখ্য সংগীততের মধ্যে, "ভয় কি মরণে রাখিতে সন্তানে" এ সংগীতটি এক অগ্নিস্ফুলিঙ্গ তৈরি করেছিলো। এই সংগীতে আদ্যাশক্তি মহামায়া এবং দেশমাতৃকা একাকার হয়ে গিয়েছিলো। আদ্যাশক্তি মাতঙ্গীশক্তিকে সম্বল করে, মৃত্যু ভয় বিদূরিত করে, ধর্মযুদ্ধ স্বরূপ বিদেশি সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়ায় এক সুতীব্র আহ্বান ব্যক্ত হয়েছে সংগীতটিতে। বৃহত্তর বঙ্গে এমন বাঙালি হয়তো খুঁজে পাওয়া দুষ্কর, যিনি মুকুন্দদাসের লিখিত "ভয় কি মরণে" সংগীতটি শোনেননি। শ্রীচণ্ডীতে বলা হয়েছে, জগতে দানবদের প্রাদুর্ভাবে যখন বিভিন্ন প্রকারের বিঘ্নবাধা উৎপন্ন হবে, তখই আদ্যাশক্তি মাতঙ্গী দেবী বিভিন্নরূপে এ জগতে আবির্ভূতা হয়ে অসুরদের বিনাশ করবেন।
ইত্থং যদা যদা বাধা দানবোত্থা ভবিষ্যতি ।
তদা তদাবতীর্য্যাহং করিষ্যাম্যরিসংক্ষয়ম্‌ ।।
(শ্রীচণ্ডী:১১.৫৪-৫৫)
"এই প্রকারে যখনই দানবদের প্রাদুর্ভাবে বিবিধ প্রকারের বিঘ্নবাধা উৎপন্ন হবে, তখনই আমি আবির্ভূতা হয়ে দেবশত্রু অসুরদের বিনাশ করব।"
শ্রীচণ্ডীতে দেবীর প্রতিশ্রুত এ ভাবটিই পাওয়া যায় মুকুন্দদাসের লিখিত "ভয় কি মরণে" সংগীতে। কবি সংগীতটিতে শব্দের বিন্যাস অসাধারণভাবে করেছেন। বিশেষ করে সংগীতটির,"তা থৈ তা থৈ থৈ দিমি দিমি দ্রম দ্রম" অংশটি। মনে হয় যেন দামামা বাজছে, ডমরু বাজছে, জয়ঢাক বাজছে, রণভেরী বাজছে, শঙখ বাজছে। আর এই সকল প্রলয়ঙ্কারী বাদ্যের তালে তালে মহাকাল এবং মহাকালী উন্মাদিনী হয়ে নাচছে।সাথে রয়েছে ভূত, পিশাচ এবং যোগিনীগণ। সে এক অভূতপূর্ব দানবদলনী নৃত্য।
"ভয় কি মরণে রাখিতে সন্তানে
মাতঙ্গী মেতেছে আজ সমর রঙ্গে
তা থৈ তা থৈ থৈ দিমি দিমি দ্রম দ্রম ।।
ভূত পিশাচ নাচে যোগিনী সঙ্গে ।।
ভয় কি মরণে রাখিতে সন্তানে
মাতঙ্গী মেতেছে আজ সমর রঙ্গে।।
দানব দলনী হয়ে উন্মাদিনী
আর কি দানব থাকিবে বঙ্গে ।।"
১৮৮৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মুকুন্দ দাস জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্বদেশী ও অসহযোগ আন্দোলনের সময় বহু স্বদেশী বিপ্লবাত্মক গান ও নাটক রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি ছিলেন স্বদেশী যাত্রার স্বার্থক প্রবর্তক। তিনি সারা দেশময় ঘুরে ঘুরে সবাইকে সংগীতের মাথমে সবাইকে বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষিত করতেন, তাই তাঁকে 'চারণকবি' নামে অবিহিত করা হয়।তাঁর পিতার নাম গুরুদয়াল দে এবং মাতার নাম শ্যামাসুন্দরী দেবী।তাঁর নাম ছিল যজ্ঞেশ্বর দে বা যজ্ঞা। তাঁদের আদিনিবাস বিক্রমপুরের বানরী গ্রামে। পরবর্তীতে গ্রামটি পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায়, তারা সপরিবারে বরিশাল শহরে এসে বসবাস শুরু করেন। অঅশ্বিনীকুমার দত্ত প্রতিষ্ঠিত বরিশালের ব্রজমোহন স্কুলে তার শিক্ষা শুরু হয়। বরিশালের বৈষ্ণব সন্ন্যাসী রামানন্দ অবধূত যজ্ঞেশ্বরের গলায় হরিসংকীর্তন ও শ্যামাসঙ্গীত শুনে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে শিষ্যত্ব প্রদান করে নাম রাখেন মুকুন্দদাস। উনিশ বছরের বয়সের মধ্যে মুকুন্দদাস সাধন-সঙ্গীত নামে একশখানি গান সমৃদ্ধ একখানি বই রচনা করেন। তিনি বরিশাল হিতৈষী পত্রিকায় লিখতেন। স্বদেশী যাত্রাগানে বরিশাল সহ সমগ্র বঙ্গকে মাতিয়ে রাখতেন।১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই মে শুক্রবার মুকুন্দদাস মৃত্যু বরণ করেন।মুকুন্দদাসের শ্রেষ্ঠ রচনা হলো: মাতৃপূজা, সমাজ, আদর্শ, পল্লীসেবা, সাথী, কর্মক্ষেত্র, ব্রহ্মচারিণী, পথ ইত্যাদি।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁