-->

ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

"তন্নো নারসিংহঃ প্রচোদয়াৎ"; বৈদিককাল থেকেই নৃসিংহ পূজিত ।

নৃসিংহ অবতার এবং ভক্ত প্রহ্লাদের কাহিনীটি শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণের সপ্তম স্কন্দে রয়েছে। শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণের এ কাহিনীটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে অত্যন্ত জনপ্রিয়। নৃসিংহ অবতারের কথা মহাভারত, অগ্নিপুরাণ, ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ, বায়ুপুরাণ, হরিবংশ ব্রহ্মপুরাণ, বিষ্ণুধর্মোত্তর পুরাণ, কূর্মপুরাণ, মৎস্যপুরাণ পদ্মপুরাণ (উত্তরখণ্ড), শিবপুরাণ, লিঙ্গপুরাণ, স্কন্দপুরাণ বিষ্ণুপুরাণ সহ বিবিধ শাস্ত্রে রয়েছে।নৃসিংহদেব হলেন ভগবানের করুণাঘন অবতার। ভক্ত প্রহ্লাদের কাছে তিনি করুণাঘন মূর্তি এবং বিপরীতে দুরাচারীর হিরণ্যকশিপুর কাছে তিনি উগ্র ভয়ংকর মূর্তিতে আবির্ভূত। অর্থাৎ ভগবানের নৃসিংহ অবতারে একই সাথে শান্ত এবং ভয়ংকর উভয়রূপই পাওয়া যায়। বেদের মধ্যেও নৃসিংহদেবের কথা রয়েছে। বেদের তৈত্তিরীয় আরণ্যকের দশম প্রপাঠকে নৃসিংহদেবের নামে একটি নৃসিংহ গায়ত্রী মন্ত্র রয়েছে। তৈত্তিরীয় আরণ্যক থেকে উদ্ভূত চতুর্দশ বৈদিক উপনিষদের অন্যতম 'মহানারায়ণ উপনিষদ' গ্রন্থেও এ নৃসিংহ গায়ত্রী মন্ত্রটি পাওয়া যায়। এ মন্ত্রটিতে নৃসিংহদেবকে 'বজ্রনখা' এবং 'তীক্ষ্ণদংষ্ট্ৰা' নামে অবিহিত করা হয়েছে। অর্থাৎ তাঁর নখ বজ্রের মত কঠোর ভয়ংকর এবং দাঁত তীক্ষ্ণ ধারালো।  বজ্রনখায় বিদ্মহে তীক্ষ্ণদংষ্ট্ৰায় ধীমহি।  তন্নো নারসিংহঃ প্রচোদয়াৎ ।।  "আমরা বজ্রনখকে জানব। তাই আমরা তীক্ষ্ণদন্তের ধ্যান করি। সেই ধ্যানে নরসিংহ আমাদেরকে প্রেরিত করুন।" ঋগ্বেদ সংহিতায় প্রথম মণ্ডলের ১৫৪ সূক্তে ঔচথ্যের পুত্র দীর্ঘতমা ঋষি ত্রিষ্টুপ্ ছন্দে বিষ্ণু দেবতার স্তোত্র করেছেন। সেই স্তোত্রে ভগবান বিষ্ণুকে লোকপ্রসংশিত বীরত্বপূর্ণ রূপের সাথে ভয়ঙ্কর, হিংস্র, গিরিশায়ী দুর্গম স্থানে বিচরণশীল বলে অবিহিত করা হয়েছে।সূক্তটিতে ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে উক্ত মন্ত্রে ভগবান বিষ্ণুর নৃসিংহ অবতারে স্বরূপ ধরা পরে। বিশেষ করে বিষ্ণুসূক্তটির দ্বিতীয় মন্ত্রে বিষ্ণু শব্দের সাথে সাথে মন্ত্রে 'মৃগো', 'ভীমঃ', 'কুচরো গিরিষ্ঠাঃ' শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে। শব্দগুলো অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ; যা ভগবান বিষ্ণুর অবতার নৃসিংহদেবকে নির্দেশ করে। প্র তদ্‌ বিষ্ণু স্তবতে বীর্যেণ মৃগো ন ভীমঃ কুচরো গিরিষ্ঠাঃ ।  যস্যোরুষু ত্রিষু বিক্রমণেষধি- ক্ষিয়ন্তি ভুবনানি বিশ্বা ॥ প্র বিষ্ণবে শূষমেতু মন্ম  গিরিক্ষিত উরুগায়ায় বৃষ্ণে।  য ইদং দীর্ঘং প্রযতং সধস্থমেকো  বিমমে ত্রিভিরিৎ পদেভিঃ॥ (ঋগ্বেদ সংহিতা: ১. ১৫৪.২-৩) "সেই বিষ্ণু বীরত্ব বীর্যসূচক কর্মহেতু জগতে স্তুত হয়ে থাকেন। বিষ্ণুর তিন পদক্ষেপে সমস্ত ভুবনে অবস্থান করে আছেন; এতেই সকল প্রাণী জীবিত থাকে।আবার তিনি ভয়ঙ্কর, হিংস্র, গিরিশায়ী দুর্গম স্থানে বিচরণশীল। অর্থাৎ বিষ্ণুর শান্ত এবং উগ্র উভয়রূপ বিরাজমান।  লোকপ্রশংসিত মহাবল বিষ্ণু এ স্তোত্রসমূহ গ্রহণ করুক। তিনি ফলবর্ষণকারী বৃষভ, তিনি পর্বতবাসী, তিনি সর্বত্র পরিব্যাপ্ত হয়ে ভ্রমণকারী। সেই বিষ্ণু তিনটিমাত্র পদক্ষেপ দ্বারা এই দীর্ঘ, অতিবিস্তৃত সকলের বাসস্থান পরিমাপ করেছেন।" বিষ্ণুমহাপুরাণের প্রথমাংশের উনবিংশ অধ্যায়ে দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর সন্তান প্রহ্লাদ একাগ্র চিত্তে ভগবান নৃসিংহদেবের স্তোত্র করেন। সেই স্তোত্রে তিনি পুণ্ডরীকাক্ষ, পুরুষোত্তম, সর্বলোকাত্মন্, তীক্ষ্ণচক্রিণ, জগতের হিতস্বরূপ কৃষ্ণ ও গোবিন্দ এ বিবিধ নামে অবিহিত করে তাঁকে বারংবার নমস্কার করেছেন।স্তোত্রটিতে ভক্ত প্রহ্লাদ যা বলেছেন, তা অত্যন্ত তাৎপর্য মণ্ডিত। যিনি প্রহ্লাদের সম্মুখে নৃসিংহদেব রূপে  আবির্ভূত, সেই এক এবং অদ্বিতীয় পরমেশ্বরই জগতের রক্ষার্থে ত্রিমূর্তি ধারণ করে আছেন। তিনিই ব্রহ্মারূপে জগতের সৃষ্টি করেন, বিষ্ণুরূপে পালন করেন এবং কল্পান্তে প্রলয়কালে রুদ্ররূপে জগতের লয় করেন। নমস্তে পুণ্ডরীকাক্ষ নমস্তে পুরুষোত্তম। নমস্তে সর্বলোকাত্মন্ নমস্তে তিগ্মচক্রিণে।। নমো ব্রহ্মণ্যদেবায় গোব্রাহ্মণহিতায় চ। জগদ্ধিতায় কৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ। ব্রহ্মতে সৃজতে বিশ্বং স্থিতৌ পালয়তে পুনঃ। রুদ্ররূপায় কল্পান্তে নমস্তুভ্যং ত্রিমূর্তয়ে।। (বিষ্ণুপুরাণ:১.১৯.৬৪-৬৫) "হে পুণ্ডরীকাক্ষ! তোমাকে নমস্কার। হে পুরুষোত্তম! তোমাকে নমস্কার। হে সর্ব্বলোকাত্মন্! তোমাকে নমস্কার। হে তীক্ষ্ণচক্রিণ! তোমাকে নমস্কার। গো-ব্রাহ্মণের হিতকারী ব্রহ্মণ্যদেবকে নমস্কার; জগতের হিতস্বরূপ কৃষ্ণকে নমস্কার। গোবিন্দকে নমস্কার। ব্রহ্মারূপে তুমি সৃষ্টি কর, বিষ্ণুরূপে পালন কর এবং কল্পান্তে রুদ্ররূপে জগতের লয় কর; এ ত্রিমূর্তিধারী হে পরমেশ্বর তোমাকে নমস্কার।" নৃসিংহদেবকে ভক্ত রক্ষক বলা হয়। কারণ, ভক্ত প্রহ্লাদকে রক্ষা করতে তিনি হিরণ্যকশিপুর বরদানের সকল শর্তের ব্যতিক্রমী রূপ ধারণ করে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। শ্রীশংকরাচার্য সঙ্কটনাশন নৃসিংহদেবকে নিয়ে 'লক্ষ্মীনৃসিংহ স্তোত্রম' রচনা করেছিলেন। সেখানে শ্রীশংকরাচার্য নৃসিংহদেবের কৃপাময় শ্রীহস্ত তাঁর মাথায় রাখতে বলে; নৃসিংহদেবের করকমলে আশ্রয় চেয়েছেন। লক্ষ্মীপতে কমলনাভ সুরেশ বিষ্ণো বৈকুণ্ঠ কৃষ্ণ মধুসূদন পুষ্করাক্ষ। ব্রহ্মণ্য কেশব জনার্দন বাসুদেব দেবেশ দেহি কৃপণস্য করাবলম্বম।। (লক্ষ্মীনৃসিংহ স্তোত্রম : ১২) "হে লক্ষ্মীপতি, হে কমলনাভ,হে সুরেশ, হে বিষ্ণু,  হে বৈকুণ্ঠ, হে কৃষ্ণ, হে মধুসূদন, হে পদ্মলোচন, হে ব্রহ্মণ্য, হে কেশব, হে জনার্দন , হে বাসুদেব, হে দেবেশ; তুমি দীন-পতিত আমার মাথায় কৃপাময় তোমার শ্রীহস্ত রেখে তোমার করকমলে আমায় আশ্রয় দাও।" একাদশ শতাব্দীতে বঙ্গের বিখ্যাত কবি, যিনি লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি ছিলেন, তিনি তাঁর বিখ্যাত 'গীতগোবিন্দ' কাব্যের শুরুতেই দশবতারস্তোত্র করেছেন। সেই স্তোত্রের মধ্যে নৃসিংহদেবেরও একটি স্তোত্র রয়েছে। সেই স্তোত্রে তিনি নৃসিংহ রূপধারী নরহরিরূপ জগদীশের জয় ঘোষণা করেছেন। তব করকমলবরে নখমদ্ভুতশৃঙ্গং দলিতহিরণ্যকশিপু তনুভৃঙ্গম্। কেশবধৃত নরহরিরূপ জয় জগদীশ হরে॥ "হে নৃসিংহদেব, আপনার পদ্মের ন্যায় হস্তে নখের অগ্রভাগগুলো অদ্ভুত এবং সেই অদ্ভুত হস্তে হিরণ্যকশিপুর দেহ ভ্রমরের মত বিদীর্ণ করেছেন। হে নৃসিংহ রূপধারী কেশব, হে নরহরি, হে জগদীশ, হে হরি আপনার জয় হোক।" শ্রীকুশল বরণ চক্রবর্ত্তী সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
নৃসিংহ অবতার এবং ভক্ত প্রহ্লাদের কাহিনীটি শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণের সপ্তম স্কন্দে রয়েছে। শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণের এ কাহিনীটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে অত্যন্ত জনপ্রিয়। নৃসিংহ অবতারের কথা মহাভারত, অগ্নিপুরাণ, ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ, বায়ুপুরাণ, হরিবংশ ব্রহ্মপুরাণ, বিষ্ণুধর্মোত্তর পুরাণ, কূর্মপুরাণ, মৎস্যপুরাণ পদ্মপুরাণ (উত্তরখণ্ড), শিবপুরাণ, লিঙ্গপুরাণ, স্কন্দপুরাণ বিষ্ণুপুরাণ সহ বিবিধ শাস্ত্রে রয়েছে।নৃসিংহদেব হলেন ভগবানের করুণাঘন অবতার। ভক্ত প্রহ্লাদের কাছে তিনি করুণাঘন মূর্তি এবং বিপরীতে দুরাচারীর হিরণ্যকশিপুর কাছে তিনি উগ্র ভয়ংকর মূর্তিতে আবির্ভূত। অর্থাৎ ভগবানের নৃসিংহ অবতারে একই সাথে শান্ত এবং ভয়ংকর উভয়রূপই পাওয়া যায়। বেদের মধ্যেও নৃসিংহদেবের কথা রয়েছে। বেদের তৈত্তিরীয় আরণ্যকের দশম প্রপাঠকে নৃসিংহদেবের নামে একটি নৃসিংহ গায়ত্রী মন্ত্র রয়েছে। তৈত্তিরীয় আরণ্যক থেকে উদ্ভূত চতুর্দশ বৈদিক উপনিষদের অন্যতম 'মহানারায়ণ উপনিষদ' গ্রন্থেও এ নৃসিংহ গায়ত্রী মন্ত্রটি পাওয়া যায়। এ মন্ত্রটিতে নৃসিংহদেবকে 'বজ্রনখা' এবং 'তীক্ষ্ণদংষ্ট্ৰা' নামে অবিহিত করা হয়েছে। অর্থাৎ তাঁর নখ বজ্রের মত কঠোর ভয়ংকর এবং দাঁত তীক্ষ্ণ ধারালো।
বজ্রনখায় বিদ্মহে তীক্ষ্ণদংষ্ট্ৰায় ধীমহি।
তন্নো নারসিংহঃ প্রচোদয়াৎ ।।
"আমরা বজ্রনখকে জানব। তাই আমরা তীক্ষ্ণদন্তের ধ্যান করি। সেই ধ্যানে নরসিংহ আমাদেরকে প্রেরিত করুন।"
ঋগ্বেদ সংহিতায় প্রথম মণ্ডলের ১৫৪ সূক্তে ঔচথ্যের পুত্র দীর্ঘতমা ঋষি ত্রিষ্টুপ্ ছন্দে বিষ্ণু দেবতার স্তোত্র করেছেন। সেই স্তোত্রে ভগবান বিষ্ণুকে লোকপ্রসংশিত বীরত্বপূর্ণ রূপের সাথে ভয়ঙ্কর, হিংস্র, গিরিশায়ী দুর্গম স্থানে বিচরণশীল বলে অবিহিত করা হয়েছে।সূক্তটিতে ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে উক্ত মন্ত্রে ভগবান বিষ্ণুর নৃসিংহ অবতারে স্বরূপ ধরা পরে। বিশেষ করে বিষ্ণুসূক্তটির দ্বিতীয় মন্ত্রে বিষ্ণু শব্দের সাথে সাথে মন্ত্রে 'মৃগো', 'ভীমঃ', 'কুচরো গিরিষ্ঠাঃ' শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে। শব্দগুলো অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ; যা ভগবান বিষ্ণুর অবতার নৃসিংহদেবকে নির্দেশ করে।
প্র তদ্‌ বিষ্ণু স্তবতে বীর্যেণ
মৃগো ন ভীমঃ কুচরো গিরিষ্ঠাঃ ।
যস্যোরুষু ত্রিষু বিক্রমণেষধি-
ক্ষিয়ন্তি ভুবনানি বিশ্বা ॥
প্র বিষ্ণবে শূষমেতু মন্ম
গিরিক্ষিত উরুগায়ায় বৃষ্ণে।
য ইদং দীর্ঘং প্রযতং সধস্থমেকো
বিমমে ত্রিভিরিৎ পদেভিঃ॥
(ঋগ্বেদ সংহিতা: ১. ১৫৪.২-৩)
"সেই বিষ্ণু বীরত্ব বীর্যসূচক কর্মহেতু জগতে স্তুত হয়ে থাকেন। বিষ্ণুর তিন পদক্ষেপে সমস্ত ভুবনে অবস্থান করে আছেন; এতেই সকল প্রাণী জীবিত থাকে।আবার তিনি ভয়ঙ্কর, হিংস্র, গিরিশায়ী দুর্গম স্থানে বিচরণশীল। অর্থাৎ বিষ্ণুর শান্ত এবং উগ্র উভয়রূপ বিরাজমান।
লোকপ্রশংসিত মহাবল বিষ্ণু এ স্তোত্রসমূহ গ্রহণ করুক। তিনি ফলবর্ষণকারী বৃষভ, তিনি পর্বতবাসী, তিনি সর্বত্র পরিব্যাপ্ত হয়ে ভ্রমণকারী। সেই বিষ্ণু তিনটিমাত্র পদক্ষেপ দ্বারা এই দীর্ঘ, অতিবিস্তৃত সকলের বাসস্থান পরিমাপ করেছেন।"
বিষ্ণুমহাপুরাণের প্রথমাংশের উনবিংশ অধ্যায়ে দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপুর সন্তান প্রহ্লাদ একাগ্র চিত্তে ভগবান নৃসিংহদেবের স্তোত্র করেন। সেই স্তোত্রে তিনি পুণ্ডরীকাক্ষ, পুরুষোত্তম, সর্বলোকাত্মন্, তীক্ষ্ণচক্রিণ, জগতের হিতস্বরূপ কৃষ্ণ ও গোবিন্দ এ বিবিধ নামে অবিহিত করে তাঁকে বারংবার নমস্কার করেছেন।স্তোত্রটিতে ভক্ত প্রহ্লাদ যা বলেছেন, তা অত্যন্ত তাৎপর্য মণ্ডিত। যিনি প্রহ্লাদের সম্মুখে নৃসিংহদেব রূপে আবির্ভূত, সেই এক এবং অদ্বিতীয় পরমেশ্বরই জগতের রক্ষার্থে ত্রিমূর্তি ধারণ করে আছেন। তিনিই ব্রহ্মারূপে জগতের সৃষ্টি করেন, বিষ্ণুরূপে পালন করেন এবং কল্পান্তে প্রলয়কালে রুদ্ররূপে জগতের লয় করেন।
নমস্তে পুণ্ডরীকাক্ষ নমস্তে পুরুষোত্তম।
নমস্তে সর্বলোকাত্মন্ নমস্তে তিগ্মচক্রিণে।।
নমো ব্রহ্মণ্যদেবায় গোব্রাহ্মণহিতায় চ।
জগদ্ধিতায় কৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ।
ব্রহ্মতে সৃজতে বিশ্বং স্থিতৌ পালয়তে পুনঃ।
রুদ্ররূপায় কল্পান্তে নমস্তুভ্যং ত্রিমূর্তয়ে।।
(বিষ্ণুপুরাণ:১.১৯.৬৪-৬৫)
"হে পুণ্ডরীকাক্ষ! তোমাকে নমস্কার। হে পুরুষোত্তম! তোমাকে নমস্কার। হে সর্ব্বলোকাত্মন্! তোমাকে নমস্কার। হে তীক্ষ্ণচক্রিণ! তোমাকে নমস্কার।
গো-ব্রাহ্মণের হিতকারী ব্রহ্মণ্যদেবকে নমস্কার; জগতের হিতস্বরূপ কৃষ্ণকে নমস্কার। গোবিন্দকে নমস্কার। ব্রহ্মারূপে তুমি সৃষ্টি কর, বিষ্ণুরূপে পালন কর এবং কল্পান্তে রুদ্ররূপে জগতের লয় কর; এ ত্রিমূর্তিধারী হে পরমেশ্বর তোমাকে নমস্কার।"
নৃসিংহদেবকে ভক্ত রক্ষক বলা হয়। কারণ, ভক্ত প্রহ্লাদকে রক্ষা করতে তিনি হিরণ্যকশিপুর বরদানের সকল শর্তের ব্যতিক্রমী রূপ ধারণ করে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। শ্রীশংকরাচার্য সঙ্কটনাশন নৃসিংহদেবকে নিয়ে 'লক্ষ্মীনৃসিংহ স্তোত্রম' রচনা করেছিলেন। সেখানে শ্রীশংকরাচার্য নৃসিংহদেবের কৃপাময় শ্রীহস্ত তাঁর মাথায় রাখতে বলে; নৃসিংহদেবের করকমলে আশ্রয় চেয়েছেন।
লক্ষ্মীপতে কমলনাভ সুরেশ বিষ্ণো
বৈকুণ্ঠ কৃষ্ণ মধুসূদন পুষ্করাক্ষ।
ব্রহ্মণ্য কেশব জনার্দন বাসুদেব
দেবেশ দেহি কৃপণস্য করাবলম্বম।।
(লক্ষ্মীনৃসিংহ স্তোত্রম : ১২)
"হে লক্ষ্মীপতি, হে কমলনাভ,হে সুরেশ, হে বিষ্ণু,
হে বৈকুণ্ঠ, হে কৃষ্ণ, হে মধুসূদন, হে পদ্মলোচন,
হে ব্রহ্মণ্য, হে কেশব, হে জনার্দন , হে বাসুদেব, হে দেবেশ; তুমি দীন-পতিত আমার মাথায় কৃপাময় তোমার শ্রীহস্ত রেখে তোমার করকমলে আমায় আশ্রয় দাও।"
একাদশ শতাব্দীতে বঙ্গের বিখ্যাত কবি, যিনি লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি ছিলেন, তিনি তাঁর বিখ্যাত 'গীতগোবিন্দ' কাব্যের শুরুতেই দশবতারস্তোত্র করেছেন। সেই স্তোত্রের মধ্যে নৃসিংহদেবেরও একটি স্তোত্র রয়েছে। সেই স্তোত্রে তিনি নৃসিংহ রূপধারী নরহরিরূপ জগদীশের জয় ঘোষণা করেছেন।
তব করকমলবরে নখমদ্ভুতশৃঙ্গং
দলিতহিরণ্যকশিপু তনুভৃঙ্গম্।
কেশবধৃত নরহরিরূপ জয় জগদীশ হরে॥
"হে নৃসিংহদেব, আপনার পদ্মের ন্যায় হস্তে নখের অগ্রভাগগুলো অদ্ভুত এবং সেই অদ্ভুত হস্তে হিরণ্যকশিপুর দেহ ভ্রমরের মত বিদীর্ণ করেছেন।
হে নৃসিংহ রূপধারী কেশব, হে নরহরি, হে জগদীশ, হে হরি আপনার জয় হোক।"
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁