-->

ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

"মা কুরু ধনজনযৌবনগর্বং"; ঈশ্বর অনন্ত, জীবন ক্ষণিকের।

"মা কুরু ধনজনযৌবনগর্বং";  ঈশ্বর অনন্ত, জীবন ক্ষণিকের।  এ সংসারে যত সঞ্চিত বস্তু আছে, তার সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী। প্রত্যেকটি বস্তুর বিনাশ অবশ্যম্ভাবী, উত্থানের অন্ত পতন অবশ্যম্ভাবী,সংযোগের অন্ত বিয়োগ অবশ্যম্ভাবী এবং জীবনের অন্ত হল মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। তাই কোন কিছুতেই সামান্যতম আসক্তি থাকা উচিত নয়। এ প্রসঙ্গে রামায়ণের উত্তরকাণ্ডে বলা হয়েছে: সর্বে ক্ষয়ান্তা নিচয়াঃ পতনাস্তাঃ সমুচ্ছ্ৰয়াঃ।  সংযোগা বিপ্রয়োগান্তা মরণান্তং চ জীবিতম্॥  তস্মাৎ পুত্রেষু দারেষু মিত্রেষু চ ধনেষু চ। নাতিপ্রসঙ্গঃ কর্তব্যো বিপ্রয়োগো হি তৈর্ধ্রুবম্।। (রামায়ণ : উত্তরকাণ্ড, ৫২.১১-১২) "এ সংসারে যত সঞ্চিত বস্তু আছে, তার সবকিছুর পরিণাম বিনাশ, উত্থানের অন্ত পতন, সংযোগের অন্ত বিয়োগ এবং জীবনের অন্ত হল মৃত্যু। সুতরাং স্ত্রী, পুত্র, মিত্র ও ধনে বিশেষ আসক্তি রাখা উচিত নয়। কারণ সেসব থেকে বিয়োগ হওয়া নিশ্চিত।" শ্রীশঙ্করাচার্য তাঁর জগদ্বিখ্যাত 'মোহমুদগর' গ্রন্থে মানব জীবনের ক্ষণস্থায়ীত্বকে স্মরণ করে দিয়ে অতিরিক্ত ধন সম্পদের, জনসম্পদের এবং যৌবনের গর্ব করতে সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করেছেন মনুষ্য যখন 'আমি আমি' এবং 'আমার আমার' বলে অকারণে অভিমান করে, ভগবান তখন মনুষ্যের কাণ্ড দেখে হাসেন। মনুষ্যের এত গর্বের ধন মহাকাল নিমেষের মধ্যেই যে কোন সময়েই হরণ করে নিয়ে যেতে পারে। এরপরেও ভোগী মনুষ্যেত হুশ হয় না। তারা বেহুশ হয়ে সংসার সমুদ্রে ভাসতে থাকে।  মা কুরু ধনজনযৌবনগর্বং হরতি নিমেষাৎ কালঃ সর্বম্। মায়াময়মিদমখিলং হিত্বা ব্রহ্মপদং প্রবিশাশু বিদিত্বা।। (মোহমুদগর :৩) "হে মানব কখনো অতিরিক্ত ধন,জন এবং যৌবনের গর্ব করো না; মহাকাল নিমেষের মধ্যেই তোমার এ সকল গর্বের বস্তু হরণ করে নিয়ে যেতে পারে। তাই মায়াময় এই সংসারের সকল আসক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহৃত করে আস্তে আস্তে ব্রহ্মপদের শরণে যত্নবান হও।"  সংসারের আসক্তি থেকে ধীরেধীরে ব্রহ্মপদের শরণে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন। জীবের যতদিন এই ব্রহ্মপদ লাভ না হয়, ততকালই জীব জন্ম জন্মান্তরের আবর্তনে আবর্তিত হয়ে দুঃখ যাতনা ভোগ করতে থাকবে। বাংলার মরমী লোককবি দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরী (২১ ডিসেম্বর ১৮৫৪ - ৬ ডিসেম্বর ১৯২২) অনিত্য মনুষ্য জীবন নিয়ে অসংখ্য গান রচনা করেছেন। একটি গানে তিনি বলেছেন, সকলেই তাঁকে ঘরবাড়ি সুন্দর করে বানাতে বলে। কিন্তু শূণ্যের মাঝে কি করে ঘরবাড়ি বানাবেন, তিনি শুধুই ভাবেন। ভালো করে ঘরবাড়ি বানিয়ে আর কতদিনই বা থাকতে পারবেন। ঘরবাড়ি বানানোর চিন্তা করতে করতেই একদিন আয়নায় চেয়ে দেখলেন, তার সকল চুল পেঁকে গেছে। অর্থাৎ সুন্দর করে সাধের ঘরবাড়ি বানানোর আগেই একদিন পরপারের ডাক চলে এসেছে। এই মনুষ্য দেহের সাধের পিঞ্জিরা অনিত্য, একে আর সাজিয়ে গুছিয়ে কি লাভ? কবির ভাষায়: "লোকে বলে বলেরে ঘর-বাড়ি ভালা নাই আমার কি ঘর বানাইমু আমি শূণ্যের মাঝার।। ভালা কইরা ঘর বানাইয়া কয়দিন থাকমু আর। আয়না দিয়া চাইয়া দেখি পাকনা চুল আমার।। জানত যদি হাসন রাজা বাঁচব কতদিন। বানাইত দালান-কোঠা করিয়া রঙিন।" মনুষ্য যখন কোন হাসপাতালে অসুস্থ রোগীদের দুঃখদুর্দশা দেখে। তীব্র ব্যাথায় কাতরস্বরে রোগগ্রস্থ ব্যক্তি কাতরাতে থাকে, ঠিক তখনই মনুষ্যের মনে কিছুটা সাময়িক ভাবান্তর প্রবেশ করে। হিংসা, বিদ্বেষ, ঈর্ষা কিছুটা সাময়িকভাবে ভুলে যায়। একই ঘটনা মনুষ্যের শ্মশানেক্ষেত্রে গেলেও হয়। বড় সাধের এবং অত্যন্ত আদরের শরীরটি মৃতদেহ হওয়ার পরে, সেই শরীরটিকে অগ্নিতে সমর্পণ করা হয়।জীর্ণবস্ত্রাদির মত অসার শরীরটি যখন আগুনে পুড়ে যেতে থাকে; তখন মনুষ্যের মাঝে কিছুটা সময়ের জন্যে হলেও সাত্ত্বিক ভাবান্তর আসে। এ ভাবান্তরকে শাস্ত্রে 'শ্মশানবৈরাগ্য' বলে। অর্থাৎ সে তখন কিছু সময়ের জন্য হলেও জগতের অনিত্যতা উপলব্ধি করতে পারে। সে বুঝতে পারে, জগতে কেউ কারো নয়। সকলই অনিত্য সময়ের, অনিত্য মায়ার খেলা।এ জগত অনিত্য, একমাত্র ঈশ্বরই নিত্য, শাশ্বত এবং আনন্দময়।মনুষ্যের মায়াময় অনিত্য এ সংসারের বিবিধ আসক্তি থেকে যত দ্রুত নিজেকে মুক্ত করতে পারে, ততই কল্যাণ। শ্রীকুশল বরণ চক্রবর্ত্তী সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।

এ সংসারে যত সঞ্চিত বস্তু আছে, তার সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী। প্রত্যেকটি বস্তুর বিনাশ অবশ্যম্ভাবী, উত্থানের অন্ত পতন অবশ্যম্ভাবী,সংযোগের অন্ত বিয়োগ অবশ্যম্ভাবী এবং জীবনের অন্ত হল মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। তাই কোন কিছুতেই সামান্যতম আসক্তি থাকা উচিত নয়। এ প্রসঙ্গে রামায়ণের উত্তরকাণ্ডে বলা হয়েছে:
সর্বে ক্ষয়ান্তা নিচয়াঃ পতনাস্তাঃ সমুচ্ছ্ৰয়াঃ।
সংযোগা বিপ্রয়োগান্তা মরণান্তং চ জীবিতম্॥
তস্মাৎ পুত্রেষু দারেষু মিত্রেষু চ ধনেষু চ।
নাতিপ্রসঙ্গঃ কর্তব্যো বিপ্রয়োগো হি তৈর্ধ্রুবম্।।
(রামায়ণ : উত্তরকাণ্ড, ৫২.১১-১২)
"এ সংসারে যত সঞ্চিত বস্তু আছে, তার সবকিছুর পরিণাম বিনাশ, উত্থানের অন্ত পতন, সংযোগের অন্ত বিয়োগ এবং জীবনের অন্ত হল মৃত্যু। সুতরাং স্ত্রী, পুত্র, মিত্র ও ধনে বিশেষ আসক্তি রাখা উচিত নয়। কারণ সেসব থেকে বিয়োগ হওয়া নিশ্চিত।"
শ্রীশঙ্করাচার্য তাঁর জগদ্বিখ্যাত 'মোহমুদগর' গ্রন্থে মানব জীবনের ক্ষণস্থায়ীত্বকে স্মরণ করে দিয়ে অতিরিক্ত ধন সম্পদের, জনসম্পদের এবং যৌবনের গর্ব করতে সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করেছেন মনুষ্য যখন 'আমি আমি' এবং 'আমার আমার' বলে অকারণে অভিমান করে, ভগবান তখন মনুষ্যের কাণ্ড দেখে হাসেন। মনুষ্যের এত গর্বের ধন মহাকাল নিমেষের মধ্যেই যে কোন সময়েই হরণ করে নিয়ে যেতে পারে। এরপরেও ভোগী মনুষ্যেত হুশ হয় না। তারা বেহুশ হয়ে সংসার সমুদ্রে ভাসতে থাকে।
মা কুরু ধনজনযৌবনগর্বং
হরতি নিমেষাৎ কালঃ সর্বম্।
মায়াময়মিদমখিলং হিত্বা
ব্রহ্মপদং প্রবিশাশু বিদিত্বা।।
(মোহমুদগর :৩)
"হে মানব কখনো অতিরিক্ত ধন,জন এবং যৌবনের গর্ব করো না; মহাকাল নিমেষের মধ্যেই তোমার এ সকল গর্বের বস্তু হরণ করে নিয়ে যেতে পারে। তাই মায়াময় এই সংসারের সকল আসক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহৃত করে আস্তে আস্তে ব্রহ্মপদের শরণে যত্নবান হও।"
সংসারের আসক্তি থেকে ধীরেধীরে ব্রহ্মপদের শরণে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন। জীবের যতদিন এই ব্রহ্মপদ লাভ না হয়, ততকালই জীব জন্ম জন্মান্তরের আবর্তনে আবর্তিত হয়ে দুঃখ যাতনা ভোগ করতে থাকবে। বাংলার মরমী লোককবি দেওয়ান হাসন রাজা চৌধুরী (২১ ডিসেম্বর ১৮৫৪ - ৬ ডিসেম্বর ১৯২২) অনিত্য মনুষ্য জীবন নিয়ে অসংখ্য গান রচনা করেছেন। একটি গানে তিনি বলেছেন, সকলেই তাঁকে ঘরবাড়ি সুন্দর করে বানাতে বলে। কিন্তু শূণ্যের মাঝে কি করে ঘরবাড়ি বানাবেন, তিনি শুধুই ভাবেন। ভালো করে ঘরবাড়ি বানিয়ে আর কতদিনই বা থাকতে পারবেন। ঘরবাড়ি বানানোর চিন্তা করতে করতেই একদিন আয়নায় চেয়ে দেখলেন, তার সকল চুল পেঁকে গেছে। অর্থাৎ সুন্দর করে সাধের ঘরবাড়ি বানানোর আগেই একদিন পরপারের ডাক চলে এসেছে। এই মনুষ্য দেহের সাধের পিঞ্জিরা অনিত্য, একে আর সাজিয়ে গুছিয়ে কি লাভ? কবির ভাষায়:
"লোকে বলে বলেরে
ঘর-বাড়ি ভালা নাই আমার
কি ঘর বানাইমু আমি শূণ্যের মাঝার।।
ভালা কইরা ঘর বানাইয়া
কয়দিন থাকমু আর।
আয়না দিয়া চাইয়া দেখি
পাকনা চুল আমার।।
জানত যদি হাসন রাজা
বাঁচব কতদিন।
বানাইত দালান-কোঠা
করিয়া রঙিন।"
মনুষ্য যখন কোন হাসপাতালে অসুস্থ রোগীদের দুঃখদুর্দশা দেখে। তীব্র ব্যাথায় কাতরস্বরে রোগগ্রস্থ ব্যক্তি কাতরাতে থাকে, ঠিক তখনই মনুষ্যের মনে কিছুটা সাময়িক ভাবান্তর প্রবেশ করে। হিংসা, বিদ্বেষ, ঈর্ষা কিছুটা সাময়িকভাবে ভুলে যায়। একই ঘটনা মনুষ্যের শ্মশানেক্ষেত্রে গেলেও হয়। বড় সাধের এবং অত্যন্ত আদরের শরীরটি মৃতদেহ হওয়ার পরে, সেই শরীরটিকে অগ্নিতে সমর্পণ করা হয়।জীর্ণবস্ত্রাদির মত অসার শরীরটি যখন আগুনে পুড়ে যেতে থাকে; তখন মনুষ্যের মাঝে কিছুটা সময়ের জন্যে হলেও সাত্ত্বিক ভাবান্তর আসে। এ ভাবান্তরকে শাস্ত্রে 'শ্মশানবৈরাগ্য' বলে। অর্থাৎ সে তখন কিছু সময়ের জন্য হলেও জগতের অনিত্যতা উপলব্ধি করতে পারে। সে বুঝতে পারে, জগতে কেউ কারো নয়। সকলই অনিত্য সময়ের, অনিত্য মায়ার খেলা।এ জগত অনিত্য, একমাত্র ঈশ্বরই নিত্য, শাশ্বত এবং আনন্দময়।মনুষ্যের মায়াময় অনিত্য এ সংসারের বিবিধ আসক্তি থেকে যত দ্রুত নিজেকে মুক্ত করতে পারে, ততই কল্যাণ।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁