-->

ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

ভক্তিতে অচিন্ত্য ভগবান, দৃশ্যমান হয়ে লীলা করেন।

ভক্তিতে অচিন্ত্য ভগবান,   দৃশ্যমান হয়ে লীলা করেন ভগবানের প্রতি প্রেম, ক্রোধ, ভয়, স্নেহ, ভক্তির যে কোন একটি আসক্তি জন্মালে, তাই মুক্তির কারণ হয়। অনাদি অনন্ত ভগবানকে আমরা সন্তান রূপেও উপাসনা করি। সন্তান স্নেহে তাকে ঘুম পারাই, স্নান করাই, লাড্ডু মাখন খেতে দেই, দোলনায় দোল দেই আরো কত কি করি।বিষয়টি হয়ত পৃথিবীর অনেক জাতির চিন্তার বাইরে। তাদের কাছে ঈশ্বর প্রশাসকের মত। যার ভয়ে সকলেই তটস্থ। কিন্তু সনাতন ধর্মাবলম্বী ঈশ্বরকে আপনরূপে প্রিয়তম রূপেও উপাসনা করে।মাতৃস্নেহেও উপাসনা করে। যশোদা এবং কৌশল্যা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তাঁরা অচিন্ত্য ভগবানকে সন্তানস্নেহের বাৎসল্য রসে সিক্ত করে আরাধনা করেছিলেন। তাদের দেখানো পথে যুগযুগ থেকেও কোটিকোটি ভক্ত আজও ভগবানকে বালগোপাল রূপে রামলালা রূপে আরাধনা করে চলছে। ভারতবর্ষে ঈশ্বরকে বাৎসল্যরসে শিশুরূপে আরাধনা করে সাক্ষাৎ দর্শনও পেয়েছেন অগুনিত সাধু-সন্তগণ। শ্রীমদ্ভাগবতের সপ্তম স্কন্দে ভক্ত প্রহ্লাদ তাঁর পিতা হিরণ্যকশিপুকে বলেছেন- শ্রবণ, কীর্তন, স্মরণ, পাদসেবন, অৰ্চন, বন্দন, দাস্য, সখ্য ও আত্মনিবেদন— ভক্তি এ নয় প্রকারের। তাই ভক্তিকে নববিধা ভক্তি বলে অবিহিত করা হয়। এ নয় প্রকার ভক্তির যেকোন এক প্রকারে অথবা একাধিক মিশ্রিত পথে ঈশ্বরের পথে অগ্রসর হওয়া যায়। শ্রবনং কীর্তনং বিষ্ণোঃ স্মরণং পাদসেবনম্। অৰ্চনং বন্দনং দাস্যংসখ্যমাত্ম নিবেদনম্ ॥ (শ্রীমদ্ভাগবত:৭.৫.২৩) " ভগবান বিষ্ণুর শ্রবণ, কীর্তন, স্মরণ, পাদসেবন, অৰ্চন, বন্দন, দাস্য, সখ্য ও আত্মনিবেদন—এই নয়টি হলো ভক্তির লক্ষণ।" ঈশ্বর চিন্তাকে বৃত্তেবদ্ধ করা যায় না। ঈশ্বরের পথে যাওয়ার জন্যে সকল পথই খোলা। তাই নিজে যতটুকু বুঝেছি সেখানেই দাড়ি দিয়ে চিন্তার দেয়াল টেনে দেয়া অযৌক্তিক।ঈশ্বরের ভাব হল, অসীমের মধ্যেও সসীম, আবার সসীমের মধ্যে তিনিই অসীম।প্রয়োজনে ঈশ্বর ডাকেন,আসেন, থাকেন জীবের মাঝে, তখন তাঁকেই বলে লীলা।লোক শিক্ষা দিতে ভক্তের সাথে লীলা করেন বলেই, তাঁকে বলা হয় লীলাপুরুষোত্তম। শ্রীমদ্ভগবদগীতায় চতুর্থ অধ্যায়ে ভগবান আশ্বাস দিয়েছেন, যে যেভাবে তাঁর শরণাপন্ন হবে এবং উপাসনা করবে; সে ঠিক সেভাবেই তাঁকে পাবে। যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহম্। মম বর্ত্মানুবর্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সর্বশঃ।। (শ্রীমদ্ভগবদগীতা: ৪.১১) সকল নদী যেমন ঘুরেফিরে সমুদ্রে লয় হয়, তেমনি জগতের সকল পথই ভগবানের পথ। বিভিন্ন পথে এক, অনন্ত, অচিন্ত্য ভগবানই জীবকে অভীষ্ট ফল দান করেন। তিনি সকাম ভক্তকে কাম্যফল এবং নিষ্কাম ভিক্তকে মুক্তি প্রদান করেন। মনুষ্যগণ সর্বভাবে বুঝে হোক বা না বুঝে হোক এক পরমেশ্বরের পথেরই অনুবর্তন করছে। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব যেমন ঈশ্বরকে মাতৃরূপা কালী নামে উপাসনা করে সিদ্ধিলাভ করেছেন; তেমনি সন্তানবাৎসল্যে শিশুরূপেও আরাধনা করেছেন। অদ্বৈত, শাক্ত, বৈষ্ণবসহ প্রচলিত সনাতন বহু মত-পথেই শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব উপাসনা করেছেন। ১৮৬৪-১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে জটাধারী নামে এক রামভক্ত সাধু বাবাজী দাক্ষণেশ্বর মন্দিরে আসেন। তাঁর উপাস্য ছিলো শ্রীরামচন্দ্রের ‘রামলালার’ রূপ। অর্থাৎ ভগবান শ্রীরামচন্দ্রকে শিশুরূপে উপাসনা করতেন। শ্রীরামচন্দ্রের রামলালার মূর্তি যত্নের সঙ্গে সেবা করতেন। যেখানে যেতেন, সঙ্গে করে সাথে নিয়ে যেতেন । ভিক্ষা করে আগে রামলালাকে ভোগ নিবেদন করেই, তবে সেই সাধু বাবাজী প্রসাদ পেতেন। বাবাজী রামলালকে সর্বদা জীবন্ত দেখতেন। তিনি দেখতেন রামলালা সাধুর আশেপাশে একটি শিশুর রূপ ধারণ করে চলাফেরা করছেন।শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবও একইভাবে রামলালাকে শিশুর রূপে দেখতে পেতেন। তিনি দেখতেন, রামলালা শিশুরূপে ঘোরাঘুরি করছে, খেলাধূলা করছে। কখনও কোলে ওঠার জন্য আবদার করছে । কখনও আবার কিছুতেই কোলে থাকবে না। কোল থেকে নেমে রোদে দৌড়াদৌড়ি করতে যাবে। কাঁটাবনে গিয়ে ফুল তুলবে বা গঙ্গার জলে নেমে যাবে ইত্যাদি। সাধু বাবাজী দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে অনেকদিন ছিলেন।একদিন বাবাজী শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবকে বললেন, "রামলালা আমাকে বলেছে, সে দক্ষিণেশ্বর থেকে যাবে না। তাই আমি রামলালাকে তোমার কাছে রেখে যাচ্ছি। তোমার আছে রামলালা আনন্দে থাকবে"। এ বলে বাবাজী রামলালাকে শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে রেখে দক্ষিণেশ্বর থেকে চলে গেলেন। পরবর্তীতে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব সেই শিশুরূপে দৃশ্যমান রামলালার সেবাপূজার ভার নিয়েছিলেন। ভক্তের ভক্তিতে অচিন্ত্য ভগবান দৃশ্যমান হয়ে ভক্তের সাথে লীলা করেন। কারণ তিনি লীলাময়, তাঁর লীলা বোঝা দায়। কিন্তু পক্ষান্তরে সৃষ্টিকর্তাকে যারা পাঁচতলা, সাততলার উপরে হাতে পাপপুণ্যের ক্যালকুলেটর হাতে নিয়ে বসে থাকে এক নির্দয় রুক্ষ-শুষ্ক প্রশাসক হিসেবে কল্পনা করে ; তারা কখনই অচিন্ত্য পরমেশ্বরের এ লীলা উপলব্ধি করতে পারবে না।পরমাত্মাকে বিভিন্ন পাণ্ডিত্যপূর্ণ শাস্ত্রীয়  আলোচনার মাধ্যমে লাভ করা যায় না। প্রখর মেধাবুদ্ধি মাধ্যমেও তাঁকে লাভ করা যায় না। শাস্ত্রীয় জ্ঞানেও তাঁকে লাভ করা যায় না। কর্ম,জ্ঞান, ভক্তি, যোগ এবং তন্ত্র -এ পঞ্চপথে যেমন তাঁকে পাওয়া যায়। আবার তিনি যদি কৃপা না করেন, তবে এই পঞ্চপথ কেন, কোন পথেই তাঁকে পাওয়া যায় না। তিনি যাঁকে যোগ্য বলে বরণ করে নেন;  তাঁকেই কৃপা করেন। দিব্য অনুভূতি এবং সাধকের তীব্রতর ভক্তিতেই তিনি দৃশ্যমান হয়ে লীলা করেন। সাধক যে রূপেই তাঁকে চিন্তা করে মনকে কেন্দ্রীভূত করে, সেই রূপেই আবির্ভূত হয়ে তিনি সাধককে কৃপা করেন। নায়মাত্মা প্রবচনেন লভ্যো  ন মেধয়া বহুনা শ্রুতেন। যমেবৈষ বৃণুতে তেন লভ্য- স্তোস্যৈষ আত্মা বিবৃণুতে তনুং স্বাম্।। (কঠ উপনিষদ: ১.২.২৩) " পরমাত্মাকে প্রবচন এবং আলোচনার মাধ্যমে লাভ করা যায় না। প্রখর মেধাবুদ্ধি দিয়ে অথবা অনেক শাস্ত্রীয় তত্ত্ব শুনেও লাভ করা যায় না। এই পরমাত্মা যাঁকে যোগ্য বলে বরণ করে নেন;  তাঁর কাছেই তিনি প্রকট হন।" শ্রীকুশল বরণ চক্রবর্ত্তী সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
ভগবানের প্রতি প্রেম, ক্রোধ, ভয়, স্নেহ, ভক্তির যে কোন একটি আসক্তি জন্মালে, তাই মুক্তির কারণ হয়। অনাদি অনন্ত ভগবানকে আমরা সন্তান রূপেও উপাসনা করি। সন্তান স্নেহে তাকে ঘুম পারাই, স্নান করাই, লাড্ডু মাখন খেতে দেই, দোলনায় দোল দেই আরো কত কি করি।বিষয়টি হয়ত পৃথিবীর অনেক জাতির চিন্তার বাইরে। তাদের কাছে ঈশ্বর প্রশাসকের মত। যার ভয়ে সকলেই তটস্থ। কিন্তু সনাতন ধর্মাবলম্বী ঈশ্বরকে আপনরূপে প্রিয়তম রূপেও উপাসনা করে।মাতৃস্নেহেও উপাসনা করে। যশোদা এবং কৌশল্যা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তাঁরা অচিন্ত্য ভগবানকে সন্তানস্নেহের বাৎসল্য রসে সিক্ত করে আরাধনা করেছিলেন। তাদের দেখানো পথে যুগযুগ থেকেও কোটিকোটি ভক্ত আজও ভগবানকে বালগোপাল রূপে রামলালা রূপে আরাধনা করে চলছে। ভারতবর্ষে ঈশ্বরকে বাৎসল্যরসে শিশুরূপে আরাধনা করে সাক্ষাৎ দর্শনও পেয়েছেন অগুনিত সাধু-সন্তগণ। শ্রীমদ্ভাগবতের সপ্তম স্কন্দে ভক্ত প্রহ্লাদ তাঁর পিতা হিরণ্যকশিপুকে বলেছেন- শ্রবণ, কীর্তন, স্মরণ, পাদসেবন, অৰ্চন, বন্দন, দাস্য, সখ্য ও আত্মনিবেদন— ভক্তি এ নয় প্রকারের। তাই ভক্তিকে নববিধা ভক্তি বলে অবিহিত করা হয়। এ নয় প্রকার ভক্তির যেকোন এক প্রকারে অথবা একাধিক মিশ্রিত পথে ঈশ্বরের পথে অগ্রসর হওয়া যায়।
শ্রবনং কীর্তনং বিষ্ণোঃ স্মরণং পাদসেবনম্।
অৰ্চনং বন্দনং দাস্যংসখ্যমাত্ম নিবেদনম্ ॥
(শ্রীমদ্ভাগবত:৭.৫.২৩)
" ভগবান বিষ্ণুর শ্রবণ, কীর্তন, স্মরণ, পাদসেবন, অৰ্চন, বন্দন, দাস্য, সখ্য ও আত্মনিবেদন—এই নয়টি হলো ভক্তির লক্ষণ।"
ঈশ্বর চিন্তাকে বৃত্তেবদ্ধ করা যায় না। ঈশ্বরের পথে যাওয়ার জন্যে সকল পথই খোলা। তাই নিজে যতটুকু বুঝেছি সেখানেই দাড়ি দিয়ে চিন্তার দেয়াল টেনে দেয়া অযৌক্তিক।ঈশ্বরের ভাব হল, অসীমের মধ্যেও সসীম, আবার সসীমের মধ্যে তিনিই অসীম।প্রয়োজনে ঈশ্বর ডাকেন,আসেন, থাকেন জীবের মাঝে, তখন তাঁকেই বলে লীলা।লোক শিক্ষা দিতে ভক্তের সাথে লীলা করেন বলেই, তাঁকে বলা হয় লীলাপুরুষোত্তম। শ্রীমদ্ভগবদগীতায় চতুর্থ অধ্যায়ে ভগবান আশ্বাস দিয়েছেন, যে যেভাবে তাঁর শরণাপন্ন হবে এবং উপাসনা করবে; সে ঠিক সেভাবেই তাঁকে পাবে।
যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহম্।
মম বর্ত্মানুবর্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সর্বশঃ।।
(শ্রীমদ্ভগবদগীতা: ৪.১১)
সকল নদী যেমন ঘুরেফিরে সমুদ্রে লয় হয়, তেমনি জগতের সকল পথই ভগবানের পথ। বিভিন্ন পথে এক, অনন্ত, অচিন্ত্য ভগবানই জীবকে অভীষ্ট ফল দান করেন। তিনি সকাম ভক্তকে কাম্যফল এবং নিষ্কাম ভিক্তকে মুক্তি প্রদান করেন। মনুষ্যগণ সর্বভাবে বুঝে হোক বা না বুঝে হোক এক পরমেশ্বরের পথেরই অনুবর্তন করছে। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব যেমন ঈশ্বরকে মাতৃরূপা কালী নামে উপাসনা করে সিদ্ধিলাভ করেছেন; তেমনি সন্তানবাৎসল্যে শিশুরূপেও আরাধনা করেছেন। অদ্বৈত, শাক্ত, বৈষ্ণবসহ প্রচলিত সনাতন বহু মত-পথেই শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব উপাসনা করেছেন। ১৮৬৪-১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে জটাধারী নামে এক রামভক্ত সাধু বাবাজী দাক্ষণেশ্বর মন্দিরে আসেন। তাঁর উপাস্য ছিলো শ্রীরামচন্দ্রের ‘রামলালার’ রূপ। অর্থাৎ ভগবান শ্রীরামচন্দ্রকে শিশুরূপে উপাসনা করতেন। শ্রীরামচন্দ্রের রামলালার মূর্তি যত্নের সঙ্গে সেবা করতেন। যেখানে যেতেন, সঙ্গে করে সাথে নিয়ে যেতেন । ভিক্ষা করে আগে রামলালাকে ভোগ নিবেদন করেই, তবে সেই সাধু বাবাজী প্রসাদ পেতেন। বাবাজী রামলালকে সর্বদা জীবন্ত দেখতেন। তিনি দেখতেন রামলালা সাধুর আশেপাশে একটি শিশুর রূপ ধারণ করে চলাফেরা করছেন।শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবও একইভাবে রামলালাকে শিশুর রূপে দেখতে পেতেন। তিনি দেখতেন, রামলালা শিশুরূপে ঘোরাঘুরি করছে, খেলাধূলা করছে। কখনও কোলে ওঠার জন্য আবদার করছে । কখনও আবার কিছুতেই কোলে থাকবে না। কোল থেকে নেমে রোদে দৌড়াদৌড়ি করতে যাবে। কাঁটাবনে গিয়ে ফুল তুলবে বা গঙ্গার জলে নেমে যাবে ইত্যাদি। সাধু বাবাজী দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে অনেকদিন ছিলেন।একদিন বাবাজী শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবকে বললেন, "রামলালা আমাকে বলেছে, সে দক্ষিণেশ্বর থেকে যাবে না। তাই আমি রামলালাকে তোমার কাছে রেখে যাচ্ছি। তোমার আছে রামলালা আনন্দে থাকবে"। এ বলে বাবাজী রামলালাকে শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে রেখে দক্ষিণেশ্বর থেকে চলে গেলেন। পরবর্তীতে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব সেই শিশুরূপে দৃশ্যমান রামলালার সেবাপূজার ভার নিয়েছিলেন। ভক্তের ভক্তিতে অচিন্ত্য ভগবান দৃশ্যমান হয়ে ভক্তের সাথে লীলা করেন। কারণ তিনি লীলাময়, তাঁর লীলা বোঝা দায়। কিন্তু পক্ষান্তরে সৃষ্টিকর্তাকে যারা পাঁচতলা, সাততলার উপরে হাতে পাপপুণ্যের ক্যালকুলেটর হাতে নিয়ে বসে থাকে এক নির্দয় রুক্ষ-শুষ্ক প্রশাসক হিসেবে কল্পনা করে ; তারা কখনই অচিন্ত্য পরমেশ্বরের এ লীলা উপলব্ধি করতে পারবে না।পরমাত্মাকে বিভিন্ন পাণ্ডিত্যপূর্ণ শাস্ত্রীয় আলোচনার মাধ্যমে লাভ করা যায় না। প্রখর মেধাবুদ্ধি মাধ্যমেও তাঁকে লাভ করা যায় না। শাস্ত্রীয় জ্ঞানেও তাঁকে লাভ করা যায় না। কর্ম,জ্ঞান, ভক্তি, যোগ এবং তন্ত্র -এ পঞ্চপথে যেমন তাঁকে পাওয়া যায়। আবার তিনি যদি কৃপা না করেন, তবে এই পঞ্চপথ কেন, কোন পথেই তাঁকে পাওয়া যায় না। তিনি যাঁকে যোগ্য বলে বরণ করে নেন; তাঁকেই কৃপা করেন।
দিব্য অনুভূতি এবং সাধকের তীব্রতর ভক্তিতেই তিনি দৃশ্যমান হয়ে লীলা করেন। সাধক যে রূপেই তাঁকে চিন্তা করে মনকে কেন্দ্রীভূত করে, সেই রূপেই আবির্ভূত হয়ে তিনি সাধককে কৃপা করেন।
নায়মাত্মা প্রবচনেন লভ্যো
ন মেধয়া বহুনা শ্রুতেন।
যমেবৈষ বৃণুতে তেন লভ্য-
স্তোস্যৈষ আত্মা বিবৃণুতে তনুং স্বাম্।।
(কঠ উপনিষদ: ১.২.২৩)
" পরমাত্মাকে প্রবচন এবং আলোচনার মাধ্যমে লাভ করা যায় না। প্রখর মেধাবুদ্ধি দিয়ে অথবা অনেক শাস্ত্রীয় তত্ত্ব শুনেও লাভ করা যায় না। এই পরমাত্মা যাঁকে যোগ্য বলে বরণ করে নেন; তাঁর কাছেই তিনি প্রকট হন।"
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁