আমাদের সমাজে কিছু মানুষ আছে, অন্যের ক্ষতি করাটা তাদের অনেকের রক্তের মধ্যে মিশে আছে। তারা অন্যের উপকার তো দূরে থাক, মানুষের ক্ষতি করা এবং ক্ষতি বা অপকার চিন্তা ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না। এদের হাজারবার ক্ষমা করে দিলেও, তারা একই কাজের পুনরাবৃত্তি বারবার করেই চলে। অপরাধ ক্ষমা করে দিলেও, তারা ক্ষমার মাহাত্ম্য উপলব্ধি করতে পারে না। এরা সাধারণত আত্মকেন্দ্রিক অকাটমূর্খ হয়। এ মূর্খরা কারো সৎপরামর্শ বা উপদেশে কখনোই কর্ণপাত করেই না। উল্টো সেই উপদেশদাতার পিছনে ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীবদ্ধভাবে লেগে যায়।ভারতবর্ষের প্রাচীন বিশ্বাস অনুসারে, দুধ সাপের প্রিয় খাদ্য । তাই সাপকে আদর করে যতই দুধ খাওয়ানো হোক, দুধ খেয়ে সাপের বিষের কোন পরিবর্তন হয়না। উল্টো দুধ খেয়ে শরীর পরিপুষ্ট করার ফলে, দিনেদিনে সাপের শরীরের বিষই শুধু বেড়ে যায়। তাই উপদেশ দানের ক্ষেত্রে অধিকারী বিবেচনা না করে রাস্তায় যাকে পাবে তাকেই উপদেশ দিতে নেই। এতে হিতে বিপরীত হয়। উপদেশ সবাই গ্রহণ করতে পারে না। আদর করে দুধ খাওয়ালেও সাপের যেমন বিষই বৃদ্ধি পায়; তেমনি মূর্খ বানরকে সারাদিন বসে বিভিন্ন ভালো ভালো উপদেশ দিলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় সে ভালো কথায় বানরের কোন কাজে লাগে না। বানরকে যদি বলা হয় একটি কলাবাগানের কোন একটি কলাগাছ থেকে কলা খেতে। বাগানের অন্য গাছগুলো নষ্ট না করতে। কিন্তু বানরটি দেখা যায়, তাকে যে একটি গাছ থেকে কলা খেতে দেয়া হয়েছে, এ কৃতজ্ঞতাবোধটি সে সম্পূর্ণ ভুলে গিয়ে বাগানটির প্রত্যেকটি গাছকেই নষ্ট করা শুরু করে।কেন তারা অপ্রয়োজনীয় নষ্ট করে, এর উত্তর নেই।বিষয়টি হয়ত তারা তাদের আজন্ম স্বভাবের কারণেই করে থাকে। মানুষ সহ জগতের প্রত্যেকটি জীব সহজেই তার স্বভাব পরিবর্তন করতে পারে না।এ কারণেই সংস্কৃতের বিখ্যাত নীতিশিক্ষার গ্রন্থ 'পঞ্চতন্ত্র' এ বলা হয়েছে, কোন বানরকে যদি গৃহে কেউ আদর করে আশ্রয় দেয় তবে দিনশেষে দেখা যায় সেই মূর্খ বানরটি আজন্মলালিত স্বভাবের বশে গৃহের মালিকের উপকারিতা উপলব্ধি করতে না পেরে তাদেরই জীবন অতিষ্ঠ করে তোলে।
উপদেশাে হি মূর্খাণাং প্রকোপায় ন শান্তয়ে।
পয়ঃপানং ভুজঙ্গানাং কেবলং বিষবর্ধনম্॥
উপদেশে ন দাতব্যো যাদৃশে তাদশে জনে।
পশ্য বানরমূর্খেণ সুগৃহী নিগৃহীকৃতঃ ॥
(পঞ্চতন্ত্র: প্রথমতন্ত্র, মিত্রভেদ,৩৯৩-৩৯৪)
"মূর্খরা কেউ উপদেশ দিলে শান্ত তো হয়না, উল্টো সেই উপদেশদাতার প্রতি কুপিত হয়।সাপকে আদর করে যতই দুধ খাওয়ানো হোক, দুধ খেয়ে সাপের বিষ শুধুই বেড়ে যায়।
উপদেশ যাকে তাকে দিতে নেই। মূর্খ বানরকে যতই উপদেশ দেয়া হোক না কেন; দিনশেষে দেখা যায় সেই মূর্খ বানরটি গৃহের মালিককেই অতিষ্ঠ করে উদ্বাস্তু করে।"
একই প্রকার অপরাধ করা অপরাধীদের মধ্যে সবার অপরাধ এক নয়।কেউ স্বজ্ঞানে স্বেচ্ছায় জ্ঞানত অপরাধ করে। কেউ না বুঝে অজ্ঞানত অপরাধ করে ফেলে অনুতপ্ত হয়।কেউ অন্যকে বিভিন্ন প্রকারের প্রলোভনে অপরাধে প্ররোচিত করিয়ে অপরাধ সংগঠিত করায়। আবার কেউ হয়ত বংশীয় অপরাধী। এরা কোন অজানা কারণে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম একই আচরণ করে। অপরাধী মানসিকতা তাদের রক্তের মধ্যে মিশে আছে। এরা যে কোন অপরাধ করতে একটু দ্বিধা বোধ করে না।বংশগতির বিজ্ঞান থেকে জানা যায় কোন আচরণ বা কোন অভ্যাস যদি কেউ তিন প্রজন্ম অনুসরণ করে তবে রক্তের মধ্যে এর একটি ছাপ পড়ে যায়।খুব দ্রুতই সে ছাপ বংশের সকলে সদস্যই কাটিয়ে উঠতে পারে না। কেউ কেউ পারে অধিকাংশই পারে না। তবে প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি, শুভসঙ্গ, সাত্ত্বিক প্রবৃত্তি অপরাধ প্রবণতা ক্ষয়িষ্ণু করে দেয়।
তবে মানুষ যখন বুঝতে পারে না, তখন কিছুটা হলেও বুঝিয়ে দিতে হয় তার সীমাবদ্ধতা। যতক্ষণ সে তার সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করতে না পারে, ততক্ষণই সে উগ্রতা, অসভ্যতা, অভব্যতা, ক্রূরতা, পাশবিকতা, আসুরিকতা, পৈশাচিকতা বিরামহীনভাবে আশেপাশের মানুষের সাথে করতেই থাকে। তাই আসুরিকভাবাপন্ন মানুষদের সম্যক জ্ঞান দিতে মাঝেমধ্যে কাউকে এগিয়ে আসতে হয়। তিনি এসে বুঝিয়ে দেন যে, উগ্রতা কোন সঠিক পথ নয়। বিষয়টি নিয়ে একটি অত্যন্ত সুন্দর শিক্ষামূলক গল্প রয়েছে। এক দেশে উদার হৃদয়ের এক মহান রাজা ছিলেন। তিনি ছদ্মবেশ ধারণ করে দেশের অবস্থা দেখতে মন্ত্রী, সেনাপতি সহ তার সকল পারিষদ নিয়ে একটি নৌকায় ভ্রমণ শুরু করেন। মন্ত্রী রাজাকে নদীর দুইপাড়ের দর্শনীয় এবং গুরুত্ববহ স্থানগুলোর বর্ণনা দিচ্ছেন। নৌকাটি বেশ বড়। নৌকার মাঝির একটি পালিত কুকুর ছিলো। সেও নৌকায় রাজন্যবর্গদের সাথে নদীতে ভ্রমণ করছিলো। কিন্তু বাঙালির প্রবাদবাক্যে আছে না যে, "কুকুরের পেটে ঘি সয় না"। বাঙালির এ প্রবাদবাক্যটিকে সত্য প্রমাণ করে কুকুরটি নৌকার মহারাজ সহ সকল যাত্রীকে বিরক্ত করা শুরু করে দেয়। কুকুরটি অস্থির হয়ে প্রচণ্ড লাফালাফি করে দেয়। তার উচ্চস্বরে ঘেও ঘেও শব্দে সম্পূর্ণ মনোরম পরিবেশটিই পালটে যেতে থাকে।নৌকার মাঝি অনেক চেষ্টা করেও তার পালিত কুকুরকে বশে আনতে পারে না। সে তখন নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করতে থাকে যে, " হায়,এই কুকুরটিকে কেন আমি আজ বাসায় শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে আসিনি"। কুকুরটির স্বভাবজাত প্রকৃতির কারণে আজ রাজার কাছে অসহায় মাঝির মানসম্মান সকলই হারাতে হলো। একজন সাধারণ মাঝির নৌকায় মহারাজ উঠেছেন, এটা মাঝির পরম সৌভাগ্য। মহারাজ ছদ্মবেশে ভ্রমণে বের হওয়াতেই একমাত্র বিষয়টি সম্ভব হয়েছে। ছদ্মবেশ ধারণ না করলে, মহারাজা কোনদিনও হয়তো তার নৌকায় পাও রাখতেন না। রাজা নৌকায় উঠায় আজ নৌকাটি ধন্য এবং চালক মাঝিটি ধন্য। মাঝির জীবনের সেই সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে মাঝিকে বদনামের ভাগিদার করছে মাঝিরই নিজ অন্নে প্রতিপালিত কুকুর। মাঝি কি করবে আর ভেবে পেলো না। সে দুচোখে অন্ধকার দেখা শুরু করলো।
পরিস্থিতি দেখে, রাজা কুকুরকে শান্ত করার কোনও উপায় খুঁজে বেড় করতে মন্ত্রীকে আদেশ করেন। রাজার আদেশ পেয়ে বিচক্ষণ মন্ত্রী বলেন: "মহারাজ এই কুকুরকে শান্ত করতে আমার এক দণ্ড সময়ও লাগবে না। আমি শুধুই আপনার আদেশের অপেক্ষায় ছিলাম। আপনার আদেশে পেয়েছি এখন দেখুন এই কুকুরটির উগ্রতা এবং পাগলামি কি করে এক নিমেষেই চলে যায়"। যে কথা সেই কাজ। মন্ত্রী নৌকার দুই জন যাত্রীর সাহায্য নিয়ে কুকুরটিকে ধরে দূরে নদীতে ছুড়ে ফেলে দিলেন। এতক্ষণ পাগলামি করা কুকুরটি তখন অথৈজলে মৃত্যুভয়ে হাঁসফাঁস করতে শুরু করে দিলো। কুকুরটি বাঁচার জন্যে নৌকার কাছে সাঁতার কেটে যতই আসার চেষ্টা করছে, ততই মন্ত্রীর নির্দেশনায় মাঝি দ্রুতগতিতে নৌকা অন্যদিকে নিয়ে যেতে থাকে। যেন কুকুরটি নৌকাটির কাছে আসতে না পারে। এমন বহুক্ষণ করতে করতে কুকুরটি অনেকটা শক্তিহীন নিস্তেজ হয়ে যায়। সে চোখে অন্ধকার দেখা শুরু করে।এরপরেও প্রাণ বাঁচাতে নৌকা ধরার আপ্রাণ প্রচেষ্টা করতে লাগলো। কুকুরটি তার জীবনের মূল্য অনুভব করলো। ধীরেধীরে কুকুরটির মধ্যে উগ্রতা বিদূরিত হয়ে আত্মসমর্পণ ভাব চলে আসে।
কিছুটা দূরত্বে নৌকাকে রেখে মন্ত্রী সকলই পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পরে মন্ত্রী মাঝিকে আদেশ দিলো নৌকাটিকে কুকুরটির কাছে নিয়ে যেতে। মাঝি এবার মন্ত্রীর নির্দেশনায় তার পালিত কুকুরটিকে নৌকায় তুলে নিলেন। কুকুরটি নৌকায় উঠে ভিন্ন রূপ ধারণ করলো। কেউ বুঝতেই পারবে না যে, এই কুকুরটি কিছুক্ষণ আগে এতটা উগ্রতা, হিংস্রতা, অসভ্যতা করেছে। সে ভেজা বেড়ালের মত গোপনে নৌকার একটি কোণায় গিয়ে চুপ করে বসে রইলো। কুকুরের আচরণের আমূল পরিবর্তন দেখে নৌকার অন্যান্য যাত্রীদের মত রাজাও প্রচণ্ড অবাক হলেন।তিনি মন্ত্রীকে জিজ্ঞেসা করলেন, "কিছুক্ষণ আগে ভয়ংকর পাগলামি করা উগ্র কুকুরটি কি করে একটি পোষা বেড়ালের মত আচরণ করছে?"
উত্তরে মৃদু হেসে মন্ত্রী বললেন, "মহারাজ সবাইকেই মাঝেমধ্যে তার সাধ্য এবং ক্ষমতা উপলব্ধি করিয়ে দিতে হয়। তা না হলে মানুষ সামান্যতেই ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ হয়ে যায়। আপনি দেশের রাজা, এই নৌকার মাঝি সহ আমরা সকলেই আপনার অন্নে প্রতিপালিত। বিষয়টি কুকুরটির উপলব্ধিতে ছিলো না। সে তার কুকুরত্বের দম্ভে পাগল হয়ে এ সকল উগ্রতা করছিলো। কিন্তু কুকুরটিকে সমুচিত শিক্ষা দিতে যখন তাকে নদীর জলে ফেলা দেয়া হলো, তখন জলের ক্ষমতা ও নৌকার উপযোগিতায় কুকুরটি তার নিজের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা বুঝতে পারলো। এরপরে আমাদের ইচ্ছায় যখন কুকুরটিকে নদী থেকে উদ্ধার করা হলো, তখন সে চুপ করে বসে রইলো। কুকুরটির মনে মৃত্যুভয় এখনো কাটেনি।"
এভাবে কুকুরটি প্রচণ্ড শান্ত হয়ে যায়। সে আর কখনও এমন উগ্র আচরণ করেনি। গল্পের এই কুকুরটির মত অনেক কুকুরেরাই নিজেদের ক্ষমতা উপলব্ধি করতে না পেরে নিজেদের অসীম ক্ষমতাবান মনে করে। কিন্তু এদের যদি মন্ত্রীর মত মাঝেমধ্যে নিজেদের ক্ষমতা এবং সীমাবদ্ধতা চিনিয়ে দেয়া হত, তাহলে এরা অধিকাংশই শান্ত হয়ে যেত। তারা বুঝতে পারতো, তাদের ক্ষমতার উৎস তারা নিজেরা নয়। তারা মানুষের অন্নে প্রতিপালিত। মানুষের অন্ন বন্ধ হয়ে গেলে তাদের বেঁচে থাকাই দুষ্কর। এ কারণে অকারণে কারও ক্ষতি করতে নেই। বুদ্ধিমান ব্যক্তির কোন অপকার ক্ষতি তো একদমই করতে নেই। বিষয়টি মহাভারতের উদ্যোগ পর্বেও বলা হয়েছে। কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তির ক্ষতি করে যদি আমরা মনে করি যে, "আমি তো অনে দূরে আছি, তিনি আমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না"। এমন ভাবনা যারা ভাবেন তারা হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে বোকার রাজ্যে বসবাস করে। কারণ বুদ্ধিমান ব্যক্তির দুইহাত এতদূরে প্রসারিত যে, যেকোন ভাবে তিনি তার উপরে হওয়া অন্যারের ভয়ংকরভাবে প্রতিশোধ নিতে সক্ষম। অকারণ অপকারীকে উচিত শিক্ষা দিতে তিনি যে কোন উদ্যোগ যেকোন সময়ে নেয়ার যোগ্যতা রাখেন। বুদ্ধিমান ক্ষমতাবান ব্যক্তির সামান্যতম উদ্যোগেই অকারণ অপকর্ম করা ব্যক্তিটি সমূলে বিধ্বস্ত হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারেন।
অপকৃত্য বুদ্ধিমতো দূরস্থোঽস্মীতি নাশ্বসেৎ।
দীর্ঘৌ বুদ্ধিমতো বাহূ যাভ্যাং হিংসতি হিংসিতঃ।।
(মহাভারত: উদ্যোগ পর্ব, ৩৮.৮)
"বুদ্ধিমান ব্যক্তির কোন অপকার করে "আমি দূরে আছি" ভেবে কখনো আশ্বস্ত থাকবে না।কারণ বুদ্ধিমান ব্যক্তির বাহুযুগল অনেক দীর্ঘ হয়, সেই দীর্ঘ বাহুযুগল প্রসারিত করে তিনি অপকারীকে উচিত শিক্ষা দিতে পারেন।"
বুদ্ধিমান ব্যক্তির অকারণ কোন প্রকার ক্ষতি করতে নেই, ভারতবর্ষের ইতিহাসে এর সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত হল ছত্রপতি শিবাজি এবং বিজাপুরের সেনাপতি আফজল খানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় শান্তিচুক্তি বৈঠকের ঘটনাটি।১৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে বিজাপুরের সুলতানের আকস্মিক মৃত্যু হয়। সুলতানের মৃত্যুতে তার নাবালক পুত্র সিংহাসনে আরোহন করে। সে সময় মোগল শাসনকর্তা ঔরঙ্গজেবের সাথে বিজাপুরের যুদ্ধ শুরু হয়। দুইপক্ষের যুদ্ধের সুযোগে ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ জাওয়ালি অধিকার করেন। বিজাপুরের সুলতান শিবাজীর শক্তি খর্ব করার জন্য সেনাপতি আফজল খানকে প্রেরণ করেন। আফজল খান ছিলেন বিশালদেহী এক ভয়ংকর ব্যক্তি। তিনি বারবার প্রচেষ্টা করেও শিবাজীকে সামনাসামনি হারাতে না পারায়। এবার তাই আফজল খান শিবাজিকে হত্যা করতে প্রতারণার আশ্রয় নিলেন। তিনি শিবাজীকে প্রতাপগড় দুর্গে যা বর্তমানে মহারাষ্ট্রের সাতরায় অবস্থিত, সেই দুর্গে এক দ্বিপক্ষীয় শান্তিবৈঠকের আমন্ত্রণ করেন। তবে এ দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে শর্ত ছিলো যে, একটি তরোয়াল এবং ফুল ছাড়া কারো সঙ্গে আর কিছুই রাখা যাবে না। ছত্রপতি শিবাজি মহারাজকে দেখে বিশাল দেহধারী আফজল খান সৌজন্যের অভিনয় করে শিবাজী মহারাজকে বুকের সাথে জড়িয়ে আলিঙ্গন করলেন। কিন্তু মনে দুষ্ট বুদ্ধি থাকলে যা হয়। তিনি আলিঙ্গন অবস্থায় পোশাকের মধ্যে লুকোনো তার ছুরিটি শিবাজিকে হত্যা করার জন্যে ধীরেধীরে বের করলেন। শিবাজীকে হত্যা করার জন্য যখনই ছুরিটি শিবাজির দেহে বিদ্ধ করবেন, ঠিক তখনই আফজল খান রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে। বুদ্ধিমান শিবাজী মহারাজ জানতেন এমন হবে, তাই তিনি একরকম প্রস্তুত হয়েই এসেছিলেন। তিনি বাঁ-হাতের মধ্যে ধারলো বাঘনখ পরে এসেছিলেন। সেই লুকানো বাঘনখ দিয়েই বিশ্বাসঘাতক আফজল খানের পেটে ঢুকিয়ে দিয়ে তাকে হত্যা করলেন। বুদ্ধিমান নিরপরাধ ব্যক্তির অকারণ ক্ষতির শাস্তি আফজল খান সাথেসাথেই পেয়ে গেলেন। পোশাকের নীচে শিবাজি মহারাজ বর্ম পরিহিত ছিলেন। তাই আফজল খানের তরোয়াল তাঁর দেহের সামান্যতম ক্ষতি করতে পারেনি। পক্ষান্তরে আফজল খান ধারালো বাঘনখে ক্ষতবিক্ষত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।পরবর্তীতে সেনাপতি আফজল খানের আকস্মিক মৃত্যুতে বিজাপুরের সেনাবাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। সে সুযোগে ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ কোলাপুর করায়ত্ত করেন।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।