-->

ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

মন্দির প্রতিষ্ঠাকারী থেকে, সংস্কারকারী শতগুণ পুণ্যলাভ করে

mondir, মন্দির, কৃষ্ণ মন্দির, ভাঙ্গা মন্দির


১৯৪৭ এর আগস্ট মাসে বাংলা ভাগ হয়, ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। দেশভাগের অভিঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে পূর্ববঙ্গের হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্ভ্রান্ত অভিজাত অংশটি তাদের হাজার হাজার বছরের পূর্বপুরুষদের ভিটেমাটি ত্যাগ করে পশ্চিমবঙ্গে চলে যায়। মাতৃভূমি ত্যাগ করা মানুষদের বিশাল একটি অংশ প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও সাম্প্রদায়িক আক্রমণের প্রেক্ষাপটে দেশান্তরিত হয়। পিতৃপুরুষের ভিটেমাটি পরিত্যাগ করে দেশান্তরিত হওয়ার যে কি যন্ত্রণা, যারা এর শিকার হয়েছে শুধু তারাই জানে। কেউ তাদের বুকের যন্ত্রণা কোনদিনও উপলব্ধিও করতে পারবে না। দেশভাগের পরে বাংলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ অংশ পূর্ববঙ্গ, পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পূর্বপাকিস্তান নাম ধারণ করে।

১৯৪৭ এর দেশভাগের অভিঘাত বড় হানা দিয়েছে বাঙালি হিন্দুর জীবনে। পাকিস্তানের দু'টি অংশের মধ্যে শুধু পূর্বপাকিস্তানেই জমিদারি প্রথা বিলোপ করা হয়। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্থানে ঠিকই রয়ে যায় সামন্তবাদী জমিদারি প্রথা। এর অন্যতম কারণ ছিল পূর্বপাকিস্থানের জমিদারদের সিংহভাগই ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের । রাতারাতি জমিদারি হারিয়ে, লজ্জায় অপমানে রাতের অন্ধকারে পূর্ববঙ্গের অধিকাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের জমিদাররাই ভারতে পাড়ি দেন। জমিদাররা ভারতে চলে গেলে, রয়ে যায় তাদের প্রাসাদসম বাড়ি এবং মন্দিরগুলো। টেরাকোটা, নবরত্ন সহ বাংলার অনন্য স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত মন্দিরগুলোর অধিকাংশই আজ জীর্ণশীর্ণ ভগ্নদশা। কিন্তু এ জীর্ণশীর্ণ ভগ্ন মন্দিরগুলো আজও হিন্দুদের এক সমৃদ্ধকালের সাক্ষী দিচ্ছে।

এ ভগ্নদশাপ্রাপ্ত মন্দিরগুলোর দিকে তাকালে, মনে হয় একবুক কষ্ট নিয়ে মন্দিরের দেয়াল এবং মেঝের পাষাণগুলো বুঝি আজও ক্ষুধার্ত। বড় বেদনা, সাম্প্রদায়িক হিংসা, ঝড়-ঝঞ্ঝা অত্যাচার সহ্য করে মন্দিরের পাথরগুলো, ইটগুলো আজও কত প্রবাহমান দুঃখ বেদনায় সিক্ত কালের যাত্রার সাক্ষী হয়ে আছে। প্রত্যেকটি জমিদার বাড়িগুলোতে দুর্গামণ্ডপ ছিল, গোবিন্দ মণ্ডপ ছিল, নাটমণ্ডপ ছিল। মণ্ডপের বিশাল বিশাল ভগ্ন থামের কঙ্কালগুলো আজও যেন ফিসফিস করে আমাদের সাথে কথা বলতে চায়। কিন্তু আমাদের সময় নেই তাদের সেই পুরাকালীন পুরাতাত্ত্বিক অন্তরের কথা শোনার। ব্যস্ত জীবনে আমরা খুব বেশি স্বার্থপর পুতুল হয়ে যাচ্ছি। এ স্বার্থপর পুতুলটি, শুধু তার স্বার্থেই খেলা দেখায়, নৃত্য করে ; স্বার্থহীন সময়ে কুম্ভকর্ণের নিদ্রা যায়।
আমি এই ভগ্নদশা পুরাতন জমিদার বাড়িগুলো দেখতে যাইনা। প্রচণ্ড মানসিকভাবে আহত করে আমাকে। বড় কষ্ট বুকে চিন্ চিন্ করে হানা দেয়।মনে হয়, মন্দিরগুলো কেন এমন ধ্বংসস্তুপের জঙ্গলে পরিণত হল? এর দায় কি সম্প্রদায় হিসেবে আমাদেরও নেই। বারবার মনে পরে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'সোনার তরী' কাব্যগ্রন্থের 'পুরষ্কার' কবিতার কয়েকটি চরণ।
"কে আছে কোথায়, কে আসে কে যায়,
নিমেষে প্রকাশে,নিমেষে মিলায়-
বালুকার পরে কালের বেলায়
ছায়া-আলােকের খেলা।
জগতের যত রাজা মহারাজ
কাল ছিল যারা কোথা তারা আজ,
সকালে ফুটিছে সুখদুখলাজ-
টুটিছে সন্ধ্যাবেলা।"
জমিদার বাড়িগুলো দখল হয়ে সরকারি বা ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান হয়েছে। বাড়িগুলো দূরে থাক, এ বাড়িগুলোতে অবস্থিত মন্দির যা দেবোত্তর সম্পত্তি ; সেই দেবোত্তর সম্পত্তি পর্যন্ত আমরা রক্ষা করতে পারিনি। অথচ একটু সচেতন হয়ে আমরা চাইলেই এ মন্দিরগুলো পুনরুজ্জীবিত করতে পারি। ভগ্নদশায় কিছুকিছু মন্দির এখনো আছে। যারা জীর্ণ প্রাসাদের পুনঃ সংস্কার করে জীর্ণ পুরাতন দেব প্রতিমার স্থলে পুনরায় নতুন প্রতিমা স্থাপন করতে পারি। বিষয়টি আমাদের শাস্ত্রেও বলা আছে। বিশেষ করে দেবীপুরাণে। সেখানে যারা পুরাতন মন্দির সংস্কার করে নতুন করে দেববিগ্রহাদি সংস্থাপন করতে বারবার বলা হয়েছে। যারা এই সংস্কারের মহত্তম কাজটি করেন, তাদের দেবীপুরাণে সেই মহামতিগণকে 'মহাধিয়' বলে অবিহিত করা হয়েছে। একটি জীর্ণ মন্দিরের সংস্কারক মন্দির প্রতিষ্ঠা যিনি করেছেন, তার থেকেও শতগুণ পুণ্যভাগী হয়। তাই যার সাধ্য আছে, তার যথাসাধ্য জীর্ণ মন্দির সংস্কার করা উচিত।
স্থাপয়েদ্দেবতা বৎস মাতৃণাং মাতৃকী বিধিঃ।
শীর্ণদেব্যাথ প্রাসাদা যেন পুনঃ সংস্কৃতা দ্বিজ॥
অশােচ্যাস্তে বিজানীয়াদ্ধুতপাপা মহাধিয়ঃ।
মূলাচ্ছতগুণং পুণ্যমাপ্নুয়াজ্জীর্ণকারকঃ॥
(দেবীপুরাণ :১১৮ অধ্যায়,১৪-১৫)
"বসিষ্ঠ বললেন, যারা জীর্ণ প্রাসাদের পুনঃ সংস্করণ, জীর্ণ দেবতার স্থলে পুনরায় নব নির্মিত দেবতাকে সংস্থাপন করেন ; সেই মহামতিগণ নিষ্পাপ এবং অশোচ্য।
জীর্ণ সংস্কারক মূলাপেক্ষা শতগুণ পুণ্যভাগী হয়। অতএব বিচক্ষণ ব্যক্তির জীর্ণ মন্দির সংস্কার করা সর্বতোভাবে কর্তব্য। "
সাধ্য এবং সামর্থ্য থাকার পরেও যদি আমরা পুরাতন মন্দির সংস্কার না করি তবে দেবীপুরাণ অনুসারে শূন্য দেবালয়ে দুর্ভিক্ষ, রোগ-ব্যাধি ও বিভিন্ন প্রকারের ভীতির উৎপন্ন হয়। দেবতারা রুষ্ট হয়ে অভিসম্পাত করেন। সকল দৈবসত্ত্বা সেখান থেকে তিরোহিত হয়। যা পরিণামে অকল্যাণ বয়ে নিয়ে আসে।
তম্মাৎ সর্বপ্রযত্নেন জীর্ণং পাল্যং বিপশ্চিতা।
শূন্যং দেবালয়ং বৎস যস্মিন্ দেশেঽপি তিষ্ঠতি॥
ভয়ং তত্র বিজানীয়াদ্ দুর্ভিক্ষং ভয়পীড়নম্।
জীর্ণং দেহং যথা দেহী ত্যক্ত্বা চান্যং সমাশ্রয়েৎ ॥
(দেবীপুরাণ :১১৮ অধ্যায়,১৬-১৭)
"হে বৎস! যে দেশে শূন্য দেবালয় থাকে, তথায় দুর্ভিক্ষ, ব্যাধি ও বিবিধ ভীতি উৎপন্ন হয়।
দেহী যেমন জীর্ণ দেহ ত্যাগ করে অন্য দেহে গমন করে, তদ্রপ দেবতারাও জার্ণ প্রাসাদ পরিত্যাগ করে অন্যত্র গমন করেন।"
শূন্য ভগ্ন দেব-মন্দিরে পিশাচাদি বায়বীয় আধার গ্রহণ করে মানুষের অকল্যাণ করে এক ভয়ংকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। মানুষ তখন ভুতপ্রেত পিশাচের
উৎপাতে সেই স্থান পরিত্যাগ করে। ধীরেধীরে স্থানটি বাসশূন্য হয়ে শোচনীয় হয়ে যায়। সেই স্থানে অবস্থানকারী ব্যক্তিরা, সমাজে যতই মহান হোক না কেন তারা বিনাশপ্রাপ্ত হয়। তাই পুরাতন দেবমন্দির সংস্কারে অবহেলা করা অনুচিত। তবে অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় রাজা জমিদারদের ফেলা রাখা মন্দিরগুলো সংস্কারকাজ করা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। সাধ থাকলেও সাধ্য থাকে না। সেক্ষেত্রে অন্ততপক্ষে মন্দির ভগ্ন থাকলেও পূজার দেবতা বিগ্রহকে পুনঃ স্থাপন করে পূজাদি করা উচিত। অর্থাৎ মন্দির যতই জীর্ণশীর্ণ হোক, কোনমতেই তাকে পরিত্যাগ করা উচিত নয়।
দেবতা জীর্ণপ্রাসাদং ত্যক্ত্বা অন্যত্র যান্তি হি।
তম্মিন্ শূন্যে পিশাচাদ্যা আশ্রিতা ভয়দা নৃণাম্॥
উদ্বাসয়ন্তি তৎস্থানং কালং কূর্বন্তি দারুণম্।
নিঃশোচ্যাস্তেঽভবন্ বৎস তটস্থা লােকা ন সংশয়ঃ॥ গ্রহােপসৃষ্টা বিদ্বিষ্টা যান্তি নাশং মহানপি।
তম্মাৎ তৎ সংস্করেদ্বৎস পূজার্থং চান্যথা ন্যসেৎ॥
(দেবীপুরাণ :১১৮ অধ্যায়,১৮-২০)
"তারপর সেই শূন্য দেব-মন্দিরে পিশাচাদি আশ্রয় গ্রহণ করে, মানুষের জন্যে ভয়প্রদ হয়ে থাকে।
তারা বিবিধ উৎপাতে সেই স্থানকে বাসশূন্য করে ফেলে। হে বৎস! তৎস্থানস্থ লোকেরা যে নিরতিশয় শোচনীয় হয়, তদ্বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
গ্রহ-গৃহীত ব্যক্তি মহান হইলেও বিনাশপ্রাপ্ত হয়। অতএব জীর্ণ দেবমন্দির সংস্কার করা কর্তব্য। যদি নিতান্ত সংস্কার কাৰ্য্য সম্ভব না হয়ে ওঠে, তবে অন্ততপক্ষে পূজার জন্য সেই দেবতাকে স্থাপন করবে।"
দেবতা বিগ্রহাদি এবং মন্দির যতই পুরাতন ব্যবহার অনুপযোগী হোক,মন্দিরের দেবতার পূজা অর্চনা সর্বদা নিরবচ্ছিন্ন করে যেতে হবে। পুরাতন মন্দির বা দেবতার নামে যদি কেউ সামান্যতম ধনদান করে তবে তিনি মহাপুণ্যবান হিসেবে দেবতার অপার অনুগ্রহ লাভ করেন। যিনি পুরাতন মন্দির নিজ অর্থব্যয়ে সংস্কার সাধন করেন, তিনি যিনি মন্দিরটি স্থাপন করেছেন তার থেকেও শত গুণাধিক পুণ্য লাভ করেন। যে দেশে মন্দির পুরায় সংস্কার করা হয় সেই দেশের রাজাও পুণ্যলাভ করে। সর্বদা শান্তি বিরাজ করে রাজ্যে।
দেবং দেবলয়ং বাপি জীর্ণাজীর্ণং নিয়োজয়েৎ।
যথা সদা ভবেৎ পূজা তথা কাৰ্য্যা বিপশ্চিতা॥
মূলমেবাপ্নুয়াৎ পুণ্যং দ্রব্যাংশেন মহামুনিঃ।
কর্তা শতাধিকং মূলাদাপ্নুয়াদবিচারণাৎ।
রাজা ষষ্ঠং শমাপ্নোতি প্রজা রাষ্ট্রঞ্চ শুধ্যতি॥
(দেবীপুরাণ :১১৮ অধ্যায়,২১-২২)
"দেবতা বা দেবালয় জীর্ণ হোক, অজীর্ণ হোক, এইরূপ ভাবে রাখবে যাতে সতত পূজা হতে পারে।হে মহামুনে! জীর্ণ দেবালয় বা দেবতার পক্ষে যৎকিঞ্চিৎ দ্রব্য ব্যয় করলেও মূলকর্তার পুণ্য লাভ হয়। জীর্ণ সংস্কর্তা মূলকর্তা অপেক্ষা শত গুণাধিক পুণ্য লাভ করবে। রাজার ষষ্ঠাংশ পুণ্যলাভ হয়; প্রজা ও রাজ্য সুখে থাকে।"
মন্দির প্রতিষ্ঠাকারী থেকে পুরাতন মন্দির সংস্কারকারী শতগুণ পুণ্যভাগি হন। শাস্ত্রে এভাবেই জীর্ণশীর্ণ পুরাতন মন্দিরের সংস্কারকার্যে উৎসাহিত করা হয়েছে। এরপরেও শাস্ত্রবাক্যেরটি আমরা আজও সম্যক উপলব্ধি করতে পারিনি। রাজা, জমিদার বা ব্যবসায়ীদের বাড়ির মন্দিরগুলো অধিকাংশ সংস্কার নতুনভাবে দেববিগ্রহ স্থাপন করতে আমরা শুধু স্বদিচ্ছার অভাবে পারিনি। সসম্প্রদায়গতভাবে বিষয়টি নিয়ে কোন কর্মপরিকল্পনা ছিল না আমাদের। তবে পুরাতন পুরাতাত্ত্বিক কিছু মন্দিরে আজও পূজা হচ্ছে। তবে সেই সংখ্যাটা সীমিত। সারা বাংলায় আমাদের প্রত্যকের বাড়ির মধ্যে এবং আশেপাশে অসংখ্য ভগ্ন সমাধি, মঠ এবংমন্দির রয়েছে। অধিকাংশ সমাধি মঠগুলোতে শিবলিঙ্গ স্থাপিত ছিল; নিত্য পূজা হত শিবলিঙ্গ মূর্তিতে। যাদের পূর্বপুরুষদের সমাধিক্ষেত্রে মঠ স্থাপন করে শিবলিঙ্গ পূজা হচ্ছে, তাদের উত্তরসূরী অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নেই। মঠের নামের পাথরের ফলকটি এবং শিবলিঙ্গ মূর্তিটি দুষ্কৃতকারী কর্তৃক লুণ্ঠিত হওয়ার অনেকেই যার সমাধি মন্দির তাকে চিনতে পারে না। তারা আশেপাশের সমাধি মঠগুলোতে নতুন করে বিগ্রহাদি স্থাপন করে, পূজা-অর্চনা শুরু করে না। সমাধি মন্দিরের ব্যক্তিটি আমাদের জ্ঞাত হোক অথবা অজ্ঞাত হোক; সমাধি মন্দিরটি সংস্কার করে পূজা অর্চনা করা শাস্ত্রীয় নির্দেশ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এ শাস্ত্রীয় বিধানটি অধিকাংশই জানি না।
সমাধিমঠে স্বয়ং শিব বিরাজ করে। তাই অধিকাংশ মঠগুলোতেই ভগবান শিবের প্রতীক লিঙ্গমূর্তি স্থাপন করা হয়েছে।আমাদের উচিত, আশেপাশে এখনও যত পরিত্যক্ত মঠ-মন্দির আছে ; সে সকলই অতিদ্রুত সংস্কার করে দেব বিগ্রহাদি স্থাপন করা। একটি মঠও যেন জীর্ণশীর্ণ হয়ে রাস্তারপাশে পরে না থাকে। অন্য ধর্মাবলম্বী ভূমিদস্যু তো বটেই নিজ সম্প্রদায়ের বহু মানুষ অপেক্ষা করে, কবে ঘরের সামনের ভগ্ন মঠটি সম্পূর্ণ হবে। মঠটি নিশ্চিহ্ন হলে তিনি মঠের স্থনটি ভোগদখল করবেন। লোভী ভূমিদস্যু এরকম বহু ব্যক্তিকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। এরকম বহু মঠের নিশ্চিহ্ন হওয়ার কাহিনী আমি আমার এ ক্ষুদ্র জীবনেই দেখেছি এবং শুনেছি।
অনেকেই জগন্নাথ হলের পুকুরের পারে এমনি একটি জীর্ণশীর্ণ পরিত্যক্ত মঠ ছিল। কয়েকজন শিক্ষক এবং ছাত্রদের সক্রিয় ভূমিকায় এ মঠটি তার পূর্বের স্বরূপ অনেকটাই ফিরে পেয়েছে। প্রতিদিন সে অপূর্ব শিবমন্দিরে পূজা হচ্ছে। অথচ সংস্কারের উদ্যোগ না নেয়া হলে এটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়ে একসময় নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত।এমন উদ্যোগ আমরা সারাদেশের প্রত্যেকটি ভগ্ন মঠ মন্দিরের ক্ষেত্রে চাইলেই নিতে পারি।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসির সুইমিংপুলের পাশে অপূর্ব কারুকার্য শোভিত দুটি মঠ আছে। সরকারি, বেসরকারি,স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের আয়ত্তের মধ্যেই হোক আর সার্বজনীন রাস্তার পাশে হোক ; এ সকল মঠ মন্দিরগুলো হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের দেবোত্তর সম্পদ। এর আশু সংরক্ষণ প্রয়োজন। এ পুরাতন মঠ-মন্দিরগুলো রাষ্ট্রেরও পুরাতাত্ত্বিক সম্পদ। যার মূল্য অপরিসীম। তাই এ পুরাতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলো সঠিক সংরক্ষণ এবং সংস্কার করা হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের যেমন প্রধান দায়িত্ব ; তেমনিভাবে রাষ্ট্রেরও।এক্ষেত্রে দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কেই বিষয়টিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে দেশের পুরাতাত্ত্বিক সংস্কৃতি রক্ষার্থে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। কারণ, বিষয়টি শুধু কোন সম্প্রদায়ের নয়, সামষ্টিক জাতিগোষ্ঠীর।
কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী
সহকারী অধ্যাপক,
সংস্কৃত বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁