বর্তমানে গুরুকে কেন্দ্র করে গুরুবাদী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অন্ত নেই। এই গুরুবাদীদের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই বেদ-বেদান্তের চর্চা হয় না। এরা শুধু গুরুর কিছু মতাদর্শের উপরেই আবর্তিত হয়। বর্তমানকালের গুরু এবং গুরুর সুবিধাবাদী অনুসারীরা পবিত্র গুরুদীক্ষার বিষয়টিকে একটি ব্যবসায় পরিণত করেছে। অন্ধ বা সুবিধাভোগী অনুসারীদের কাঁধে ভর করে কোন মতে একটু প্রতিষ্ঠা পেলেই হল। তবেই গুরু ব্যবসা জমজমাট। গুরু নামধারী অনেক ব্যক্তিদের বিভিন্ন প্রকারের সুবিধা নিতে বৈদিক বা শাস্ত্রীয় বিভিন্ন সিদ্ধান্তকে ব্যবহার করতে ইদানীং দেখা যায়। ধর্ম বা বেদ-বেদান্ত নয়, সরাসরি বা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার করাই থাকে তাদের অন্যতম লক্ষ্য। সেই ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে কয়েকটি কথা বলা প্রয়োজন। বর্তমানে গুরুবাচক শব্দ হিসেবে আচার্য, উপাধ্যায়, গুরু এবং ঋত্বিক শব্দগুলো সমার্থক শব্দ হিসেবে প্রতিনিয়ত ব্যবহৃত হলেও, শব্দগুলোর মধ্যে কিছু ভিন্নতা রয়েছে। শব্দগুলো সম্পূর্ণভাবে এক নয়। সর্বোপরি একটি বিষয় সর্বাগ্রে মাথায় রাখা প্রয়োজন যে, বর্তমানে শিষ্যের কানে কয়েকটি সংস্কৃত শব্দের মন্ত্র প্রদানকারী গুরু এবং প্রাচীনকালের গুরু এক নয়। এদের মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য। প্রাচীনকালে ছিল গুরুমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা। সেই শিক্ষা ব্যবস্থায় বিদ্যা শিক্ষার জন্য প্রত্যেকেরই গুরুগৃহে গিয়ে শিক্ষা লাভ করতে হত। অষ্টম থেকে দ্বাদশ বছরের মধ্যেই সাধারণত গুরুগৃহে শিক্ষা লাভের জন্য যেতেই হত। কারণ সকলকেই নুন্যতম দ্বাদশ বছরের মত শিক্ষা লাভ করে পঁচিশ বছর বয়সে গৃহে ফিরে আসতে হত। এরপরে বিবাহ করে গার্হস্থ জীবন শুরু করতে হত। সেই প্রাচীন গুরুগণ শিষ্যকে ৬৪ বিদ্যায় ধীরেধীরে পারদর্শী করে তুলতেন। কিন্তু বর্তমানের গুরুগণ শিষ্যদের কানে কানে একটি মন্ত্র দিয়ে গুরুর দায়িত্ব সম্পন্ন করেন। তাই বর্তমানকালের এবং প্রাচীনকালের গুরুগণ একই নয়। তবে এদের গুরু শব্দটির নামগত সাদৃশ্য রয়েছে । বর্তমানের গুরুদের আচার্য বলা হয়। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে, আচার্য শুধুমাত্র তাকেই বলা হয় যিনি বিনামূল্যে অবৈতনিকভাবে শিষ্যকে বৈদিক শিক্ষা প্রদান করেন। মনুসংহিতায় আচার্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, যে গুরু শিষ্যকে উপনয়ন প্রদান করে দ্বিতীয় জন্ম প্রদান করেন; যিনি শিষ্যকে গৃহ্যসূত্র, ধর্মসূত্র, শৌতসূত্র শুল্বসূত্র নামক চারপ্রকারের কল্পসূত্রে শিক্ষা প্রদান করেন; যিনি শিষ্যকে রহস্যবিদ্যা বেদান্তের শিক্ষা প্রদান করেন এবং সাধ্যমত বৈদিক শিক্ষা প্রদান করেন সেই নির্লোভ মহত্তম ব্যক্তিকেই আচার্য বলা হয়। এ প্রসঙ্গে মনুসংহিতায় বলা হয়েছে:
উপনীয় তু যঃ শিষ্যং বেদমধ্যাপয়েদ্দ্বিজঃ ।
সকল্পং সরহস্যঞ্চ তমাচার্যং প্রচক্ষতে ॥
(মনুসংহিতা:২.১৪০)
"যে দ্বিজ শিষ্যকে উপনয়ন প্রদান করে উপনীত করে কল্প ও রহস্য সহ বেদ অধ্যয়ন করান, তাঁকে আচার্য বলা হয়।"
শিষ্য যথাযথ বৈদিক জ্ঞান লাভ করুক, এ ছাড়া আচার্যের শিষ্যের কাছে কিছুই প্রত্যাশা করে না। শিষ্যের কোনদিন সাধ্য নেই যে, আচার্যের ঋণ পরিশোধ করতে পারে । কিন্তু বর্তমানকালের আচার্য দাবি করা সকলে না হলেও, অনেক গুরুদের বৈদিক শিক্ষা প্রদানে সাধ্য বা ইচ্ছা দেখা যায় না। পক্ষান্তরে তাদের অনেকেরউ দৃষ্টি থাকে, ধনী ব্যবসায়ী শিষ্যদের পকেটের দিকে। ইনিয়ে বিনিয়ে বিভিন্ন ছদ্মবেশে তারা সেই ধনী শিষ্যদের পকেট খালি করার কৌশল বা অজুহাত খুঁজে বেড়ায়। এমনও অনেক গুরু এবং প্রতিনিধিগণ রয়েছে, যারা প্রচার করে যে, প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে গৃহে খাবার থাক বা না থাক; আচার্য বা গুরুর নামে নিয়মিত টাকা সঞ্চয় করে রাখতে হবে। সেই টাকাটা গুরুর পরিপালনের জন্য। বিষয়টি অত্যন্ত হাস্যকর। শাস্ত্রে গুরুকে তাঁর শিষ্যদের পরিপালন করতে বলা হয়েছে। শিষ্যের সাধ্য নেই গুরুকে পরিপালন করে। শিষ্যের কখনো সাধ্য নেই যে, সে গুরুর বৈদিক জ্ঞান প্রদানেত ঋণ শোধ করতে পারে। তবে এই নব্য গুরুপন্থী ব্যবসায়ীগণ শিষ্যদের পকেট কাঁটতে একটি বৈদিক দৃষ্টান্তকে উপস্থাপন করেন। তা হল, বৈদিক যুগে শিষ্য ভিক্ষা সংগ্রহ করে প্রথমে গুরুকে সমর্পণ করত, তবে নিজে গ্রহণ করত।প্রাচীনকালের শিক্ষা ব্যবস্থা যেহেতু অবৈতনিক ছিল, তাই সকল গুরুগৃহে না হলেও অধিকাংশ গুরুগৃহে শিষ্যকে প্রতিদিন গৃহস্থ গৃহে গিয়ে অন্ন সংগ্রহ করতে হত। শিষ্যদের খাওয়া দাওয়া যেহেতু গুরুগৃহেই করতে হত, তাই শিষ্যকে অন্ন সংগ্রহ করে প্রথমে গুরুকেই সমর্পণ করতে হত। যেহেতু গুরু একাধারে গুরুগৃহকালীন সময়ের প্রধান অভিভাবক এবং বিদ্যাদাতা। তাই ভিক্ষা সংগ্রহের পরে গুরুর উদ্দেশ্যে সমর্পিত হত। পঁচিশ বছর বয়সে যখন গুরুগৃহের শিক্ষা সমাপন হয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হত। শুধুমাত্র সেই সমাবর্তন অনুষ্ঠানেই গুরু শিষ্যের থেকে যৎসামান্য গুরুদক্ষিণা গ্রহণ করতেন। প্রাচীন সেই গুরুগৃহকালীন গুরু-শিষ্যের উদাহরণ দেখিয়ে বর্তমান কালের কয়েকটি ব্যক্তিকেন্দ্রিক গুরুবাদী প্রতিষ্ঠানের গুরু এবং গুরুর প্রতিনিধিগণ গুরু প্রণামী এবং গুরু পরিপালনের কথা বলে শিষ্যের কাছে প্রতিদিন নগদ অর্থ প্রদান করতে আদেশ করে। যা একজন গুরুর কর্ম নয়। শিষ্যও কথামত গুরু নামক ইষ্টের নামে টাকা সঞ্চয় করে রাখে। পরবর্তীতে গুরুর বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে এই নব্যগুরুগণ যদি এভাবে নির্দেশনা দিতেন যে, প্রতিদিন গুরুর নামে সাধ্যমত টাকা সঞ্চয় করে মাসের শেষে সেই টাকা আশেপাশের গরীব দুঃখী অসহায় মানুষদের মাঝে বিতরণ করে দিতে হবে। তাহলেও বিষয়টি কিছুটা যৌক্তিক হত। কিন্তু তা না বলে, গুরু যদি সেই সকল সঞ্চিত টাকা মাসের শেষে অথবা বছরের শেষে নিজের বাড়িতে পাঠাতে নির্দেশনা প্রদান করেন; তখন গুরুর নির্লোভ মহত্তম বিষয়টি কিছুটা হলেও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়।
যিনি বিনে পয়সায় শিষ্যকে বেদের শিক্ষা প্রদান করেন, তাঁকে আচার্য বলা হয়। বিপরীতে যিনি অর্থের বিনিময়ে বা জীবিকার তাগিদে শিষ্যকে বেদের অংশমাত্র বা ষড়বেদাঙ্গ শিষ্যকে অধ্যয়ন করান, তাঁকে উপাধ্যায় বলা হয়। শিক্ষা, কল্প, নিরুক্ত, ব্যাকরণ, ছন্দ এবং জ্যোতিষ এ ছয়টিকে বেদাঙ্গ বলা হয়। উপাধ্যায়কে আমরা বর্তমান কালের বিদ্যালয়ে, মহাবিদ্যালয় অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সাথে তুলনা করতে পারি। যারা মাসিক বেতন গ্রহণ করে শিষ্য বা ছাত্রদের বিদ্যা প্রদান করেন।
একদেশন্তু বেদস্য বেদাঙ্গান্যপি বা পুনঃ ।
যোহধ্যাপয়তি বৃত্ত্যর্থমুপাধ্যায়ঃ স উচ্যতে ॥
(মনুসংহিতা:২.১৪১)
"যিনি জীবিকার জন্য বেদের অংশমাত্র বা বেদাঙ্গ শিষ্যকে অধ্যয়ন করান, তাঁকে উপাধ্যায় বলা হয়।"
আমরা যে গুরু নিয়ে এত আলোচনা করছি সেই গুরুর সংজ্ঞা এবং কর্তব্য মনুসংহিতায় সুস্পষ্টভাবে দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, বৈদিক বিধানানুযায়ী শিষ্যকে গভাধানাদি কর্ম করেন এবং শিষ্যকে অন্নদ্বারা প্রতিপালন করেন, তাঁকেই গুরু বলা হয়। শাস্ত্রে গুরুকে তাঁর অধিকারী শিষ্যকে অন্নদ্বারা প্রতিপালন করতে বলা হয়েছে। অথচ বর্তমানে আমরা দেখি, সম্পূর্ণ ভিন্নতা। গুরু শিষ্যকে অন্নদ্বারা প্রতিপালন করা দূরে থাক, বরং উল্টো শিষ্য বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে ধনী শিষ্যকে বিভিন্ন প্রকারের লোভ এবং ভয়ের আবর্তে ফেলে পকেট খালি করার চেষ্টা করে।
নিষেকাদীনি কমাণি যঃ করোতি যথাবিধি ।
সম্ভাবয়তি চান্নেন স বিপ্রো গুরুরুচ্যতে ॥
(মনুসংহিতা:২.১৪২)
"যিনি নিয়মানুসারে শিষ্যকে গভাধানাদি কর্ম করেন এবং অন্নদ্বারা প্রতিপালন করেন, সেই বিপ্রকে গুরু বলা হয়।"
যিনি প্রার্থীত হয়ে কল্যাণের জন্য তার হয়ে অগ্ন্যাধান, পাকযজ্ঞ ও অগ্নিষ্টোমাদি সকল যজ্ঞ সুনিপুণভাবে যিনি সম্পন্ন করেন, তাঁকে শাস্ত্রে ঋত্বিক্ বলা হয়। ঋত্বিক সকল যজ্ঞ সমাধা করেন।ঋগ্বেদীয় আলায়ন শ্রৌতসূত্র অনুসারে একটি যজ্ঞ করতে ষোলজন ঋত্বিকের প্রয়োজন। বৈদিক এ ষোলজন ঋত্বিক চার প্রকারের বা চারটি গণের।এ চারটি গণ হলেন: হােতৃগণ, উদগাতৃগণ, অধ্বর্যুগণ ও ব্রহ্মাগণ। এর মধ্যে হোতৃগণের চারজন যজ্ঞে ঋগ্বেদীয় মন্ত্রপাঠ করেন। উদগাতৃগণের চারজন উদগাতা, যজ্ঞে বীণা ও বাদ্যযন্ত্রাদি সহযোগে সামগান করেন। অধ্বর্যুগণের অন্তর্ভুক্ত চারজন অধ্বর্যু, যজ্ঞে আহুতি দিয়ে যজ্ঞকর্ম বা পৌরহিত্য সুসম্পন্ন করেন। সর্বশেষ ব্রহ্মাগণের অন্তর্ভুক্ত চারজন ব্রহ্মা, যজ্ঞের সকল বিষয় সুনিপুণভাবে সমাধা হচ্ছে কিনা তা দর্শন করেন। এ যজ্ঞে এ ষোলজন ঋত্বিকের প্রত্যেকেরই স্বতন্ত্র ভূমিকা রয়েছে। বেদাঙ্গে এ ষোড়শ ঋত্বিকের প্রত্যেকের আলাদা আলাদাভাবে নামকরণ করা হয়েছে।
তস্যর্ত্বিজঃ।।
চত্বারস্ ত্রিপুরুষাঃ।।
তস্য তস্যোত্তরে ত্রয়ঃ।।
হােতা মৈত্রাবরুণােঽচ্ছাবাকো গ্রাবস্তুদ্ অধ্বর্যুঃ
প্রতিপ্রস্থাতা নেষ্টোন্নেতা ব্রহ্মা ব্রাহ্মণাচ্ছংস্যাগ্মীধ্রঃ
পােতােদ্ গাতা প্রস্তোতা প্রতিহর্তা সুব্রহ্মণ্য ইতি ।।
(আলায়ন-শ্রৌতসূত্র: ৪.১.৪-৭)
চারজন ঋত্বিকের প্রত্যেকেই তিনজন করে সহকারী থাকতেন এবং প্রত্যেক চারজনে এক একটি গণ রচনা করতেন। যেমন:হােতৃগণ, উদগাতৃগণ, অধ্বর্যুগণ ও ব্রহ্মাগণ।
হােতৃগণ :হােতা, মৈত্রাবরুণ, অচ্ছাবাক এবং গ্রাবস্তুৎ।
উদগাতৃগণ: উদগাতা, প্রস্তোতা, প্রতিহর্তা এবং সুব্রহ্মণ্য।
অর্ধ্বর্যুগণ: অধ্বর্যু, প্রতিপ্রস্থাতা, নেষ্টা এবং উন্নেতা।
ব্রহ্মাগণ: ব্রহ্মা, ব্রাহ্মাণাচ্ছংসী, পােতা এবং আগ্নীধ্র।
কিন্তু বর্তমানে বঙ্গদেশে ইদানীং দেখা যাচ্ছে ঋত্বিক নামে অনেক স্বয়ং গুরু হয়ে যাচ্ছেন অথবা গুরুর প্রতিনিধি হয়ে গুরুর নামে দীক্ষা দিয়ে বেড়াচ্ছেন। অথচ শাস্ত্রে ঋত্বিক তাকেই বলা হয়েছে, যিনি যজমানের পক্ষে অগ্ন্যাধান, পাকযজ্ঞ ও অগ্নিষ্টোমাদি যাগ-যজ্ঞ সুসম্পাদিত করেন। বৈদিক যুগের যাগযজ্ঞ সুসম্পন্নকারী ঋত্বিক এবং বর্তমানকালের দেববিগ্রহাদির অর্চনাকারী পুরোহিত অনেকটা সাদৃশ্যপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে মনুসংহিতায় বলা হয়েছে:
অগ্ন্যাধেয়ং পাকযজ্ঞানগ্নিষ্টোমাদিকান্ মত্থান্ ।
যঃ করোতি বৃতো যস্য তস্যর্ত্বিগিহোচ্যতে ॥
(মনুসংহিতা:২.১৪৩)
"যিনি প্রার্থীত হয়ে অর্থাৎ শাস্ত্রী বিধি অনুসারে যাঁকে বরণ করা হয়েছে, সেই ব্যক্তি যখন কারো কল্যাণের জন্য তার হয়ে অগ্ন্যাধান, পাকযজ্ঞ ও অগ্নিষ্টোমাদি যজ্ঞ করেন, তাঁকে শাস্ত্রে ঋত্বিক্ বলে অবিহিত করা হয়।"
যখন গুরু অহৈতুকী কৃপা করে, শিষ্যকে বিনে পয়সায় বেদমন্ত্রের শিক্ষা প্রদান করেন। গুরু বেদের অধ্যাপনের দ্বারা শিষ্যের উভয় কর্ণকে বৈদিক জ্ঞানে আচ্ছাদিত করে তোলেন। তখন সেই মহান উপকার বৈদিক জ্ঞানদাতা গুরুকে একইসাথে মাতা এবং পিতা নামে অবিহিত। এমন কল্যাণকর বৈদিক শিক্ষার গুরুকে একই সাথে পিতামাতা বলে অবিহিত করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। গুরু গর্ভধারিণী মাতার মত শিষ্যকে দ্বিতীয় জন্ম প্রদান করেন, তাই তাঁকে মাতা বলা হয়েছে। সদগুরু শিষ্যকে নিজের গৃহে রেখে অথবা বৈদিক জ্ঞান দ্বারা পিতার মত পরিপালন বা পরিপোষণ করেন, তাই তাঁকে পিতা বলা হয়েছে। সকল গুরুকেই পিতামাতা বলা হয় না। যে সকল গুরুর মধ্যে শিষ্যকে দ্বিতীয় জন্ম প্রদান করার অথবা পরিপোষণ করার সাধ্য রয়েছে ; শুধু সে সকল গুরুকেই পিতামাতা তুল্য বলা হয়েছে। বেদ অধিগত হলেও, কখনো তাঁর অপকার করতে নেই। মনুসংহিতায় বলা হয়েছে:
য আবৃণোত্যবিতথং ব্ৰহ্মণা শ্রবণাবুভৌ
স মাতা স পিতা জ্ঞেয়স্তং ন দ্রুহোৎ কদাচন।।
(মনুসংহিতা:২.১৪৪)
"যিনি যথার্থভাবে বেদমন্ত্রের অধ্যাপনের দ্বারা শিষ্যের উভয় কর্ণ আচ্ছাদিত করেন; সেই মহান উপকার একাধারে মাতা এবং পিতা নামে অবিহিত। বেদ অধিগত হলেও, কখনো তাঁর অপকার করবে না।"
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।