-->

ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

সনাতন ধর্ম কোন, কাঙালের ধর্ম নয়।

অনেকদিন থেকে অনেকেই আমাকে একটি বা একই প্রকারের প্রশ্ন করছে যে, আসলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এত দেব-দেবী কেন? আবার অনেকে না বুঝে হয়ত বলে ফেলছে যে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এত ঈশ্বর কেন?সনাতন ধর্ম সৃষ্টির শুরু থেকেই বহমান। এ ধর্ম কোন ইতিহাসে আবদ্ধ ব্যক্তিকর্তৃক প্রবর্তিত ব্যক্তিকেন্দ্রিক ধর্ম নয়।স্বয়ং ঈশ্বর এ ধর্ম সৃষ্টির শুরুতে মনুষ্য জীবজগত তৈরির পূর্বেই প্রবর্তন করেছেন। তাই জগতের সৃষ্টি এবং বিসৃষ্টির সাথে সনাতন ধর্ম সম্পর্কিত। এ নশ্বর জগতে কোন মনুষ্যজাতি, কোন প্রাণীকূল যদি নাও থাকে, তবেও সনাতন ধর্ম বহমান থাকবে।কারণ এ ধর্ম একটি শাশ্বত অবিনশ্বর ধর্ম।ঈশ্বর অনন্ত এবং অসীম ভাবময়। তাই সেই অনন্তের পূজারী হিসেবে আমরা তো অনন্তকে অনন্তরূপের উপাসনা করবো।যেহেতু ঈশ্বর অনন্ত রূপে আমাদের সামনে প্রকাশিত। আমাদের ঈশ্বর তো কাঙাল বা পথের ভিখারি নয়।আমরা যেহেতু কাঙালের উপাসক নই, তাই সেই হিসেবে আমাদের ধর্মও কাঙালের ধর্ম নয়। বিষয়টি এমন একপাক্ষিক নয় যে, আমি যতটুকু বা যা বুঝছি তাই সত্যি। আর জগতের সকল ভাব, মতপথ সকলই মিথ্যা।একজন কাঙালের কোনমতে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকাটাই, তার জন্য কষ্টের।সে তখন তার কোনমতে উদরপূর্তি করে জীবন রক্ষা করতে চায়।জীবন রক্ষা করতেই সে সর্বদা ব্যস্ত। কিন্তু যিনি রাজা বা মহারাজা, তার সম্মুখে বিভিন্ন প্রকারের খাদ্য থাকে; সে সেখান থেকে তার রুচি অনুযায়ী সামান্য খাবার বেছে নেয়।ঠিক সেরকমভাবে সনাতন ধর্ম, অনন্ত ভাববৈচিত্রের অধিকারী অনন্তের পূজারি হিসেবে অনন্ত মতপথ এ ধর্মে ছড়ানো। এ ধর্মের অনুসারীগণ রাজা-মহারাজাদের মত অসংখ্য মতপথকেই অনুসরণ কর‍তে পারে।প্রত্যেকদিন আমরা যখন একই প্রকারের খাবার গ্রহণ করি না।রুচির বৈচিত্রে এক এক দিন এক এক প্রকারের খাবার গ্রহণ করি। ঠিক তেমনি বিভিন্নভাবে আমরা এক পরমেশ্বরকেই সবাই উপাসনা করি। ত্রয়ী সাংখ্যং যোগঃ পশুপতিমতং বৈষ্ণবমিতি  প্রভিন্নে প্রস্থানে পরমিদমদঃ পথ্যমিতি চ।  রুচীনাং বৈচিত্র্যাজুকুটিলনানাপথজুষাং নৃণামেকো গম্যস্ত্বমসি পয়সামর্ণব ইব৷৷  (শিবমহিম্নঃস্তোত্র:৭) "ত্রিবিধ মন্ত্রাত্মক চতুর্বেদ, সাংখ্যযোগ, শৈবাগম, বৈষ্ণবতন্ত্র ইত্যাদি বহুধা-বিভক্ত শাস্ত্রসম্বন্ধে (অর্থাৎ, এইসব বিভিন্ন শাস্ত্রের মধ্যে কেউ মনে করে) এই শাস্ত্রটিই সর্বাপেক্ষা মঙ্গলজনক (আবার, অপর কেউ মনে করে) ঐ শাস্ত্রটিই সর্বাধিক কল্যাণকর। মানবমনের প্রবণতা যেহেতু ভিন্ন ভিন্ন সেজন্য মানুষ সরল, বক্র ইত্যাদি নানা পথ অবলম্বন করে। (কিন্তু) নদীস্রোতের সমুদ্রই যেমন একমাত্র লক্ষ্য তুমিও তেমনি সকল মানুষের একমাত্র গতি।" সনাতন ধর্মী কোন এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক ব্যক্তিগত মতাদর্শ নয়। যে সেই ব্যক্তি যতটুকু বুঝতে পেরেছে বা যা বলেছে শুধু তাই ধর্ম, পক্ষান্তরে জগতের সকল কিছুই অধর্ম। বিষয়টি এমন নয়।এই সংকীর্ণ ধারণা থেকেই জগতে বিবিধ সমস্যার উৎপত্তি হচ্ছে এবং মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির ভাব ক্ষীণ হয়ে বিদ্বেষ সৃষ্টি হচ্ছে। জগতের যত ভাব এবং তা থেকে উদ্ভূত পথ রয়েছে; এ সকল পথই পরমেশ্বর কাছে পৌঁছায়। এ প্রসঙ্গে বেদান্তসূত্রের শুরুতেই বলা হয়েছে: তত্তু সমন্বয়াৎ।। ( বেদান্তসূত্র:১.১.৪)  এই সূত্রেই স্পষ্ট করে বলা হয়েছে বিভিন্ন মত-পথ নির্বিশেষে সকল মত-পথই ব্রহ্ম লাভ এবং উপলব্ধির এক একটি পন্থা।অর্থাৎ ঈশ্বর সাকার-নিরাকার; শাক্ত, শৈব, বৈষ্ণব, সৌর, গাণপত্যাদি পঞ্চমত; কর্ম, জ্ঞান, ভক্তি, যোগ, তন্ত্রাদি পঞ্চপথের যে কোন মতের যে কোন পথেই ঈশ্বরের উপাসনা করে তাঁর কাছে পৌছানো যায়।এ মত-পথ নির্বিশেষে সমন্বয়ের বিষয়টি শ্রীমদ্ভগবদগীতায় পাওয়া যায়: যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহম্। মম বর্ত্মানুবর্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সর্বশঃ।। (শ্রীমদ্ভগবদগীতা: ৪.১১) " হে পার্থ! যে ভক্ত যে যেভাবে আমার শরণাপন্ন হবে এবং উপাসনা করবে; সে ঠিক সেভাবেই তারা আমাকে পাবে। কারণ সকল মানুষ সর্বোতভাবে আমার পথেরই অনুসরণ করছে।" যে যেভাবে তাকে ডাকে,তিনি সেভাবেই তাকে কৃপা করেন।কিন্তু সরল এ বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ বুঝতে ভুল করে বা অনেক ক্ষেত্রে অধিকারী না হওয়ায় উপলব্ধিও করতে পারে না। এ প্রসঙ্গে বেদেই সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে যে, বিভিন্ন নামে প্রকাশিত হলেও তিনি মূলত এক। কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় মৈত্রায়নী সংহিতার অন্তর্ভুক্ত মৈত্রায়নী উপনিষদে ঋষি কুৎস্যায়ন-দৃষ্ট মন্ত্রসমূহকে 'কৌৎস্যায়নী স্তুতি' বলা হয়। সেই স্তুতিতে সাকার নিরাকার নির্বিশেষে পরমেশ্বরের এক এবং অদ্বিতীয় সত্ত্বার পরিচয় সুস্পষ্টভাবে দেয়া হয়েছে: ত্বং ব্রহ্মা ত্বং চ বৈ বিষ্ণুস্ত্বং রুদ্রস্ত্বং প্রজাপতিঃ।   ত্বমগ্নির্বরুণো বায়ুস্ত্বমিদ্ৰস্ত্বং নিশাকরঃ।। ত্বং মনুস্ত্বং সমস্ত্বং পৃথিবী ত্বং বিশ্বং ত্বমথাচ্যুতঃ। স্বার্থে স্বাভাবিকেঽর্থে চ বহুধা সংস্থিতিস্ত্বয়ি ৷৷ বিশ্বেশ্বর নমস্তুভ্যং বিশ্বাত্মা বিশ্বকর্মকৃৎ।   বিশ্বভুগ্বিশ্বমায়ুস্ত্বং বিশ্বক্রীড়ারতিপ্রভুঃ।। নমঃ শান্তাত্মনে তুভ্যং নমো গুহ্যতমায় চ।   অচিন্ত্যায়াপ্রমেয়ায় অনাদিনিধনায় চেতি ৷৷  (মৈত্রায়নী উপনিষদ: ৫.১) “হে বিশ্বেশ্বর, তুমি ব্রহ্ম, তুমি বিষ্ণু, তুমি রুদ্র। তুমিই প্রজাপতি, তুমিই অগ্নি, তুমিই বরুণ ও বায়ু। তুমিই ইন্দ্র ও চন্দ্র। তুমিই অন্ন, তুমিই যম, তুমিই পৃথিবী, তুমিই চরাচর বিশ্ব। তুমি আকাশ ও অচ্যুত। ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ—এই পুরুষার্থ চতুষ্টয় এবং স্বভাব অনুযায়ী লোকের যে নিষ্ঠা দেখা যায় তৎসমুদয় বহুধা তোমাতে সংস্থিত। তুমিই সব, তোমাকে নমস্কার করি। তুমি শান্তাত্মা কূটস্থ স্বরূপ। তুমিই গুহ্যতম, অচিন্ত্য, অপ্রমেয়, অনাদি ও স্বয়ং প্রকাশিত। তোমাকে নমস্কার।” সেই পরমেশ্ব বহুরূপে প্রকাশিত বলে তাঁকে বহু বলা হয়, কিন্তু তিনি বহু নয়। সনাতন ধর্মাবলম্বী অনেকেই এ বিষয়গুলো ভালো করে বুঝতে পারে না বলে আশেপাশের অনেক ভিন্ন মতালম্বীরা এর সুযোগ নেয়। তারা উত্তর চায় না। শুধু প্রশ্ন করে বিভ্রান্ত করে, পরিশেষে ধর্মান্তরিত করে তাদের আস্তানাভুক্ত করতে চায়। সনাতন ধর্ম নিয়ে তাদের প্রশ্নের অন্ত নেই। এতগুলো ভগবান কেন?এটা কেন, সেটা কেন ইত্যাদি? যাদের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর আছে, তারা তাদের কাছে যাবে না। তাদের লক্ষ্য যারা ধর্ম সম্পর্কে খুব একটা কিছুই জানেনা বলা চলে তাদের কাছে। এই প্রশ্নগুলোই যদি সেই ব্যক্তিদের তাদের ধর্ম নিয়ে করা হয়; তখন দেখা যায় তারা তাদের ছদ্মবেশী স্বরূপ পরিত্যাগ করে প্রকৃত স্বরূপে চলে আসে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ছুতা ধরে সেই ব্যক্তিকে যারপরনাই হেনস্তা করার চেষ্টা করবে। কিন্তু সেই ব্যক্তিগুলো যদি প্রতিদিন আয়নায় নিজের মুখমণ্ডল দর্শন করত; তবে তাদের কদর্যরূপ নিজেরাই উপলব্ধি করতে পারত। একই ব্যক্তির দ্বৈতচরিত্র নিজেই উপলব্ধি করতে পারত। অন্যের ধর্ম নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক পরম্পরাহীন প্রশ্ন করা হল তাদের তাদের আন্তঃধর্মীয় আলোচনা। পক্ষান্তরে সেই ঘরানার একই প্রশ্ন তাদের করা হলে, তা হয়ে ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত।  তাই অন্যদের কথা কটুক্তিতে কর্ণপাত না করে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমরা অনন্তের উপাসনা করি। এবং অনন্তের শুধু উপাসনাই করি না, সেই অনন্তকে অনন্তভাবে উপাসনা করি। এর একটি সুন্দর বাস্তব উদাহরণ দেয়া যায়। অনেক পুরাতন জমিদার বাড়িতে আজও দেখা যায়, ছাদ থেকে বৃষ্টির জল পড়ার ছিদ্রের মুখে বিভিন্ন পশুপাখির মুখ বসানো রয়েছে। জল পড়ার সাথে সাথে সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্য এটি করা ।কোন মুখটি হাতির মুখের মতন, কোনটি ঘোড়ার মুখের মতন, কোনটি গরুর মুখের মতন। ছাদের উপরে বৃষ্টির জল পড়ছে। সেই বৃষ্টির জল ছাদ থেকে পুনরায় গড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু পশুপাখির মুখের আদলের ছিদ্র দিয়ে সেই ছাদের জল পড়া যখন কোন শিশু দেখে সে আবাক বিস্ময়ে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। সে তার শিশুসুলভ মানসিকতা থেকে সে, বাড়ির একদিক থেকে তাকালে সে দেখে সিংহের মুখ থেকে জল পড়ছে; আবার অন্যদিকে থেকে তাকালে মনে করে সিংহ নয় গরুর মুখ থেকে জল পড়ছে; আবার অন্যদিক থাকে তাকিয়ে দেখে ঘোড়ার মুখ থেকে জল পড়ছে; আবার মনে করে সিংহ, গরু, ঘোড়া কোনটিই নয় হাতির মুখ থেকে জল পড়ছে। তার শিশুসুলভ মানসিকতায় সে বিভ্রান্ত হয়। অথচ সে বাড়ির চতুর্দিকে চারটি ছাদের জল পড়ার চারটির ছিদ্রের উপরে সিংহ, গরু, ঘোড়া এবং হাতি এ চারটি প্রাণীর মুখ শুধু বসানো হয়েছে। শিশুটি যখন বড় হয় তখন ধীরেধীরে পর্যায়ক্রমে সকলই বুঝতে পারে। বর্তমানে আমাদের অধিকাংশ মানুষই জ্ঞান জগতের শিশু। তাই তারা সনাতন ধর্ম দর্শনের উচ্চ স্তরের ভাব দর্শনকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধারণ তো দূরে থাক; সামান্যতম উপলব্ধি করতে পারে না।জল সেই অনন্ত আকাশ থেকে ছাদে পড়ছে। অথচ সেই জলই যখন বিভিন্নভাবে আমার সামনে এসে গড়িয়ে পড়ছে, তখন আমরা সেই জলকে বিভিন্ন প্রাণীর রূপে সীমাবদ্ধ করে ফেলছি। ঠিক একইভাবে অনন্ত চিন্তার অতীত পরমেশ্বরকে আমরা বিভিন্ন নামে এবং বিভিন্ন রূপে অভিব্যক্ত করে তাঁর উপাসনা করছি। সনাতন ধর্ম অনন্ত ভাববৈচিত্রের এক রাজপথ। সনাতন ধর্মাবলম্বীগণ অনন্তের পূজারী, তাই অনন্তকে তাঁরা অনন্তভাবেই উপাসনা করে। এবং বৈদেশিকদের শত বাঁধাবিঘ্ন উপেক্ষা করে, তাদের কথায় কর্ণপাত না করে অনন্ত মতপথে উপাসনা করেই যাবে। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'কণিকা' কাব্যগ্রন্থের 'প্রশ্নের অতীত' নামক কবিতাটির কথা উল্লেখ করা যায়। সমুদ্রের হৃদয়ে অনন্ত জীজ্ঞাসা, তাই সে প্রতিনিয়ত নিজেকে পরিবর্তিত করে বিবিধ রূপে প্রকাশিত হচ্ছে। পক্ষান্তরে গিরি-পর্বত চির নিরুত্তর।  "হে সমুদ্র, চিরকাল কী তোমার ভাষা সমুদ্র কহিল, মোর অনন্ত জিজ্ঞাসা। কিসের স্তব্ধতা তব ওগো গিরিবর? হিমাদ্রি কহিল, মোর চির-নিরুত্তর।" আধ্যাত্মিক জগতের শিশুসুলভ মানসিকতা থেকে অনেকেরই ধারণা যে, এই দেবতত্ত্বে সকল দেবতাই বুঝি স্বতন্ত্র । কিন্তু আদৌ তা নয়। আপাতদৃষ্টিতে স্বতন্ত্র বলে মনে হচ্ছে। ঠিক একইভাবে তিনি অনন্ত, অসীমকে আমরা সীমার মধ্যে এনে প্রতিমায় উপাসনা করা হয়। বেদাদি শাস্ত্রে এ বিষয়গুলো সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এরপরেও যদি কেউ বিভ্রান্ত হয়; তবে এর থেকে দুঃখজনক আর কি হতে পারে? বিদ্যমান পূজা-পদ্ধতিকে গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সকল দেবদেবীর পূজা পদ্ধতি প্রায় একই প্রকারের। শাক্ত, শৈব এবং বৈষ্ণবসহ অধিকাংশ পূজাই সাদৃশ্যপূর্ণ। কারণ, যে দেবদেবীর পূজাই করা হোক না কেন, যে রূপেই করা হোক না কেন - তা সকলই একজনের উদ্দেশ্যেই করা হয়। তাই অন্যের কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে ধর্মের প্রতি একাগ্র বিশ্বাস থাকা উচিত, যুগপৎভাবে অত্যন্ত শ্রদ্ধা থাকা উচিত। তবেই উপলব্ধি করতে পারবে যে, সনাতন ধর্মাবলম্বীগণ কোন সংকীর্ণ কাঙাল মতাদর্শের কাঙাল অনুসারী নয়; তারা শাশ্বত ঋষি-মুনি পরম্পরায় অনন্তের পূজারী।  শ্রীকুশল বরণ চক্রবর্ত্তী সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ। ফেসবুক পোস্ট লিঙ্ক : Facebook ফেসবুক পেজ লিঙ্ক :  Shri Kushal Baran Chakraborty | Facebook
অনেকদিন থেকে অনেকেই আমাকে একটি বা একই প্রকারের প্রশ্ন করছে যে, আসলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এত দেব-দেবী কেন? আবার অনেকে না বুঝে হয়ত বলে ফেলছে যে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এত ঈশ্বর কেন?সনাতন ধর্ম সৃষ্টির শুরু থেকেই বহমান। এ ধর্ম কোন ইতিহাসে আবদ্ধ ব্যক্তিকর্তৃক প্রবর্তিত ব্যক্তিকেন্দ্রিক ধর্ম নয়।স্বয়ং ঈশ্বর এ ধর্ম সৃষ্টির শুরুতে মনুষ্য জীবজগত তৈরির পূর্বেই প্রবর্তন করেছেন। তাই জগতের সৃষ্টি এবং বিসৃষ্টির সাথে সনাতন ধর্ম সম্পর্কিত। এ নশ্বর জগতে কোন মনুষ্যজাতি, কোন প্রাণীকূল যদি নাও থাকে, তবেও সনাতন ধর্ম বহমান থাকবে।কারণ এ ধর্ম একটি শাশ্বত অবিনশ্বর ধর্ম।ঈশ্বর অনন্ত এবং অসীম ভাবময়। তাই সেই অনন্তের পূজারী হিসেবে আমরা তো অনন্তকে অনন্তরূপের উপাসনা করবো।যেহেতু ঈশ্বর অনন্ত রূপে আমাদের সামনে প্রকাশিত। আমাদের ঈশ্বর তো কাঙাল বা পথের ভিখারি নয়।আমরা যেহেতু কাঙালের উপাসক নই, তাই সেই হিসেবে আমাদের ধর্মও কাঙালের ধর্ম নয়। বিষয়টি এমন একপাক্ষিক নয় যে, আমি যতটুকু বা যা বুঝছি তাই সত্যি। আর জগতের সকল ভাব, মতপথ সকলই মিথ্যা।একজন কাঙালের কোনমতে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকাটাই, তার জন্য কষ্টের।সে তখন তার কোনমতে উদরপূর্তি করে জীবন রক্ষা করতে চায়।জীবন রক্ষা করতেই সে সর্বদা ব্যস্ত। কিন্তু যিনি রাজা বা মহারাজা, তার সম্মুখে বিভিন্ন প্রকারের খাদ্য থাকে; সে সেখান থেকে তার রুচি অনুযায়ী সামান্য খাবার বেছে নেয়।ঠিক সেরকমভাবে সনাতন ধর্ম, অনন্ত ভাববৈচিত্রের অধিকারী অনন্তের পূজারি হিসেবে অনন্ত মতপথ এ ধর্মে ছড়ানো। এ ধর্মের অনুসারীগণ রাজা-মহারাজাদের মত অসংখ্য মতপথকেই অনুসরণ করতে পারে।প্রত্যেকদিন আমরা যখন একই প্রকারের খাবার গ্রহণ করি না।রুচির বৈচিত্রে এক এক দিন এক এক প্রকারের খাবার গ্রহণ করি। ঠিক তেমনি বিভিন্নভাবে আমরা এক পরমেশ্বরকেই সবাই উপাসনা করি।
ত্রয়ী সাংখ্যং যোগঃ পশুপতিমতং বৈষ্ণবমিতি
প্রভিন্নে প্রস্থানে পরমিদমদঃ পথ্যমিতি চ।
রুচীনাং বৈচিত্র্যাজুকুটিলনানাপথজুষাং
নৃণামেকো গম্যস্ত্বমসি পয়সামর্ণব ইব৷৷
(শিবমহিম্নঃস্তোত্র:৭)
"ত্রিবিধ মন্ত্রাত্মক চতুর্বেদ, সাংখ্যযোগ, শৈবাগম, বৈষ্ণবতন্ত্র ইত্যাদি বহুধা-বিভক্ত শাস্ত্রসম্বন্ধে (অর্থাৎ, এইসব বিভিন্ন শাস্ত্রের মধ্যে কেউ মনে করে) এই শাস্ত্রটিই সর্বাপেক্ষা মঙ্গলজনক (আবার, অপর কেউ মনে করে) ঐ শাস্ত্রটিই সর্বাধিক কল্যাণকর। মানবমনের প্রবণতা যেহেতু ভিন্ন ভিন্ন সেজন্য মানুষ সরল, বক্র ইত্যাদি নানা পথ অবলম্বন করে। (কিন্তু) নদীস্রোতের সমুদ্রই যেমন একমাত্র লক্ষ্য তুমিও তেমনি সকল মানুষের একমাত্র গতি।"
সনাতন ধর্মী কোন এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক ব্যক্তিগত মতাদর্শ নয়। যে সেই ব্যক্তি যতটুকু বুঝতে পেরেছে বা যা বলেছে শুধু তাই ধর্ম, পক্ষান্তরে জগতের সকল কিছুই অধর্ম। বিষয়টি এমন নয়।এই সংকীর্ণ ধারণা থেকেই জগতে বিবিধ সমস্যার উৎপত্তি হচ্ছে এবং মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির ভাব ক্ষীণ হয়ে বিদ্বেষ সৃষ্টি হচ্ছে। জগতের যত ভাব এবং তা থেকে উদ্ভূত পথ রয়েছে; এ সকল পথই পরমেশ্বর কাছে পৌঁছায়। এ প্রসঙ্গে বেদান্তসূত্রের শুরুতেই বলা হয়েছে:
তত্তু সমন্বয়াৎ।। ( বেদান্তসূত্র:১.১.৪)
এই সূত্রেই স্পষ্ট করে বলা হয়েছে বিভিন্ন মত-পথ নির্বিশেষে সকল মত-পথই ব্রহ্ম লাভ এবং উপলব্ধির এক একটি পন্থা।অর্থাৎ ঈশ্বর সাকার-নিরাকার; শাক্ত, শৈব, বৈষ্ণব, সৌর, গাণপত্যাদি পঞ্চমত; কর্ম, জ্ঞান, ভক্তি, যোগ, তন্ত্রাদি পঞ্চপথের যে কোন মতের যে কোন পথেই ঈশ্বরের উপাসনা করে তাঁর কাছে পৌছানো যায়।এ মত-পথ নির্বিশেষে সমন্বয়ের বিষয়টি শ্রীমদ্ভগবদগীতায় পাওয়া যায়:
যে যথা মাং প্রপদ্যন্তে তাংস্তথৈব ভজাম্যহম্।
মম বর্ত্মানুবর্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সর্বশঃ।।
(শ্রীমদ্ভগবদগীতা: ৪.১১)
" হে পার্থ! যে ভক্ত যে যেভাবে আমার শরণাপন্ন হবে এবং উপাসনা করবে; সে ঠিক সেভাবেই তারা আমাকে পাবে। কারণ সকল মানুষ সর্বোতভাবে আমার পথেরই অনুসরণ করছে।"
যে যেভাবে তাকে ডাকে,তিনি সেভাবেই তাকে কৃপা করেন।কিন্তু সরল এ বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ বুঝতে ভুল করে বা অনেক ক্ষেত্রে অধিকারী না হওয়ায় উপলব্ধিও করতে পারে না। এ প্রসঙ্গে বেদেই সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে যে, বিভিন্ন নামে প্রকাশিত হলেও তিনি মূলত এক। কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় মৈত্রায়নী সংহিতার অন্তর্ভুক্ত মৈত্রায়নী উপনিষদে ঋষি কুৎস্যায়ন-দৃষ্ট মন্ত্রসমূহকে 'কৌৎস্যায়নী স্তুতি' বলা হয়। সেই স্তুতিতে সাকার নিরাকার নির্বিশেষে পরমেশ্বরের এক এবং অদ্বিতীয় সত্ত্বার পরিচয় সুস্পষ্টভাবে দেয়া হয়েছে:
ত্বং ব্রহ্মা ত্বং চ বৈ বিষ্ণুস্ত্বং রুদ্রস্ত্বং প্রজাপতিঃ।
ত্বমগ্নির্বরুণো বায়ুস্ত্বমিদ্ৰস্ত্বং নিশাকরঃ।।
ত্বং মনুস্ত্বং সমস্ত্বং পৃথিবী ত্বং বিশ্বং ত্বমথাচ্যুতঃ।
স্বার্থে স্বাভাবিকেঽর্থে চ বহুধা সংস্থিতিস্ত্বয়ি ৷৷
বিশ্বেশ্বর নমস্তুভ্যং বিশ্বাত্মা বিশ্বকর্মকৃৎ।
বিশ্বভুগ্বিশ্বমায়ুস্ত্বং বিশ্বক্রীড়ারতিপ্রভুঃ।।
নমঃ শান্তাত্মনে তুভ্যং নমো গুহ্যতমায় চ।
অচিন্ত্যায়াপ্রমেয়ায় অনাদিনিধনায় চেতি ৷৷
(মৈত্রায়নী উপনিষদ: ৫.১)
“হে বিশ্বেশ্বর, তুমি ব্রহ্ম, তুমি বিষ্ণু, তুমি রুদ্র। তুমিই প্রজাপতি, তুমিই অগ্নি, তুমিই বরুণ ও বায়ু। তুমিই ইন্দ্র ও চন্দ্র। তুমিই অন্ন, তুমিই যম, তুমিই পৃথিবী, তুমিই চরাচর বিশ্ব। তুমি আকাশ ও অচ্যুত। ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ—এই পুরুষার্থ চতুষ্টয় এবং স্বভাব অনুযায়ী লোকের যে নিষ্ঠা দেখা যায় তৎসমুদয় বহুধা তোমাতে সংস্থিত। তুমিই সব, তোমাকে নমস্কার করি। তুমি শান্তাত্মা কূটস্থ স্বরূপ। তুমিই গুহ্যতম, অচিন্ত্য, অপ্রমেয়, অনাদি ও স্বয়ং প্রকাশিত। তোমাকে নমস্কার।”
সেই পরমেশ্ব বহুরূপে প্রকাশিত বলে তাঁকে বহু বলা হয়, কিন্তু তিনি বহু নয়। সনাতন ধর্মাবলম্বী অনেকেই এ বিষয়গুলো ভালো করে বুঝতে পারে না বলে আশেপাশের অনেক ভিন্ন মতালম্বীরা এর সুযোগ নেয়। তারা উত্তর চায় না। শুধু প্রশ্ন করে বিভ্রান্ত করে, পরিশেষে ধর্মান্তরিত করে তাদের আস্তানাভুক্ত করতে চায়। সনাতন ধর্ম নিয়ে তাদের প্রশ্নের অন্ত নেই। এতগুলো ভগবান কেন?এটা কেন, সেটা কেন ইত্যাদি? যাদের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর আছে, তারা তাদের কাছে যাবে না। তাদের লক্ষ্য যারা ধর্ম সম্পর্কে খুব একটা কিছুই জানেনা বলা চলে তাদের কাছে। এই প্রশ্নগুলোই যদি সেই ব্যক্তিদের তাদের ধর্ম নিয়ে করা হয়; তখন দেখা যায় তারা তাদের ছদ্মবেশী স্বরূপ পরিত্যাগ করে প্রকৃত স্বরূপে চলে আসে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ছুতা ধরে সেই ব্যক্তিকে যারপরনাই হেনস্তা করার চেষ্টা করবে। কিন্তু সেই ব্যক্তিগুলো যদি প্রতিদিন আয়নায় নিজের মুখমণ্ডল দর্শন করত; তবে তাদের কদর্যরূপ নিজেরাই উপলব্ধি করতে পারত। একই ব্যক্তির দ্বৈতচরিত্র নিজেই উপলব্ধি করতে পারত। অন্যের ধর্ম নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক পরম্পরাহীন প্রশ্ন করা হল তাদের তাদের আন্তঃধর্মীয় আলোচনা। পক্ষান্তরে সেই ঘরানার একই প্রশ্ন তাদের করা হলে, তা হয়ে ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত।
তাই অন্যদের কথা কটুক্তিতে কর্ণপাত না করে আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমরা অনন্তের উপাসনা করি। এবং অনন্তের শুধু উপাসনাই করি না, সেই অনন্তকে অনন্তভাবে উপাসনা করি। এর একটি সুন্দর বাস্তব উদাহরণ দেয়া যায়। অনেক পুরাতন জমিদার বাড়িতে আজও দেখা যায়, ছাদ থেকে বৃষ্টির জল পড়ার ছিদ্রের মুখে বিভিন্ন পশুপাখির মুখ বসানো রয়েছে। জল পড়ার সাথে সাথে সৌন্দর্যবৃদ্ধির জন্য এটি করা ।কোন মুখটি হাতির মুখের মতন, কোনটি ঘোড়ার মুখের মতন, কোনটি গরুর মুখের মতন। ছাদের উপরে বৃষ্টির জল পড়ছে। সেই বৃষ্টির জল ছাদ থেকে পুনরায় গড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু পশুপাখির মুখের আদলের ছিদ্র দিয়ে সেই ছাদের জল পড়া যখন কোন শিশু দেখে সে আবাক বিস্ময়ে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। সে তার শিশুসুলভ মানসিকতা থেকে সে, বাড়ির একদিক থেকে তাকালে সে দেখে সিংহের মুখ থেকে জল পড়ছে; আবার অন্যদিকে থেকে তাকালে মনে করে সিংহ নয় গরুর মুখ থেকে জল পড়ছে; আবার অন্যদিক থাকে তাকিয়ে দেখে ঘোড়ার মুখ থেকে জল পড়ছে; আবার মনে করে সিংহ, গরু, ঘোড়া কোনটিই নয় হাতির মুখ থেকে জল পড়ছে। তার শিশুসুলভ মানসিকতায় সে বিভ্রান্ত হয়। অথচ সে বাড়ির চতুর্দিকে চারটি ছাদের জল পড়ার চারটির ছিদ্রের উপরে সিংহ, গরু, ঘোড়া এবং হাতি এ চারটি প্রাণীর মুখ শুধু বসানো হয়েছে। শিশুটি যখন বড় হয় তখন ধীরেধীরে পর্যায়ক্রমে সকলই বুঝতে পারে। বর্তমানে আমাদের অধিকাংশ মানুষই জ্ঞান জগতের শিশু। তাই তারা সনাতন ধর্ম দর্শনের উচ্চ স্তরের ভাব দর্শনকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধারণ তো দূরে থাক; সামান্যতম উপলব্ধি করতে পারে না।জল সেই অনন্ত আকাশ থেকে ছাদে পড়ছে। অথচ সেই জলই যখন বিভিন্নভাবে আমার সামনে এসে গড়িয়ে পড়ছে, তখন আমরা সেই জলকে বিভিন্ন প্রাণীর রূপে সীমাবদ্ধ করে ফেলছি। ঠিক একইভাবে অনন্ত চিন্তার অতীত পরমেশ্বরকে আমরা বিভিন্ন নামে এবং বিভিন্ন রূপে অভিব্যক্ত করে তাঁর উপাসনা করছি। সনাতন ধর্ম অনন্ত ভাববৈচিত্রের এক রাজপথ। সনাতন ধর্মাবলম্বীগণ অনন্তের পূজারী, তাই অনন্তকে তাঁরা অনন্তভাবেই উপাসনা করে। এবং বৈদেশিকদের শত বাঁধাবিঘ্ন উপেক্ষা করে, তাদের কথায় কর্ণপাত না করে অনন্ত মতপথে উপাসনা করেই যাবে। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'কণিকা' কাব্যগ্রন্থের 'প্রশ্নের অতীত' নামক কবিতাটির কথা উল্লেখ করা যায়। সমুদ্রের হৃদয়ে অনন্ত জীজ্ঞাসা, তাই সে প্রতিনিয়ত নিজেকে পরিবর্তিত করে বিবিধ রূপে প্রকাশিত হচ্ছে। পক্ষান্তরে গিরি-পর্বত চির নিরুত্তর।
"হে সমুদ্র, চিরকাল কী তোমার ভাষা
সমুদ্র কহিল, মোর অনন্ত জিজ্ঞাসা।
কিসের স্তব্ধতা তব ওগো গিরিবর?
হিমাদ্রি কহিল, মোর চির-নিরুত্তর।"
আধ্যাত্মিক জগতের শিশুসুলভ মানসিকতা থেকে অনেকেরই ধারণা যে, এই দেবতত্ত্বে সকল দেবতাই বুঝি স্বতন্ত্র । কিন্তু আদৌ তা নয়। আপাতদৃষ্টিতে স্বতন্ত্র বলে মনে হচ্ছে। ঠিক একইভাবে তিনি অনন্ত, অসীমকে আমরা সীমার মধ্যে এনে প্রতিমায় উপাসনা করা হয়। বেদাদি শাস্ত্রে এ বিষয়গুলো সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এরপরেও যদি কেউ বিভ্রান্ত হয়; তবে এর থেকে দুঃখজনক আর কি হতে পারে? বিদ্যমান পূজা-পদ্ধতিকে গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সকল দেবদেবীর পূজা পদ্ধতি প্রায় একই প্রকারের। শাক্ত, শৈব এবং বৈষ্ণবসহ অধিকাংশ পূজাই সাদৃশ্যপূর্ণ। কারণ, যে দেবদেবীর পূজাই করা হোক না কেন, যে রূপেই করা হোক না কেন - তা সকলই একজনের উদ্দেশ্যেই করা হয়। তাই অন্যের কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে ধর্মের প্রতি একাগ্র বিশ্বাস থাকা উচিত, যুগপৎভাবে অত্যন্ত শ্রদ্ধা থাকা উচিত। তবেই উপলব্ধি করতে পারবে যে, সনাতন ধর্মাবলম্বীগণ কোন সংকীর্ণ কাঙাল মতাদর্শের কাঙাল অনুসারী নয়; তারা শাশ্বত ঋষি-মুনি পরম্পরায় অনন্তের পূজারী।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।

ফেসবুক পোস্ট লিঙ্ক : সনাতন ধর্ম কোন, কাঙালের ধর্ম নয়। ফেসবুক পেজ লিঙ্ক : Shri Kushal Baran Chakraborty | Facebook

মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁