-->

ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

রাজা রামমোহন রায়ের, ব্রহ্মসংগীতে ব্রহ্মের স্বরূপ ।

রাজা রামমোহন রায়ের,   ব্রহ্মসংগীতে ব্রহ্মের স্বরূপ ।  রাজা রামমোহন রায় ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে কোলকাতায় ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। বেদান্তের উপরে প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মসমাজ কোন স্বতন্ত্র ধর্ম নয়। সমুদ্রের মত সনাতন ধর্মের অসংখ্য মতপথের মত এটি একটি মতপথ। বৈদিক "একমেবাদ্বিতীয়ম্" তত্ত্বের উপরেই ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠিত। এর স্বতন্ত্রতা হল, এটি একটি নিরাকারবাদী উপাসক সম্প্রদায়। উনবিংশ শতাব্দীতে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশদের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে, যে সকল এদেশীয় তরুণ নিজ ধর্ম এবং সংস্কৃতির প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলা শুরু করে তাদের স্বধর্মে ধরে রাখতেই ব্রাহ্মসমাজের জন্ম। সনাতন ধর্মে ঈশ্বর উপাসনা সাকার নিরাকার বা মূর্ত বা অমূর্ত এ দুটি পথে বিভক্ত।  দ্বে বাব ব্রহ্মণো রূপে মূর্তং চৈবামূর্তং চ মর্ত্যং চামৃতং চ স্থিতং চ যচ্চ সচ্চ ত্যচ্চ।। (বৃহদারণ্যক উপনিষদ:২.৩.১) "ব্রহ্মের দুইটি রূপ, মূর্ত(মূর্তিমান) ও অমূর্ত(অমূর্তিমান), মর্ত্য ও অমৃত, স্থিতিশীল ও গতিশীল, সৎ (সত্তাশীল) ও ত্যৎ (অব্যক্ত)।" এই দুটি পথের মধ্যে ব্রাহ্মসমাজ নিরাকার ঈশ্বর উপাসনার পথটি গ্রহণ করে। ব্রাহ্মসমাজ তাদের মতাদর্শ হিসেবে নিরাকার উপাসনাকে গ্রহণ করলেও, তারা কখনো সাকার উপাসনার বিরোধী ছিল না। বরং ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা রাজা রামমোহন থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ ব্রাহ্মসমাজের খ্যাতিসম্পন্ন অধিকাংশের ব্যক্তিবর্গের জীবনে সাকার নিরাকার উভয় মতাদর্শের প্রভাব পাওয়া যায়। রাজা রামমোহন রায়ের ধর্ম এবং দার্শনিকচিন্তা বাংলা ও সংস্কৃত বিবিধ গ্রন্থে পাওয়া যায়। এ গ্রন্থগুলো প্রায় সকলই বেদান্ত অথবা বেদান্তদর্শন অনুসৃত গ্রন্থ। এ গ্রন্থগুলোর মধ্যে অন্যতম হল:  বেদান্ত গ্রন্থ (১৮১৫), বেদান্তসার (১৮১৫), তলবকার উপনিষৎ (১৮১৬), ঈশোপনিষৎ (১৮১২), কঠোপনিষৎ (১৮১৭), মাণ্ডূক্যোপনিষৎ (১৮১৭), গায়ত্রীর অর্থ ( ১৮১৮), মুণ্ডকোপনিষৎ(১৮১৯), আত্মানাত্মবিবেক ( ১৮১৯), প্রার্থনা পত্র (১৮২৩), ব্রহ্মনিষ্ঠ গৃহস্থের লক্ষণ ( ১৮২৬), বজ্রসূচী (১৮২৭), গায়ত্র্যা ব্রহ্মোপাসনাবিধানং (আনুমানিক, ১৮২৭), ব্রহ্মোপাসনা (১৮২৮), ব্রহ্মসংগীত (১৮২৮) ইত্যাদি। বেদান্ত অথবা বেদান্তদর্শন অনুসৃত গ্রন্থ গ্রন্থগুলোর মধ্যে অন্যতম হল, ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে লিখিত ব্রহ্মসংগীত গ্রন্থটি। বাংলা এ গ্রন্থটি একটি রাজা রামমোহনের লিখিত ব্রহ্মসংগীতের গ্রন্থ। এ গ্রন্থের প্রত্যেকটি সংগীতই অসাধারণ। ব্রাহ্ম সমাজের প্রতিষ্ঠার বছরেই লিখিত এ ব্রহ্মসংগীত গ্রন্থে প্রায় ৩২ টি সংগীত রয়েছে। এ সংগীতে ঈশ্বর চিন্তায় সাকার নিরাকার উভয় ভাব ধরা পড়ে। রাগ ভৈরবীতে লিখিত একটি সংগীতে রাজা রামমোহন রায় বলেন, ব্রহ্মকে অসীম তাঁকে মন জানতে পারে না বাক্যও বর্ণনা করতে পারে না। অর্থাৎ ব্রহ্ম অচিন্ত্য, ইন্দ্রিয়ের পাড়ে চিন্তার অতীত।  "নিরূপমের উপমা, সীমাহীনে দিতে সীমা, নাহি হয় সম্ভাবনা।  অচিন্ত্য উপাধিহীনে, অতিক্রন্ত গুণ তিনে, যত সব অর্ব্বাচীনে করয়ে কল্পনা।  পদার্থ— ইন্দ্রিয় পর, বিভূ সর্ব্ব অগোচর, বেদ বিধির অন্তর,  মন জান না। বর্ণেতে বর্ণিতে নারি, বাক্যেতে কহিতে হারি, শ্রবণ মনন তাঁরি, কর সূচনা।" এ গানের তত্ত্বটি তিনি কেন উপনিষদ থেকে গ্রহণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর রাগ বাহারে আরেকটি সংগীত রয়েছে। "নিরঞ্জনের নিরূপণ, কিসে হবে বল মন,  সে অতীত ত্রৈগুণ্য।  ন ষণ্ড পুমান্, শক্তি, সে অগম্য বুদ্ধি যুক্তি,  অতিক্রান্ত ভূত পঙক্তি, সমাধান শূন্য।  কেহ হস্ত পদ দেয়, কেহ বলে জ্যোতির্ম্ময়, কেহ বা  আকাশ কয়, কেহ কহে জন্য। সে সব কল্পনা মাত্র,  বার বার কহে শাস্ত্র, এক সত্য বিনা অত্র, অন্য নহে মান্য।" তাঁর ব্রহ্মসংগীতের বহু সংগীতের মধ্যে উপনিষদের বহু মন্ত্রের অন্তর্নিহিত ভাবের সাদৃশ্য রয়েছে।শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে বলা হয়েছে, ব্রহ্মের হাত না থাকলেও, তিনি সবকিছুই ধারণ করেন। তাঁর পা না থাকলেও, তিনি সর্বত্র যেতে পারেন। তাঁর চোখ নেই, তবু তিনি জগতের সকল কিছুই দেখতে পান। তাঁর কান নেই, তবু তিনি সব শুনতে পান। যা কিছু জানবার, তা তিনি জানেন যদিও তাঁকে কেউ জানে না।  অপাণিপাদো জবনো গ্রহীতা পশ্যত্যচক্ষুঃ স শৃণোত্যকর্ণঃ। স বেত্তি বেদ্যং ন চ তস্যাস্তি বেত্তা তমাহুরগ্রং পুরুষং মহান্তম্ ॥ (শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ:৩.১৯) "তাঁর হাত নেই, তবু তিনি সবকিছু ধারণ করেন; তাঁর পা নেই, তবু তিনি দূরে যেতে পারেন। তাঁর চোখ নেই, তবু তিনি সব দেখতে পান। তাঁর কান নেই, তবু তিনি সব শুনতে পান। যা কিছু জানবার, তা তিনি জানেন যদিও তাঁকে কেউ জানে না। যাঁরা পরমাত্মাকে জানেন, তাঁরা বলেন—তিনিই সকলের অগ্রণী এবং তিনি সর্বব্যাপী।" রাজা রামমোহন রায় অচিন্ত্য ব্রহ্মের সাথে সাথে ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শিবকেও স্বীকার করে নিয়েছেন তাঁর ব্রহ্মসংগীতে। রাজা রামমোহন রায় মনে করতেন ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শিবসহ সকল দেবতাই ব্রহ্মের শক্তি। তাই পরিশেষে তাঁরা ব্রহ্মতেই লীন হয়ে যাবে। তাই তিনি রাগ আলাইয়া—ঝাঁপতালের একটি সংগীতে সকল দ্বৈততা পরিহার করে অখণ্ড ভাবনায় ভাবিত হতে বলেছেন। "দ্বিভাব ভাব কি মন এক ভিন্ন দুই নয়।  একের কল্পনা রূপ সাধকেতে কয়।।  হংসরূপে সর্বান্তরে, ব্যাপিল যে চরাচরে, সে বিনা কে আছে ওরে এ কোন নিশ্চয়। স্থাবরাদি জঙ্গম, বিধি বিষ্ণু, শিব, যম, প্রত্যেকেতে যথা ক্রম, যাতে লীন হয়। কর অভিমান খর্ব্ব, ত্যজ মন দ্বৈত  গৰ্ব্ব, একাত্মা জানিবে সৰ্ব্ব, অখণ্ড ব্রহ্মাণ্ডময়।" রাগ ইমন কল্যাণ এবং ঝাঁপতালের আরেকটি সংগীতে বলেছেন: "পরমাত্মায় মন রে হও রত। বেদ বেদান্ত সৰ্ব্ব শাস্ত্রসম্মত।। বিধি বিষ্ণু, বল যাঁরে, কালে শেষ করে তাঁরে, গুণত্রয় বুঝ না রে, স্মর পরমেশ্বরে ত্রিগুণাতীত।" একই ভাব তার দেশ—আড়াঠেকা রাগে লিখিত আরেকটি ব্রহ্মসংগীতে পাওয়া যায়। সেখানে তিনি বলেছেন, সর্বত্রই এবং সর্বস্থানে একই নিরঞ্জন বিরাজমান।  "দ্বৈতভাব ভাব মন না জেন্যে কারণ। একের সত্তায় হয় যে কিছু সৃজন।  পঞ্চদ্রব্য পঞ্চগুণ, বুদ্ধি অহঙ্কার মন,  সকলের সে কারণ, জীবের জীবন। গন্ধগুণ দিয়া ধরায় অপে আম্বাদন, অনিলেতে স্পর্শ আর তেজে দরশন। শূন্যে শব্দ সমর্পিয়া, বিশ্বের আশ্রয় হইয়া, সর্ব্বান্তরে ব্যাপিয়া, আছে নিরঞ্জন।" কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী  সহকারী অধ্যাপক,  সংস্কৃত বিভাগ,  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (লেখাটি অসমাপ্ত)
রাজা রামমোহন রায় ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে কোলকাতায় ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। বেদান্তের উপরে প্রতিষ্ঠিত ব্রাহ্মসমাজ কোন স্বতন্ত্র ধর্ম নয়। সমুদ্রের মত সনাতন ধর্মের অসংখ্য মতপথের মত এটি একটি মতপথ। বৈদিক "একমেবাদ্বিতীয়ম্" তত্ত্বের উপরেই ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠিত। এর স্বতন্ত্রতা হল, এটি একটি নিরাকারবাদী উপাসক সম্প্রদায়। উনবিংশ শতাব্দীতে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশদের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে, যে সকল এদেশীয় তরুণ নিজ ধর্ম এবং সংস্কৃতির প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলা শুরু করে তাদের স্বধর্মে ধরে রাখতেই ব্রাহ্মসমাজের জন্ম। সনাতন ধর্মে ঈশ্বর উপাসনা সাকার নিরাকার বা মূর্ত বা অমূর্ত এ দুটি পথে বিভক্ত।
দ্বে বাব ব্রহ্মণো রূপে মূর্তং চৈবামূর্তং
চ মর্ত্যং চামৃতং চ স্থিতং চ যচ্চ সচ্চ ত্যচ্চ।।
(বৃহদারণ্যক উপনিষদ:২.৩.১)
"ব্রহ্মের দুইটি রূপ, মূর্ত(মূর্তিমান) ও অমূর্ত(অমূর্তিমান), মর্ত্য ও অমৃত, স্থিতিশীল ও গতিশীল, সৎ (সত্তাশীল) ও ত্যৎ (অব্যক্ত)।"
এই দুটি পথের মধ্যে ব্রাহ্মসমাজ নিরাকার ঈশ্বর উপাসনার পথটি গ্রহণ করে। ব্রাহ্মসমাজ তাদের মতাদর্শ হিসেবে নিরাকার উপাসনাকে গ্রহণ করলেও, তারা কখনো সাকার উপাসনার বিরোধী ছিল না। বরং ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা রাজা রামমোহন থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ ব্রাহ্মসমাজের খ্যাতিসম্পন্ন অধিকাংশের ব্যক্তিবর্গের জীবনে সাকার নিরাকার উভয় মতাদর্শের প্রভাব পাওয়া যায়। রাজা রামমোহন রায়ের ধর্ম এবং দার্শনিকচিন্তা বাংলা ও সংস্কৃত বিবিধ গ্রন্থে পাওয়া যায়। এ গ্রন্থগুলো প্রায় সকলই বেদান্ত অথবা বেদান্তদর্শন অনুসৃত গ্রন্থ। এ গ্রন্থগুলোর মধ্যে অন্যতম হল:
বেদান্ত গ্রন্থ (১৮১৫), বেদান্তসার (১৮১৫), তলবকার উপনিষৎ (১৮১৬), ঈশোপনিষৎ (১৮১২), কঠোপনিষৎ (১৮১৭), মাণ্ডূক্যোপনিষৎ (১৮১৭), গায়ত্রীর অর্থ ( ১৮১৮), মুণ্ডকোপনিষৎ(১৮১৯), আত্মানাত্মবিবেক ( ১৮১৯), প্রার্থনা পত্র (১৮২৩), ব্রহ্মনিষ্ঠ গৃহস্থের লক্ষণ ( ১৮২৬), বজ্রসূচী (১৮২৭), গায়ত্র্যা ব্রহ্মোপাসনাবিধানং (আনুমানিক, ১৮২৭), ব্রহ্মোপাসনা (১৮২৮), ব্রহ্মসংগীত (১৮২৮) ইত্যাদি।
বেদান্ত অথবা বেদান্তদর্শন অনুসৃত গ্রন্থ গ্রন্থগুলোর মধ্যে অন্যতম হল, ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে লিখিত ব্রহ্মসংগীত গ্রন্থটি। বাংলা এ গ্রন্থটি একটি রাজা রামমোহনের লিখিত ব্রহ্মসংগীতের গ্রন্থ। এ গ্রন্থের প্রত্যেকটি সংগীতই অসাধারণ। ব্রাহ্ম সমাজের প্রতিষ্ঠার বছরেই লিখিত এ ব্রহ্মসংগীত গ্রন্থে প্রায় ৩২ টি সংগীত রয়েছে। এ সংগীতে ঈশ্বর চিন্তায় সাকার নিরাকার উভয় ভাব ধরা পড়ে। রাগ ভৈরবীতে লিখিত একটি সংগীতে রাজা রামমোহন রায় বলেন, ব্রহ্মকে অসীম তাঁকে মন জানতে পারে না বাক্যও বর্ণনা করতে পারে না। অর্থাৎ ব্রহ্ম অচিন্ত্য, ইন্দ্রিয়ের পাড়ে চিন্তার অতীত।
"নিরূপমের উপমা, সীমাহীনে দিতে সীমা, নাহি হয় সম্ভাবনা।
অচিন্ত্য উপাধিহীনে, অতিক্রন্ত গুণ তিনে,
যত সব অর্ব্বাচীনে করয়ে কল্পনা।
পদার্থ— ইন্দ্রিয় পর, বিভূ সর্ব্ব অগোচর, বেদ বিধির অন্তর,
মন জান না। বর্ণেতে বর্ণিতে নারি, বাক্যেতে কহিতে হারি,
শ্রবণ মনন তাঁরি, কর সূচনা।"
এ গানের তত্ত্বটি তিনি কেন উপনিষদ থেকে গ্রহণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর রাগ বাহারে আরেকটি সংগীত রয়েছে।
"নিরঞ্জনের নিরূপণ, কিসে হবে বল মন,
সে অতীত ত্রৈগুণ্য।
ন ষণ্ড পুমান্, শক্তি, সে অগম্য বুদ্ধি যুক্তি,
অতিক্রান্ত ভূত পঙক্তি, সমাধান শূন্য।
কেহ হস্ত পদ দেয়, কেহ বলে জ্যোতির্ম্ময়, কেহ বা
আকাশ কয়, কেহ কহে জন্য। সে সব কল্পনা মাত্র,
বার বার কহে শাস্ত্র, এক সত্য বিনা অত্র, অন্য নহে মান্য।"
তাঁর ব্রহ্মসংগীতের বহু সংগীতের মধ্যে উপনিষদের বহু মন্ত্রের অন্তর্নিহিত ভাবের সাদৃশ্য রয়েছে।শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে বলা হয়েছে, ব্রহ্মের হাত না থাকলেও, তিনি সবকিছুই ধারণ করেন। তাঁর পা না থাকলেও, তিনি সর্বত্র যেতে পারেন। তাঁর চোখ নেই, তবু তিনি জগতের সকল কিছুই দেখতে পান। তাঁর কান নেই, তবু তিনি সব শুনতে পান। যা কিছু জানবার, তা তিনি জানেন যদিও তাঁকে কেউ জানে না।
অপাণিপাদো জবনো গ্রহীতা
পশ্যত্যচক্ষুঃ স শৃণোত্যকর্ণঃ।
স বেত্তি বেদ্যং ন চ তস্যাস্তি বেত্তা
তমাহুরগ্রং পুরুষং মহান্তম্ ॥
(শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ:৩.১৯)
"তাঁর হাত নেই, তবু তিনি সবকিছু ধারণ করেন; তাঁর পা নেই, তবু তিনি দূরে যেতে পারেন। তাঁর চোখ নেই, তবু তিনি সব দেখতে পান। তাঁর কান নেই, তবু তিনি সব শুনতে পান। যা কিছু জানবার, তা তিনি জানেন যদিও তাঁকে কেউ জানে না। যাঁরা পরমাত্মাকে জানেন, তাঁরা বলেন—তিনিই সকলের অগ্রণী এবং তিনি সর্বব্যাপী।"
রাজা রামমোহন রায় অচিন্ত্য ব্রহ্মের সাথে সাথে ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শিবকেও স্বীকার করে নিয়েছেন তাঁর ব্রহ্মসংগীতে। রাজা রামমোহন রায় মনে করতেন ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শিবসহ সকল দেবতাই ব্রহ্মের শক্তি। তাই পরিশেষে তাঁরা ব্রহ্মতেই লীন হয়ে যাবে। তাই তিনি রাগ আলাইয়া—ঝাঁপতালের একটি সংগীতে সকল দ্বৈততা পরিহার করে অখণ্ড ভাবনায় ভাবিত হতে বলেছেন।
"দ্বিভাব ভাব কি মন এক ভিন্ন দুই নয়।
একের কল্পনা রূপ সাধকেতে কয়।।
হংসরূপে সর্বান্তরে, ব্যাপিল যে চরাচরে,
সে বিনা কে আছে ওরে এ কোন নিশ্চয়।
স্থাবরাদি জঙ্গম, বিধি বিষ্ণু, শিব, যম, প্রত্যেকেতে যথা ক্রম,
যাতে লীন হয়। কর অভিমান খর্ব্ব, ত্যজ মন দ্বৈত
গৰ্ব্ব, একাত্মা জানিবে সৰ্ব্ব, অখণ্ড ব্রহ্মাণ্ডময়।"
রাগ ইমন কল্যাণ এবং ঝাঁপতালের আরেকটি সংগীতে বলেছেন:
"পরমাত্মায় মন রে হও রত।
বেদ বেদান্ত সৰ্ব্ব শাস্ত্রসম্মত।।
বিধি বিষ্ণু, বল যাঁরে, কালে শেষ করে তাঁরে, গুণত্রয় বুঝ না রে,
স্মর পরমেশ্বরে ত্রিগুণাতীত।"
একই ভাব তার দেশ—আড়াঠেকা রাগে লিখিত আরেকটি ব্রহ্মসংগীতে পাওয়া যায়। সেখানে তিনি বলেছেন, সর্বত্রই এবং সর্বস্থানে একই নিরঞ্জন বিরাজমান।
"দ্বৈতভাব ভাব মন না জেন্যে কারণ।
একের সত্তায় হয় যে কিছু সৃজন।
পঞ্চদ্রব্য পঞ্চগুণ, বুদ্ধি অহঙ্কার মন,
সকলের সে কারণ, জীবের জীবন।
গন্ধগুণ দিয়া ধরায় অপে আম্বাদন, অনিলেতে স্পর্শ আর
তেজে দরশন। শূন্যে শব্দ সমর্পিয়া, বিশ্বের আশ্রয় হইয়া,
সর্ব্বান্তরে ব্যাপিয়া, আছে নিরঞ্জন।"
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁