-->

ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

আদিগুরু শ্রীকৃষ্ণদ্বৈপায়নের, জন্মতিথিকেই গুরুপূর্ণিমা বলে।

আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিকে ব্যাসপূর্ণিমা ও গুরুপূর্ণিমা নামে অবিহিত করা হয়। এ পবিত্র তিথিতেই জন্ম নিয়েছেন অখিল বেদবিদ্যার ধারক, বাহক এবং প্রচারক ভগবানের অবতার শ্রীকৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস। তাঁর প্রকৃত নাম শ্রীকৃষ্ণ। তিনি যমুনা নদীর কূলে এক দ্বীপে জন্মেছেন, তাই তাঁর নামের সাথে এসে যুক্ত হয় দ্বৈপায়ন এবং তিনি বেদকে সম্পাদনা করেছেন তাই তাঁর নামের সাথে একটি উপাধি যুক্ত হয় ‘বেদব্যাস’। শ্রীকৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস। ঋষি পরাশর এবং জেলে কন্যা সত্যবতীর পুত্র। যিনি পৃথিবীতে ‘ব্যাসদেব’ নামেই প্রাতঃস্মরণীয়। শ্রীমদ্ভাগবতে তাঁর সম্পর্কে বলা আছে: ততঃ সপ্তদশো জাতঃ সত্যবত্যাং পরাশরাৎ। চক্রে বেদতরোঃ শাখা দৃষ্ট্বা পুংসঃ অল্পমেধসঃ।। (শ্রীমদ্ভাগবত: ০১.০৩.২১) "এরপর তিনি সপ্তদশ অবতারে সত্যবতীর গর্ভে এবং পরাশর মুনির ঔরসে বেদব্যাসরূপে অবতীর্ণ হন। পৃথিবীর মানুষের মেধাশক্তি দিনদিন ক্ষীণ হয়ে আসছে দেখে অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন মানবের প্রতি কৃপাপূর্ণ হয়ে তিনি বেদরূপ বৃক্ষের শাখা বিভাজন করেন (তাই তাঁর নামের সাথে অনন্তকালের জন্যে একটি উপাধি যুক্ত হয় বেদব্যাস)।" ব্যাসদেব চিন্তা করলেন অনন্ত এ বেদবিদ্যা একত্রে গ্রহণ করা মানবের পক্ষে দুঃসাধ্য। তাই তিনি বেদবিদ্যাকে চারভাগে সসম্পাদিত করে তাঁর প্রধান চার শিষ্যকে ভেদজ্ঞান প্রদান করলেন। শিষ্য পৈলকে দিলেন ঋগ্বেদ, শিষ্য জৈমিনিকে দিলেন সামবেদ, শিষ্য বৈশম্পায়নকে দিলেন যজুর্বেদ এবং পরিশেষে শিষ্য সুমন্তকে দিলেন অথর্ববেদ। ব্যাসদেবের প্রধান এ চার শিষ্য জগতে বেদবিদ্যার প্রচার করেন তাঁদের শিষ্য-প্রশিষ্যের মাধ্যমে। এভাবেই গুরুশিষ্য পরম্পরায় বেদজ্ঞান শত-সহস্র শাখায় বিকশিত হয়ে জগতে বেদবিদ্যার অমৃতধারাকে দিকে দিকে প্রবাহিত করে তোলে। বেদ কোন একটি গ্রন্থ নয়, অসংখ্য গ্রন্থের সমষ্টি। এরপরেই ব্যাসদেবের অনন্য কীর্তি বৃহত্তর ভারতবর্ষের ইতিহাসের মহাগ্রন্থ মহাভারত রচনা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে গ্রন্থকে বলেছেন–ভারতবর্ষের চিরকালের ইতিহাস।একলক্ষ শ্লোকের এ মহাভারতের ভীষ্মপর্বের আঠারোটি অধ্যায় নিয়েই রচিত হয়েছে ‘শ্রীমদ্ভগবদগীতা’। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক গ্রন্থ, যাকে বেদান্ত দর্শনের স্মৃতিপ্রস্থান বলা হয়। আঠারোটি পুরাণ এবং আঠারোটি উপ-পুরাণের সকলই ব্যাসদেবের রচনা বলে প্রচলিত। যদিও পুরাণগুলোর মধ্যে অনেক পরস্পর বিরোধী, অবাস্তব, কাল্পনিক, বালখিল্য কথা রয়েছে; এ সত্যেও পুরাণগুলোর মধ্যে অনেক মণি-মুক্তা খচিত অমৃতময় কথাও বিদ্যমান। তাই আমাদের এ পুরাণগুলোকে গ্রহণ এবং বর্জনের মাধ্যমেই গ্রহণ করতে হবে।ব্যাসদেবের আরেকটি সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি সম্পূর্ণ বৈদিক সিদ্ধান্তগুলোকে মাত্র ৫৫৫ টা সূত্রে প্রকাশিত করা; যার নাম ব্রহ্মসূত্র। এ ব্রহ্মসূত্রের ভাষ্যের মাধ্যমেই ভারতবর্ষের সকল মত-পথের উৎপত্তি। শ্রীশঙ্করাচার্য থেকে আমাদের যত আচার্যবৃন্দ আছেন তাঁরা সকলেই এ ব্রহ্মসূত্রের ভাষ্য লিখে আপন আপন সম্প্রদায়ের প্রবর্তন করেছেন। এ কারনেই ব্যাসদেব গুরু পরম্পরায় সবার গুরু এবং তাই তাঁর জন্মতিথিকে গুরুপূর্ণিমা বলা হয়। মমহাভারতেও শ্রীকৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাসকে গুরু বলে অবিহিত করা হয়েছে: যোহ্যস্মাকং গুরুশ্রেষ্ঠঃ কৃষ্ণদ্বৈপায়নো মুনিঃ। জগৌ পরমকং জপ্যং নারায়ণমুদীরয়ন্ ॥ (মহাভারত:শান্তিপর্ব, ৩২৫.১৩০) "মুনিশ্রেষ্ঠ যে কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস আমাদের সকলের গুরু, তিনিও নিজে 'নারায়ণ' শব্দ উচ্চারণ করে উত্তম নারায়ণমন্ত্র প্রচার করেছিলেন।" ব্যাসদেবের জন্মজয়ন্তী গুরুপূর্ণিমা তিথিতে,  ব্যাসদেবের অর্চনার সাথে সাথে যার যার গুরুকেও সম্মান জানানোর প্রথা রয়েছে প্রাচীনকাল থেকে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এ তিথিতে সকলেই যে যার যার গুরু নিয়েই ব্যতিব্যস্ত। এ তিথিতে যে শ্রীকৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের জন্ম হয়েছিল এবং এই কারণেই এ তিথিটি এত মাহাত্ম্যপূর্ণ তা হয়ত অনেকেই জানেনা। শুধু শিষ্যদের দোষ দিয়ে লাভ নেই, গুরুরাও হয়তো শিষ্যদের তিথিটির মাহাত্ম্য বলেন না। পাছে তাদের ভাগে কম পরে যায়!গুরুপূর্ণিমায় আধ্যাত্মিক গুরুদের সাথে সাথে সকলেরই স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাগুরুদেরও যথাযথ সম্মানিত করা বা শ্রদ্ধার্ঘ্য দেয়া প্রয়োজন। জগতে বিদ্যা দুইপ্রকার -পরাবিদ্যা এবং অপরাবিদ্যা। পরাবিদ্যা হল অধ্যাত্মবিদ্যা বা ব্রহ্মবিদ্যা, যার গুরু ব্যাসদেব। কিন্তু অপরাবিদ্যা হল, যে জ্ঞান স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে লাভ করা হয়। এবং যে জাগতিক জ্ঞান লাভ করে জীবন নির্বাহ করা হয়।সেই জাগতিক অপরাবিদ্যার যারা শিক্ষক তারাও গুরু। অবশ্য তারা জাগতিক বিদ্যার গুরু। তাই তাদেরকেও এ দিনে যথাসাধ্য সম্মানিত করতে হয়। দক্ষিণ ভারতসহ বিভিন্ন স্থানে শাস্ত্রীয় নৃত্য এবং সংগীতের শিক্ষাগুরুকে গুরুপূর্ণিমা তিথিতে তাদের ছাত্রদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধার্ঘ্যসুমন নিবেদন করে সম্মানিত করতে দেখা যায়। নেপালে এ দিনটি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়। গুরুপূর্ণিমা আসলে প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা বৃহত্তর ভারতবর্ষের শিক্ষক দিবস। অতি প্রাচীনকাল থেকেই চলে এসেছে এ গুরুপূর্ণিমা স্মরণের রীতি। তাইতো গৌতমবুদ্ধ এ দিনেই সারনাথের ঋষিপত্তন মৃগদাবে তাঁর পঞ্চবর্গীয় শিষ্য কৌন্ডন্য, বপ্প,ভদ্দীয়, মহানাম ও অসসজিতের কাছে তাঁর নবমত প্রচার করেন এবং ধর্ম রক্ষার্থে 'ধর্মচক্র' প্রবর্ত্তন করে ব্যাসদেবের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন। বৌদ্ধদের মত জৈন ধর্মাবলম্বীদের কাছেও এ দিনটি অত্যন্ত পবিত্র ও মাহাত্ম্যপূর্ণ । শিখ সম্প্রদায়ের মানুষেরা তাদের দশম গুরু গোবিন্দ সিংহের পরে তাদের ধর্মগ্রন্থ গুরুগ্রন্থ সাহেবকেই অনন্তকালের জন্যে গুরুরূপে বরণ করে নিয়েছেন। ঠিক একইভাবে ভারতবর্ষের বহু আর্য হিন্দু, হিন্দুজাতির স্বাভিমানের প্রতীক বৈদিক গৈরিক ধ্বজাকে গুরুরূপে এবং সন্মার্গদর্শনকারী রূপে বরণ করে আজ গৈরিকধ্বজার গুরুরূপে বিশেষ পূজা করেন এক একতাবদ্ধ হিন্দু জাতির আকাঙ্ক্ষায়।এ দিনে দান করা অবশ্যকরণীয় কর্তব্য। প্রকৃত সৎগুরুর কখনো বিরোধিতা করা উচিত নয়। মুক্তিলাভের জন্য সদগুরুর অবশ্যই প্রয়োজনীয়তা আছে; কিন্তু বেদাদি শাস্ত্রে তা বাধ্যতামূলক করা হয় নি। আপনার যদি ইচ্ছে হয়, তবে আপনি একটি কেন একশটি গুরুরও শরণ নিতে পারেন। তাতে কোন বাধা নেই। কিন্তু আপনি বলতে পারবেন না যে গুরু ছাড়া মুক্তিলাভ অসম্ভব। এ কথাটি সত্য নয় । অর্থাৎ ইচ্ছে হলে কোন ব্যক্তি যেমন মানুষ গুরুর শরণ নিতে পারেন, আবার তেমনি পাতঞ্জলদর্শন অনুসারে পরমেশ্বরকে এবং বেদাদি শাস্ত্রগ্রন্থকে গুরুরূপে মনে করতে পারে শিখদের ন্যায়। এ সকল বিষয়েরই স্বীকৃতি রয়েছে শাস্ত্রে। মহর্ষি পতঞ্জলি যোগসূত্রের সমাধিপাদে জগতের সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরকেই গুরু বলেছেন: তত্র নিরতিশয়ং সর্বজ্ঞবীজম্। স পূর্বেষামপি গুরুঃ কালেন অনবচ্ছেদাৎ। তস্য বাচকঃ প্রণবঃ।  (যোগসূত্র : ১.২৫-২৭) "ঈশ্বরই নিরতিশয়ত্ব প্রাপ্ত সর্বজ্ঞবীজ।তিনি কালের দ্বারা অবিচ্ছিন্ন পূর্ব পূর্ববর্তী অনাদিকাল থেকেই গুরু। প্রণব বা ওঁকারই তাঁর বাচক।" গুরু যদি শ্রীবাল্মিকী, শ্রীবেদব্যাস, শ্রীশঙ্করাচার্য, শ্রীরামানুজাচার্য, শ্রীনিম্বার্কাচার্য, আচার্য শ্রীরামানন্দ, আচার্য শ্রীরবিদাস, শ্রীমাধবাচার্য, শ্রীচৈত্যন্যদেব, সমর্থ শ্রীরামদাস, শ্রীশঙ্করদেব, শ্রীরামকৃষ্ণ, শ্রীলোকনাথ ব্রহ্মচারী, শ্রীনিগমানন্দ এঁদের মতো জাজ্বল্যমান সদগুরু হয়, তবে তাদের শ্রীচরণে আশ্রয় নিতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু গুরু নামধারীরা, গুরু লেবাসধারীরা যদি রজনীশ, আসারাম, রামরহিম, রাধে মা, নির্মলা মায়ের মতো আত্মপ্রচারকামী, ভণ্ড, লোভী, দুশ্চরিত্র, পাষণ্ড হয়; তাহলে একবার হলেও আপনি চিন্তা করুন তো, তাদের চরণে আশ্রয় নিলে আপনার কি গতি হবে? একটা বৃক্ষে পূর্বে শ্রীফল দিত, কিন্তু বর্তমানে সেই বৃক্ষই দিচ্ছে বিষফল। আপনি কতদিন বা কতকাল এই গাছকে বয়ে নিয়ে যেতে পারবেন? বিষে জর্জরিত হয়ে আপনারই বা কি গতি হবে ভাবতে পারেন একবার? সকল সাধুই সাধু না। সকল গুরুই গুরু না।সাধুত্ব এবং পাণ্ডিত্য সবার থাকে না; কিন্তু এরপরেও গেরুয়া বস্ত্র সর্বদা প্রণম্য। যে গুরু ঈশ্বরের বাণী বাদ দিয়ে শিষ্যদের শুধু নিজের প্রচার করতে বলবে; তাকেই দান করতে বলবে; মরে গেলে তার উত্তরপুরুষ বংশধরদের দান করতে বলবে; মন্দিরে দেবতার বিগ্রহাদি বাদ দিয়ে নিজের ছবি পূজা করতে বলবে; গ্রাফিক্স ডিজাইন করে, নিজের পদ্মের উপরে বসা ছবি পেছনে সূর্যের আলো - এই টাইপের আত্মপ্রচারকামী অশাস্ত্রীয় ছবি শিষ্যদের দিয়ে প্রচার করাবে; শিষ্যদের বেদবেদান্তের জ্ঞানের পথে যেতে বাধা দিবে; ব্যক্তিস্বার্থে শাস্ত্রহীন অশাস্ত্রীয় নির্দেশনা দিবে; সাধারণ মানুষ থেকে দূরত্বে থেকে রাজার মত বিলাসবহুল জীবনযাপন করবে; হিন্দুদের আপদে বিপদে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে; অকারণ সর্বধর্ম সমন্বয়ের নামে সাধারণ হিন্দুদের বিভ্রান্ত করবে; কোন স্টেজে অথবা রাজপথে অন্ধ শিষ্যদের দিয়ে শোডাউন করে ক্ষমতার প্রদর্শন করবে; এ সকল কাজ যে যে গুরুনামধারী ব্যক্তিরা করবে, বুঝতে হবে তিনি সদগুরু নন, তিনি আত্মপ্রচারকামী ব্যক্তিকেন্দ্রিক গুরু ব্যবসায়ী। একজন সদগুরু কখনই  নিন্দনীয় এ সকল কাজ মরে গেলেও করবে না এবং তার শিষ্যদেরও করতে দিবে না। ভাবতে অবাক লাগে গুরু যদি ঈশ্বরের পথদ্রষ্টা হয় তবে গুরুই কেন ঈশ্বর সেজে বসে যান পূজার আসনে? ঈশ্বরকে বাদ দিয়ে আমরা পরবর্তীতে তাকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পরি। আর এই সকল ভণ্ড গুরুরা শিষ্যদের পকেট মারতেই সদা ব্যস্তসমস্ত হয়ে পরেন। নিজের সাথেসাথে তার বউপোলাপান-নাতিপুতির সহ ভবিষ্যতের বংশধরদের জন্যে অন্নসংস্থানের নিরবচ্ছিন্ন ব্যবস্থা করে যান।শ্রীগোবিন্দাচার্যের মতো গুরু হলে আপনি শ্রীশঙ্করাচার্যের মতো শিষ্য পাবেন। সমর্থ শ্রীরামদাসের মতো গুরু পেলে আপনি ছত্রপতি শিবাজীর মতো রাজা পাবেন। শ্রীরামকৃষ্ণের মতো গুরু পেলে আপনি স্বামী বিবেকানন্দের মত বিশ্বদরবারে ভারতবর্ষ এবং সনাতন ধর্মের মুখ উজ্জ্বল করা বিশ্বজয়ী শিষ্য পাবেন। কিন্তু এই গুরু নামধারী ভণ্ডদের থেকে কি পাবেন আপনি? কিছুই নয় শূণ্য।  সকলেরই বেদ বেদান্তের মূল রাজপথে ফেরা প্রয়োজন। শাস্ত্রীয় কোন সিদ্ধান্ত  নিয়ে সমস্যা হলে, সমাধান খুঁজতে হবে বেদাদি শাস্ত্রগ্রন্থের কাছে। কোন মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্য বা বর্তমানকালের কোন বাবা-গুরুদের লেখা বাণীর সংকলন, চিঠির সংকলন, গানের বই, ছড়ার বই থেকে নয়।কারণ জগতে পরমেশ্বরের বাণী বেদবেদান্তই একমাত্র প্রমাণ। কিন্তু বর্তমানে যেভাবে রাস্তা থেকে লোক ধরে ধরে এনে গুরু নামে মানুষ পূজা শুরু করা হচ্ছে, এ বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং যুগপৎ অশাস্ত্রীয়। গুরুর কাজ হল শিষ্যকে বৈদিক সন্মার্গ দেখিয়ে মানুষকে মুক্তির পথে অগ্রসর করা। কিন্তু বর্তমানে অনেক ব্যক্তিকেন্দ্রিক গুরুরাই বেদ-বেদান্ত বাদ দিয়ে শিষ্যদের শুধুমাত্র নিজেদের এবং নিজের ছেলেমেয়ে বংশধরদের পূজা করাতেই ব্যস্ত। এই ব্যক্তিকেন্দ্রিক গুরুদের প্রধান লক্ষ্যই থাকে ধনী শিষ্যদের পকেটের দিকে। এই সকল গুরু নামধারী ধান্ধাবাজ ভাইরাসদের কারণেই অনেক শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা ধর্মের উপরে বিরক্ত হয়ে ধর্মান্তরিতের পথে পা বাড়াচ্ছে এবং এই ভণ্ডদের বিভিন্ন ছলাকলা যুক্ত ভণ্ডামির কারণে অনেক মানুষই প্রকৃত গুরুদের ভুল বুঝে অবজ্ঞা করছে। তবে আশার কথা, ব্যাসদেব প্রচারিত এবং প্রদর্শিত পথে, পরমেশ্বরের নামে কুসংস্কার মুক্তভাবে বৈদিকরাজপথে ফিরতে তরুণ প্রজন্মের সন্তানেরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তাদের দিনেদিনেই ঐক্যের বন্ধন দৃঢ় হচ্ছে। কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা সমালোচনাতো থাকবেই। এর মাধ্যমেই সমাধানের পথের দিকে এগোতে হবে। এক্ষেত্রে অগ্রগামী হিসেবে আছে শিক্ষিত একঝাক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়া তরুণ সম্প্রদায়।এ তরুণেরাই আগামীতে জাতিকে সত্যিকার অর্থে কুসংস্কার মুক্ত মঙ্গলময় পথ দেখাবে। বেদাদি শাস্ত্রানুসারে জাতপাত নির্বিশেষে সকলেই গুরু হতে পারে; শুধুমাত্র গুরুকে যোগ্য অধিকারী, নিষ্কাম এবং আত্মপ্রচার বিমুখ ব্রহ্মময় হতে হবে। এ প্রসঙ্গে শ্রীচৈতন্যদেবের একটি অত্যন্ত সুন্দর স্পষ্ট নির্দেশ আছে, তিনি ব্রাহ্মণ-শূদ্র নির্বেশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষকেই গুরু হবার, আচার্য্য হবার, তত্ত্ববেত্তা হবার অধিকার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন: কিবা বিপ্র কিবা ন্যাসী শূদ্র কেনে নয়। যেই কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা সেই গুরু হয়।। (চৈতন্যচরিতামৃত : মধ্য, অষ্টম পরিচ্ছেদ) বর্তমান কালের মানুষের মধ্যে ছদ্মবেশী মানসিকতা প্রবলভাবে দেখা যায়। তাই তার  যখন নিজের জীবন এবং নিজের সম্পর্কে কোথায় কিছু লেখে বা বলে, তখন জীবনের সকল ঘটনাগুলোকে ধুয়েমুছে কালিমাকে গোপন করে তবে প্রকাশ করে । কিন্তু ব্যাসদেবের জীবনে দেখা যায় উল্টোটি, তিনি সর্বদা সত্যে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁর লেখায় নিজের জীবন নিয়ে সকল বিষয়ে ছিল তাঁর অকপট স্বীকারোক্তি। বাবা পরাশর এবং মা জেলেকন্যা সত্যবতীর হঠাৎ মিলনে  কিভাবে তাঁর  জন্ম হয়েছে, তা তিনি না লিখলেও পারতেন। বংশরক্ষায় মায়ের আদেশে কুরুবংশের ক্ষেত্রজ পুত্র পাণ্ডু, ধৃতরাষ্ট্র এবং বিদুরের কিভাবে জন্ম হয়েছে, তাও না লিখলেও পারতেন।  তিনি কি জানতেন না একথাগুলি আগামীতে তাঁকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে, তবুও সত্যরক্ষার্থে তিনি লিখেছেন। অথচ বর্তমানকালে যখন ডাইরি সহ নিজের জীবন নিয়ে কেউ লেখে, যাকে আত্মজীবনী বলা হয়। সেই ডাইরি বা আআত্মজীবনীর অধিকাংশ তথ্যই থাকে সাজানো-গোছানো মিথ্যা কথা। প্রাচীন রাজবংশগুলিতে নিয়ম ছিল, যদি কোন কারণে বংশের প্রদীপ নিভে যায়, তবে সকলের পরামর্শে এবং সম্মতিতে কোন জ্ঞানী পণ্ডিত ব্যক্তিকে দিয়ে সন্তান উৎপাদন করতে পারবে। যিনি ক্ষেত্রজ হয়ে আসবেন, তাঁর যৌনতা উপভোগের কোন বিষয় ছিল না। তাকে সারা শরীরে ঘি মেখে দেহকে তৈলাক্ত করে নিতে হত। রাজপরিবারের পুরুষরা মারা গেলে বা নপুংসক হলে তবেই ক্ষেত্রজ সন্তান উৎপাদনের রীতি ছিল। রাজমহিষীদের গর্ভে ক্ষেত্রজ সন্তান যার থেকেই উৎপন্ন হোক না কেন সন্তান সেই রাজবংশের হোত। বর্তমানে যেমন ভাবে, আমরা নিজেরা যদি জমি চাষ করতে অপারগ হই, তবে ধানের জমিতে অন্যকে দিয়ে বর্গাচাষ করাই। বর্গাচাষি সকল শ্রম দিয়ে ধান উৎপাদন করলেও ধানের মালিক হয় জমির মালিক; বর্গাচাষি নয়, তিনি শুধু ভাগ পান। ক্ষেত্রজ বিষয়টি নিয়ে অনেকেই আমরা না বুঝেই কটুক্তি করি, কিন্তু একবার নিগূঢ়ভাবে ভেবে দেখলে দেখতে পাব চন্দ্রবংশের মত সুপ্রাচীণ বংশ যখন সন্তান না থাকার কারণে শেষ হয়ে যাচ্ছে, তখন রাজমাতা সত্যবতীর চন্দ্রবংশের সন্তানধারাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে এটা ছাড়া আর কোন পথই তাঁর সামনে খোলা ছিল? হিন্দুদের সাকার নিরাকার সকল মতপথের পক্ষেই লিখেছেন ব্যাসদেব। তাঁকে বা তাঁর চিন্তাকে খণ্ডিত করা যায় না। তখনও তাঁকে মনে হয় নিরাকার ব্রহ্মবাদী, কখনও বৈষ্ণব, কখনও শাক্ত, কখনও শৈব।অর্থাৎ তিনি সকল মতপথের সমন্বয়ের প্রতীক।পরবর্তীকালে এ সমন্বয় দেখা যায় শ্রীশঙ্করাচার্যের মধ্যে। তাই ব্যাসদেব শ্রীশঙ্করাচার্যের চিন্তাকে সংকীর্ণ করা যায় না। ব্যাসদেব যে পুরাণ লিখেছেন, সেই পুরাণের কেন্দ্রীয় উপাস্যকেই পরমেশ্বররূপে স্তোত্র করেছেন। যে কোনভাবে এবং যেকোন রূপেই যে তাঁকে পাওয়া যায় এ ব্রহ্মতত্ত্বটি বোঝাতে। আজ অনেক সময় ব্যক্তিকে তাঁর সৌন্দর্য দিয়ে, দেহের গঠন দিয়ে মূল্যায়ন করতে চায় সমাজ।কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে এমন অনন্য অদ্বিতীয় মেধাজগতের কাজ করা ব্যাসদেবের গায়ের বর্ণ ছিল কুচকুচে কাল। প্রচলিত অর্থে খুব একটা সুদর্শন ছিলেন না, কিন্তু এরপরেও তিনি তাঁর মেধা যোগ্যতাবলে সকল বিদ্যার আদিগুরু বলে আজও বিশ্বব্যাপী সম্মানিত পূজনীয়। রূপ নয়, কর্ম এবং  যোগ্যতা যে মানুষকে মহান করে, এ আধুনিক মানবিক কথাগুলি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের জীবনেই দেখতে পাই। যা আজ জগতের জন্যে শিক্ষনীয়। কুরুবংশের ক্ষেত্রজ সন্তান উৎপাদনে অম্বিকা এবং অম্বালিকা যখন ব্যাসদেবের কাছে আসে তখন তাঁর চেহারা দেখে অম্বিকা সারাক্ষণ চোখ বন্ধ করে ছিলেন এবং অম্বালিকা ভয়ে ফ্যাকাসে বা পাণ্ডুবর্ণ হয়ে গিয়েছিলেন। কথাগুলো ব্যাসদেব নিজের সম্পর্কে নিজেই লিখেছেন। ভাবা যায়, নিজের লেখাতে নিজেকে নিয়েই কতটা সরল নিষ্কপট স্বীকারোক্তি। এরকম অসংখ্য কারণেই তিনি পূজনীয়, বরণীয় এবং মহান। শ্রীকুশল বরণ চক্রবর্ত্তী সহকারী অধ্যাপক,  সংস্কৃত বিভাগ,  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিকে ব্যাসপূর্ণিমা ও গুরুপূর্ণিমা নামে অবিহিত করা হয়। এ পবিত্র তিথিতেই জন্ম নিয়েছেন অখিল বেদবিদ্যার ধারক, বাহক এবং প্রচারক ভগবানের অবতার শ্রীকৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস। তাঁর প্রকৃত নাম শ্রীকৃষ্ণ। তিনি যমুনা নদীর কূলে এক দ্বীপে জন্মেছেন, তাই তাঁর নামের সাথে এসে যুক্ত হয় দ্বৈপায়ন এবং তিনি বেদকে সম্পাদনা করেছেন তাই তাঁর নামের সাথে একটি উপাধি যুক্ত হয় ‘বেদব্যাস’। শ্রীকৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস। ঋষি পরাশর এবং জেলে কন্যা সত্যবতীর পুত্র। যিনি পৃথিবীতে ‘ব্যাসদেব’ নামেই প্রাতঃস্মরণীয়। শ্রীমদ্ভাগবতে তাঁর সম্পর্কে বলা আছে:
ততঃ সপ্তদশো জাতঃ সত্যবত্যাং পরাশরাৎ।
চক্রে বেদতরোঃ শাখা দৃষ্ট্বা পুংসঃ অল্পমেধসঃ।।
(শ্রীমদ্ভাগবত: ০১.০৩.২১)
"এরপর তিনি সপ্তদশ অবতারে সত্যবতীর গর্ভে এবং পরাশর মুনির ঔরসে বেদব্যাসরূপে অবতীর্ণ হন। পৃথিবীর মানুষের মেধাশক্তি দিনদিন ক্ষীণ হয়ে আসছে দেখে অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন মানবের প্রতি কৃপাপূর্ণ হয়ে তিনি বেদরূপ বৃক্ষের শাখা বিভাজন করেন (তাই তাঁর নামের সাথে অনন্তকালের জন্যে একটি উপাধি যুক্ত হয় বেদব্যাস)।"
ব্যাসদেব চিন্তা করলেন অনন্ত এ বেদবিদ্যা একত্রে গ্রহণ করা মানবের পক্ষে দুঃসাধ্য। তাই তিনি বেদবিদ্যাকে চারভাগে সসম্পাদিত করে তাঁর প্রধান চার শিষ্যকে ভেদজ্ঞান প্রদান করলেন। শিষ্য পৈলকে দিলেন ঋগ্বেদ, শিষ্য জৈমিনিকে দিলেন সামবেদ, শিষ্য বৈশম্পায়নকে দিলেন যজুর্বেদ এবং পরিশেষে শিষ্য সুমন্তকে দিলেন অথর্ববেদ। ব্যাসদেবের প্রধান এ চার শিষ্য জগতে বেদবিদ্যার প্রচার করেন তাঁদের শিষ্য-প্রশিষ্যের মাধ্যমে। এভাবেই গুরুশিষ্য পরম্পরায় বেদজ্ঞান শত-সহস্র শাখায় বিকশিত হয়ে জগতে বেদবিদ্যার অমৃতধারাকে দিকে দিকে প্রবাহিত করে তোলে। বেদ কোন একটি গ্রন্থ নয়, অসংখ্য গ্রন্থের সমষ্টি। এরপরেই ব্যাসদেবের অনন্য কীর্তি বৃহত্তর ভারতবর্ষের ইতিহাসের মহাগ্রন্থ মহাভারত রচনা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে গ্রন্থকে বলেছেন–ভারতবর্ষের চিরকালের ইতিহাস।একলক্ষ শ্লোকের এ মহাভারতের ভীষ্মপর্বের আঠারোটি অধ্যায় নিয়েই রচিত হয়েছে ‘শ্রীমদ্ভগবদগীতা’। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক গ্রন্থ, যাকে বেদান্ত দর্শনের স্মৃতিপ্রস্থান বলা হয়। আঠারোটি পুরাণ এবং আঠারোটি উপ-পুরাণের সকলই ব্যাসদেবের রচনা বলে প্রচলিত। যদিও পুরাণগুলোর মধ্যে অনেক পরস্পর বিরোধী, অবাস্তব, কাল্পনিক, বালখিল্য কথা রয়েছে; এ সত্যেও পুরাণগুলোর মধ্যে অনেক মণি-মুক্তা খচিত অমৃতময় কথাও বিদ্যমান। তাই আমাদের এ পুরাণগুলোকে গ্রহণ এবং বর্জনের মাধ্যমেই গ্রহণ করতে হবে।ব্যাসদেবের আরেকটি সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি সম্পূর্ণ বৈদিক সিদ্ধান্তগুলোকে মাত্র ৫৫৫ টা সূত্রে প্রকাশিত করা; যার নাম ব্রহ্মসূত্র। এ ব্রহ্মসূত্রের ভাষ্যের মাধ্যমেই ভারতবর্ষের সকল মত-পথের উৎপত্তি। শ্রীশঙ্করাচার্য থেকে আমাদের যত আচার্যবৃন্দ আছেন তাঁরা সকলেই এ ব্রহ্মসূত্রের ভাষ্য লিখে আপন আপন সম্প্রদায়ের প্রবর্তন করেছেন। এ কারনেই ব্যাসদেব গুরু পরম্পরায় সবার গুরু এবং তাই তাঁর জন্মতিথিকে গুরুপূর্ণিমা বলা হয়। মমহাভারতেও শ্রীকৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাসকে গুরু বলে অবিহিত করা হয়েছে:
যোহ্যস্মাকং গুরুশ্রেষ্ঠঃ কৃষ্ণদ্বৈপায়নো মুনিঃ।
জগৌ পরমকং জপ্যং নারায়ণমুদীরয়ন্ ॥
(মহাভারত:শান্তিপর্ব, ৩২৫.১৩০)
"মুনিশ্রেষ্ঠ যে কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস আমাদের সকলের গুরু, তিনিও নিজে 'নারায়ণ' শব্দ উচ্চারণ করে উত্তম নারায়ণমন্ত্র প্রচার করেছিলেন।"
ব্যাসদেবের জন্মজয়ন্তী গুরুপূর্ণিমা তিথিতে, ব্যাসদেবের অর্চনার সাথে সাথে যার যার গুরুকেও সম্মান জানানোর প্রথা রয়েছে প্রাচীনকাল থেকে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এ তিথিতে সকলেই যে যার যার গুরু নিয়েই ব্যতিব্যস্ত। এ তিথিতে যে শ্রীকৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের জন্ম হয়েছিল এবং এই কারণেই এ তিথিটি এত মাহাত্ম্যপূর্ণ তা হয়ত অনেকেই জানেনা। শুধু শিষ্যদের দোষ দিয়ে লাভ নেই, গুরুরাও হয়তো শিষ্যদের তিথিটির মাহাত্ম্য বলেন না। পাছে তাদের ভাগে কম পরে যায়!গুরুপূর্ণিমায় আধ্যাত্মিক গুরুদের সাথে সাথে সকলেরই স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাগুরুদেরও যথাযথ সম্মানিত করা বা শ্রদ্ধার্ঘ্য দেয়া প্রয়োজন। জগতে বিদ্যা দুইপ্রকার -পরাবিদ্যা এবং অপরাবিদ্যা। পরাবিদ্যা হল অধ্যাত্মবিদ্যা বা ব্রহ্মবিদ্যা, যার গুরু ব্যাসদেব। কিন্তু অপরাবিদ্যা হল, যে জ্ঞান স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে লাভ করা হয়। এবং যে জাগতিক জ্ঞান লাভ করে জীবন নির্বাহ করা হয়।সেই জাগতিক অপরাবিদ্যার যারা শিক্ষক তারাও গুরু। অবশ্য তারা জাগতিক বিদ্যার গুরু। তাই তাদেরকেও এ দিনে যথাসাধ্য সম্মানিত করতে হয়। দক্ষিণ ভারতসহ বিভিন্ন স্থানে শাস্ত্রীয় নৃত্য এবং সংগীতের শিক্ষাগুরুকে গুরুপূর্ণিমা তিথিতে তাদের ছাত্রদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধার্ঘ্যসুমন নিবেদন করে সম্মানিত করতে দেখা যায়। নেপালে এ দিনটি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালিত হয়। গুরুপূর্ণিমা আসলে প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা বৃহত্তর ভারতবর্ষের শিক্ষক দিবস।
অতি প্রাচীনকাল থেকেই চলে এসেছে এ গুরুপূর্ণিমা স্মরণের রীতি। তাইতো গৌতমবুদ্ধ এ দিনেই সারনাথের ঋষিপত্তন মৃগদাবে তাঁর পঞ্চবর্গীয় শিষ্য কৌন্ডন্য, বপ্প,ভদ্দীয়, মহানাম ও অসসজিতের কাছে তাঁর নবমত প্রচার করেন এবং ধর্ম রক্ষার্থে 'ধর্মচক্র' প্রবর্ত্তন করে ব্যাসদেবের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন। বৌদ্ধদের মত জৈন ধর্মাবলম্বীদের কাছেও এ দিনটি অত্যন্ত পবিত্র ও মাহাত্ম্যপূর্ণ । শিখ সম্প্রদায়ের মানুষেরা তাদের দশম গুরু গোবিন্দ সিংহের পরে তাদের ধর্মগ্রন্থ গুরুগ্রন্থ সাহেবকেই অনন্তকালের জন্যে গুরুরূপে বরণ করে নিয়েছেন। ঠিক একইভাবে ভারতবর্ষের বহু আর্য হিন্দু, হিন্দুজাতির স্বাভিমানের প্রতীক বৈদিক গৈরিক ধ্বজাকে গুরুরূপে এবং সন্মার্গদর্শনকারী রূপে বরণ করে আজ গৈরিকধ্বজার গুরুরূপে বিশেষ পূজা করেন এক একতাবদ্ধ হিন্দু জাতির আকাঙ্ক্ষায়।এ দিনে দান করা অবশ্যকরণীয় কর্তব্য। প্রকৃত সৎগুরুর কখনো বিরোধিতা করা উচিত নয়। মুক্তিলাভের জন্য সদগুরুর অবশ্যই প্রয়োজনীয়তা আছে; কিন্তু বেদাদি শাস্ত্রে তা বাধ্যতামূলক করা হয় নি। আপনার যদি ইচ্ছে হয়, তবে আপনি একটি কেন একশটি গুরুরও শরণ নিতে পারেন। তাতে কোন বাধা নেই। কিন্তু আপনি বলতে পারবেন না যে গুরু ছাড়া মুক্তিলাভ অসম্ভব। এ কথাটি সত্য নয় । অর্থাৎ ইচ্ছে হলে কোন ব্যক্তি যেমন মানুষ গুরুর শরণ নিতে পারেন, আবার তেমনি পাতঞ্জলদর্শন অনুসারে পরমেশ্বরকে এবং বেদাদি শাস্ত্রগ্রন্থকে গুরুরূপে মনে করতে পারে শিখদের ন্যায়। এ সকল বিষয়েরই স্বীকৃতি রয়েছে শাস্ত্রে। মহর্ষি পতঞ্জলি যোগসূত্রের সমাধিপাদে জগতের সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরকেই গুরু বলেছেন:
তত্র নিরতিশয়ং সর্বজ্ঞবীজম্।
স পূর্বেষামপি গুরুঃ কালেন অনবচ্ছেদাৎ।
তস্য বাচকঃ প্রণবঃ।
(যোগসূত্র : ১.২৫-২৭)
"ঈশ্বরই নিরতিশয়ত্ব প্রাপ্ত সর্বজ্ঞবীজ।তিনি কালের দ্বারা অবিচ্ছিন্ন পূর্ব পূর্ববর্তী অনাদিকাল থেকেই গুরু। প্রণব বা ওঁকারই তাঁর বাচক।"
গুরু যদি শ্রীবাল্মিকী, শ্রীবেদব্যাস, শ্রীশঙ্করাচার্য, শ্রীরামানুজাচার্য, শ্রীনিম্বার্কাচার্য, আচার্য শ্রীরামানন্দ, আচার্য শ্রীরবিদাস, শ্রীমাধবাচার্য, শ্রীচৈত্যন্যদেব, সমর্থ শ্রীরামদাস, শ্রীশঙ্করদেব, শ্রীরামকৃষ্ণ, শ্রীলোকনাথ ব্রহ্মচারী, শ্রীনিগমানন্দ এঁদের মতো জাজ্বল্যমান সদগুরু হয়, তবে তাদের শ্রীচরণে আশ্রয় নিতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু গুরু নামধারীরা, গুরু লেবাসধারীরা যদি রজনীশ, আসারাম, রামরহিম, রাধে মা, নির্মলা মায়ের মতো আত্মপ্রচারকামী, ভণ্ড, লোভী, দুশ্চরিত্র, পাষণ্ড হয়; তাহলে একবার হলেও আপনি চিন্তা করুন তো, তাদের চরণে আশ্রয় নিলে আপনার কি গতি হবে? একটা বৃক্ষে পূর্বে শ্রীফল দিত, কিন্তু বর্তমানে সেই বৃক্ষই দিচ্ছে বিষফল। আপনি কতদিন বা কতকাল এই গাছকে বয়ে নিয়ে যেতে পারবেন? বিষে জর্জরিত হয়ে আপনারই বা কি গতি হবে ভাবতে পারেন একবার?
সকল সাধুই সাধু না। সকল গুরুই গুরু না।সাধুত্ব এবং পাণ্ডিত্য সবার থাকে না; কিন্তু এরপরেও গেরুয়া বস্ত্র সর্বদা প্রণম্য। যে গুরু ঈশ্বরের বাণী বাদ দিয়ে শিষ্যদের শুধু নিজের প্রচার করতে বলবে; তাকেই দান করতে বলবে; মরে গেলে তার উত্তরপুরুষ বংশধরদের দান করতে বলবে; মন্দিরে দেবতার বিগ্রহাদি বাদ দিয়ে নিজের ছবি পূজা করতে বলবে; গ্রাফিক্স ডিজাইন করে, নিজের পদ্মের উপরে বসা ছবি পেছনে সূর্যের আলো - এই টাইপের আত্মপ্রচারকামী অশাস্ত্রীয় ছবি শিষ্যদের দিয়ে প্রচার করাবে; শিষ্যদের বেদবেদান্তের জ্ঞানের পথে যেতে বাধা দিবে; ব্যক্তিস্বার্থে শাস্ত্রহীন অশাস্ত্রীয় নির্দেশনা দিবে; সাধারণ মানুষ থেকে দূরত্বে থেকে রাজার মত বিলাসবহুল জীবনযাপন করবে; হিন্দুদের আপদে বিপদে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে; অকারণ সর্বধর্ম সমন্বয়ের নামে সাধারণ হিন্দুদের বিভ্রান্ত করবে; কোন স্টেজে অথবা রাজপথে অন্ধ শিষ্যদের দিয়ে শোডাউন করে ক্ষমতার প্রদর্শন করবে; এ সকল কাজ যে যে গুরুনামধারী ব্যক্তিরা করবে, বুঝতে হবে তিনি সদগুরু নন, তিনি আত্মপ্রচারকামী ব্যক্তিকেন্দ্রিক গুরু ব্যবসায়ী। একজন সদগুরু কখনই নিন্দনীয় এ সকল কাজ মরে গেলেও করবে না এবং তার শিষ্যদেরও করতে দিবে না।
ভাবতে অবাক লাগে গুরু যদি ঈশ্বরের পথদ্রষ্টা হয় তবে গুরুই কেন ঈশ্বর সেজে বসে যান পূজার আসনে? ঈশ্বরকে বাদ দিয়ে আমরা পরবর্তীতে তাকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পরি। আর এই সকল ভণ্ড গুরুরা শিষ্যদের পকেট মারতেই সদা ব্যস্তসমস্ত হয়ে পরেন। নিজের সাথেসাথে তার বউপোলাপান-নাতিপুতির সহ ভবিষ্যতের বংশধরদের জন্যে অন্নসংস্থানের নিরবচ্ছিন্ন ব্যবস্থা করে যান।শ্রীগোবিন্দাচার্যের মতো গুরু হলে আপনি শ্রীশঙ্করাচার্যের মতো শিষ্য পাবেন। সমর্থ শ্রীরামদাসের মতো গুরু পেলে আপনি ছত্রপতি শিবাজীর মতো রাজা পাবেন। শ্রীরামকৃষ্ণের মতো গুরু পেলে আপনি স্বামী বিবেকানন্দের মত বিশ্বদরবারে ভারতবর্ষ এবং সনাতন ধর্মের মুখ উজ্জ্বল করা বিশ্বজয়ী শিষ্য পাবেন। কিন্তু এই গুরু নামধারী ভণ্ডদের থেকে কি পাবেন আপনি? কিছুই নয় শূণ্য।
সকলেরই বেদ বেদান্তের মূল রাজপথে ফেরা প্রয়োজন। শাস্ত্রীয় কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে সমস্যা হলে, সমাধান খুঁজতে হবে বেদাদি শাস্ত্রগ্রন্থের কাছে। কোন মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্য বা বর্তমানকালের কোন বাবা-গুরুদের লেখা বাণীর সংকলন, চিঠির সংকলন, গানের বই, ছড়ার বই থেকে নয়।কারণ জগতে পরমেশ্বরের বাণী বেদবেদান্তই একমাত্র প্রমাণ। কিন্তু বর্তমানে যেভাবে রাস্তা থেকে লোক ধরে ধরে এনে গুরু নামে মানুষ পূজা শুরু করা হচ্ছে, এ বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং যুগপৎ অশাস্ত্রীয়। গুরুর কাজ হল শিষ্যকে বৈদিক সন্মার্গ দেখিয়ে মানুষকে মুক্তির পথে অগ্রসর করা। কিন্তু বর্তমানে অনেক ব্যক্তিকেন্দ্রিক গুরুরাই বেদ-বেদান্ত বাদ দিয়ে শিষ্যদের শুধুমাত্র নিজেদের এবং নিজের ছেলেমেয়ে বংশধরদের পূজা করাতেই ব্যস্ত। এই ব্যক্তিকেন্দ্রিক গুরুদের প্রধান লক্ষ্যই থাকে ধনী শিষ্যদের পকেটের দিকে। এই সকল গুরু নামধারী ধান্ধাবাজ ভাইরাসদের কারণেই অনেক শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা ধর্মের উপরে বিরক্ত হয়ে ধর্মান্তরিতের পথে পা বাড়াচ্ছে এবং এই ভণ্ডদের বিভিন্ন ছলাকলা যুক্ত ভণ্ডামির কারণে অনেক মানুষই প্রকৃত গুরুদের ভুল বুঝে অবজ্ঞা করছে। তবে আশার কথা, ব্যাসদেব প্রচারিত এবং প্রদর্শিত পথে, পরমেশ্বরের নামে কুসংস্কার মুক্তভাবে বৈদিকরাজপথে ফিরতে তরুণ প্রজন্মের সন্তানেরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তাদের দিনেদিনেই ঐক্যের বন্ধন দৃঢ় হচ্ছে। কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা সমালোচনাতো থাকবেই। এর মাধ্যমেই সমাধানের পথের দিকে এগোতে হবে। এক্ষেত্রে অগ্রগামী হিসেবে আছে শিক্ষিত একঝাক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়া তরুণ সম্প্রদায়।এ তরুণেরাই আগামীতে জাতিকে সত্যিকার অর্থে কুসংস্কার মুক্ত মঙ্গলময় পথ দেখাবে।
বেদাদি শাস্ত্রানুসারে জাতপাত নির্বিশেষে সকলেই গুরু হতে পারে; শুধুমাত্র গুরুকে যোগ্য অধিকারী, নিষ্কাম এবং আত্মপ্রচার বিমুখ ব্রহ্মময় হতে হবে। এ প্রসঙ্গে শ্রীচৈতন্যদেবের একটি অত্যন্ত সুন্দর স্পষ্ট নির্দেশ আছে, তিনি ব্রাহ্মণ-শূদ্র নির্বেশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষকেই গুরু হবার, আচার্য্য হবার, তত্ত্ববেত্তা হবার অধিকার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন:
কিবা বিপ্র কিবা ন্যাসী শূদ্র কেনে নয়।
যেই কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা সেই গুরু হয়।।
(চৈতন্যচরিতামৃত : মধ্য, অষ্টম পরিচ্ছেদ)
বর্তমান কালের মানুষের মধ্যে ছদ্মবেশী মানসিকতা প্রবলভাবে দেখা যায়। তাই তার যখন নিজের জীবন এবং নিজের সম্পর্কে কোথায় কিছু লেখে বা বলে, তখন জীবনের সকল ঘটনাগুলোকে ধুয়েমুছে কালিমাকে গোপন করে তবে প্রকাশ করে । কিন্তু ব্যাসদেবের জীবনে দেখা যায় উল্টোটি, তিনি সর্বদা সত্যে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁর লেখায় নিজের জীবন নিয়ে সকল বিষয়ে ছিল তাঁর অকপট স্বীকারোক্তি। বাবা পরাশর এবং মা জেলেকন্যা সত্যবতীর হঠাৎ মিলনে কিভাবে তাঁর জন্ম হয়েছে, তা তিনি না লিখলেও পারতেন। বংশরক্ষায় মায়ের আদেশে কুরুবংশের ক্ষেত্রজ পুত্র পাণ্ডু, ধৃতরাষ্ট্র এবং বিদুরের কিভাবে জন্ম হয়েছে, তাও না লিখলেও পারতেন। তিনি কি জানতেন না একথাগুলি আগামীতে তাঁকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে, তবুও সত্যরক্ষার্থে তিনি লিখেছেন। অথচ বর্তমানকালে যখন ডাইরি সহ নিজের জীবন নিয়ে কেউ লেখে, যাকে আত্মজীবনী বলা হয়। সেই ডাইরি বা আআত্মজীবনীর অধিকাংশ তথ্যই থাকে সাজানো-গোছানো মিথ্যা কথা। প্রাচীন রাজবংশগুলিতে নিয়ম ছিল, যদি কোন কারণে বংশের প্রদীপ নিভে যায়, তবে সকলের পরামর্শে এবং সম্মতিতে কোন জ্ঞানী পণ্ডিত ব্যক্তিকে দিয়ে সন্তান উৎপাদন করতে পারবে। যিনি ক্ষেত্রজ হয়ে আসবেন, তাঁর যৌনতা উপভোগের কোন বিষয় ছিল না। তাকে সারা শরীরে ঘি মেখে দেহকে তৈলাক্ত করে নিতে হত। রাজপরিবারের পুরুষরা মারা গেলে বা নপুংসক হলে তবেই ক্ষেত্রজ সন্তান উৎপাদনের রীতি ছিল। রাজমহিষীদের গর্ভে ক্ষেত্রজ সন্তান যার থেকেই উৎপন্ন হোক না কেন সন্তান সেই রাজবংশের হোত। বর্তমানে যেমন ভাবে, আমরা নিজেরা যদি জমি চাষ করতে অপারগ হই, তবে ধানের জমিতে অন্যকে দিয়ে বর্গাচাষ করাই। বর্গাচাষি সকল শ্রম দিয়ে ধান উৎপাদন করলেও ধানের মালিক হয় জমির মালিক; বর্গাচাষি নয়, তিনি শুধু ভাগ পান। ক্ষেত্রজ বিষয়টি নিয়ে অনেকেই আমরা না বুঝেই কটুক্তি করি, কিন্তু একবার নিগূঢ়ভাবে ভেবে দেখলে দেখতে পাব চন্দ্রবংশের মত সুপ্রাচীণ বংশ যখন সন্তান না থাকার কারণে শেষ হয়ে যাচ্ছে, তখন রাজমাতা সত্যবতীর চন্দ্রবংশের সন্তানধারাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে এটা ছাড়া আর কোন পথই তাঁর সামনে খোলা ছিল?
হিন্দুদের সাকার নিরাকার সকল মতপথের পক্ষেই লিখেছেন ব্যাসদেব। তাঁকে বা তাঁর চিন্তাকে খণ্ডিত করা যায় না। তখনও তাঁকে মনে হয় নিরাকার ব্রহ্মবাদী, কখনও বৈষ্ণব, কখনও শাক্ত, কখনও শৈব।অর্থাৎ তিনি সকল মতপথের সমন্বয়ের প্রতীক।পরবর্তীকালে এ সমন্বয় দেখা যায় শ্রীশঙ্করাচার্যের মধ্যে। তাই ব্যাসদেব শ্রীশঙ্করাচার্যের চিন্তাকে সংকীর্ণ করা যায় না। ব্যাসদেব যে পুরাণ লিখেছেন, সেই পুরাণের কেন্দ্রীয় উপাস্যকেই পরমেশ্বররূপে স্তোত্র করেছেন। যে কোনভাবে এবং যেকোন রূপেই যে তাঁকে পাওয়া যায় এ ব্রহ্মতত্ত্বটি বোঝাতে।
আজ অনেক সময় ব্যক্তিকে তাঁর সৌন্দর্য দিয়ে, দেহের গঠন দিয়ে মূল্যায়ন করতে চায় সমাজ।কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাসে এমন অনন্য অদ্বিতীয় মেধাজগতের কাজ করা ব্যাসদেবের গায়ের বর্ণ ছিল কুচকুচে কাল। প্রচলিত অর্থে খুব একটা সুদর্শন ছিলেন না, কিন্তু এরপরেও তিনি তাঁর মেধা যোগ্যতাবলে সকল বিদ্যার আদিগুরু বলে আজও বিশ্বব্যাপী সম্মানিত পূজনীয়। রূপ নয়, কর্ম এবং যোগ্যতা যে মানুষকে মহান করে, এ আধুনিক মানবিক কথাগুলি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাসের জীবনেই দেখতে পাই। যা আজ জগতের জন্যে শিক্ষনীয়। কুরুবংশের ক্ষেত্রজ সন্তান উৎপাদনে অম্বিকা এবং অম্বালিকা যখন ব্যাসদেবের কাছে আসে তখন তাঁর চেহারা দেখে অম্বিকা সারাক্ষণ চোখ বন্ধ করে ছিলেন এবং অম্বালিকা ভয়ে ফ্যাকাসে বা পাণ্ডুবর্ণ হয়ে গিয়েছিলেন। কথাগুলো ব্যাসদেব নিজের সম্পর্কে নিজেই লিখেছেন। ভাবা যায়, নিজের লেখাতে নিজেকে নিয়েই কতটা সরল নিষ্কপট স্বীকারোক্তি। এরকম অসংখ্য কারণেই তিনি পূজনীয়, বরণীয় এবং মহান।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁