-->

ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

শ্রীরাম-শ্রীকৃষ্ণের গুরু, এবং বর্তমানকালের গুরু।

শ্রীরাম-শ্রীকৃষ্ণের গুরু,  এবং বর্তমানকালের গুরু।  ভারতবর্ষে বৈদিককাল থেকেই গুরুমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত। আট,দশ, এবং বারো বছর থেকে পঁচিশ বছর পর্যন্ত সকল শিশুকেই গুরুগৃহে শিক্ষা লাভ করতে হত। জীবনে গুরু যে আবশ্যিক, এ কথাটি জোর দিয়ে বলতে গিয়ে বর্তমানকালে অনেকে শ্রীরামচন্দ্র এবং শ্রীকৃষ্ণকে দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করেন। গুরুর আবশ্যকতা প্রসঙ্গে তারা বলে থাকেন: শ্রীরামচন্দ্রের গুরু ছিল, শ্রীকৃষ্ণের গুরু ছিল, তাহলে আমাদের কেন গুরু থাকবে না? কথাগুলো সত্য। কিন্তু আমরা সে সত্য কথাকে গভীরে তলিয়ে দেখি না।আমরা হয়ত ভুলে যাই, মথুরার রাজা কংসকে যখন বধ করা হয় তখন শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর বড়ভাই শ্রীবলরামের বয়স ছিল প্রায় দশবছরের কাছাকাছি। ক্ষত্রিয় শিশু শিক্ষা লাভের জন্য দশবছরের মধ্যে গুরুগৃহে যেতেই হবে। তাই শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীবলরামকে সান্দীপনী মুনির আশ্রমে শিক্ষালাভের জন্যে পাঠানো হয়। এ আশ্রমটি বর্তমানে ভারতের মধ্যপ্রদেশে অবস্থিত। সেই সান্দীপনী মুনির আশ্রমে অবস্থিত গুরুকুলে শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীবলরাম দুইভাই চৌষট্টিবিদ্যা সহ বিবিধ বিদ্যা শিক্ষা লাভ করে।যদুশ্রেষ্ঠ শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীবলরাম জগতে পরম্পরাগত গুরু-শিষ্য শিক্ষায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে অবন্তিপুরবাসী সান্দীপনিমুনির নিকট অস্ত্রশিক্ষা করতে গমন করেন। ভগবান সর্বজ্ঞানময় তাঁর অবিদিত কিছুই নেই।জগতের সকল জ্ঞানরাশি তাঁর থেকেই এসেছে। তথাপি তিনি গুরুর সান্নিধ্যে থেকে শিক্ষা ব্যবস্থাকে মহিমান্বিত করতে নিজে শিক্ষা লাভের জন্যে সান্দীপনিমুনির গৃহে গমন করে জগতের মানুষকে শিক্ষার পথে অগ্রসর হতে প্রেরণা দিলেন। বিষয়টি বিষ্ণুপুরাণে অত্যন্ত সুন্দর করে বর্ণিত হয়েছে : বিদিতাখিলবিজ্ঞানৌ সর্বজ্ঞানময়াবপি।  শিষ্যাচার্য্যক্রমং বীরৌ খ্যাপয়ন্তৌ যদূত্তমৌ।। ততঃ সান্দীপনিং কাশ্যমবস্তীপুরবাসিনম্।  অস্ত্রার্থং জগ্মতুর্বীরৌ বলদেব-জনার্দনৌ॥ তস্য শিষ্যত্বমভ্যেত্য গুরুবৃত্তপরৌ হি তৌ।  দর্শয়াঞ্চক্রতুবীরাবাচারমখিলে জনে ॥  (বিষ্ণু পুরাণ:৫.১১.১৮-২০) "যদুশ্রেষ্ঠ বীর কৃষ্ণ এবং বলরাম যদিও সর্বজ্ঞানময় ও সমস্ত বিজ্ঞান অবগত ছিলেন, তথাপি তাঁরা মনুষ্যলােকে আচার্য্য হতে শিক্ষানুক্রমের কৰ্তব্যতা পালন অর্থাৎ পরম্পরাগত গুরু-শিষ্য শিক্ষায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে কাশীতে জন্ম নেয়া অবন্তিপুরবাসী সান্দীপনিমুনির নিকট অস্ত্রশিক্ষা জন্য গমন করলেন। বলভদ্র এবং কৃষ্ণ সান্দীপনিমুনির শিষ্যত্ব স্বীকার করে শিক্ষাগুরুর প্রতি উচিত ব্যবহারে প্রবৃত্ত হয়ে জগতের মানুষকে আচার শিক্ষা দিলেন।" শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীবলরাম চৌষট্টি দিনের মধ্যেই সরহস্য ধনুর্বেদ বা অস্ত্রবিদ্যা এবং এ অস্ত্রবিদ্যার প্রায়োগিক কৌশলে দুইভাই অতুল্য পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তাঁদের দুজনের এমন অতিমানবীয় ও অসম্ভাবনীয় কৰ্ম দেখে সন্দীপনিমুনি উপলব্ধি করেন; এই বালকদ্বয় কোন সাধারণ বালক নয়। চন্দ্র ও সূর্যের মত প্রতিভার আলোর সাথে সাথে, তাঁদের দেহ থেকেও আলো বিচ্ছুরিত হয়।বালকদ্বয়ের আলোতে তাঁর গৃহেও আলোকিত হয়ে যাচ্ছে। এভাবে তাঁরা অস্ত্রবিদ্যা সহ বেদাদিশাস্ত্র সন্দীপনিমুনি কাছে অধ্যয়ন করেন। গুরু উপদেশ মাত্রেই তাঁরা গুরুবর্ণিত বিদ্যা আয়ত্ত করে ফেলেন।প্রাচীনকালে গুরুগৃহে বারোবছর লাগতো, শিক্ষা সমাপন করতে । কিন্তু সেই তাঁরা মাত্র চৌষট্টিদিনেই সকল বিদ্যা সমাপন করে ফেলে। সর্বপ্রকার বিদ্যা আয়ত্ত করে সান্দীপনিমুনিকে তাঁদের কাছে গুরুদক্ষিণার আদেশ দিতে বললেন।কারণ গুরুদক্ষিণা ছাড়া শিক্ষা সম্পূর্ণভাবে সমাপ্ত হয় না, কার্যকরী হয় না। তৎকালীন সময়ে শিক্ষা ছিল অবৈতনিক। ছাত্রারা বিনেপয়সাতে নিম্নে বারোবছর গুরুগৃহে থেকে শিক্ষা লাভ করে পঁচিশ বছর বয়সে সমাবর্তন নিয়ে গুরুগৃহ ত্যাগ করে সংসার জীবনে প্রবেশ করত। শিক্ষা সমাপনান্তে এ গুরুগৃহ ত্যাগের সময়েই শিক্ষাগুরুকে যথাসাধ্য দক্ষিণা প্রদান করে সম্মানিত করত ছাত্ররা। মহামতি সান্দীপনি মুনি শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীবলরামের মাত্র চৌষট্টি দিনেই অলৌকিক কৰ্ম অবলোকন করে তাঁদের কাছে গুরুদক্ষিণাস্বরূপ পুত্রকে জীবিত অবস্থায় এনে দিতে বললেন। সরহস্যং ধনুর্বেদং সসংগ্ৰহমধীয়তাম্।  অহােরাত্রৈশ্চতুঃষষ্ট্যা তদদ্ভুতমভূদ্দ্বিজ॥  সান্দীপনিরসম্ভাব্যং তয়ােঃ কর্মাতিমানুষম্।  বিচিন্ত্য তৌ তদা মেনে প্রাপ্তৌ চন্দ্র-দিবাকরৌ॥  অস্ত্রগ্রামমশেষঞ্চ প্রােক্তমাত্রমবাপ্য তৌ। ঊচতুর্ব্রিয়তাং যা তে দাতব্যা গুরুদক্ষিণা ॥  সােহপ্যতীন্দ্রিয়মালােক্য তয়ােঃ কৰ্ম মহামতিঃ।   অযাচত মৃতং পুত্রং প্রভাসে লবণার্ণবে ॥   (বিষ্ণু পুরাণ:৫.১১.১৮-২০) "হে দ্বিজ! বড় আশ্চর্যের কারণ এই যে, তাঁরা চতুঃষষ্টি (৬৪) দিবসের মধ্যেই সরহস্য ( অস্ত্রবিদ্যা) সসংগ্রহ ( অস্ত্রপ্রয়ােগ ) ধনুর্বেদে পারদর্শী হয়েছিলেন। সন্দীপনিমুনি তাঁদের এই প্রকার অতিমানুষিক ও অসম্ভাবনীয় কৰ্ম চিন্তা করে বিবেচনা করলেন যে, নিশ্চয়ই চন্দ্র ও দিবাকর তাঁর গৃহে উপস্থিত হয়েছে। তাঁরা গুরুর উপদেশ মাত্রেই সর্বপ্রকার অস্ত্রশিক্ষা করে সান্দীপনিমুনিকে বললেন, আপনাকে গুরুদক্ষিণাস্বরূপ যা দিতে হবে, আপনি আমাদের তা আদেশ করুন।তখন মহামতি সান্দীপনি তাঁদের অলৌকিক কৰ্ম অবলোকন করে তাঁদের কাছে গুরুদক্ষিণাস্বরূপ প্রভাসের লবণ সমুদ্রে মৃত স্বকীয় পুত্রকে জীবিত অবস্থায় এনে দিতে বললেন।" শ্রীরামচন্দ্রের গুরু বশিষ্ঠ মুনিও তাঁকে আধ্যাত্ম এবং অস্ত্রবিদ্যা শিক্ষা দেন। কিন্তু বর্তমানের গুরুরা কি শিষ্যদের চৌষট্টিবিদ্যার মধ্যে একটি বিদ্যাও শিক্ষা দেন? হয়ত দুইএকজন দেন, অধিকাংশই দেন না; বা শিষ্যদের শিক্ষা দিতে তাদের হাতে সময়ও নেই। বর্তমানের গুরুরা শিষ্যদের নিয়ে সম্প্রদায় তৈরিতে যতটা আগ্রহী, বেদবেদান্তের শিক্ষা এবং প্রচারে যদি ততটাই আগ্রহী হতেন, তবে তা জাতির জন্যে অনেক কল্যাণকর হত। তবে যোগসাধনে এবং তান্ত্রিকমতে সদগুরুর প্রয়োজনীয়তা স্বীকৃত। কারণ সেখানে গুরুকে সাধনপদ্ধতি হাতে-কলমে শিখিয়ে দিতে হয়। শ্রীকুশল বরণ চক্রবর্ত্তী সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ। ফেসবুক পোস্ট লিঙ্ক :  শ্রীরাম-শ্রীকৃষ্ণের গুরু,  এবং বর্তমানকালের গুরু। ফেসবুক পেজ লিঙ্ক :  Shri Kushal Baran Chakraborty | Facebook
ভারতবর্ষে বৈদিককাল থেকেই গুরুমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত। আট,দশ, এবং বারো বছর থেকে পঁচিশ বছর পর্যন্ত সকল শিশুকেই গুরুগৃহে শিক্ষা লাভ করতে হত। জীবনে গুরু যে আবশ্যিক, এ কথাটি জোর দিয়ে বলতে গিয়ে বর্তমানকালে অনেকে শ্রীরামচন্দ্র এবং শ্রীকৃষ্ণকে দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করেন। গুরুর আবশ্যকতা প্রসঙ্গে তারা বলে থাকেন: শ্রীরামচন্দ্রের গুরু ছিল, শ্রীকৃষ্ণের গুরু ছিল, তাহলে আমাদের কেন গুরু থাকবে না? কথাগুলো সত্য। কিন্তু আমরা সে সত্য কথাকে গভীরে তলিয়ে দেখি না।আমরা হয়ত ভুলে যাই, মথুরার রাজা কংসকে যখন বধ করা হয় তখন শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর বড়ভাই শ্রীবলরামের বয়স ছিল প্রায় দশবছরের কাছাকাছি। ক্ষত্রিয় শিশু শিক্ষা লাভের জন্য দশবছরের মধ্যে গুরুগৃহে যেতেই হবে। তাই শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীবলরামকে সান্দীপনী মুনির আশ্রমে শিক্ষালাভের জন্যে পাঠানো হয়। এ আশ্রমটি বর্তমানে ভারতের মধ্যপ্রদেশে অবস্থিত। সেই সান্দীপনী মুনির আশ্রমে অবস্থিত গুরুকুলে শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীবলরাম দুইভাই চৌষট্টিবিদ্যা সহ বিবিধ বিদ্যা শিক্ষা লাভ করে।যদুশ্রেষ্ঠ শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীবলরাম জগতে পরম্পরাগত গুরু-শিষ্য শিক্ষায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে অবন্তিপুরবাসী সান্দীপনিমুনির নিকট অস্ত্রশিক্ষা করতে গমন করেন। ভগবান সর্বজ্ঞানময় তাঁর অবিদিত কিছুই নেই।জগতের সকল জ্ঞানরাশি তাঁর থেকেই এসেছে। তথাপি তিনি গুরুর সান্নিধ্যে থেকে শিক্ষা ব্যবস্থাকে মহিমান্বিত করতে নিজে শিক্ষা লাভের জন্যে সান্দীপনিমুনির গৃহে গমন করে জগতের মানুষকে শিক্ষার পথে অগ্রসর হতে প্রেরণা দিলেন। বিষয়টি বিষ্ণুপুরাণে অত্যন্ত সুন্দর করে বর্ণিত হয়েছে :
বিদিতাখিলবিজ্ঞানৌ সর্বজ্ঞানময়াবপি।
শিষ্যাচার্য্যক্রমং বীরৌ খ্যাপয়ন্তৌ যদূত্তমৌ।।
ততঃ সান্দীপনিং কাশ্যমবস্তীপুরবাসিনম্।
অস্ত্রার্থং জগ্মতুর্বীরৌ বলদেব-জনার্দনৌ॥
তস্য শিষ্যত্বমভ্যেত্য গুরুবৃত্তপরৌ হি তৌ।
দর্শয়াঞ্চক্রতুবীরাবাচারমখিলে জনে ॥
(বিষ্ণু পুরাণ:৫.১১.১৮-২০)
"যদুশ্রেষ্ঠ বীর কৃষ্ণ এবং বলরাম যদিও সর্বজ্ঞানময় ও সমস্ত বিজ্ঞান অবগত ছিলেন, তথাপি তাঁরা মনুষ্যলােকে আচার্য্য হতে শিক্ষানুক্রমের কৰ্তব্যতা পালন অর্থাৎ পরম্পরাগত গুরু-শিষ্য শিক্ষায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে কাশীতে জন্ম নেয়া অবন্তিপুরবাসী সান্দীপনিমুনির নিকট অস্ত্রশিক্ষা জন্য গমন করলেন। বলভদ্র এবং কৃষ্ণ সান্দীপনিমুনির শিষ্যত্ব স্বীকার করে শিক্ষাগুরুর প্রতি উচিত ব্যবহারে প্রবৃত্ত হয়ে জগতের মানুষকে আচার শিক্ষা দিলেন।"
শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীবলরাম চৌষট্টি দিনের মধ্যেই সরহস্য ধনুর্বেদ বা অস্ত্রবিদ্যা এবং এ অস্ত্রবিদ্যার প্রায়োগিক কৌশলে দুইভাই অতুল্য পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তাঁদের দুজনের এমন অতিমানবীয় ও অসম্ভাবনীয় কৰ্ম দেখে সন্দীপনিমুনি উপলব্ধি করেন; এই বালকদ্বয় কোন সাধারণ বালক নয়। চন্দ্র ও সূর্যের মত প্রতিভার আলোর সাথে সাথে, তাঁদের দেহ থেকেও আলো বিচ্ছুরিত হয়।বালকদ্বয়ের আলোতে তাঁর গৃহেও আলোকিত হয়ে যাচ্ছে। এভাবে তাঁরা অস্ত্রবিদ্যা সহ বেদাদিশাস্ত্র সন্দীপনিমুনি কাছে অধ্যয়ন করেন। গুরু উপদেশ মাত্রেই তাঁরা গুরুবর্ণিত বিদ্যা আয়ত্ত করে ফেলেন।প্রাচীনকালে গুরুগৃহে বারোবছর লাগতো, শিক্ষা সমাপন করতে । কিন্তু সেই তাঁরা মাত্র চৌষট্টিদিনেই সকল বিদ্যা সমাপন করে ফেলে। সর্বপ্রকার বিদ্যা আয়ত্ত করে সান্দীপনিমুনিকে তাঁদের কাছে গুরুদক্ষিণার আদেশ দিতে বললেন।কারণ গুরুদক্ষিণা ছাড়া শিক্ষা সম্পূর্ণভাবে সমাপ্ত হয় না, কার্যকরী হয় না। তৎকালীন সময়ে শিক্ষা ছিল অবৈতনিক। ছাত্রারা বিনেপয়সাতে নিম্নে বারোবছর গুরুগৃহে থেকে শিক্ষা লাভ করে পঁচিশ বছর বয়সে সমাবর্তন নিয়ে গুরুগৃহ ত্যাগ করে সংসার জীবনে প্রবেশ করত। শিক্ষা সমাপনান্তে এ গুরুগৃহ ত্যাগের সময়েই শিক্ষাগুরুকে যথাসাধ্য দক্ষিণা প্রদান করে সম্মানিত করত ছাত্ররা। মহামতি সান্দীপনি মুনি শ্রীকৃষ্ণ এবং শ্রীবলরামের মাত্র চৌষট্টি দিনেই অলৌকিক কৰ্ম অবলোকন করে তাঁদের কাছে গুরুদক্ষিণাস্বরূপ পুত্রকে জীবিত অবস্থায় এনে দিতে বললেন।
সরহস্যং ধনুর্বেদং সসংগ্ৰহমধীয়তাম্।
অহােরাত্রৈশ্চতুঃষষ্ট্যা তদদ্ভুতমভূদ্দ্বিজ॥
সান্দীপনিরসম্ভাব্যং তয়ােঃ কর্মাতিমানুষম্।
বিচিন্ত্য তৌ তদা মেনে প্রাপ্তৌ চন্দ্র-দিবাকরৌ॥
অস্ত্রগ্রামমশেষঞ্চ প্রােক্তমাত্রমবাপ্য তৌ।
ঊচতুর্ব্রিয়তাং যা তে দাতব্যা গুরুদক্ষিণা ॥
সােহপ্যতীন্দ্রিয়মালােক্য তয়ােঃ কৰ্ম মহামতিঃ।
অযাচত মৃতং পুত্রং প্রভাসে লবণার্ণবে ॥
(বিষ্ণু পুরাণ:৫.১১.১৮-২০)
"হে দ্বিজ! বড় আশ্চর্যের কারণ এই যে, তাঁরা চতুঃষষ্টি (৬৪) দিবসের মধ্যেই সরহস্য ( অস্ত্রবিদ্যা) সসংগ্রহ ( অস্ত্রপ্রয়ােগ ) ধনুর্বেদে পারদর্শী হয়েছিলেন।
সন্দীপনিমুনি তাঁদের এই প্রকার অতিমানুষিক ও অসম্ভাবনীয় কৰ্ম চিন্তা করে বিবেচনা করলেন যে, নিশ্চয়ই চন্দ্র ও দিবাকর তাঁর গৃহে উপস্থিত হয়েছে। তাঁরা গুরুর উপদেশ মাত্রেই সর্বপ্রকার অস্ত্রশিক্ষা করে সান্দীপনিমুনিকে বললেন, আপনাকে গুরুদক্ষিণাস্বরূপ যা দিতে হবে, আপনি আমাদের তা আদেশ করুন।তখন মহামতি সান্দীপনি তাঁদের অলৌকিক কৰ্ম অবলোকন করে তাঁদের কাছে গুরুদক্ষিণাস্বরূপ প্রভাসের লবণ সমুদ্রে মৃত স্বকীয় পুত্রকে জীবিত অবস্থায় এনে দিতে বললেন।"
শ্রীরামচন্দ্রের গুরু বশিষ্ঠ মুনিও তাঁকে আধ্যাত্ম এবং অস্ত্রবিদ্যা শিক্ষা দেন। কিন্তু বর্তমানের গুরুরা কি শিষ্যদের চৌষট্টিবিদ্যার মধ্যে একটি বিদ্যাও শিক্ষা দেন? হয়ত দুইএকজন দেন, অধিকাংশই দেন না; বা শিষ্যদের শিক্ষা দিতে তাদের হাতে সময়ও নেই। বর্তমানের গুরুরা শিষ্যদের নিয়ে সম্প্রদায় তৈরিতে যতটা আগ্রহী, বেদবেদান্তের শিক্ষা এবং প্রচারে যদি ততটাই আগ্রহী হতেন, তবে তা জাতির জন্যে অনেক কল্যাণকর হত। তবে যোগসাধনে এবং তান্ত্রিকমতে সদগুরুর প্রয়োজনীয়তা স্বীকৃত। কারণ সেখানে গুরুকে সাধনপদ্ধতি হাতে-কলমে শিখিয়ে দিতে হয়।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁