বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ ধর্ম এবং ধর্মের সদাচার নিজের ব্যক্তিগত জীবনে পালন করতে চায় না। শুধুই 'ধর্মধ্বজী' হয়ে ধর্মকে শুধুই মানুষকে দেখাতে চায়। তারা বহুলোকের সমক্ষে ধর্মাচরণ করে এবং নিজের ধার্মিকতা প্রচার করে, নিজের বিবিধ স্বার্থ উদ্ধার করতে চায়। ধর্মের নামে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং জৈবিক ইত্যাদি বিবিধ প্রকারের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধার করতে চায়। এর মাধ্যমে এরা জগতের অশেষ ক্ষতি করে। নিজ অন্ধ অনুসারী তৈরি করতে মানুষের মাঝে বিশ্বাস স্থাপনের জন্য তারা সকল প্রকার মিথ্যারই আশ্রয় নিয়ে মানুষকে প্রতারিত করে। এই প্রতারকেরা সকল কালে এবং সকল যুগেই ছিল।তাদের সকল ধর্মীয় আচরণ নিজস্ব খ্যাতি এবং প্রচারণার জন্য। শুধুমাত্র খ্যাতিলাভের জন্য তারা ধর্মানুষ্ঠান করে। শাস্ত্রীয় বিধান বা শাস্ত্র বা ঈশ্বরের আদেশ হিসেবে তারা ধর্মাচরণ করে না। ধর্মাচরণ করার সময়ে তাদের সদা দৃষ্টি থাকে, তাদের ধর্মাচরণ যেন সকলে দেখতে পায়।সবাইকে ধর্ম দেখাতে তারা রাস্তাঘাটে, মাঠ-ক্ষেতে সর্বত্রই লোকদেখানো ধর্ম পালন শুরু করে। এই লোকদেখানো ধর্মের আচরণের ফলে অনেক সময়ে সাধারণ মানুষের জীবনকে তারা দুর্বিষহ করে ফেলে। ধর্ম পালন এবং প্রচার তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য নয়, তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য ধর্মের নামে আত্মপ্রচার। তারা কেবল নিজের অন্ধ অনুসারী তৈরি করে, সেই অন্ধ অনুসারীই শুধু তার ধর্মাচরণের সুখ্যাতি করে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি বলে প্রচার করে। যেকোন প্রকারে লোকসমাজে প্রতিষ্ঠা পাওয়াই হল এই ধর্মধ্বজীদের প্রকৃত উদ্দেশ্যে। ধর্মধ্বজীগণ ধর্মের নামে পরধনে লোলুপ,ছদ্মবেশধারী, লোকপ্রবঞ্চক, পরহিংসাপরায়ণ। এরা অন্যের গুণ এবং গৌরব সহ্য করতে না পেরব তাদের সর্বদা নিন্দা করে বেড়ায়। মনুসংহিতা এই নিকৃষ্ট ব্যক্তিদের ‘বৈড়ালব্ৰতিক' বলে নিন্দা করা হয়েছে :
ধর্মধ্বজী সদালুব্ধশ্ছাদ্মিকো লোকদত্তকঃ।
বৈড়ালব্ৰতিকো জ্ঞেয়ো হিংস্রঃ সর্বাভিসন্ধকঃ।।
(মনুসংহিতা:৪.১৯৫)
" যে ধর্মধ্বজী, অর্থাৎ বহুলোকের সমক্ষে ধর্মাচরণ করে এবং নিজের ধার্মিকতা প্রচার করে বেড়ায়, যে সর্বদা অপরের ধনের প্রতি লুব্ধ, যে ছলপরায়ণ ছদ্মবেশী, লোকবঞ্চক, হিংসাপরায়ণ ও সর্বার্ভিসন্ধক অর্থাৎ যে অপরের গুণ গৌরব সহ্য করতে না পেরে তাদের তুচ্ছ করে ; এ সকল পাপকর্মা নিকৃষ্ট ব্যক্তিদের বৈড়ালব্রতিক বলে।"
ভণ্ড প্রবঞ্চক ছদ্মবেশীদের বৈড়ালব্রতিক বলা হয় এই কারণে যে, এরা বিড়ালের মত ভান ধরে থাকে। বিড়াল মণিবের গৃহের মাছ, দুধ ইত্যাদি লোভনীয় খাদ্য দেখে তখন সে খাদ্য খাওয়ার জন্যে মনেমনে ব্যতিব্যস্ত হয়ে যায়। কিন্তু মণিবের সামনে তার ভাব থাকে শান্ত, স্থির। মণিবের সামনে খাবার দেখেও ভাবটা এমন যে, সে চোখে কিছুই দেখেনি। কিন্তু মণিব যখন একটু দূরে চলে যায়, তখনি বিড়াল তার প্রকৃতস্বরূপে এসে গৃহস্থের খাবার খেতে থাকে। মণিবের সম্মুখে এমন ভাব নেয়, যেন সে খাবারের কিছুই দেখেনি এবং দুধ, মাছ কোন কোন খাবারের প্রতি তার সামান্যতম লোভ নেই। বিড়ালের বাইরের এবং ভেতরের দ্বৈতরূপের পার্থক্যের কারণেই বৈড়ালব্রতিক শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। বাংলা ভাষায় এদের বিড়াল তপস্বীও বলে। বৈড়ালব্রতিকেরা ধর্মকে শুধুই নিজ প্রয়োজনে ব্যবহার করে।মনুসংহিতার টীকায় মেধাতিথি বৈড়ালব্রতিক প্রসঙ্গে মহর্ষি মনুর শ্লোকের সাথে সাথে অন্য একটি শ্লোক উদ্ধৃত করেছেন। সেই শ্লোকটি হল:
যস্য ধর্মধ্বজো নিত্যং সুরধ্বজ ইবোচ্ছ্রিতঃ।
প্রচ্ছন্নানি চ পাপানি বৈড়ালং নাম ত্দব্রতমিতি।।
" যে ধর্মের ধ্বজা সকল সময়ে ইন্দ্রের ধ্বজের মত উঁচু করে তুলে ধরে থাকে, অথচ সে যেসব পাপকর্ম করে তা চাপা দেয়া থাকে, এইরকম আচরণকে বৈড়ালব্রতিক বলে।"
এই শ্লোকের (৪.১৯৫) টীকায় মনুসংহিতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ টীকাকার কুল্লূকভট্ট তাঁর টীকায় ধর্মধ্বজী সম্পর্কে বলেন:
"ধর্মধ্বজীতি। যো বহুজনসমক্ষং ধর্মমাচরতি স্বতঃ পরতশ্চ লোকে খ্যাপয়তি তস্য ধর্মধ্বজং চিহ্নমিবেতি ধর্মধ্বজী। লুব্ধঃ পরধনাভিলাযুকঃ। ছদ্মনা ব্যাজেন চলতীতি ছাদ্মিকঃ। লোকদম্ভকে নিঃক্ষেপাপহারাদিনা জনবঞ্চকঃ। হিংস্রঃ পরহিংসাশীলঃ। সর্বাভিসন্ধকঃ পরগুণাসহনতয়া সর্বাক্ষেপকঃ। বিড়ালব্রতেন চরতীতি বৈড়ালব্রতিক, বিড়ালো হি প্রায়েণ মূষিকাদিহিংসারুচিতয়া ধ্যাননিষ্ঠ ইব বিনীতঃ সন্নবতিষ্ঠত ইতি উপচারাদ্বিড়ালব্রতশব্দঃ।"
বৈড়ালব্রতিক ধর্মধ্বজীরা ধর্মের নামে সর্বদা অধর্ম করে বেড়ায়। তারা নিজের স্বার্থে অন্যকে সর্বদা প্ররোচিত করে। অন্ধ অনুসারীদের দিয়ে যারা তাকে জানে এবং চেনে তাদের প্রতি ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়ায়। কারণ যারা তাকে চেনে, তার তার অনুসারী হয় না। তখন সেই ধর্মধ্বজী অন্ধ অনুসারীদের মাধ্যমে অনেক ক্ষেত্রে যারা তাকে পছন্দ করে না তাদের হত্যায় প্ররোচিত করে। এরা নিজের কথাগুলো সৃষ্টিকর্তার নামে চালিয়ে দিয়ে অন্যের উপরে প্রভুত্ব করতে থাকে। তবে মানুষ যখন এই নিকৃষ্ট বৈড়ালব্রতিককে চিনতে পারে, তখন ঘৃণা ভরে তাকে প্রত্যাখ্যান করে। সামর্থ্য থাকলে, বহুকালব্যাপী প্রবঞ্চনার জন্য সেই নিকৃষ্ট বৈড়ালব্রতিককে উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করে। তাই
মনুসংহিতায় ভণ্ড বৈড়ালব্রতিকদের বাক্যদ্বারা সম্মান বা সম্ভাষণ করতেও নিষেধ করা হয়েছে।
পাষণ্ডিনো বিকর্মস্থান্ বৈড়ালব্ৰতিকান্ শঠান্।
হৈতুকান্ বকবৃত্তীংশ্চ বাঙ্মাত্রেণাপি নাৰ্চয়েৎ।।
(মনুসংহিতা:৪.৩০)
"পাষণ্ডী অর্থাৎ বেদপথবিরদ্ধব্রতধারী; বিকর্মস্থ অর্থাৎ নিষিদ্ধবৃত্তিজীবী; বৈড়ালব্রতিক অর্থাৎ ভণ্ড ধার্মিক, যারা ধর্মবুদ্ধিতে ধর্ম পালন করে না কেবল লোককে আকৃষ্ট করার জন্যই অগ্নিহোত্রাদি যজ্ঞ করে; শঠ অর্থাৎ যে বেদে শ্রদ্ধারহিত হয়ে অন্যকে প্রতারণা করে; হৈতুক অর্থাৎ অকারণে বেদরিরুদ্ধ তর্কপরায়ণ বা নাস্তিক যারা বলে পরলোক নেই, দানেরও কোনও ফল নেই, অগ্নিহোত্রাদি কর্মের কোনও ফল নেই ইত্যাদি বেদবিরুদ্ধ ধর্মবিরুদ্ধ বাক্য; এবং বকবৃত্তিধারী অর্থাৎ ধর্মের নামে কপটবিনয়ী প্রবঞ্চক ব্যক্তি— এই সকল ব্যক্তি যদি কখনো গৃহে অতিথি হয়েও উপস্থিত হয়; তবে বাক্যের দ্বারাও তাদের সম্ভাষণ করবে না।"
পন্ত্রতন্ত্রের মিত্রভেদে (কথা:১০) এক ছদ্মবেশী বৈড়ালব্রতিক নীলবর্ণ শেয়ালের কথা বলা হয়েছে। যে নিজের শেয়াল পরিচয় গোপন করে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার প্রেরিত রাজা পরিচয় দিয়ে বনের বাঘ, সিংহাদি প্রাণীদের সাথে দিনের পরে দিন প্রতারণা করে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত তার পরিণতি মঙ্গলময় হয়নি। সে তার ছদ্মবেশী প্রবঞ্চনায় ধরা পরে যায়।পরবর্তীতে সে বনের বাঘ, সিংহাদি অন্যান্য প্রাণীদের দ্বারা তার কৃতকর্মের যথোপযুক্ত শাস্তি পায়। বনের পশুরা সম্মিলিতভাবে তার শরীরকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে হত্যা করে।গল্পটি হল :
এক বনে একটি শেয়াল বসবাস করত। শিয়ালটির নাম চণ্ডরব। একদিন শিয়ালটি সারাদিন খাবার না পেয়ে প্রচণ্ড ক্ষুধায় কাতর হয়ে যায়। ক্ষধায় পেটের ভিতরে শুধুই খাইখাই করছে তার। খাবার কোথায় পাই এ চিন্তায় সে বন থেকে শহরে লোকালয়ে চলে যায়। বনের শেয়ালটিকে দেখে শহরের কুকুরগুলো চারদিক থেকে ঘেউ ঘেউ করে ধেয়ে আসে। কুকুরগুলো সঙ্ঘবদ্ধভাবে শেয়ালকে ছে’কে ধরে ধারালো দাঁত দিয়ে কামড়াতে সুরু করে দেয়। কুকুরদের সংঘবদ্ধ আক্রমণে প্রাণভয়ে, কাছেই এক ধোপাবাড়ির মধ্যে ঢুকে পরে। সেই ধোপাবাড়িতে ছিল নীলজলে ভর্তি প্রকাণ্ড এক গামলা। কুকুরদের আক্রমণে পালাতে পালাতে শেয়ালটি নীলজল ভর্তি গামলাটার মধ্যে গিয়ে ঝপাৎ করে পড়লো। পরে গামলা থেকে যখন বের হলো তখন শিয়ালটি তাকিয়ে দেখে, তার গায়ের রং সম্পূর্ণ নীল হয়ে গেছে। নীল গায়ের রঙে শেয়ালটি নিজেকেই নিজে চিনতে পারলো না। ধাওয়া করা কুকুরগুলো তাকে শেয়াল বলে আর চিনতে পারলো না। তখন ধাওয়া করা কুকুরগুলো যেদিকে ইচ্ছা, সেদিকে চলে গেল । শেয়ালটিও এরপরে বনের দিকে রওনা দিল।
বজ্রলেপস্য মূর্খস্য নারীণাং কর্কটস্য চ।
একো গ্রহস্তু মীনানাং নীলীমদ্যপয়োর্যথা ৷৷
(পঞ্চতন্ত্র:মিত্রভেদ,২৬৩)
"একবার ভালো করে ধরলে আর ছাড়তে চায় না বজ্রলেপ, মূর্খ, দুশ্চরিত্র নারী, কাঁকড়া, মদ্যপ এবং পোশাকের নীলরঙ।"
শিবকণ্ঠের বিষ অথবা তমালের মত নীল রঙের অদ্ভুত দর্শন চণ্ডরবকে দেখে বনের সিংহ, বাঘ, চিতা, নেকড়ে প্রভৃতি সমস্ত প্রাণীরা ভয়ে ব্যাকুল হয়ে গেল। তারা ভাবলো, এ আবার কে? তারা নীলবর্ণ শেয়ালকে দেখে ভয়ে এদিক ওদিক পালাতে লাগল। এবং বলতে লাগল, কী জানি এর ধরণ-ধারণ, গায়ে কেমন জোর ; কাজ কী থেকে। বাবারে যে পারি যেদিকে পালিয়ে আগে বাঁচি।
ন যস্য চেষ্টিতং বিদ্যান্ন কুলং ন পরাক্রমমম্ ।
ন তস্য বিশ্বসেৎ প্রাজ্ঞো যদীচ্ছেচ্ছ্রিয়মাত্মনঃ ৷৷
(পঞ্চতন্ত্র:মিত্রভেদ,২৬৪)
"প্রাজ্ঞব্যক্তি যদি নিজের কল্যাণ চায়, তবে যে ব্যক্তির আচার-আচরণ, বিদ্যা, বংশ এবং পরাক্রম পূর্ব থেকে জানা না যায়, তাকে সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস কখনো করবে না।"
চণ্ডরব শেয়ালটি যখন দেখল যে বনের সকল প্রাণীরা তাকে চিনতে না পেলে উল্টো ভয়ে পালাচ্ছে। তখন তার মনে একটি দুষ্টবুদ্ধি চাপলো। সে বললে, ওহে বনের প্রাণীরা আমাকে দেখেই তোমরা ভয়ে অস্থির হয়ে পালানোর প্রয়োজন নেই।তোমরা কেউ ভয় পেওনা। এ বলেই চণ্ডরব ক্ষান্ত হল না। সে তখন আরোও একধাপ এগিয়ে গিয়ে তখন বলে, স্বয়ং ব্রহ্মা আজ আমায় সৃষ্টি করে তোমাদের রাজা বানিয়ে তোমাদের মাঝে পাঠালেন। পিতামহ ব্রহ্মা দুঃখ করে বললেন, "আহারে! বনের প্রাণীদের কোন রাজা নেই , তাদের একজন রাজার বড় প্রয়োজন। তাই তোমাকে আজ আমি বনের সকল প্রাণীর রাজা হিসেবে অভিষিক্ত করে পাঠালাম। তুমি হবে আমার প্রতিনিধি। আজ থেকে তোমার নাম হল ককুদ-দ্রুম। যাও, পৃথিবীতে গিয়ে বনের সকল প্রাণীকে আমার কথা বলে প্রতিপালন কর।" তাই আমি ব্রহ্মার পক্ষে এই বনে রাজা হয়ে এসেছি। আমার ছত্রছায়ায় থাকবে তোমরা সকল বনের প্রাণীরা। আমি হচ্ছি গিয়ে ব্রহ্মার প্রেরিত ত্রিভুবনের রাজা ককুদ-দ্রুম।
নীলবর্ণ শেয়াল চণ্ডরবের কথা শুনে বনের সিংহ, বাঘ ইত্যাদি হিংস্র শ্বাপদেরাও ভয় পেয়ে গেল। ভয়ে ভীত হয়ে তারা "প্রভু আদেশ করুন" বলে চণ্ডরবকে চারদিক ঘিরে দাঁড়াল। প্রতারক শেয়াল চণ্ডরব সিংহকে প্রধানমন্ত্রীর, বাঘকে শয্যাপাল, চিতাকে তাম্বুল বা পানের দপ্তর, নেকড়েকে দ্বারপাল পদ প্রদান করলো। তবে তার ধূর্ত শেয়াল তার স্বগোত্রীয় শেয়ালদের কোন পদ তো প্রদান করলো না; তাদের সামান্যতম বাক্যালাপও করল না। পাশে তার শেয়াল পরিচয় প্রকাশিত হয়ে পরে এই ভয়ে। উল্টো সে তার স্বগোত্রীয় সব শেয়ালদের অর্ধচন্দ্র দিয়ে তার সামনে থেকে তাড়িয়ে দিল।
এইভাবে প্রতারণার মাধ্যমে ভালোই চলছিল চণ্ডরব শেয়ালের দিনকাল। শেয়াল যেহেতু এমনিতেই ধূর্ত প্রাণী, তাই সে অত্যন্ত ধূর্ততার ব্রহ্মার নামের দোহাই দিয়ে, ব্রহ্মার প্রতিনিধি সেজে রাজ্যপাট চালিয়ে যেতে লাগল। বনের বাঘ, সিংহ ইত্যাদি প্রাণীরা খাবার প্রথমে সংগ্রহ করে তার সামনে প্রদান করে। শিয়ালরাজাও রাজধর্ম অনুসারে সবাইকে তা ভাগ করে দেয়। এইভাবে দিন যায়, রাত আসে। এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে গেলো।
একদিন রাজসভায় বসে আছে ককুদ-দ্রুম। এমন সময় সে শুনতে পেল শিয়ালের কোলাহল। বহুদূরে ডাকছে একপাল শেয়াল। সেই শব্দ শুনে শেয়ালের জন্মগত স্বভাবে গায়ের পশম দাঁড়িয়ে গেল। আনন্দে চোখে অশ্রুতে ভরে গেল। শেয়াল তার রাজার অভিনয় ভুলে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে তারস্বরে হুক্কাহুয়া বলে ডাকতে শুরু করে দিল। শেয়ালের সেই চিৎকার এবং আচরণে বনের বাঘ, সিংহ ইত্যাদি হিংস্র প্রাণীরা বুঝতে পারল যে এ হচ্ছে শেয়াল। শেয়াল নীলবর্ণ গায়ে মেখে ব্রহ্মার প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে তাদের সাথে প্রতারণা করেছে এ ভেবে তাদেত মাথা নত হয়ে গেল। লজ্জা এবং নতমস্তকে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে তারা, পরস্পরকে বলতে শুরু করল, "এই প্রবঞ্চক ছদ্মবেশী শেয়ালের এতদিন ও অনুগত দাস হয়ে ছিলাম। ও ব্রহ্মার প্রেরিত দূত নয়, ত্রিভুবনেরও রাজা ককুদ-দ্রুম নয়, ও একটা সামান্য শেয়াল। এই সামান্য শেয়ালটি বুদ্ধি দিয়ে আমাদের এতদিন পদানত করে রেখেছিল। তাই আজ ওর পাপের শাস্তি হিসেবে ওর মৃত্যুদিন ঘনিয়ে এসেছে। ওকে সকলে মিলে মারো।" একথা শুনে শেয়ালটি প্রাণভভয়ে পালাতে শুরু করলো। তখনি তাকে আর পালাতে না দিয়ে সেইস্থানেই বনের সিংহসহ অন্য হিংস্র প্রাণীরা মিলে তার দেহকে ছিন্নভিন্ন করে নির্মমভাবে হত্যা করে।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।