-->

ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

শাস্ত্রকে পরিত্যাগ করে, স্বেচ্ছাচারী হওয়া অনুচিত ।

শাস্ত্রকে পরিত্যাগ করে,   স্বেচ্ছাচারী হওয়া অনুচিত  শাস্ত্র শস্ত্র হয়ে সকল অধর্ম, সকল অজ্ঞানকে বিনাশ করে। শাস্ত্রকে অনুসরণ করেই সকল ধর্ম নির্ণয় করতে হয়। বেদাদি শাস্ত্রই ভগবানকে জানার পথে উপায়। বেদান্তসূত্রের শুরুতেই বেদাদি শাস্ত্রকে অখিল জ্ঞানভাণ্ডারের উৎস বলা হয়েছে: শাস্ত্র যোনিত্বাৎ। (বেদান্তসূত্র :১.১.৩) "অখিলশাস্ত্রের বা জ্ঞানের উৎস বেদ।" জগতে সকল জ্ঞানের উৎস পরমেশ্বরের বাণী বেদ। বেদ পরমেশ্বর কর্তৃক প্রকাশিত মানব জাতির পূর্ণাঙ্গ সংবিধান। অপৌরুষেয় সত্যবিদ্যাময় বেদগ্রন্থই সনাতন ধর্মের একমাত্র ভিত্তিস্বরূপ।পরমেশ্বরের বাণী বেদের জ্ঞানকে গল্পের মাধ্যমে রূপকের মাধ্যমে শিক্ষা দেয়ার জন্য পুরাণের উৎপত্তি। স্মৃতিশাস্ত্রও বেদকে অনুসরণ করে বিভিন্ন ঋষিদের বিধান। মুক্তির পথের নির্দেশনা দেয় শাস্ত্র। তপস্যা ও সাধনা ছাড়া শাস্ত্র হয়তো জীবকে সম্পূর্ণ মুক্তি লাভ করাতে পারে না। তবে জীবকে মুক্তির পথ দেখিয়ে নির্দেশনা দিতে পারে। কিভাবে জীব ঈশ্বরের পথে যাবে, মুক্তির পথে অগ্রসর হবে।বেদ পরবর্তী শাস্ত্র সম্পূর্ণভাবে প্রামাণ্য নয়। আবার সেই শাস্ত্রকে ঢালাওভাবে, অবৈদিক, অশাস্ত্রীয়, পৌরাণিক, প্রক্ষিপ্ত ইত্যাদি বিশেষণ ব্যবহার করে পরিত্যাগ করা উচিত নয়। পৌরাণিক এবং স্মৃতিবাক্যকে গ্রহণ বর্জনের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে। এটা সত্য যে, বেদ পরবর্তী সকল শাস্ত্রবাক্যই অলঙ্ঘনীয় নয়। বেদবাক্যই শুধু অলঙ্ঘনীয়। কিন্তু বর্তমানে একটি বিষয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে ব্যাধির মত দেখা যায়। শাস্ত্রকে তারা নিজেদের সুবিধা অনুসারে সর্বদা ব্যবহার করার প্রচেষ্টা করে।নিজের ভালো লাগা মন্দ লাগা বিষয়কে শাস্ত্রদিয়ে সিলমোহর দেয়ার প্রচেষ্টা করে। এ প্রসঙ্গে আমি আমার কিছু অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি শাস্ত্রীয় আপাতদৃষ্ট সংশয়ে আমার কাছে সিদ্ধান্ত জানতে চায়। আমি আমার যথাসাধ্য উত্তর দেয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু আমি লক্ষ্য করি, অধিকাংশ ব্যক্তি শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্ত জানতে চায় না। তারা নিজদের মন যা চায়, সেই ব্যক্তিগত করণীয়কে শাস্ত্রের নামে সিলমোহর দিতে চায়। জানতে চাওয়ার নামে, আমাদের নাম শুধুই শাস্ত্রীয় সমর্থনসূত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দেয়া যায়। কেউ হয়তো একই পরিবারের কাকাতো -জেঠাতো, মামাতো পিসাতো অথবা রক্তের সম্পর্কের ভাইবোনের সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি করেছে। যা ধর্মে সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। কারণ সনাতন ধর্মে রক্তের সম্পর্কের সাথে যুক্ত ভাইবোনের বিবাহ হয় না। একঘরের মধ্যে বিয়ে হয় না। বিজ্ঞানও বিষয়টি সমর্থন করে না। এতে সন্তান বিকলাঙ্গ, প্রতিবন্ধী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু যে সকল ব্যক্তিরা দুর্ভাগ্যক্রমে এ সকল সম্পর্কে জড়িয়ে যায়, তারা নিজদের কর্মকে যৌক্তিক করতে শাস্ত্রের মধ্যে নিজের করণীয় কর্মের শাস্ত্রীয় সমর্থনসূত্র খুঁজতে থাকে। যারা সনাতন শাস্ত্র চর্চা করে, তাদের অনেককে বলে শাস্ত্রীয় সমর্থনসূত্র খুঁজে দিতে। কিন্তু সনাতন ধর্মে শাস্ত্রবিধি ত্যাগ করে স্বেচ্ছাচারী হয়ে নিজ খুশীমত আচরণকে শুধু নিষেধই করা হয়নি, তীব্রভাবে ভৎসনাও করা হয়েছে। শ্রীমদ্ভগবদগীতায় বলা হয়েছে: যঃ শাস্ত্রবিধিমুৎসৃজ্য বর্ততে কামকারতঃ। ন স সিদ্ধিম্বাপ্নোতি ন সুখং ন পরাং গতিম্।। মোক্ষলাভ করে না এবং সুখও প্রাপ্ত হয় না।  তস্মাচ্ছাস্ত্রং প্রমাণং তে কার্যাকার্যব্যবস্থিতৌ। জ্ঞাত্বা শাস্ত্রবিধানোক্তং কর্ম কর্তুমিহার্হসি৷৷  (শ্রীমদ্ভগবদগীতা: ১৬.২৩-২৪) "যে ব্যক্তি শাস্ত্রবিধি ত্যাগ করে স্বেচ্ছাচারী হয়ে নিজ খুশীমত আচরণ করে, সে সিদ্ধিলাভ করতে পারেনা, তার সুখও থাকে না এবং সে জীবের পরমগতি মোক্ষলাভও করতে পারে না। কর্তব্য ও অকর্তব্য নির্ধারণে তোমার নিকট শাস্ত্রই প্রমাণ। অতএব কর্তব্য-অকর্তব্য নির্ধারণে শাস্ত্রবিধি জেনে তোমার কর্ম করা উচিত।" শাস্ত্রকে পরিত্যাগ করে নিজের মনের মত স্বেচ্ছাচারী হওয়া উচিত নয়। শাস্ত্র শস্ত্রের মত, সেই শস্ত্রের যথাযথ প্রয়োগে যেমন কল্যাণ হয় ; তেমনি অপপ্রয়োগে অকল্যাণ হয়।ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, শাস্ত্রবিধি পরিত্যাগকারী ব্যক্তিদের ইহকালে যেমন সুখও হয়না, তেমনি মৃত্যু পরবর্তীতে মোক্ষলাভও হয়না।কুলার্ণবতন্ত্রে বলা হয়েছে: সময়াচারবিহীনস্য স্বৈরবৃত্তের্দুরাত্মনঃ।  ন সিদ্ধয়ঃ কুলভ্রংশস্তৎসংসর্গং ন কারয়েৎ।।  যঃ শাস্ত্রবিধিমুৎসৃজ্য বর্ত্ততে কামকারতঃ। স সিদ্ধিমিহ নাপ্নোতি পরত্র নরকে গতিম।।  (কুলার্ণবতন্ত্র: ৫.৯৬-৯৭) "সময়াচারহীন স্বেচ্ছাচারী, অর্থাৎ নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী আচরণ পালনকারী দুরাত্মার সিদ্ধি লাভ হয় না, সে কুলভ্রষ্ট, তাঁর সাথে মেলামেশা করবে না। যে শাস্ত্রবিধি লঙ্ঘন করে স্বেচ্ছাচার করে চলে, সে ইহলোকে সিদ্ধিলাভ করে না এবং পরলোকে নরকে যায়।।"  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত একটি বিখ্যাত নাটক 'রাজা ও রানী'। ১৮৮৯ খ্রীস্টাব্দে নাটকটি প্রকাশিত হয়।।রাজা বিক্রমদেব ও রাণী সুমিত্রার কাল্পনিক উপাখ্যানকে ভিত্তি করে নাটকটি রচিত হয়েছে। নাটকটির প্রথম অঙ্কে প্রথম দৃশ্যেই প্রধান চরিত্র বিক্রমদেব শাস্ত্র সম্পর্কে বলেন:   "অতি ভয়ানক। সখা, শাস্ত্র নাই যার শাস্ত্রের উপদ্রব তার চতুর্গুণ। নাই যার বেদবিদ্যা, ব্যাকরণ-বিধি, নাই তার বাধাবিঘ্ন,-শুধু বুলি ছোটে পশ্চাতে ফেলিয়া রেখে তদ্ধিত প্রত্যয় অমর পাণিনি। একসঙ্গে নাহি সয় রাজা আর ব্যাকরণ দোঁহারে পীড়ন।" এটাই নির্মম সত্য যে যাদের কল্যাণকর শাস্ত্র নেই, যারা শাস্ত্রবাক্যকে  নিজেরাও অনুসরণ করে না ; তারাই শাস্ত্রের নামে জগতে এক ভয়াবহ উপদ্রব শুরু করে দেয়। নিজের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং জৈবিক সকল আকাঙ্ক্ষা শাস্ত্রের কাঁধে চাপিয়ে চরিতার্থ করতে চায়। বেদবিদ্যার শাশ্বত আধ্যাত্মিক জগতে প্রবেশ না করে, শাস্ত্রচর্চার নামে শাস্ত্রকেও পীড়ন করে এবং সাথে ব্যকরণকে পীড়ন করে। শ্রীকুশল বরণ চক্রবর্ত্তী সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
শাস্ত্র শস্ত্র হয়ে সকল অধর্ম, সকল অজ্ঞানকে বিনাশ করে। শাস্ত্রকে অনুসরণ করেই সকল ধর্ম নির্ণয় করতে হয়। বেদাদি শাস্ত্রই ভগবানকে জানার পথে উপায়। বেদান্তসূত্রের শুরুতেই বেদাদি শাস্ত্রকে অখিল জ্ঞানভাণ্ডারের উৎস বলা হয়েছে:
শাস্ত্র যোনিত্বাৎ।
(বেদান্তসূত্র :১.১.৩)
"অখিলশাস্ত্রের বা জ্ঞানের উৎস বেদ।"
জগতে সকল জ্ঞানের উৎস পরমেশ্বরের বাণী বেদ। বেদ পরমেশ্বর কর্তৃক প্রকাশিত মানব জাতির পূর্ণাঙ্গ সংবিধান। অপৌরুষেয় সত্যবিদ্যাময় বেদগ্রন্থই সনাতন ধর্মের একমাত্র ভিত্তিস্বরূপ।পরমেশ্বরের বাণী বেদের জ্ঞানকে গল্পের মাধ্যমে রূপকের মাধ্যমে শিক্ষা দেয়ার জন্য পুরাণের উৎপত্তি। স্মৃতিশাস্ত্রও বেদকে অনুসরণ করে বিভিন্ন ঋষিদের বিধান। মুক্তির পথের নির্দেশনা দেয় শাস্ত্র। তপস্যা ও সাধনা ছাড়া শাস্ত্র হয়তো জীবকে সম্পূর্ণ মুক্তি লাভ করাতে পারে না। তবে জীবকে মুক্তির পথ দেখিয়ে নির্দেশনা দিতে পারে। কিভাবে জীব ঈশ্বরের পথে যাবে, মুক্তির পথে অগ্রসর হবে।বেদ পরবর্তী শাস্ত্র সম্পূর্ণভাবে প্রামাণ্য নয়। আবার সেই শাস্ত্রকে ঢালাওভাবে, অবৈদিক, অশাস্ত্রীয়, পৌরাণিক, প্রক্ষিপ্ত ইত্যাদি বিশেষণ ব্যবহার করে পরিত্যাগ করা উচিত নয়। পৌরাণিক এবং স্মৃতিবাক্যকে গ্রহণ বর্জনের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে। এটা সত্য যে, বেদ পরবর্তী সকল শাস্ত্রবাক্যই অলঙ্ঘনীয় নয়। বেদবাক্যই শুধু অলঙ্ঘনীয়। কিন্তু বর্তমানে একটি বিষয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে ব্যাধির মত দেখা যায়। শাস্ত্রকে তারা নিজেদের সুবিধা অনুসারে সর্বদা ব্যবহার করার প্রচেষ্টা করে।নিজের ভালো লাগা মন্দ লাগা বিষয়কে শাস্ত্রদিয়ে সিলমোহর দেয়ার প্রচেষ্টা করে। এ প্রসঙ্গে আমি আমার কিছু অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি শাস্ত্রীয় আপাতদৃষ্ট সংশয়ে আমার কাছে সিদ্ধান্ত জানতে চায়। আমি আমার যথাসাধ্য উত্তর দেয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু আমি লক্ষ্য করি, অধিকাংশ ব্যক্তি শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্ত জানতে চায় না। তারা নিজদের মন যা চায়, সেই ব্যক্তিগত করণীয়কে শাস্ত্রের নামে সিলমোহর দিতে চায়। জানতে চাওয়ার নামে, আমাদের নাম শুধুই শাস্ত্রীয় সমর্থনসূত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দেয়া যায়। কেউ হয়তো একই পরিবারের কাকাতো -জেঠাতো, মামাতো পিসাতো অথবা রক্তের সম্পর্কের ভাইবোনের সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি করেছে। যা ধর্মে সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। কারণ সনাতন ধর্মে রক্তের সম্পর্কের সাথে যুক্ত ভাইবোনের বিবাহ হয় না। একঘরের মধ্যে বিয়ে হয় না। বিজ্ঞানও বিষয়টি সমর্থন করে না। এতে সন্তান বিকলাঙ্গ, প্রতিবন্ধী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু যে সকল ব্যক্তিরা দুর্ভাগ্যক্রমে এ সকল সম্পর্কে জড়িয়ে যায়, তারা নিজদের কর্মকে যৌক্তিক করতে শাস্ত্রের মধ্যে নিজের করণীয় কর্মের শাস্ত্রীয় সমর্থনসূত্র খুঁজতে থাকে। যারা সনাতন শাস্ত্র চর্চা করে, তাদের অনেককে বলে শাস্ত্রীয় সমর্থনসূত্র খুঁজে দিতে। কিন্তু সনাতন ধর্মে শাস্ত্রবিধি ত্যাগ করে স্বেচ্ছাচারী হয়ে নিজ খুশীমত আচরণকে শুধু নিষেধই করা হয়নি, তীব্রভাবে ভৎসনাও করা হয়েছে। শ্রীমদ্ভগবদগীতায় বলা হয়েছে:
যঃ শাস্ত্রবিধিমুৎসৃজ্য বর্ততে কামকারতঃ।
ন স সিদ্ধিম্বাপ্নোতি ন সুখং ন পরাং গতিম্।।
মোক্ষলাভ করে না এবং সুখও প্রাপ্ত হয় না।
তস্মাচ্ছাস্ত্রং প্রমাণং তে কার্যাকার্যব্যবস্থিতৌ।
জ্ঞাত্বা শাস্ত্রবিধানোক্তং কর্ম কর্তুমিহার্হসি৷৷
(শ্রীমদ্ভগবদগীতা: ১৬.২৩-২৪)
"যে ব্যক্তি শাস্ত্রবিধি ত্যাগ করে স্বেচ্ছাচারী হয়ে নিজ খুশীমত আচরণ করে, সে সিদ্ধিলাভ করতে পারেনা, তার সুখও থাকে না এবং সে জীবের পরমগতি মোক্ষলাভও করতে পারে না।
কর্তব্য ও অকর্তব্য নির্ধারণে তোমার নিকট শাস্ত্রই প্রমাণ। অতএব কর্তব্য-অকর্তব্য নির্ধারণে শাস্ত্রবিধি জেনে তোমার কর্ম করা উচিত।"
শাস্ত্রকে পরিত্যাগ করে নিজের মনের মত স্বেচ্ছাচারী হওয়া উচিত নয়। শাস্ত্র শস্ত্রের মত, সেই শস্ত্রের যথাযথ প্রয়োগে যেমন কল্যাণ হয় ; তেমনি অপপ্রয়োগে অকল্যাণ হয়।ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, শাস্ত্রবিধি পরিত্যাগকারী ব্যক্তিদের ইহকালে যেমন সুখও হয়না, তেমনি মৃত্যু পরবর্তীতে মোক্ষলাভও হয়না।কুলার্ণবতন্ত্রে বলা হয়েছে:
সময়াচারবিহীনস্য স্বৈরবৃত্তের্দুরাত্মনঃ।
ন সিদ্ধয়ঃ কুলভ্রংশস্তৎসংসর্গং ন কারয়েৎ।।
যঃ শাস্ত্রবিধিমুৎসৃজ্য বর্ত্ততে কামকারতঃ।
স সিদ্ধিমিহ নাপ্নোতি পরত্র নরকে গতিম।।
(কুলার্ণবতন্ত্র: ৫.৯৬-৯৭)
"সময়াচারহীন স্বেচ্ছাচারী, অর্থাৎ নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী আচরণ পালনকারী দুরাত্মার সিদ্ধি লাভ হয় না, সে কুলভ্রষ্ট, তাঁর সাথে মেলামেশা করবে না। যে শাস্ত্রবিধি লঙ্ঘন করে স্বেচ্ছাচার করে চলে, সে ইহলোকে সিদ্ধিলাভ করে না এবং পরলোকে নরকে যায়।।"
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত একটি বিখ্যাত নাটক 'রাজা ও রানী'। ১৮৮৯ খ্রীস্টাব্দে নাটকটি প্রকাশিত হয়।।রাজা বিক্রমদেব ও রাণী সুমিত্রার কাল্পনিক উপাখ্যানকে ভিত্তি করে নাটকটি রচিত হয়েছে। নাটকটির প্রথম অঙ্কে প্রথম দৃশ্যেই প্রধান চরিত্র বিক্রমদেব শাস্ত্র সম্পর্কে বলেন:
"অতি ভয়ানক। সখা, শাস্ত্র নাই যার
শাস্ত্রের উপদ্রব তার চতুর্গুণ।
নাই যার বেদবিদ্যা, ব্যাকরণ-বিধি,
নাই তার বাধাবিঘ্ন,-শুধু বুলি ছোটে
পশ্চাতে ফেলিয়া রেখে তদ্ধিত প্রত্যয়
অমর পাণিনি। একসঙ্গে নাহি সয়
রাজা আর ব্যাকরণ দোঁহারে পীড়ন।"
এটাই নির্মম সত্য যে যাদের কল্যাণকর শাস্ত্র নেই, যারা শাস্ত্রবাক্যকে নিজেরাও অনুসরণ করে না ; তারাই শাস্ত্রের নামে জগতে এক ভয়াবহ উপদ্রব শুরু করে দেয়। নিজের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং জৈবিক সকল আকাঙ্ক্ষা শাস্ত্রের কাঁধে চাপিয়ে চরিতার্থ করতে চায়। বেদবিদ্যার শাশ্বত আধ্যাত্মিক জগতে প্রবেশ না করে, শাস্ত্রচর্চার নামে শাস্ত্রকেও পীড়ন করে এবং সাথে ব্যকরণকে পীড়ন করে।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।

মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁