-->

ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

আধ্যাত্মিক শিক্ষা গুরুমুখী বিদ্যা, আন্তর্জালীয় শাস্ত্রচর্চায় শত্রুতা বাড়ে।

আধ্যাত্মিক শিক্ষা গুরুমুখী বিদ্যা,  আন্তর্জালীয় শাস্ত্রচর্চায় শত্রুতা বাড়ে।  বর্তমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতিরিক্ত শাস্ত্রচর্চায় বেড়ে গেছে। এর একটি অত্যন্ত যুগোপযোগী উপকারিতা যেমন রয়েছে। তেমনি যুগপৎভাবে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি উপকারীতা। আমাদের আধ্যাত্মিক বিদ্যাটি অন্যদের ধর্মের মত নয়। এ বিদ্যাটি অধিকাংশই গুরুমুখী বিদ্যা। বৈদিক গুরু অবৈতনিকভাবে এ শিক্ষাটি শিষ্যদের দিতেন। এবং শিষ্যও অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে গুরুর অনুগত হয়ে শাস্ত্রীয় বিদ্যাটি গ্রহণ করতেন। গীতার মধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তত্ত্বদর্শী জ্ঞানীদের কাছে গিয়ে জ্ঞান অর্জন করতে। তত্ত্বদর্শী জ্ঞানীদের কাছে বিনয়পূর্বক প্রণিপাত ও সেবার মানসিকতা নিয়ে সরলভাবে পরিপূরক প্রশ্ন জিজ্ঞাসার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করতে। তদ্বিদ্ধি প্রণিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া। উপদেক্ষ্যন্তি তে জ্ঞানং জ্ঞানিনস্তত্ত্বদৰ্শিনঃ৷৷ (শ্রীমদ্ভগবদগীতা:৪.৩৪) "সেই জ্ঞান তুমি তত্ত্বদর্শী জ্ঞানীদের কাছে গিয়ে জেনে নাও ; তাঁদের বিনয়পূর্বক প্রণাম ও সেবা তথা কপটতা ত্যাগ করে সরলভাবে প্রশ্ন করলে সেই তত্ত্বদর্শী জ্ঞানিগণ তোমাকে তত্ত্বজ্ঞান সম্বন্ধে উপদেশ দেবেন।" বর্তমানকালের আন্তর্জালের (Internet) মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগে শাস্ত্রচর্চায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়-অহেতুক শত্রু বেড়ে যায়। দূর থেকে কেউ কাউকে বুঝতে পারে না এবং তাই যথাযথভাবে বোঝাতেও পারে না। আধ্যাত্মিক তত্ত্বটি বর্তমানকালের আন্তর্জালের (Internet) মাধ্যমে যথাযথভাবে সর্বদা বোঝানো যায় না। যখন যথাযথভাবে বোঝানো যায় না, তখনই একে অন্যের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়।একজনকে কাছে ডেকে বোঝানো এবং ফেসবুকে বোঝানোর মধ্যে আকাশপাতাল পার্থক্য। ফেসবুকে শাস্ত্রচর্চার থেকে ব্যক্তিগতভাবে জনে-জনে বুঝানো অনেক বেশী কার্যকর। কাউকে সংশোধন করতে হলে,আগে কাছে ডেকে নিতে হবে এবং পরে সমবেদনার সাথে শিক্ষা প্রদান করতে হবে। এ প্রসঙ্গে  অনুকূল ঠাকুরের অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছড়া রয়েছে: "কাউকে যদি বলিস কিছু সংশোধনের তরে, গোপনে তারে বুঝিয়ে বলিস সমবেদনার ভরে।" একজন সংগঠক এবং ধর্ম প্রচারকের মেধা প্রজ্ঞার সাথে আরোও কয়েকটি বিষয়ের অত্যাবশ্যক। অধিকারী না হলে সকলেই সকল আধ্যাত্মিক তত্ত্ব উপলব্ধি করতে পারে না। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভাসা ভাসা অগভীর শিক্ষাতে তো একদমই পারে না। মহাভারতে বলা হয়েছে- কাউকে শিক্ষার জন্যে, সে যদি যোগ্য অধিকারী না হয়, তবে কোন কথা বলার থেকে কথা না বলাই প্রথমত মঙ্গলের। যদি বলতেই হয় তবে সত্যবাক্য বলতে হবে।সত্যবাক্য হলো দ্বিতীয় মঙ্গল। সত্য বাক্য বলতে হলে, সত্য ও প্রিয়বাক্য বলাই হলো তৃতীয় মঙ্গল। সত্য-প্রিয় বাক্য বলতে হলে সত্য, প্রিয় ও ধর্মসঙ্গত বাক্য বলাই হল চতুর্থত মঙ্গলজনক। অব্যাহৃতং ব্যাহৃতাচ্ছ্রে য আহুঃ সত্যং বদেদ্ব্যাহৃতং তদ্দ্বিতীয়ম্।  প্রিয়ং বদেদ্ব্যাহৃতং তত্তৃতীয়ং  ধৰ্মং বদেদ্ব্যাহৃতং তচ্চতুর্থম্॥ (মহাভারত: উদ্যোগ পর্ব, ৩৬.১২) " জ্ঞানীরা বলেন কোন কথা বলার থেকে না বলাই প্রথম মঙ্গল;কথা বলতে হলে সত্যবাক্য বলা হলো দ্বিতীয় মঙ্গল। সত্য বাক্য বলতে হলে, সত্য ও প্রিয়বাক্য বলা হলো তৃতীয় মঙ্গল এবং সত্য-প্রিয় বাক্য বলতে হলে সত্য, প্রিয় ও ধর্মসঙ্গত বাক্য বলা হল চতুর্থ মঙ্গল।" কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সকলেই তাদের মঙ্গলজনক বিষয় যথাযথ সময়ে উপলব্ধি করতে পারে না। এ প্রসঙ্গে যদি তাদের সাবধান বা সতর্ক করা হয়, তবে অনেক ক্ষেত্রেই তারা ভুল বোঝে। মানুষের জীবনে শতবছর পরমায়ু ধরে বেদে মানুষের জীবনকে চারটি পাদে ভাগ করা হয়েছে। এ চারটি পাদের প্রত্যেকটি পাদে পঁচিশ বছর করে শতবছর মানুষের জীবনের পূর্ণায়ু। এর মধ্যে জীবনের প্রথম পাদ বা প্রথম পঁচিশবছর হলো শিক্ষার সময়। সে সময়ে মানুষকে বিবিধ প্রকারের আধ্যাত্মিক জাগতিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়। অর্থাৎ এ সময়টা হলো ইনপুটের সময়। কিন্তু বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শাস্ত্রচর্চার নামে ভয়ংকরভাবে আত্মপ্রচারের মানসিকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই আত্মপ্রচারকারীগণ তাদের মাথায় আধ্যাত্মিক জ্ঞানের বেসিক ইনপুট না দিয়েই তারা আউটপুট দেয়া শুরু করছে। শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে না জেনে অবলীলায় নিজস্ব সিদ্ধান্ত দিয়ে দিচ্ছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। সাঁতার না শিখে জলে নামলে যে অবস্থা হয়, সেই অবস্থা হচ্ছে। জলে নেমে কিছুদূর যাওয়ার পরেই হাবুডুবু খাচ্ছে। এই ব্যক্তিরা শাস্ত্রপ্রচারের নামে কিছুদূর শাস্ত্রচর্চার পথ অতিক্রম করেই, একটি সময়ে পরিশেষে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে। সময়ের পথরেখায় জ্ঞান পরিশীলিত হয়, পূর্ণতা পায়। ডাব থেকে ধীরে ধীরে নারিকেল হতে হয়, কিন্তু হঠাৎ করে যে ডাব ঝুনা হয় তাকে ডাবঝুনা বলে। একে ডাব হিসেবেও খাওয়া যায় না, ঝুনা নারিকেল হিসেবেও খাওয়া যায় না। ফেলে দিতে হয়। জ্ঞানের অর্জনের পথে জীবনের প্রথম পাদ বা প্রথম পঁচিশবছর বয়সে পর্যন্ত  জ্ঞান অর্জন করা উচিত, এ বিষয়টি সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এর কিছ ব্যতিক্রম রয়েছে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম শ্রীশঙ্করাচার্য। তিনি মাত্র বত্রিশ বয়শ আয়ুর মধ্যেই সকল কর্ম করেছেন  এবং ১৫১ টি গ্রন্থ লিখেছে। যা ব্যতিক্রম শুধুই নয়,  বিরলতম ব্যতিক্রম। আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে বয়স ও অভিজ্ঞতার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হলেও, সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তবে কমবেশি রয়েছে। তবে গুটিকয়েক ব্যতিক্রমীদের বাদ দিলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ধারাবাহিক জ্ঞান অর্জন না করে যারা প্রচার করে বিশেষ করে আন্তর্জালিক মাধ্যমে শাস্ত্রচর্চা করে তাদের মধ্যে আত্মপ্রচারের ভাব প্রবল হয়। তবে বর্তমানে একটি বিষয় আমাদের সামনে উপস্থিত, তা হলো পরম্পরাহীন, অগভীর, পারম্পর্যহীন ভুলভাল জ্ঞান নিয়ে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীগণ সনাতন শাস্ত্রকে বিকৃতভাবে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে উপস্থাপন করছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে অগভীর জ্ঞান নিয়ে  সনাতন ধর্মাবলম্বী যারা আন্তর্জালিক মাধ্যমে শাস্ত্রচর্চা করছে, বর্তমানকালে এদের একটি প্রয়োজনীয় দিক রয়েছে। সে দিকটি হলো, সনাতন শাস্ত্র সম্পর্কে বিধর্মীদের করা মিথাচারের মোকাবেলা। সনাতন ধর্ম সম্পূর্ণ আধ্যাত্মিকতার উপরেই সুপ্রতিষ্ঠিত। আধ্যাত্মিকতাকে আধ্যাত্মিকতা দিয়ে পরিপুষ্ট করতে হয়। আধ্যাত্মিকতায় তর্ক মুখ্য নয়, গৌণ। তাই অগভীর জ্ঞানকে অগভীর জ্ঞান দিয়েই প্রতিরোধ করতে হয়, সাধু-সন্ন্যাসীর উচ্চমার্গের আধ্যাত্মিক জ্ঞান নয়। তর্ককে তর্ক দ্বারাই পরাভূত করতে হয়। বিষয়টি ব্যবহারিক ধর্মের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু আধ্যাত্মিক শাশ্বত ধর্মের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।এর পরেও পরম্পরাহীন এই আন্তর্জালিক শাস্ত্রচর্চা বর্তমানের বাস্তবতায়  ইতিবাচক। কারণ আমরা বর্তমানে আপদধর্মকাল পালন করছি। এ সময়ে ধর্মের স্বরূপ পরিবর্তিত হয়। তবে যেই মাধ্যমেই হোক,নিরুৎসাহিত হওয়ার বা নিরুৎসাহিত করার প্রয়োজন নেই।ভুল থেকেই যে শিক্ষা লাভ করতে চায়, সে শিক্ষা লাভ করতে পারে।  শ্রীকুশল বরণ চক্রবর্ত্তী সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
বর্তমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতিরিক্ত শাস্ত্রচর্চায় বেড়ে গেছে। এর একটি অত্যন্ত যুগোপযোগী উপকারিতা যেমন রয়েছে। তেমনি যুগপৎভাবে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি উপকারীতা। আমাদের আধ্যাত্মিক বিদ্যাটি অন্যদের ধর্মের মত নয়। এ বিদ্যাটি অধিকাংশই গুরুমুখী বিদ্যা। বৈদিক গুরু অবৈতনিকভাবে এ শিক্ষাটি শিষ্যদের দিতেন। এবং শিষ্যও অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে গুরুর অনুগত হয়ে শাস্ত্রীয় বিদ্যাটি গ্রহণ করতেন। গীতার মধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তত্ত্বদর্শী জ্ঞানীদের কাছে গিয়ে জ্ঞান অর্জন করতে। তত্ত্বদর্শী জ্ঞানীদের কাছে বিনয়পূর্বক প্রণিপাত ও সেবার মানসিকতা নিয়ে সরলভাবে পরিপূরক প্রশ্ন জিজ্ঞাসার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করতে।
তদ্বিদ্ধি প্রণিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া।
উপদেক্ষ্যন্তি তে জ্ঞানং জ্ঞানিনস্তত্ত্বদৰ্শিনঃ৷৷
(শ্রীমদ্ভগবদগীতা:৪.৩৪)
"সেই জ্ঞান তুমি তত্ত্বদর্শী জ্ঞানীদের কাছে গিয়ে জেনে নাও ; তাঁদের বিনয়পূর্বক প্রণাম ও সেবা তথা কপটতা ত্যাগ করে সরলভাবে প্রশ্ন করলে সেই তত্ত্বদর্শী জ্ঞানিগণ তোমাকে তত্ত্বজ্ঞান সম্বন্ধে উপদেশ দেবেন।"
বর্তমানকালের আন্তর্জালের (Internet) মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগে শাস্ত্রচর্চায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়-অহেতুক শত্রু বেড়ে যায়। দূর থেকে কেউ কাউকে বুঝতে পারে না এবং তাই যথাযথভাবে বোঝাতেও পারে না। আধ্যাত্মিক তত্ত্বটি বর্তমানকালের আন্তর্জালের (Internet) মাধ্যমে যথাযথভাবে সর্বদা বোঝানো যায় না। যখন যথাযথভাবে বোঝানো যায় না, তখনই একে অন্যের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়।একজনকে কাছে ডেকে বোঝানো এবং ফেসবুকে বোঝানোর মধ্যে আকাশপাতাল পার্থক্য। ফেসবুকে শাস্ত্রচর্চার থেকে ব্যক্তিগতভাবে জনে-জনে বুঝানো অনেক বেশী কার্যকর। কাউকে সংশোধন করতে হলে,আগে কাছে ডেকে নিতে হবে এবং পরে সমবেদনার সাথে শিক্ষা প্রদান করতে হবে। এ প্রসঙ্গে অনুকূল ঠাকুরের অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছড়া রয়েছে:
"কাউকে যদি বলিস কিছু সংশোধনের তরে,
গোপনে তারে বুঝিয়ে বলিস সমবেদনার ভরে।"
একজন সংগঠক এবং ধর্ম প্রচারকের মেধা প্রজ্ঞার সাথে আরোও কয়েকটি বিষয়ের অত্যাবশ্যক। অধিকারী না হলে সকলেই সকল আধ্যাত্মিক তত্ত্ব উপলব্ধি করতে পারে না। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভাসা ভাসা অগভীর শিক্ষাতে তো একদমই পারে না। মহাভারতে বলা হয়েছে- কাউকে শিক্ষার জন্যে, সে যদি যোগ্য অধিকারী না হয়, তবে কোন কথা বলার থেকে কথা না বলাই প্রথমত মঙ্গলের। যদি বলতেই হয় তবে সত্যবাক্য বলতে হবে।সত্যবাক্য হলো দ্বিতীয় মঙ্গল। সত্য বাক্য বলতে হলে, সত্য ও প্রিয়বাক্য বলাই হলো তৃতীয় মঙ্গল। সত্য-প্রিয় বাক্য বলতে হলে সত্য, প্রিয় ও ধর্মসঙ্গত বাক্য বলাই হল চতুর্থত মঙ্গলজনক।
অব্যাহৃতং ব্যাহৃতাচ্ছ্রে য আহুঃ
সত্যং বদেদ্ব্যাহৃতং তদ্দ্বিতীয়ম্।
প্রিয়ং বদেদ্ব্যাহৃতং তত্তৃতীয়ং
ধৰ্মং বদেদ্ব্যাহৃতং তচ্চতুর্থম্॥
(মহাভারত: উদ্যোগ পর্ব, ৩৬.১২)
" জ্ঞানীরা বলেন কোন কথা বলার থেকে না বলাই প্রথম মঙ্গল;কথা বলতে হলে সত্যবাক্য বলা হলো দ্বিতীয় মঙ্গল। সত্য বাক্য বলতে হলে, সত্য ও প্রিয়বাক্য বলা হলো তৃতীয় মঙ্গল এবং সত্য-প্রিয় বাক্য বলতে হলে সত্য, প্রিয় ও ধর্মসঙ্গত বাক্য বলা হল চতুর্থ মঙ্গল।"
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সকলেই তাদের মঙ্গলজনক বিষয় যথাযথ সময়ে উপলব্ধি করতে পারে না। এ প্রসঙ্গে যদি তাদের সাবধান বা সতর্ক করা হয়, তবে অনেক ক্ষেত্রেই তারা ভুল বোঝে। মানুষের জীবনে শতবছর পরমায়ু ধরে বেদে মানুষের জীবনকে চারটি পাদে ভাগ করা হয়েছে। এ চারটি পাদের প্রত্যেকটি পাদে পঁচিশ বছর করে শতবছর মানুষের জীবনের পূর্ণায়ু। এর মধ্যে জীবনের প্রথম পাদ বা প্রথম পঁচিশবছর হলো শিক্ষার সময়। সে সময়ে মানুষকে বিবিধ প্রকারের আধ্যাত্মিক জাগতিক জ্ঞান অর্জন করতে হয়। অর্থাৎ এ সময়টা হলো ইনপুটের সময়। কিন্তু বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শাস্ত্রচর্চার নামে ভয়ংকরভাবে আত্মপ্রচারের মানসিকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই আত্মপ্রচারকারীগণ তাদের মাথায় আধ্যাত্মিক জ্ঞানের বেসিক ইনপুট না দিয়েই তারা আউটপুট দেয়া শুরু করছে। শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে না জেনে অবলীলায় নিজস্ব সিদ্ধান্ত দিয়ে দিচ্ছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। সাঁতার না শিখে জলে নামলে যে অবস্থা হয়, সেই অবস্থা হচ্ছে। জলে নেমে কিছুদূর যাওয়ার পরেই হাবুডুবু খাচ্ছে। এই ব্যক্তিরা শাস্ত্রপ্রচারের নামে কিছুদূর শাস্ত্রচর্চার পথ অতিক্রম করেই, একটি সময়ে পরিশেষে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছে। সময়ের পথরেখায় জ্ঞান পরিশীলিত হয়, পূর্ণতা পায়। ডাব থেকে ধীরে ধীরে নারিকেল হতে হয়, কিন্তু হঠাৎ করে যে ডাব ঝুনা হয় তাকে ডাবঝুনা বলে। একে ডাব হিসেবেও খাওয়া যায় না, ঝুনা নারিকেল হিসেবেও খাওয়া যায় না। ফেলে দিতে হয়।
জ্ঞানের অর্জনের পথে জীবনের প্রথম পাদ বা প্রথম পঁচিশবছর বয়সে পর্যন্ত জ্ঞান অর্জন করা উচিত, এ বিষয়টি সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এর কিছ ব্যতিক্রম রয়েছে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম শ্রীশঙ্করাচার্য। তিনি মাত্র বত্রিশ বয়শ আয়ুর মধ্যেই সকল কর্ম করেছেন এবং ১৫১ টি গ্রন্থ লিখেছে। যা ব্যতিক্রম শুধুই নয়, বিরলতম ব্যতিক্রম। আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে বয়স ও অভিজ্ঞতার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হলেও, সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তবে কমবেশি রয়েছে। তবে গুটিকয়েক ব্যতিক্রমীদের বাদ দিলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ধারাবাহিক জ্ঞান অর্জন না করে যারা প্রচার করে বিশেষ করে আন্তর্জালিক মাধ্যমে শাস্ত্রচর্চা করে তাদের মধ্যে আত্মপ্রচারের ভাব প্রবল হয়। তবে বর্তমানে একটি বিষয় আমাদের সামনে উপস্থিত, তা হলো পরম্পরাহীন, অগভীর, পারম্পর্যহীন ভুলভাল জ্ঞান নিয়ে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীগণ সনাতন শাস্ত্রকে বিকৃতভাবে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে উপস্থাপন করছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে অগভীর জ্ঞান নিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী যারা আন্তর্জালিক মাধ্যমে শাস্ত্রচর্চা করছে, বর্তমানকালে এদের একটি প্রয়োজনীয় দিক রয়েছে। সে দিকটি হলো, সনাতন শাস্ত্র সম্পর্কে বিধর্মীদের করা মিথাচারের মোকাবেলা। সনাতন ধর্ম সম্পূর্ণ আধ্যাত্মিকতার উপরেই সুপ্রতিষ্ঠিত। আধ্যাত্মিকতাকে আধ্যাত্মিকতা দিয়ে পরিপুষ্ট করতে হয়। আধ্যাত্মিকতায় তর্ক মুখ্য নয়, গৌণ। তাই অগভীর জ্ঞানকে অগভীর জ্ঞান দিয়েই প্রতিরোধ করতে হয়, সাধু-সন্ন্যাসীর উচ্চমার্গের আধ্যাত্মিক জ্ঞান নয়। তর্ককে তর্ক দ্বারাই পরাভূত করতে হয়। বিষয়টি ব্যবহারিক ধর্মের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু আধ্যাত্মিক শাশ্বত ধর্মের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।এর পরেও পরম্পরাহীন এই আন্তর্জালিক শাস্ত্রচর্চা বর্তমানের বাস্তবতায় ইতিবাচক। কারণ আমরা বর্তমানে আপদধর্মকাল পালন করছি। এ সময়ে ধর্মের স্বরূপ পরিবর্তিত হয়। তবে যেই মাধ্যমেই হোক,নিরুৎসাহিত হওয়ার বা নিরুৎসাহিত করার প্রয়োজন নেই।ভুল থেকেই যে শিক্ষা লাভ করতে চায়, সে শিক্ষা লাভ করতে পারে।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁