-->

ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

যতই মহৎকর্ম হোক, সকল কর্মে; সবাইকে একসঙ্গে সন্তুষ্ট করা যায় না।

জগতের প্রত্যেকটি বিষয় প্রত্যেকের জন্য আনন্দদায়ক হয় না। কারো অনন্দের বিষয় অন্যদের জন্যে নিরানন্দের কারণ হয়। অনেকদিন খরার পরে যখন বৃষ্টি হয়, সেই বৃষ্টি দেখে ফসলের কথা চিন্তা করে কৃষক অত্যন্ত খুশি হয়ে ভগবানকে কৃতজ্ঞতা জানায়। কিন্তু একজন ধোপা বৃষ্টি দেখলে আতঙ্কিত হয়। তার কেবলই মনে পরে বাইরে সারি সারি কাপড় শুকাতে দেয়া আছে, সেই কাপড়গুলো ভিজে চুপচুপে হয়ে যাবে। ধোপার মত একই ভাবে একজন পালও বৃষ্টি দেখতে আতঙ্কিত হয়। সে ভাবে বাইরে রোদ্দুরে হাড়ি, পাতিল, কলসি সহ মাটির বিভিন্ন প্রতিমা শুকাতে দেয়া আছে। সেই হাড়িপাতিল এবং প্রতিমা যদি বৃষ্টির জলে ভিজে নষ্ট হয়ে যায়, তবে তাঁকে আবার নতুন করে তৈরি করতে হবে। তার এতদিনের শ্রম বিফলে যাবে। তাই কোন বিষয়ে একই সাথে সবাইকে প্রসন্ন করা যায় না। জগতের যে কোন কাজে কেউ যেমন খুশি হবে, তেমনি কেউ রুষ্ট হবে। কিছুকিছু ক্ষেত্রে ভয়ংকর রুষ্ট হবে। এতে কিছু করারো নেই ঘাবড়ানোর কিছুই নেই।  বৃষ্টি নিরাসক্তভাবে বর্ষণ করে পৃথিবীতে জল দান করে পৃথিবীর মাটিকে সজীব করে শষ্যচাষের উপযোগী করে তুলছে। তার এ পৃথিবী এবং পৃথিবীর মানুষের কাছে কিছুই চাওয়া পাওয়া নেই।কিন্তু তার সেই নিরাসক্ত জলদানে কেউ অত্যন্ত খুশি হয়ে তার প্রতি কৃতজ্ঞ হচ্ছে। বিপরীতে কেউ তার উপরে ভয়ংকর ক্ষুদ্ধ হচ্ছে। এতে হয়ত বৃষ্টির কিছুই আসে যায় না। সে শুধু নিরাসক্তভাবে তার নির্দিষ্ট দায়িত্ব কর্তব্য দায়িত্বশীলতার সাথে পালন করে যাচ্ছে। সে জানে সে কারো বন্ধুও নয় এবং শত্রুও নয়। সে তার দায়িত্ব কর্তব্যে অবিচল। এই ভাবটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'কণিকা' কাব্যগ্রন্থের 'দীনের দান' কবিতায় পাওয়া যায়। "মরু কহে, অধমেরে এত দাও জল, ফিরে কিছু দিব হেন কী আছে সম্বল? মেঘ কহে, কিছু নাহি চাই, মরুভূমি, আমারে দানের সুখ দান করো তুমি।"   মহাভারতের উদ্যোগ পর্বে বলা হয়েছে, জগতে সুমিষ্ট মনোহর সর্বদা প্রিয় কথা বলা বহুলোক অনায়াসে পাওয়া যায়। কিন্তু অপ্রিয় হলেও কল্যাণকর হিতকর বাক্য সহযে পাওয়া যায় না।আপাতদৃষ্টিতে তিতা বাক্য হলেও, পরিশেষে তা অত্যন্ত উপকারী; এমন উপদেশ বাক্যের একজন বক্তা এবং শ্রোতা পাওয়া জগতে অত্যন্ত দুষ্কর। সুলভাঃ পুরুষা রাজন্ সততং প্রিয়বাদিনঃ। অপ্রিয়স্য চ পথস্য বক্তা শ্রোতা চ দুর্লভঃ।। (মহাভারত: উদ্যোগ পর্ব, ৩৭.১৫) "রাজা, প্রিয়বাদী বহু লোক অনায়াসে সর্বদাই পাওয়া যায়, কিন্তু অপ্রিয় অথচ হিতবাক্যের একজন বক্তা এবং শ্রোতা পাওয়া দুষ্কর।" একসাথে সবাইকে সুখী করা যায় না, আনন্দিত করা যায় না এবং সন্তুষ্ট করা যায় না। অনেকে চেষ্টা করে, কিন্তু পরিণামে ব্যর্থ হয়। এই প্রচেষ্টাকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ সত্যিকারভাবেই সবাইকে খুশি করার সাধ্যমত উদ্যোগ নেয়। উদ্যোগ সম্পূর্ণভাবে সফল না হলেও, তাদের স্বদিচ্ছাটি মহত্তম। তারা মহৎপ্রাণ, তাই তারা ধন্যবাদের যোগ্য। কিন্তু আরেক শ্রেণীর ব্যক্তিরা আছে, যারা সচেতনভাবে মানুষের বিবিধ সমস্যা নিরসন করে দুঃখ দূর করার বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্রুতি দেয়। সাধারণত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা এই শ্রেণীভূক্ত। এরা অসচেতনভাবে সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন সমস্যা নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের মাথার উপরে মুলা ঝুলিয়ে দেয়। সাধারণ মানুষের মাথার উপরে তাদের প্রতিশ্রুতির মুলা দিনের পরে দিন ঝুলতেই থাকে। সেই ঝুলন্ত মুলাকে দেখে সাধারণ মানুষ আশায় বুক বাঁধে। তারা ভাবে, এবার সমস্যার সমাধান হবে, দুঃখ দূর হবে। তারা না বুঝে একবুক আশা নিয়ে সেই মুলার পিছনে দৌড়ে বেড়ায়। তাদের শুধু দৌড়ে বেড়ানোই সার। মুলা ঝুলিয়ে রাখা এই রাজনৈতিক নেতারা কাজের বেলায় অধিকাংশই লবডঙ্কা। অবশ্য এর মধ্যে দুই একজন কদাচিৎ ব্যতিক্রমী রয়েছে। যারা ব্যতিক্রমী তারা সর্বদাই ব্যতিক্রমী। কিন্তু অধিকাংশ নেতা নামধারীরা সাধারণ মানুষের মাথার উপরে মুলা ঝুলিয়ে, তাদের হৃদয়ের সরলতা নিয়ে খেলা করে। শ্রীকুশল বরণ চক্রবর্ত্তী সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
জগতের প্রত্যেকটি বিষয় প্রত্যেকের জন্য আনন্দদায়ক হয় না। কারো অনন্দের বিষয় অন্যদের জন্যে নিরানন্দের কারণ হয়। অনেকদিন খরার পরে যখন বৃষ্টি হয়, সেই বৃষ্টি দেখে ফসলের কথা চিন্তা করে কৃষক অত্যন্ত খুশি হয়ে ভগবানকে কৃতজ্ঞতা জানায়। কিন্তু একজন ধোপা বৃষ্টি দেখলে আতঙ্কিত হয়। তার কেবলই মনে পরে বাইরে সারি সারি কাপড় শুকাতে দেয়া আছে, সেই কাপড়গুলো ভিজে চুপচুপে হয়ে যাবে। ধোপার মত একই ভাবে একজন পালও বৃষ্টি দেখতে আতঙ্কিত হয়। সে ভাবে বাইরে রোদ্দুরে হাড়ি, পাতিল, কলসি সহ মাটির বিভিন্ন প্রতিমা শুকাতে দেয়া আছে। সেই হাড়িপাতিল এবং প্রতিমা যদি বৃষ্টির জলে ভিজে নষ্ট হয়ে যায়, তবে তাঁকে আবার নতুন করে তৈরি করতে হবে। তার এতদিনের শ্রম বিফলে যাবে। তাই কোন বিষয়ে একই সাথে সবাইকে প্রসন্ন করা যায় না। জগতের যে কোন কাজে কেউ যেমন খুশি হবে, তেমনি কেউ রুষ্ট হবে। কিছুকিছু ক্ষেত্রে ভয়ংকর রুষ্ট হবে। এতে কিছু করারো নেই ঘাবড়ানোর কিছুই নেই।
বৃষ্টি নিরাসক্তভাবে বর্ষণ করে পৃথিবীতে জল দান করে পৃথিবীর মাটিকে সজীব করে শষ্যচাষের উপযোগী করে তুলছে। তার এ পৃথিবী এবং পৃথিবীর মানুষের কাছে কিছুই চাওয়া পাওয়া নেই।কিন্তু তার সেই নিরাসক্ত জলদানে কেউ অত্যন্ত খুশি হয়ে তার প্রতি কৃতজ্ঞ হচ্ছে। বিপরীতে কেউ তার উপরে ভয়ংকর ক্ষুদ্ধ হচ্ছে। এতে হয়ত বৃষ্টির কিছুই আসে যায় না। সে শুধু নিরাসক্তভাবে তার নির্দিষ্ট দায়িত্ব কর্তব্য দায়িত্বশীলতার সাথে পালন করে যাচ্ছে। সে জানে সে কারো বন্ধুও নয় এবং শত্রুও নয়। সে তার দায়িত্ব কর্তব্যে অবিচল। এই ভাবটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'কণিকা' কাব্যগ্রন্থের 'দীনের দান' কবিতায় পাওয়া যায়।
"মরু কহে, অধমেরে এত দাও জল,
ফিরে কিছু দিব হেন কী আছে সম্বল?
মেঘ কহে, কিছু নাহি চাই, মরুভূমি,
আমারে দানের সুখ দান করো তুমি।"
মহাভারতের উদ্যোগ পর্বে বলা হয়েছে, জগতে সুমিষ্ট মনোহর সর্বদা প্রিয় কথা বলা বহুলোক অনায়াসে পাওয়া যায়। কিন্তু অপ্রিয় হলেও কল্যাণকর হিতকর বাক্য সহযে পাওয়া যায় না।আপাতদৃষ্টিতে তিতা বাক্য হলেও, পরিশেষে তা অত্যন্ত উপকারী; এমন উপদেশ বাক্যের একজন বক্তা এবং শ্রোতা পাওয়া জগতে অত্যন্ত দুষ্কর।
সুলভাঃ পুরুষা রাজন্ সততং প্রিয়বাদিনঃ।
অপ্রিয়স্য চ পথস্য বক্তা শ্রোতা চ দুর্লভঃ।।
(মহাভারত: উদ্যোগ পর্ব, ৩৭.১৫)
"রাজা, প্রিয়বাদী বহু লোক অনায়াসে সর্বদাই পাওয়া যায়, কিন্তু অপ্রিয় অথচ হিতবাক্যের একজন বক্তা এবং শ্রোতা পাওয়া দুষ্কর।"
জগতের প্রত্যেকটি বিষয় প্রত্যেকের জন্য আনন্দদায়ক হয় না। কারো অনন্দের বিষয় অন্যদের জন্যে নিরানন্দের কারণ হয়। অনেকদিন খরার পরে যখন বৃষ্টি হয়, সেই বৃষ্টি দেখে ফসলের কথা চিন্তা করে কৃষক অত্যন্ত খুশি হয়ে ভগবানকে কৃতজ্ঞতা জানায়। কিন্তু একজন ধোপা বৃষ্টি দেখলে আতঙ্কিত হয়। তার কেবলই মনে পরে বাইরে সারি সারি কাপড় শুকাতে দেয়া আছে, সেই কাপড়গুলো ভিজে চুপচুপে হয়ে যাবে। ধোপার মত একই ভাবে একজন পালও বৃষ্টি দেখতে আতঙ্কিত হয়। সে ভাবে বাইরে রোদ্দুরে হাড়ি, পাতিল, কলসি সহ মাটির বিভিন্ন প্রতিমা শুকাতে দেয়া আছে। সেই হাড়িপাতিল এবং প্রতিমা যদি বৃষ্টির জলে ভিজে নষ্ট হয়ে যায়, তবে তাঁকে আবার নতুন করে তৈরি করতে হবে। তার এতদিনের শ্রম বিফলে যাবে। তাই কোন বিষয়ে একই সাথে সবাইকে প্রসন্ন করা যায় না। জগতের যে কোন কাজে কেউ যেমন খুশি হবে, তেমনি কেউ রুষ্ট হবে। কিছুকিছু ক্ষেত্রে ভয়ংকর রুষ্ট হবে। এতে কিছু করারো নেই ঘাবড়ানোর কিছুই নেই।  বৃষ্টি নিরাসক্তভাবে বর্ষণ করে পৃথিবীতে জল দান করে পৃথিবীর মাটিকে সজীব করে শষ্যচাষের উপযোগী করে তুলছে। তার এ পৃথিবী এবং পৃথিবীর মানুষের কাছে কিছুই চাওয়া পাওয়া নেই।কিন্তু তার সেই নিরাসক্ত জলদানে কেউ অত্যন্ত খুশি হয়ে তার প্রতি কৃতজ্ঞ হচ্ছে। বিপরীতে কেউ তার উপরে ভয়ংকর ক্ষুদ্ধ হচ্ছে। এতে হয়ত বৃষ্টির কিছুই আসে যায় না। সে শুধু নিরাসক্তভাবে তার নির্দিষ্ট দায়িত্ব কর্তব্য দায়িত্বশীলতার সাথে পালন করে যাচ্ছে। সে জানে সে কারো বন্ধুও নয় এবং শত্রুও নয়। সে তার দায়িত্ব কর্তব্যে অবিচল। এই ভাবটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'কণিকা' কাব্যগ্রন্থের 'দীনের দান' কবিতায় পাওয়া যায়। "মরু কহে, অধমেরে এত দাও জল, ফিরে কিছু দিব হেন কী আছে সম্বল? মেঘ কহে, কিছু নাহি চাই, মরুভূমি, আমারে দানের সুখ দান করো তুমি।"   মহাভারতের উদ্যোগ পর্বে বলা হয়েছে, জগতে সুমিষ্ট মনোহর সর্বদা প্রিয় কথা বলা বহুলোক অনায়াসে পাওয়া যায়। কিন্তু অপ্রিয় হলেও কল্যাণকর হিতকর বাক্য সহযে পাওয়া যায় না।আপাতদৃষ্টিতে তিতা বাক্য হলেও, পরিশেষে তা অত্যন্ত উপকারী; এমন উপদেশ বাক্যের একজন বক্তা এবং শ্রোতা পাওয়া জগতে অত্যন্ত দুষ্কর। সুলভাঃ পুরুষা রাজন্ সততং প্রিয়বাদিনঃ। অপ্রিয়স্য চ পথস্য বক্তা শ্রোতা চ দুর্লভঃ।। (মহাভারত: উদ্যোগ পর্ব, ৩৭.১৫) "রাজা, প্রিয়বাদী বহু লোক অনায়াসে সর্বদাই পাওয়া যায়, কিন্তু অপ্রিয় অথচ হিতবাক্যের একজন বক্তা এবং শ্রোতা পাওয়া দুষ্কর।" একসাথে সবাইকে সুখী করা যায় না, আনন্দিত করা যায় না এবং সন্তুষ্ট করা যায় না। অনেকে চেষ্টা করে, কিন্তু পরিণামে ব্যর্থ হয়। এই প্রচেষ্টাকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ সত্যিকারভাবেই সবাইকে খুশি করার সাধ্যমত উদ্যোগ নেয়। উদ্যোগ সম্পূর্ণভাবে সফল না হলেও, তাদের স্বদিচ্ছাটি মহত্তম। তারা মহৎপ্রাণ, তাই তারা ধন্যবাদের যোগ্য। কিন্তু আরেক শ্রেণীর ব্যক্তিরা আছে, যারা সচেতনভাবে মানুষের বিবিধ সমস্যা নিরসন করে দুঃখ দূর করার বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্রুতি দেয়। সাধারণত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা এই শ্রেণীভূক্ত। এরা অসচেতনভাবে সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন সমস্যা নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের মাথার উপরে মুলা ঝুলিয়ে দেয়। সাধারণ মানুষের মাথার উপরে তাদের প্রতিশ্রুতির মুলা দিনের পরে দিন ঝুলতেই থাকে। সেই ঝুলন্ত মুলাকে দেখে সাধারণ মানুষ আশায় বুক বাঁধে। তারা ভাবে, এবার সমস্যার সমাধান হবে, দুঃখ দূর হবে। তারা না বুঝে একবুক আশা নিয়ে সেই মুলার পিছনে দৌড়ে বেড়ায়। তাদের শুধু দৌড়ে বেড়ানোই সার। মুলা ঝুলিয়ে রাখা এই রাজনৈতিক নেতারা কাজের বেলায় অধিকাংশই লবডঙ্কা। অবশ্য এর মধ্যে দুই একজন কদাচিৎ ব্যতিক্রমী রয়েছে। যারা ব্যতিক্রমী তারা সর্বদাই ব্যতিক্রমী। কিন্তু অধিকাংশ নেতা নামধারীরা সাধারণ মানুষের মাথার উপরে মুলা ঝুলিয়ে, তাদের হৃদয়ের সরলতা নিয়ে খেলা করে। শ্রীকুশল বরণ চক্রবর্ত্তী সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ। জগতের প্রত্যেকটি বিষয় প্রত্যেকের জন্য আনন্দদায়ক হয় না। কারো অনন্দের বিষয় অন্যদের জন্যে নিরানন্দের কারণ হয়। অনেকদিন খরার পরে যখন বৃষ্টি হয়, সেই বৃষ্টি দেখে ফসলের কথা চিন্তা করে কৃষক অত্যন্ত খুশি হয়ে ভগবানকে কৃতজ্ঞতা জানায়। কিন্তু একজন ধোপা বৃষ্টি দেখলে আতঙ্কিত হয়। তার কেবলই মনে পরে বাইরে সারি সারি কাপড় শুকাতে দেয়া আছে, সেই কাপড়গুলো ভিজে চুপচুপে হয়ে যাবে। ধোপার মত একই ভাবে একজন পালও বৃষ্টি দেখতে আতঙ্কিত হয়। সে ভাবে বাইরে রোদ্দুরে হাড়ি, পাতিল, কলসি সহ মাটির বিভিন্ন প্রতিমা শুকাতে দেয়া আছে। সেই হাড়িপাতিল এবং প্রতিমা যদি বৃষ্টির জলে ভিজে নষ্ট হয়ে যায়, তবে তাঁকে আবার নতুন করে তৈরি করতে হবে। তার এতদিনের শ্রম বিফলে যাবে। তাই কোন বিষয়ে একই সাথে সবাইকে প্রসন্ন করা যায় না। জগতের যে কোন কাজে কেউ যেমন খুশি হবে, তেমনি কেউ রুষ্ট হবে। কিছুকিছু ক্ষেত্রে ভয়ংকর রুষ্ট হবে। এতে কিছু করারো নেই ঘাবড়ানোর কিছুই নেই।  বৃষ্টি নিরাসক্তভাবে বর্ষণ করে পৃথিবীতে জল দান করে পৃথিবীর মাটিকে সজীব করে শষ্যচাষের উপযোগী করে তুলছে। তার এ পৃথিবী এবং পৃথিবীর মানুষের কাছে কিছুই চাওয়া পাওয়া নেই।কিন্তু তার সেই নিরাসক্ত জলদানে কেউ অত্যন্ত খুশি হয়ে তার প্রতি কৃতজ্ঞ হচ্ছে। বিপরীতে কেউ তার উপরে ভয়ংকর ক্ষুদ্ধ হচ্ছে। এতে হয়ত বৃষ্টির কিছুই আসে যায় না। সে শুধু নিরাসক্তভাবে তার নির্দিষ্ট দায়িত্ব কর্তব্য দায়িত্বশীলতার সাথে পালন করে যাচ্ছে। সে জানে সে কারো বন্ধুও নয় এবং শত্রুও নয়। সে তার দায়িত্ব কর্তব্যে অবিচল। এই ভাবটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'কণিকা' কাব্যগ্রন্থের 'দীনের দান' কবিতায় পাওয়া যায়। "মরু কহে, অধমেরে এত দাও জল, ফিরে কিছু দিব হেন কী আছে সম্বল? মেঘ কহে, কিছু নাহি চাই, মরুভূমি, আমারে দানের সুখ দান করো তুমি।"   মহাভারতের উদ্যোগ পর্বে বলা হয়েছে, জগতে সুমিষ্ট মনোহর সর্বদা প্রিয় কথা বলা বহুলোক অনায়াসে পাওয়া যায়। কিন্তু অপ্রিয় হলেও কল্যাণকর হিতকর বাক্য সহযে পাওয়া যায় না।আপাতদৃষ্টিতে তিতা বাক্য হলেও, পরিশেষে তা অত্যন্ত উপকারী; এমন উপদেশ বাক্যের একজন বক্তা এবং শ্রোতা পাওয়া জগতে অত্যন্ত দুষ্কর। সুলভাঃ পুরুষা রাজন্ সততং প্রিয়বাদিনঃ। অপ্রিয়স্য চ পথস্য বক্তা শ্রোতা চ দুর্লভঃ।। (মহাভারত: উদ্যোগ পর্ব, ৩৭.১৫) "রাজা, প্রিয়বাদী বহু লোক অনায়াসে সর্বদাই পাওয়া যায়, কিন্তু অপ্রিয় অথচ হিতবাক্যের একজন বক্তা এবং শ্রোতা পাওয়া দুষ্কর।" যতই মহৎকর্ম হোক, সকল কর্মে; সবাইকে একসঙ্গে সন্তুষ্ট করা যায় না। একসাথে সবাইকে সুখী করা যায় না, আনন্দিত করা যায় না এবং সন্তুষ্ট করা যায় না। অনেকে চেষ্টা করে, কিন্তু পরিণামে ব্যর্থ হয়। এই প্রচেষ্টাকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ সত্যিকারভাবেই সবাইকে খুশি করার সাধ্যমত উদ্যোগ নেয়। উদ্যোগ সম্পূর্ণভাবে সফল না হলেও, তাদের স্বদিচ্ছাটি মহত্তম। তারা মহৎপ্রাণ, তাই তারা ধন্যবাদের যোগ্য। কিন্তু আরেক শ্রেণীর ব্যক্তিরা আছে, যারা সচেতনভাবে মানুষের বিবিধ সমস্যা নিরসন করে দুঃখ দূর করার বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্রুতি দেয়। সাধারণত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা এই শ্রেণীভূক্ত। এরা অসচেতনভাবে সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন সমস্যা নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের মাথার উপরে মুলা ঝুলিয়ে দেয়। সাধারণ মানুষের মাথার উপরে তাদের প্রতিশ্রুতির মুলা দিনের পরে দিন ঝুলতেই থাকে। সেই ঝুলন্ত মুলাকে দেখে সাধারণ মানুষ আশায় বুক বাঁধে। তারা ভাবে, এবার সমস্যার সমাধান হবে, দুঃখ দূর হবে। তারা না বুঝে একবুক আশা নিয়ে সেই মুলার পিছনে দৌড়ে বেড়ায়। তাদের শুধু দৌড়ে বেড়ানোই সার। মুলা ঝুলিয়ে রাখা এই রাজনৈতিক নেতারা কাজের বেলায় অধিকাংশই লবডঙ্কা। অবশ্য এর মধ্যে দুই একজন কদাচিৎ ব্যতিক্রমী রয়েছে। যারা ব্যতিক্রমী তারা সর্বদাই ব্যতিক্রমী। কিন্তু অধিকাংশ নেতা নামধারীরা সাধারণ মানুষের মাথার উপরে মুলা ঝুলিয়ে, তাদের হৃদয়ের সরলতা নিয়ে খেলা করে। শ্রীকুশল বরণ চক্রবর্ত্তী সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
একসাথে সবাইকে সুখী করা যায় না, আনন্দিত করা যায় না এবং সন্তুষ্ট করা যায় না। অনেকে চেষ্টা করে, কিন্তু পরিণামে ব্যর্থ হয়। এই প্রচেষ্টাকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ সত্যিকারভাবেই সবাইকে খুশি করার সাধ্যমত উদ্যোগ নেয়। উদ্যোগ সম্পূর্ণভাবে সফল না হলেও, তাদের স্বদিচ্ছাটি মহত্তম। তারা মহৎপ্রাণ, তাই তারা ধন্যবাদের যোগ্য। কিন্তু আরেক শ্রেণীর ব্যক্তিরা আছে, যারা সচেতনভাবে মানুষের বিবিধ সমস্যা নিরসন করে দুঃখ দূর করার বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্রুতি দেয়। সাধারণত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা এই শ্রেণীভূক্ত। এরা অসচেতনভাবে সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন সমস্যা নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের মাথার উপরে মুলা ঝুলিয়ে দেয়। সাধারণ মানুষের মাথার উপরে তাদের প্রতিশ্রুতির মুলা দিনের পরে দিন ঝুলতেই থাকে। সেই ঝুলন্ত মুলাকে দেখে সাধারণ মানুষ আশায় বুক বাঁধে। তারা ভাবে, এবার সমস্যার সমাধান হবে, দুঃখ দূর হবে। তারা না বুঝে একবুক আশা নিয়ে সেই মুলার পিছনে দৌড়ে বেড়ায়। তাদের শুধু দৌড়ে বেড়ানোই সার। মুলা ঝুলিয়ে রাখা এই রাজনৈতিক নেতারা কাজের বেলায় অধিকাংশই লবডঙ্কা। অবশ্য এর মধ্যে দুই একজন কদাচিৎ ব্যতিক্রমী রয়েছে। যারা ব্যতিক্রমী তারা সর্বদাই ব্যতিক্রমী। কিন্তু অধিকাংশ নেতা নামধারীরা সাধারণ মানুষের মাথার উপরে মুলা ঝুলিয়ে, তাদের হৃদয়ের সরলতা নিয়ে খেলা করে।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁