-->

ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

"মাতৃদেবো ভব"; ৩৬৫ দিনই মা দিবস।

"মাতৃদেবো ভব";  ৩৬৫ দিনই মা দিবস  ইউরোপ-আমেরিকার ভাবধারানুসারী হয়ে একদিনের জন্যে মা দিবস পালন না করে ৩৬৫ দিনই মা দিবস পালন করা উচিৎ।আমরা যে আজ সব কিছু হারিয়ে অন‍্যের সংস্কৃতি , আচার আচরণ নকল করতে অভ‍্যস্থ হয়ে পড়েছি। বিদেশী আচার আচরণ দিনেদিনে আমরা এতটাই অভ‍্যস্থ হয়ে গিয়েছি যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিষয়টি অত্যন্ত দৃষ্টিকটু হয়ে যাচ্ছে। ইউরোপ, আমেরিকার দেখাদেখি নগরায়নের নামে বানিজ্যিক ভাবে চলছে বৃদ্ধাশ্রমের রমরমা বাণিজ্য। বিভিন্ন নামে এবং বিভিন্ন অজুহাতে এ বাণিজ্য  দিনদিনেই বাড়ছে। জন্মদায়িনী মায়ের সম্মান সম্পর্কে সনাতন শাস্ত্রে বলা হয়েছে: উপাধ্যায়ান্ দশাচার্য আচার্যাণাং শতং পিতা। সহস্রং তু পিতৃন্মাতা গৌরবেণাতিরিচ্যতে।। (মনুসংহিতা : ২.১৪৫) "দশজন উপাধ্যায় (যিনি জাগতিক শিক্ষা দেন) থেকে একজন আচার্য (যিনি বিনে পয়সায় বৈদিক জ্ঞান দান করেন) শ্রেষ্ঠ ; একশজন আচার্য থেকে একজন জন্মদাতা পিতা শ্রেষ্ঠ ; এবং জন্মদাত্রী মাতা পিতা থেকেও সহস্র সহস্রগুণে শ্রেষ্ঠ। অর্থাৎ মা একজন উপাধ্যায় যিনি টাকার বিনিময়ে শিক্ষা দেন, সেই বেতনভোগী শিক্ষক থেকে একলক্ষগুণে শ্রেষ্ঠ।" একজন বেতনভোগী শিক্ষক থেকে জন্মদাত্রী মা একলক্ষগুণে শ্রেষ্ঠ। তাই বৈদিক শিক্ষা সমাপনান্তে বৈদিক সমাবর্তন ভাষণে, জন্মদাত্রী মাতা এবং পিতাকে স্বয়ং মূর্তিমান দেবতা বলে অবিহিত করা  হয়েছে : মাতৃদেবো ভব। পিতৃদেবো ভব। (তৈত্তিরীয় উপনিষদ:১.১১.২) ইউরোপীয় মে মাসে খ্রিস্টীয় পবিত্র দ্বিতীয় রবিবারে মা দিবস পালন না করে আমাদের উচিৎ হবে মা সারদাদেবী অথবা তাঁর মত মাতৃরূপা কোন এদেশীয় ভারতবর্ষীয় মহামানবীর জন্মদিনকে মা দিবস বলে পালন করা। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ভালবাসা শুধু মাত্র একদিনের বিষয় নয়; প্রতিদিনের প্রতিক্ষণের বিষয়। বর্তমানের মা দিবসের প্রচলন হয় যুক্তরাষ্ট্রে এবং এ দিবসটির প্রবক্তা হলেন আনা মারিয়া রিভস জার্ভিস ; আনা মারিয়া তার মা একজন মানবতাবাদী সমাজকর্মী অ্যান মারিয়া রিভস জার্ভিস স্মরণে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারে নিজের মতো করে মা দিবস হিসেবে পালন শুরু করে।১৯০৫ সালে মারা যান আনার মা অ্যান। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ১৯০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়ার একটি গির্জায় আনা তার মায়ের স্মরণে অনুষ্ঠান করেন। আনার দীর্ঘ ধারাবাহিক প্রচারে কয়েকবছরের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রদেশে মা দিবস পালিত হতে থাকে।১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে দিনটিকে সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করেন। এ সরকারি ঘোষণায় দ্রুতই দিনটি প্রচণ্ডভাবে জনপ্রিয় হয়ে যায়। পরবর্তীকালে যুক্তরাষ্ট্রের দেখাদেখি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে। আনা ব্যক্তিগতভাবে সফল, কারণ তার নিজের মায়ের স্মরণের দিনটিকে তিনি বৈশ্বিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন। ইউরোপ- আমেরিকায় অনেকেই আছে যারা সারাবছর মায়ের কোন খোঁজখবর নেয় না বা নিতে সময় পায় না। তারাই বছরে একদিন এই মা দিবসে কেক, মিস্টি, ফুল এবং বিভিন্ন রকমের গিফট নিয়ে মায়ের সাথে সময় কাটায়। তাই তাদের জন্যে এই দিনটি পালনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ। যে কারণে একদিনের মা দিবস ইউরোপ এবং  আমেরিকাবাসীদের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ, ওই একই কারণে বাংলাদেশ, ভারতবর্ষের জন্যে এ দিনটি গুরুত্বহীন। আমরা ৩৬৫ দিনই মায়ের কোলে উঠে মায়ের ভালবাসায় আচ্ছন্ন থাকতে চাই। সাধক কবি রামপ্রসাদ সেনের ভাষায় বলতে হয়: "যে দেখেছে মায়ের দোল, সে পেয়েছে মায়ের  কোল, রামপ্রসাদের এই বোল, ঢোল মারা বাণী। " এ দেশের সাধারণ মানুষের সাথে সাথে সর্বস্বত্যাগী সন্ন্যাসীরাও ছিলেন মাতৃভক্তের এক একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। শ্রীপাদ শঙ্করাচার্য থেকে শুরু করে শ্রীচৈতন্যদেব, স্বামী বিবেকানন্দ সবারই জীবনে মাতৃপ্রভাব ছিল অসম্ভব। এ বিষয়ে অনুকূল ঠাকুরের অসাধারণ কয়েকটি বাণী রয়েছে। "মাতৃভক্তি অটুট যত, সেই ছেলে হয় কৃতি তত। পিতায় শ্রদ্ধা, মাতায় টান, সেই ছেলে হয় সাম্যপ্রাণ।" ২০২০ সালের জানুয়ারিতে 'মায়ের একফোঁটা দুধের দাম', শিরোনামে একটি নিউজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচণ্ড আলোচনায় আসে। নিউজটিতে দেখা যায়, একটি মা হনুমান রক্তাক্ত দেহে সন্তানকে স্তন্যদান করছে। সংবাদটি পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক 'এই সময়' (৫.১.২০২০) সহ ভারতের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।ছবিতে দেখা যাচ্ছে রক্তাক্ত এক হনুমানের কোলে তার সন্তান। সেই রক্তাক্ত অবস্থাতেই কোলের সন্তানকে সেই মা হনুমানটি নিজের শরীরের ব্যাথা ভুলে তার বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে।হায়দরাবাদের সঙ্গরেড্ডি জেলার নরসাপুরে এ ঘটনাটি ঘটেছে। ছবিটিতে দেখা যায় হাইওয়ের পাশে বসে আছে একটি মা হনুমান। সম্ভবত সড়ক দুর্ঘটনার কারণেই হনুমানটি ব্যাপক ভাবে আহত হয়েছে। কিন্তু তাতে কি? সে হনুমান হোক আর যাই হোক, সে তো সন্তানের মা। নিজে রক্তাক্ত হয়েও সন্তানকে বুকের বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে। মায়েরা এমনিই হয়। নিজের সহস্র দুঃখ কষ্টেও, ভ্রুক্ষেপ থাকে না তাদের। পক্ষান্তরে সন্তানের প্রতি কর্তব্যে তারা অবিচল। তাই জন্মদাত্রী মায়ের গৌরব প্রসঙ্গে মহাভারতের শান্তিপর্বে বলা হয়েছে: নাস্তি মাতৃসমাচ্ছায়া নাস্তি মাতৃসমা গতিঃ।  নাস্তি মাতৃসমং ত্রাণং নাস্তি মাতৃসমা প্রিয়া।। (মহাভারত:শান্তিপর্ব, ২০৬,৩১) "জন্মদাত্রী মায়ের তুল্য আশ্রয় নাই, মায়ের তুল্য পথ আর নেই, মায়ের ন্যায় রক্ষক আর নেই এবং মায়ের তুল্য প্রিয় জগতে আর কেউ নেই।" সন্তানের কাছে মায়েদের তুল্য আপন আর কেউ নেই। জগতের সকল মায়েরাই চায় শুধু সন্তান যেন মঙ্গলময় সুরক্ষিত থাকে। সন্তানের প্রতি ভালোবাসা এবং আত্মত্যাগে ভারতবর্ষের মায়েরা জগতে দৃষ্টান্ত। শুধু সন্তানের ভবিষ্যৎ এবং মঙ্গলের কথা চিন্তা করে কত যে শতসহস্র মায়েদের জীবন ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যাচ্ছে, এর সংখ্যা অগুনিত। এর সঠিক পরিসংখ্যান কখনই জানা সম্ভব নয়। ফেসবুক সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি নির্ভীকচিত্তের মাতৃ হরিণের ছবি দেখা যায়। মা হরিণটি দাঁড়িয়ে আছে এবং দুটি চিতাবাঘ তাকে আক্রমণ করছে। মা হরিণটির চোখেমুখে কোন মৃত্যু ভয় নেই, বরং একটি প্রশান্তি। শুনেছি যে ফটোগ্রাফার ছবিটি তুলেছেন তিনি এই ছবিটির জন্য আন্তর্জাতিক  পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু ঘটনাটি যেহেতু তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন, তাই ফটোগ্রাফার ছবিটি তোলার পরে অবসাদগ্রস্ত হয়ে যায়। ঘটনার আকস্মিকতা এবং মায়ের আত্মত্যাগ তাকে বাকরুদ্ধ করে দেয়। চিতা বাঘগুলো মা হরিণ এবং তার দুই বাচ্চাকে ধাওয়া করে পিছু নেয়। কিন্তু সন্তানদের রক্ষার্থে মা হরিণটি স্বেচ্ছায় চিতা বাঘগুলোর কাছে নিজেকে ধরা দেয়। অথচ সে সহযেই দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু মা হরিণটি পালিয়ে না গিয়ে সন্তানদের রক্ষার্থে  উল্টো নিজেকেই মৃত্যুমুখে সমর্পণ করে। যেন তার বাচ্চা দুটো পালিয়ে যেতে পারে। জগতে পশু হোক আর মানুষ, মাতৃত্বের বন্ধন বড় কঠিন বন্ধন। তাই মায়ের ঋণ কখনোই পরিশোধ হয় না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর সুবিখ্যাত  'দুই বোন' উপন্যাসের শর্মিলাতে মা প্রসঙ্গে বলেছেন:  "ঋতুর সঙ্গে তুলনা করা যায় যদি, মা হলেন বর্ষাঋতু। জলদান করেন, ফলদান করেন, নিবারণ করেন তাপ, ঊর্ধ্বলোক থেকে আপনাকে দেন বিগলিত করে, দূর করেন শুষ্কতা, ভরিয়ে দেন অভাব।" শ্রীকুশল বরণ চক্রবর্ত্তী সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
ইউরোপ-আমেরিকার ভাবধারানুসারী হয়ে একদিনের জন্যে মা দিবস পালন না করে ৩৬৫ দিনই মা দিবস পালন করা উচিৎ।আমরা যে আজ সব কিছু হারিয়ে অন্যের সংস্কৃতি , আচার আচরণ নকল করতে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছি। বিদেশী আচার আচরণ দিনেদিনে আমরা এতটাই অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছি যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিষয়টি অত্যন্ত দৃষ্টিকটু হয়ে যাচ্ছে। ইউরোপ, আমেরিকার দেখাদেখি নগরায়নের নামে বানিজ্যিক ভাবে চলছে বৃদ্ধাশ্রমের রমরমা বাণিজ্য। বিভিন্ন নামে এবং বিভিন্ন অজুহাতে এ বাণিজ্য দিনদিনেই বাড়ছে। জন্মদায়িনী মায়ের সম্মান সম্পর্কে সনাতন শাস্ত্রে বলা হয়েছে:
উপাধ্যায়ান্ দশাচার্য আচার্যাণাং শতং পিতা।
সহস্রং তু পিতৃন্মাতা গৌরবেণাতিরিচ্যতে।।
(মনুসংহিতা : ২.১৪৫)
"দশজন উপাধ্যায় (যিনি জাগতিক শিক্ষা দেন) থেকে একজন আচার্য (যিনি বিনে পয়সায় বৈদিক জ্ঞান দান করেন) শ্রেষ্ঠ ; একশজন আচার্য থেকে একজন জন্মদাতা পিতা শ্রেষ্ঠ ; এবং জন্মদাত্রী মাতা পিতা থেকেও সহস্র সহস্রগুণে শ্রেষ্ঠ। অর্থাৎ মা একজন উপাধ্যায় যিনি টাকার বিনিময়ে শিক্ষা দেন, সেই বেতনভোগী শিক্ষক থেকে একলক্ষগুণে শ্রেষ্ঠ।"
একজন বেতনভোগী শিক্ষক থেকে জন্মদাত্রী মা একলক্ষগুণে শ্রেষ্ঠ। তাই বৈদিক শিক্ষা সমাপনান্তে বৈদিক সমাবর্তন ভাষণে, জন্মদাত্রী মাতা এবং পিতাকে স্বয়ং মূর্তিমান দেবতা বলে অবিহিত করা হয়েছে :
মাতৃদেবো ভব। পিতৃদেবো ভব।
(তৈত্তিরীয় উপনিষদ:১.১১.২)
ইউরোপীয় মে মাসে খ্রিস্টীয় পবিত্র দ্বিতীয় রবিবারে মা দিবস পালন না করে আমাদের উচিৎ হবে মা সারদাদেবী অথবা তাঁর মত মাতৃরূপা কোন এদেশীয় ভারতবর্ষীয় মহামানবীর জন্মদিনকে মা দিবস বলে পালন করা। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ভালবাসা শুধু মাত্র একদিনের বিষয় নয়; প্রতিদিনের প্রতিক্ষণের বিষয়।
বর্তমানের মা দিবসের প্রচলন হয় যুক্তরাষ্ট্রে এবং এ দিবসটির প্রবক্তা হলেন আনা মারিয়া রিভস জার্ভিস ; আনা মারিয়া তার মা একজন মানবতাবাদী সমাজকর্মী অ্যান মারিয়া রিভস জার্ভিস স্মরণে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারে নিজের মতো করে মা দিবস হিসেবে পালন শুরু করে।১৯০৫ সালে মারা যান আনার মা অ্যান। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ১৯০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়ার একটি গির্জায় আনা তার মায়ের স্মরণে অনুষ্ঠান করেন। আনার দীর্ঘ ধারাবাহিক প্রচারে কয়েকবছরের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রদেশে মা দিবস পালিত হতে থাকে।১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে দিনটিকে সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করেন। এ সরকারি ঘোষণায় দ্রুতই দিনটি প্রচণ্ডভাবে জনপ্রিয় হয়ে যায়। পরবর্তীকালে যুক্তরাষ্ট্রের দেখাদেখি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে। আনা ব্যক্তিগতভাবে সফল, কারণ তার নিজের মায়ের স্মরণের দিনটিকে তিনি বৈশ্বিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন।
ইউরোপ- আমেরিকায় অনেকেই আছে যারা সারাবছর মায়ের কোন খোঁজখবর নেয় না বা নিতে সময় পায় না। তারাই বছরে একদিন এই মা দিবসে কেক, মিস্টি, ফুল এবং বিভিন্ন রকমের গিফট নিয়ে মায়ের সাথে সময় কাটায়। তাই তাদের জন্যে এই দিনটি পালনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ। যে কারণে একদিনের মা দিবস ইউরোপ এবং আমেরিকাবাসীদের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ, ওই একই কারণে বাংলাদেশ, ভারতবর্ষের জন্যে এ দিনটি গুরুত্বহীন। আমরা ৩৬৫ দিনই মায়ের কোলে উঠে মায়ের ভালবাসায় আচ্ছন্ন থাকতে চাই। সাধক কবি রামপ্রসাদ সেনের ভাষায় বলতে হয়:
"যে দেখেছে মায়ের দোল, সে পেয়েছে মায়ের
কোল, রামপ্রসাদের এই বোল, ঢোল মারা বাণী। "
এ দেশের সাধারণ মানুষের সাথে সাথে সর্বস্বত্যাগী সন্ন্যাসীরাও ছিলেন মাতৃভক্তের এক একটি জ্বলন্ত উদাহরণ। শ্রীপাদ শঙ্করাচার্য থেকে শুরু করে শ্রীচৈতন্যদেব, স্বামী বিবেকানন্দ সবারই জীবনে মাতৃপ্রভাব ছিল অসম্ভব। এ বিষয়ে অনুকূল ঠাকুরের অসাধারণ কয়েকটি বাণী রয়েছে।
"মাতৃভক্তি অটুট যত, সেই ছেলে হয় কৃতি তত।
পিতায় শ্রদ্ধা, মাতায় টান, সেই ছেলে হয় সাম্যপ্রাণ।"
২০২০ সালের জানুয়ারিতে 'মায়ের একফোঁটা দুধের দাম', শিরোনামে একটি নিউজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচণ্ড আলোচনায় আসে। নিউজটিতে দেখা যায়, একটি মা হনুমান রক্তাক্ত দেহে সন্তানকে স্তন্যদান করছে। সংবাদটি পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক 'এই সময়' (৫.১.২০২০) সহ ভারতের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।ছবিতে দেখা যাচ্ছে রক্তাক্ত এক হনুমানের কোলে তার সন্তান। সেই রক্তাক্ত অবস্থাতেই কোলের সন্তানকে সেই মা হনুমানটি নিজের শরীরের ব্যাথা ভুলে তার বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে।হায়দরাবাদের সঙ্গরেড্ডি জেলার নরসাপুরে এ ঘটনাটি ঘটেছে। ছবিটিতে দেখা যায় হাইওয়ের পাশে বসে আছে একটি মা হনুমান। সম্ভবত সড়ক দুর্ঘটনার কারণেই হনুমানটি ব্যাপক ভাবে আহত হয়েছে। কিন্তু তাতে কি? সে হনুমান হোক আর যাই হোক, সে তো সন্তানের মা। নিজে রক্তাক্ত হয়েও সন্তানকে বুকের বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে। মায়েরা এমনিই হয়। নিজের সহস্র দুঃখ কষ্টেও, ভ্রুক্ষেপ থাকে না তাদের। পক্ষান্তরে সন্তানের প্রতি কর্তব্যে তারা অবিচল। তাই জন্মদাত্রী মায়ের গৌরব প্রসঙ্গে মহাভারতের শান্তিপর্বে বলা হয়েছে:
নাস্তি মাতৃসমাচ্ছায়া নাস্তি মাতৃসমা গতিঃ।
নাস্তি মাতৃসমং ত্রাণং নাস্তি মাতৃসমা প্রিয়া।।
(মহাভারত:শান্তিপর্ব, ২০৬,৩১)
"জন্মদাত্রী মায়ের তুল্য আশ্রয় নাই, মায়ের তুল্য পথ আর নেই, মায়ের ন্যায় রক্ষক আর নেই এবং মায়ের তুল্য প্রিয় জগতে আর কেউ নেই।"
সন্তানের কাছে মায়েদের তুল্য আপন আর কেউ নেই। জগতের সকল মায়েরাই চায় শুধু সন্তান যেন মঙ্গলময় সুরক্ষিত থাকে। সন্তানের প্রতি ভালোবাসা এবং আত্মত্যাগে ভারতবর্ষের মায়েরা জগতে দৃষ্টান্ত। শুধু সন্তানের ভবিষ্যৎ এবং মঙ্গলের কথা চিন্তা করে কত যে শতসহস্র মায়েদের জীবন ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যাচ্ছে, এর সংখ্যা অগুনিত। এর সঠিক পরিসংখ্যান কখনই জানা সম্ভব নয়। ফেসবুক সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি নির্ভীকচিত্তের মাতৃ হরিণের ছবি দেখা যায়। মা হরিণটি দাঁড়িয়ে আছে এবং দুটি চিতাবাঘ তাকে আক্রমণ করছে। মা হরিণটির চোখেমুখে কোন মৃত্যু ভয় নেই, বরং একটি প্রশান্তি। শুনেছি যে ফটোগ্রাফার ছবিটি তুলেছেন তিনি এই ছবিটির জন্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। কিন্তু ঘটনাটি যেহেতু তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন, তাই ফটোগ্রাফার ছবিটি তোলার পরে অবসাদগ্রস্ত হয়ে যায়। ঘটনার আকস্মিকতা এবং মায়ের আত্মত্যাগ তাকে বাকরুদ্ধ করে দেয়। চিতা বাঘগুলো মা হরিণ এবং তার দুই বাচ্চাকে ধাওয়া করে পিছু নেয়। কিন্তু সন্তানদের রক্ষার্থে মা হরিণটি স্বেচ্ছায় চিতা বাঘগুলোর কাছে নিজেকে ধরা দেয়। অথচ সে সহযেই দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু মা হরিণটি পালিয়ে না গিয়ে সন্তানদের রক্ষার্থে উল্টো নিজেকেই মৃত্যুমুখে সমর্পণ করে। যেন তার বাচ্চা দুটো পালিয়ে যেতে পারে। জগতে পশু হোক আর মানুষ, মাতৃত্বের বন্ধন বড় কঠিন বন্ধন। তাই মায়ের ঋণ কখনোই পরিশোধ হয় না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর সুবিখ্যাত
'দুই বোন' উপন্যাসের শর্মিলাতে মা প্রসঙ্গে বলেছেন:
"ঋতুর সঙ্গে তুলনা করা যায় যদি, মা হলেন বর্ষাঋতু। জলদান করেন, ফলদান করেন, নিবারণ করেন তাপ, ঊর্ধ্বলোক থেকে আপনাকে দেন বিগলিত করে, দূর করেন শুষ্কতা, ভরিয়ে দেন অভাব।"
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁