মা সরস্বতী |
#কবিগুরু_রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের #সোনার_তরী কাব্যগ্রন্থের "#পুরষ্কার " নামক এক অমর কবিতায় কবিগুরু যে প্রচণ্ড আবেগঘনভাবে অনন্যসাধারণ সরস্বতী বন্দনা করেছেন, তা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। বৃহৎ এই কবিতাটিতে শুধুমাত্র সরস্বতী বন্দনাটুকু সবার উদ্দেশ্যে শেয়ার দিলাম। কবিতায় কবি চরিত্রটি যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই তা পাঠকমাত্রই আশাকরি উপলব্ধি করতে পারবেন।কবিতাটির প্রতিটি ছত্রে বিদ্যা-কলার অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর প্রতি কবির অসীম শ্রদ্ধা প্রকাশ পেয়েছে।
ভাল লাগলে কবিতাটি সঞ্চয়িতা থেকে সম্পূর্ণ পড়ে নেবেন। এরপরেও অনেকে হয়তো বলবেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিমা পূজার বিরোধী ছিলেন, যা সত্যি হাস্যকর।
চলি গেল যবে সভ্যসুজনমুখোমুখি করি বসিলা দুজন;রাজা বলে, 'এবে কাব্যকূজনআরম্ভ করো কবি।'কবি তবে দুই কর জুড়ি বুকেবাণীবন্দনা করে নত মুখে,'প্রকাশো জননী নয়নসমুখেপ্রসন্ন মুখছবি।বিমল মানসসরস-বাসিনীশুক্লবসনা শুভ্রহাসিনীবীণাগঞ্জিতমঞ্জুভাষিণীকমলকুঞ্জাসনা,তোমারে হৃদয়ে করিয়া আসীনসুখে গৃহকোণে ধনমানহীনখ্যাপার মতন আছি চিরদিনউদাসীন আনমনা।চারি দিকে সবে বাঁটিয়া দুনিয়াআপন অংশ নিতেছে গুনিয়া,আমি তব স্নেহবচন শুনিয়াপেয়েছি স্বরগসুধা।সেই মোর ভালো, সেই বহু মানি,তবু মাঝে মাঝে কেঁদে ওঠে প্রাণী---সুরের খাদ্যে জানো তো মা, বাণী,নরের মিটে না ক্ষুধা।যা হবার হবে সে কথা ভাবি না,মা গো, একবার ঝংকারো বীণা,ধরহ রাগিণী বিশ্বপ্লাবিনীঅমৃত-উত্স-ধারা।যে রাগিণী শুনি নিশিদিনমানবিপুল হর্ষে দ্রব ভগবানমলিনমর্ত-মাঝে বহমাননিয়ত আত্মহারা।যে রাগিণী সদা গগন ছাপিয়াহোমশিখাসম উঠিছে কাঁপিয়া,অনাদি অসীমে পড়িছে ঝাঁপিয়াবিশ্বতন্ত্রী হতে।যে রাগিণী চিরজন্ম ধরিয়াচিত্তকুহরে উঠে কুহরিয়া---অশ্রুহাসিতে জীবন ভরিয়াছুটে সহস্র স্রোতে।কে আছে কোথায়, কে আসে কে যায়,নিমেষে প্রকাশে, নিমেষে মিলায়---বালুকার'পরে কালের বেলায়ছায়া-আলোকের খেলা।জগতের যত রাজা মহারাজকাল ছিল যারা কোথা তারা আজ,সকালে ফুটিছে সুখদুখলাজ---টুটিছে সন্ধ্যাবেলা।শুধু তার মাঝে ধ্বনিতেছে সুরবিপুল বৃহত্ গভীর মধুর,চিরদিন তাহে আছে ভরপুরমগন গগনতল।যে জন শুনেছে সে অনাদি ধ্বনিভাসায়ে দিয়েছে হৃদয়তরণী---জানে না আপনা, জানে না ধরণী,সংসারকোলাহল।সে জন পাগল, পরান বিকল---ভবকূল হতে ছিঁড়িয়া শিকলকেমনে এসেছে ছাড়িয়া সকল,ঠেকেছে চরণে তব।তোমার অমল কমলগন্ধহৃদয়ে ঢালিছে মহা-আনন্দ---অপূর্ব গীত, আলোক ছন্দশুনিছ নিত্য নব।বাজুক সে বীণা, মজুক ধরণী---বারেকের তরে ভুলাও, জননী,কে বড়ো কে ছোটো, কে দীন কে ধনী,কেবা আগে কেবা পিছে---কার জয় হল কার পরাজয়,কাহার বৃদ্ধি কার হল ক্ষয়,কেবা ভালো আর কেবা ভালো নয়,কে উপরে কেবা নীচে।গাঁথা হয়ে যাক এক গীতরবেছোটো জগতের ছোটোবড়ো সবে,সুখে প'ড়ে রবে পদপল্লবেযেন মালা একখানি।তুমি মানসের মাঝখানে আসিদাঁড়াও মধুর মুরতি বিকাশি,কুন্দবরণ-সুন্দর-হাসিবীণা হাতে বীণাপাণি।ভাসিয়া চলিবে রবি শশী তারাসারি সারি যত মানবের ধারাঅনাদিকালের পান্থ যাহারাতব সংগীতস্রোতে।দেখিতে পাইব ব্যোমে মহাকালছন্দে ছন্দে বাজাইছে তাল,দশ দিক্বধূ খুলি কেশজালনাচে দশ দিক হতে।'
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।