-->

ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিমা পূজার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন

মা সরস্বতী
#কবিগুরু_রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের #সোনার_তরী কাব্যগ্রন্থের "#পুরষ্কার " নামক এক অমর কবিতায় কবিগুরু যে প্রচণ্ড আবেগঘনভাবে অনন্যসাধারণ সরস্বতী বন্দনা করেছেন, তা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। বৃহৎ এই কবিতাটিতে শুধুমাত্র সরস্বতী বন্দনাটুকু সবার উদ্দেশ্যে শেয়ার দিলাম। কবিতায় কবি চরিত্রটি যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই তা পাঠকমাত্রই আশাকরি উপলব্ধি করতে পারবেন।কবিতাটির প্রতিটি ছত্রে বিদ্যা-কলার অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর প্রতি কবির অসীম শ্রদ্ধা প্রকাশ পেয়েছে।
ভাল লাগলে কবিতাটি সঞ্চয়িতা থেকে সম্পূর্ণ পড়ে নেবেন। এরপরেও অনেকে হয়তো বলবেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিমা পূজার বিরোধী ছিলেন, যা সত্যি হাস্যকর।

চলি গেল যবে সভ্যসুজন
মুখোমুখি করি বসিলা দুজন;
রাজা বলে, 'এবে কাব্যকূজন
আরম্ভ করো কবি।'
কবি তবে দুই কর জুড়ি বুকে
বাণীবন্দনা করে নত মুখে,
'প্রকাশো জননী নয়নসমুখে
প্রসন্ন মুখছবি।
বিমল মানসসরস-বাসিনী
শুক্লবসনা শুভ্রহাসিনী
বীণাগঞ্জিতমঞ্জুভাষিণী
কমলকুঞ্জাসনা,
তোমারে হৃদয়ে করিয়া আসীন
সুখে গৃহকোণে ধনমানহীন
খ্যাপার মতন আছি চিরদিন
উদাসীন আনমনা।
চারি দিকে সবে বাঁটিয়া দুনিয়া
আপন অংশ নিতেছে গুনিয়া,
আমি তব স্নেহবচন শুনিয়া
পেয়েছি স্বরগসুধা।
সেই মোর ভালো, সেই বহু মানি,
তবু মাঝে মাঝে কেঁদে ওঠে প্রাণী---
সুরের খাদ্যে জানো তো মা, বাণী,
নরের মিটে না ক্ষুধা।
যা হবার হবে সে কথা ভাবি না,
মা গো, একবার ঝংকারো বীণা,
ধরহ রাগিণী বিশ্বপ্লাবিনী
অমৃত-উত্‌স-ধারা।
যে রাগিণী শুনি নিশিদিনমান
বিপুল হর্ষে দ্রব ভগবান
মলিনমর্ত-মাঝে বহমান
নিয়ত আত্মহারা।
যে রাগিণী সদা গগন ছাপিয়া
হোমশিখাসম উঠিছে কাঁপিয়া,
অনাদি অসীমে পড়িছে ঝাঁপিয়া
বিশ্বতন্ত্রী হতে।
যে রাগিণী চিরজন্ম ধরিয়া
চিত্তকুহরে উঠে কুহরিয়া---
অশ্রুহাসিতে জীবন ভরিয়া
ছুটে সহস্র স্রোতে।
কে আছে কোথায়, কে আসে কে যায়,
নিমেষে প্রকাশে, নিমেষে মিলায়---
বালুকার'পরে কালের বেলায়
ছায়া-আলোকের খেলা।
জগতের যত রাজা মহারাজ
কাল ছিল যারা কোথা তারা আজ,
সকালে ফুটিছে সুখদুখলাজ---
টুটিছে সন্ধ্যাবেলা।
শুধু তার মাঝে ধ্বনিতেছে সুর
বিপুল বৃহত্‌ গভীর মধুর,
চিরদিন তাহে আছে ভরপুর
মগন গগনতল।
যে জন শুনেছে সে অনাদি ধ্বনি
ভাসায়ে দিয়েছে হৃদয়তরণী---
জানে না আপনা, জানে না ধরণী,
সংসারকোলাহল।
সে জন পাগল, পরান বিকল---
ভবকূল হতে ছিঁড়িয়া শিকল
কেমনে এসেছে ছাড়িয়া সকল,
ঠেকেছে চরণে তব।
তোমার অমল কমলগন্ধ
হৃদয়ে ঢালিছে মহা-আনন্দ---
অপূর্ব গীত, আলোক ছন্দ
শুনিছ নিত্য নব।
বাজুক সে বীণা, মজুক ধরণী---
বারেকের তরে ভুলাও, জননী,
কে বড়ো কে ছোটো, কে দীন কে ধনী,
কেবা আগে কেবা পিছে---
কার জয় হল কার পরাজয়,
কাহার বৃদ্ধি কার হল ক্ষয়,
কেবা ভালো আর কেবা ভালো নয়,
কে উপরে কেবা নীচে।
গাঁথা হয়ে যাক এক গীতরবে
ছোটো জগতের ছোটোবড়ো সবে,
সুখে প'ড়ে রবে পদপল্লবে
যেন মালা একখানি।
তুমি মানসের মাঝখানে আসি
দাঁড়াও মধুর মুরতি বিকাশি,
কুন্দবরণ-সুন্দর-হাসি
বীণা হাতে বীণাপাণি।
ভাসিয়া চলিবে রবি শশী তারা
সারি সারি যত মানবের ধারা
অনাদিকালের পান্থ যাহারা
তব সংগীতস্রোতে।
দেখিতে পাইব ব্যোমে মহাকাল
ছন্দে ছন্দে বাজাইছে তাল,
দশ দিক্‌বধূ খুলি কেশজাল
নাচে দশ দিক হতে।'


সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ। 
মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁