-->

ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

বৈরাগ্যসাধনে মুক্তি, সে আমার নয়।

আমাদের চারটি আশ্রমের মধ্যে, গৃহস্থ আশ্রম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ আশ্রম থেকেই বংশবৃদ্ধি হয়ে মানব প্রবাহের রক্ষা হয়, ধর্মরক্ষা হয়। বিভিন্ন সদাচারগুলি এ আশ্রমেই সর্বাধিক চর্চিত হয়ে, আদর্শিক মানুষ তৈরিতে সহায়তা করে। সনাতন চার প্রকার আশ্রমের মধ্যে ব্রহ্মচারী, বানপ্রস্থ এবং সন্ন্যাস অন্য তিনপ্রকার আশ্রমই এ গার্হস্থ্য আশ্রম থেকেই পরিপোষিত হয়। কথাটি মনুসংহিতাতেও সুস্পষ্টভাবে আছে।

বৈরাগ্যসাধনে মুক্তি, সে আমার নয়।

 

ব্রহ্মচারী গৃহস্থশ্চ বানপ্রস্থো যতিস্তথা।
এতে গৃহস্থপ্রভবাশ্চত্বারঃ পৃথগাশ্রমাঃ।।
সর্বেষামপি চৈতেষাং বেদস্মৃতিবিধানতঃ।
গৃহস্থ উচ্যতে শ্রেষ্ঠঃ স ত্রীনেতান্ বিভর্তি হি।।
যথা নদীনদাঃ সর্বে সাগরে যান্তি সংস্থিতিম্।
তথৈবাশ্রমিণঃ সর্বে গৃহস্থে যান্তি সংস্থিতিম্।।
(মনুসংহিতা : ৬.৮৭,৮৯-৯০)
"ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য , বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস-এ চারটি স্বতন্ত্র আশ্রম গার্হস্থ্য আশ্রম থেকে উদ্ভূত। বেদ ও স্মৃতির বিধান অনুসারে চতুরাশ্রমের মধ্যে গার্হস্থ্য আশ্রমকে শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে।কারণ অন্য তিন আশ্রমকে সে পরিপোষণ করে। সকল নদনদী যেমন সমুদ্রে স্থিতিলাভ করে, তেমনই অন্য সকল আশ্রমই গৃহস্থে সংস্থিতি প্রাপ্ত হয়।"
মানবজীবনে পরমায়ুকে শতবছর ধরে এর প্রথম পঁচিশবছর শিক্ষা সময়কে বলে ব্রহ্মচর্যকাল, সে সময়ে ব্রহ্মচারী হয়ে পরা-অপরাবিদ্যা শিক্ষা লাভ করতে হয়। পঁচিশবছর পরবর্তীতে পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত হল, জীবনের দ্বিতীয় পাদ গার্হস্থ্য আশ্রম।এ সময়ে বিবাহ করে গৃহী হয়ে সংসার ধর্ম পালন করতে হয়। চতুরাশ্রমের মধ্যে তৃতীয় পাদ, পঞ্চাশবছর থেকে পঁচাত্তর বছর হল বানপ্রস্থ আশ্রম, এ সময়কালে সন্তানের উপরে দায়িত্ব অর্পণ করে অর্ধেক সংসার এবং অর্ধেক মুক্তির পথে অগ্রসর হতে হয়। পঁচাত্তর থেকে সন্ন্যাস নিতে হয়, তখন ঈশ্বরই জীবের একমাত্র গতি হয়। আমাদের শাস্ত্রে পঁচাত্তর বছর পরবর্তীতে সন্ন্যাস নিতে বলা হয়েছে। মহাভারত পুরাণে আমরা গুটি কয়েক ব্যতিক্রম ছাড়া বয়স অনুসারে চতুরাশ্রম ব্যবস্থাই পালিত হতে দেখি। তবে শুকদেব গোস্বামী, সনক, সনন্দ, সনাতন, সনৎকুমার সহ আরও কয়েকজন দৈবীশক্তি সম্পন্ন মহাপুরুষ ছিলেন ব্যতিক্রম। তাঁদের অনেকেই ছিলেন আজন্ম ব্রহ্মচর্য রক্ষাকারী সন্ন্যাসী। ঐতিহাসিক বাস্তবতায় দেখতে গেলে দেখা যায়,অল্প বয়সে সন্ন্যাস বিষয়টি ভারতবর্ষে প্রধানত প্রায় ছাব্বিশশত বছর পূর্বে গৌতমবুদ্ধ এবং মহাবীর বর্দ্ধমান জনপ্রিয় করেন। তাঁরা দুজনেই ছিলেন সমসাময়িক। এদের পরবর্তীতে এ বিষয়টি সনাতন ধর্মেও জনপ্রিয় হয়।
সনাতন চতুরাশ্রম ব্যবস্থায় আমাদের বয়স নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে, যে কখন মানুষকে সন্ন্যাসী হতে হবে। কারণ, মানুষের দেহের একটি জৈবিক ধর্ম আছে। এ কারণেই দেখা যায়, কেউ অল্প বয়সে সন্ন্যাস নিলেও, তার দেহ সন্নাসের জন্যে প্রস্তুত না হওয়ায়; বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অবতারণা ঘটে। ইদানীং দেখা যায় একেবারে ছোট ছোট শিশুদের সন্ন্যাস দিয়ে দেয়া হয়। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে এর প্রবনতা বেশী দেখা যায়। শিশুটি হয়ত জানেই না, সন্ন্যাস কি সন্ন্যাসী কি; অথচ সে একজন সন্ন্যাসী! পরিবার সমাজ শিশুটির বুদ্ধির পরিপক্কতা আসার আগেই, তার উপরে সন্ন্যাস চাপিয়ে দিয়ে তার রঙিন শিশুকালটি হরণ করে নিয়েছে। একটু বয়স হওয়ার পরে এদের অনেকেই দেখা যায় তাদের গৈরিকবস্ত্র পরিত্যাগ করে; শিশুকাল থেকে আচরিত ব্রহ্মচর্য এবং সন্ন্যাস ব্রত পরিত্যাগ করে। পরবর্তীতে তদের অনেককেই দেখা যায়, ধর্মাচারণের বিরোধী আচরণ করতে। খাবার যদি সম্পূর্ণ জীর্ণ হয়ে পরিপাক না হয়, তবে তা দেহের জন্যে ক্ষতিকর হয়। জীবনে সকলের জন্যে এক খাবার নয়; একজন শিশুর খাবার, একজন প্রাপ্তবয়স্কের খাবার এবং একজন বৃদ্ধর খাবার এক নয়। এ কারণেই শাস্ত্র বলছে, শুধু খাবার নয়, জীবনের এমন প্রত্যেকটি বিষয়েই স্থান, কাল, পাত্র ভেদে অধিকারী আছে।
সন্ন্যাস একটি পবিত্র বিধি। তাই সন্ন্যাসীকে ত্যাগের বৈরাগ্যের গৈরিকবস্ত্র পরিধান করতে দেয়া হয়। শিশুকালে দেয়া সন্ন্যাসে তার ইচ্ছা অনিচ্ছা থাকে না; শুধু পরিবারের ইচ্ছা অনিচ্ছা থাকে। আমাদের শাস্ত্রে পঁচাত্তর বছরের পরবর্তিতে সন্ন্যাস নিতে বলা হয়েছে। অবশ্য এরপরেও কেউ অল্প বয়সে সন্ন্যাস নিতে পারে, যদি তিনি অধিকারী হন বা তাঁর পূর্ব পূর্ব জন্মের সুকৃতি থাকে।শ্রীশঙ্করাচার্য জীবনের প্রথমপাদে শিশুকালেই সন্ন্যাস নিয়েছিলেন এবং শ্রীচৈতন্যদেব জীবনের দ্বিতীয় পাদের শুরুতে চব্বিশ বছর বয়সে সন্ন্যাস নিয়েছিলেন।
অল্প বয়সে সন্ন্যাসের পক্ষে অনেকে যুক্তি দিয়ে বলে, "আমাদের জীবনের এক সেকেন্ডের নিশ্চয়তা নেই; আমি কাল সকালে ঘুম থেকে উঠতেও পারি আবার নাও পারি। হয়ত আজ রাত্রের ঘুমই আমার শেষ ঘুম হতে পারে।" এ কথা বলে তারা অল্প বয়সে সন্ন্যাসের পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি দেয়। তাদের কথাগুলো যৌক্তিক। কিন্তু আমাদের যতটা সম্ভব শাস্ত্রের বিভিন্ন স্থানে বর্ণিত চতুরাশ্রম ব্যবস্থাকেই অনুসরণ করা উচিত। মানুষের জীবনের এক সেকেন্ডের নিশ্চয়তা নেই, একথা যেমন সত্য। তেমনি আমাদের মনে রাখতে হবে, একজন ডাক্তার যখন মানুষের দেহের সাধারণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করে, বিভিন্ন তথ্য দেয়; তখন একজন সুস্থ মানুষকে স্টান্ডার্ড ধরে তারা আলোচনা করে, কোন রোগগ্রস্ত ব্যক্তিদের স্টান্ডার্ড ধরা হয় না। ঠিক তেমনি বেদে জীবনকে জয় করে শতবছর বাঁচতে বলা হয়েছে। এ শতবছর ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য , বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস নামে পঁচিশ বছর করে চারটি পাদে বিভক্ত করা হয়েছে। এর প্রত্যেকটি পাদই গুরুত্বপূর্ণ। উপরে উঠতে হলে সিড়ির প্রত্যেকটি ধাপকেই মাড়িয়ে যেতে হয়। কোন ধাপ বাদ দিতে গেলে হঠাৎ অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। জীবনেও ঠিক তেমনি এক এক করে চতুরাশ্রম ধাপ পর্যায়ক্রমে আমৃত্যু অতিক্রম করতে হয়।
মনুসংহিতায় বলা হয়েছে, বেদ ও স্মৃতি অনুসারে চতুরাশ্রমের মধ্যে গার্হস্থ্য আশ্রমই শ্রেষ্ঠ। কারণ সে অন্য তিন আশ্রমকে পরিপোষণ করে।সকল নদনদী যেমন সমুদ্রে স্থিতিলাভ করে, তেমনি সকল আশ্রমী গৃহস্থেই স্থিতিলাভ করে। অর্থাৎ গার্হস্থ্য আশ্রমকে শ্রেষ্ঠ আশ্রম বলা হয়েছে। এ গার্হস্থ্য আশ্রমে থেকে আমাদের অনেক সাধুসন্তরাই মুক্তিলাভ করেছেন। ঈশ্বর দর্শন করেছেন। এর অসংখ্য উদাহরণ আমাদের শাস্ত্রগ্রন্থ এবং ইতিহাসে আছে।পুরাণে রাজা জনকের নাম আমরা সকলেই জানি, তিনি রাজা হয়েও ঋষিতুল্য হয়েছিলেন, তাই তাঁকে রাজর্ষি বলে আজও সম্মানিত করা হয়।মহাভারতের বনপর্বের মাংসবিক্রেতা ধর্মব্যাধও একটি অতুলনীয় দৃষ্টান্ত, তিনি পেশাতে কসাই হয়েও মুক্তপুরুষ হয়ে কৌশিক মুনিকে মুক্তির জ্ঞান দিয়েছিলেন। মধ্যযুগে মীরা বাই, রামপ্রসাদ সেন; আধুনিক যুগের শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, হরিচাঁদ ঠাকুর, মা আনন্দময়ী সহ সারা ভারতবর্ষের অসংখ্য মহাপুরুষদের জীবনে আমরা সংসারে থেকে ঈশ্বরের সাধন ভজন করার দৃষ্টান্ত দেখি। গৃহেতে থেকেই ঈশ্বরের সাধন ভজন করা যায় এবং ঈশ্বরকে পাওয়াও যায়। এ প্রসঙ্গে গোপালগঞ্জের হরিচাঁদ ঠাকুরের অত্যন্ত সুন্দর একটি বাণী আছে। তিনি চেয়েছেন, সবাই অকারণ সন্ন্যাসগ্রহণ না করে পরিবার পরিজন নিয়ে গৃহেতে বসেই গৃহের সকল কাজের সাথে সাথে সাধন ভজন করেই যেন শ্রীহরির সান্নিধ্য লাভ করতে পারে। এ প্রসঙ্গে তাঁর জীবনী হরিলীলামৃত গ্রন্থে বলা হয়েছে :
"গৃহেতে থাকিয়া যার হয় ভাবোদয়।
সেই যে পরম সাধু জানিও নিশ্চয়"
গৃহেতে থেকেও কারো মধ্যে সেই উচ্চতর ভাবের উদয় হতে পারে, যা কোন কোন সন্ন্যাসীর মধ্যেও হয়ত এমন উচ্চতর ভাব নাও থাকতে পারে। বিষয়টি অধিকারীর সাথে সম্পর্কিত। যোগ্য অধিকারী হলে তাঁর কাছে গার্হস্থ্য আশ্রম, সন্ন্যাস আশ্রম সকলই সমান হয়ে যায়। সংসার এমন মায়ার সুতা দিয়ে বদ্ধ যে,আমরা চাইলেও সে সুতা সবসময় ছিন্ন করতে পারি না। এ কারণেই বেশী দূরে নয়, আমাদের আশেপাশেই দেখা যায়; কেউ কেউ সন্ন্যাস নিয়ে সন্ন্যাসী হয়েও আশ্রমে বা মঠে পরিবার সংসারের মত মায়ার জাল পেতে বসেন। সন্ন্যাসীর সংসারী হওয়া নিষিদ্ধ, কিন্তু একজন সংসারী পরিবার সংসারে থেকে সন্ন্যাসী হতে পারে, এতে সে রাজর্ষি জনকের মত মহত্তম হয়। সংসারে থেকেও কালীরূপ ব্রহ্মের দর্শন পেয়েছিলেন রামপ্রসাদ সেন, শুধু নিষ্ঠা ভক্তির একাগ্রতার মাধ্যমে। সে ভক্তি মূর্তিমান হয়েছিল তাঁর এক একটি সংগীতে। একবিংশ শতাব্দীতে বসে আজও সে সংগীতে আমরা মোহিত, আমাদের প্রাণ টলমল করে উঠে; হৃদয় শুদ্ধ হয়। তিনিও সংসার ধর্মকে বড় ধর্ম উল্লেখ করে, গৃহেতে থেকে সাধন করার কথা তাঁর সংগীতে বারবার বলেছেন।
"তোর সংসার ধর্ম বড় ধর্ম,
তাই পারি না ছেড়ে যেতে।"
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে গৃহী সন্ন্যাসী বললে খুব একটা ভুল হবে না। তিনি চেয়েছেন জীবনের সমাজ সংসার পরিবার পরিজন রূপ অসংখ্য বন্ধনের মধ্যেই মুক্তির স্বাদ পেতে চেয়েছেন।তিনি তাঁর 'নৈবেদ্য' কাব্যগ্রন্থে বলেছেন, বৈরাগ্যসাধনে মুক্তি তাঁর জন্যে নয়। সকল বন্ধনকে সাথে নিয়েই তিনি চেয়েছেন, পৃথিবীর পাত্রখানি নানাবর্ণগন্ধময় ঐশ্বরিক অমৃতে পূর্ণ হয়ে করতে ।প্রদীপের লক্ষ লক্ষ বর্তিকায় জ্বলবে দৈবী আলো। ইন্দ্রিয়ের দ্বারকে রুদ্ধ করে কষ্টকর সাধন তার সম্ভব নয়, তিনি জগতের আনন্দের মাঝে, মানবের মাঝে, দৃশ্যে গন্ধে সংগীতের মাঝে সর্বদাই আনন্দময় ব্রহ্মের সন্ধান করতে চেয়েছেন। তবেই প্রেম-ভক্তিরূপে মুক্তি প্রজ্জ্বলিত হবে।
"বৈরাগ্যসাধনে মুক্তি, সে আমার নয়।
অসংখ্যবন্ধন-মাঝে মহানন্দময়
লভিব মুক্তির স্বাদ। এই বসুধার
মৃত্তিকার পাত্রখানি ভরি বারম্বার
তোমার অমৃত ঢালি দিবে অবিরত
নানাবর্ণগন্ধময়। প্রদীপের মতো
সমস্ত সংসার মোর লক্ষ বর্তিকায়
জ্বালায়ে তুলিবে আলো তোমারি শিখায়
তোমার মন্দির-মাঝে।
ইন্দ্রিয়ের দ্বার
রুদ্ধ করি যোগাসন,সে নহে আমার।
যে কিছু আনন্দ আছে দৃশ্যে গন্ধে গানে
তোমার আনন্দ রবে তার মাঝখানে।
মোহ মোর মুক্তিরূপে উঠিবে জ্বলিয়া,
প্রেম মোর ভক্তিরূপে রহিবে ফলিয়া।"
শুধু সন্ন্যাসী বা বৈরাগ্যসাধনেই যে মুক্তি লাভ হয় তা নয়, বিভিন্ন পরিবার পরিজন সংসারের বন্ধনের মাঝে থেকেও নিরাসক্ত আত্মারাম থাকা যায়। বেদান্তে তাঁকে জীবন্মুক্ত বলেছে এবং শ্রীমদ্ভগবদগীতা তাঁকে স্থিতপ্রজ্ঞ বলেছে। জগতের সকল বন্ধন, বন্ধন নয়।পরিবার সংসার যাকে আমরা মুক্তির পথে অন্তরায় বন্ধন মনে করছি, একটু গভীরে তলিয়ে দেখলে দেখতে পাব, এরমধ্যেই আছে মুক্তির সোপান। বিহারের গয়ার অন্তঃসলিলা একটি নদী আছে, এ নদীর জলপ্রবাহ বাইরে থেকে দেখা যায় না। আপাতদৃষ্টিতে বালুর চরের মত মনে হলেও, সামান্য বালু নাড়াচাড়া দিয়ে সরিয়ে দিলেই ভেতরে অন্তঃস্থিত জল টলমল করে। যাকে ধুঁ ধুঁ বালিয়াড়ি বলে মনে হয়, তার মাঝেই আছে টলমলে জল। যদি কেউ সযত্নে বালু সরাতে অগ্রসর না হয়, তবে সে কখনই জানতে পারবে না যে ভেতরে জল আছে। তেমনি প্রচলিত অর্থে কেউ হয়ত গার্হস্থ্য সংসারী, কিন্তু তাঁর ভেতরে অন্তঃসলিলা বৈরাগ্য সন্ন্যাসীভাব প্রবল। তখন সে গার্হস্থ্য থেকে গার্হস্থ্য সন্ন্যাসী হয়ে যায় এবং জীবন্মুক্ত হয়ে পরিশেষে ঈশ্বর লাভ করে। ভারতবর্ষের অসংখ্য মহাপুরুষেরা তাঁদের জীবনের এর দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন।
সহকারী অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ, বাংলাদেশ।।
মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁