কলকাতায় দক্ষিণেশ্বর_কালী মন্দিরে যেয়ে অবাক হলাম, দেখলাম মন্দিরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে। আগে মন্দিরে মোবাইল নিয়েও যাওয়া যেত; এখন মোবাইল তো নেয়া যায়ই না, উপরন্তু আগের থেকে বেশী নিরাপত্তা তল্লাশি করা হচ্ছে দেখলাম । এদের এই নিরাপত্তায় বাড়ন্তভাব দেখে মনে হলো দক্ষিণেশ্বর মন্দিরও কি আর কিছুদিন পরে মথুরায় কংসের কারাগার, অযোধ্যায় শ্রীরাম জন্মভূমি অথবা কাশী বিশ্বনাথের মন্দিরের মতো উচ্চ নিরাপত্তার চাদরে মুড়িয়ে ফেলা হবে?
আগামী দিনগুলোতে আমরা কি শান্তিতে আমাদের কোন তীর্থস্থানেই নিরাপত্তায় চাদরে মোড়ানো ছাড়া উপাসনা করতে পারবো না? পূজাও করতে পারবো না! হিন্দু পবিত্র মন্দিরগুলোতে কেন এবং কোন বিশেষ জঙ্গিগোষ্ঠীর কারণে এই উচ্চ নিরাপত্তা ; এর উত্তর আসলে আমাদের সবারই জানা থাকলেও আজ বিশেষ কারণে হাস্যকর অজানার প্রাণনাশী আত্মঘাতী ভান ধরে চুপ আছি সকলে।
মন্দিরের অফিসের বারান্দায় দেখলাম বাংলা এবং বৃহত্তর ভারতবর্ষের অনেক মহাপুরুষদের ছবি টাঙানো আছে। দেখে খুব ভাল লাগল।কিন্তু কয়েকজনের ছবি দেখে অবাক হলাম যে, তাদের সাথে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের কি সম্পর্ক! যেমন ফার্সি ভাষায় কথা বলা কর্ণাটকের টিপু_সুলতানের ছবি। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে কেন টিপু সুলতানের ছবি থাকবে, এটা আমার ছোট মাথায় ঠিক বোধগম্য হল না।
মানবেন্দ্রনাথ_রায় যিনি নিজে একজন নাস্তিক ছিলেন বলে জানা যায়। সেই তারও ছবি দেখলাম দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে। তিনি ১৯৪২ সালে কংগ্রেসের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে 'ভারত ছাড় ' কর্মসূচীর তীব্র বিরোধী ছিলেন। অনেকে তার সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন তিনি ভারতবর্ষে থেকেও, তার প্রাণটি ছিলো রাশিয়ায়। তিনি বিভিন্ন সময়ে ভারতবর্ষের এবং এর বাইরে কমিউনিস্ট পার্টির বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন। তিনিও হয়ত বা কোনদিন কল্পনা করতে পারেননি যে, তার ছবিও একদিন কালী মন্দিরে থাকবে!
এর পরেই যার ছবি মন্দিরে দেখে আরও অবাক হলাম তিনি হলেন 'ইয়ং বেঙ্গলে'র প্রতিষ্ঠাতা ডিরোজিওর ছবি।বিচিত্র সেলুকাস এই কলকাতা নগরী! যিনি ছিলেন মূর্তিপূজার ঘোর বিরোধী আজ দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে তার ছবিই শোভিত; ভাবা যায়!
হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ চেতনার বিপরীতে আজ যে মিথ্যা ইতিহাসের রমরমা দেখি বিভিন্ন বই-পুস্তক এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এর অন্যতম জনক হলেন এই ডিরোজিও। এদের অন্যতম মূলনীতিই ছিলো - হিন্দুদের যা কিছুই পূজনীয় এবং আদরের তা সকলিই আমাদের ঘৃণার বস্তু। তাই এই ডিরোজিও ও তার সাঙ্গ পাঙ্গদের পাল্লায় পরে বাংলা মায়ের বহু শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা ধর্মান্তরিত হয়ে যায়। এদের মধ্যে কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, লালবিহারী দে, মধুসূদন দত্ত, জ্ঞানেন্দ্রমোহন ঠাকুর অন্যতম।
এর পরেই অবাক হলাম মাদার_তেরেসার ছবি দেখে। কালীঘাটে থেকেও যাকে কালীঘাটের মাকালী সামান্য আকর্ষণ করতে পারেনি ; সেই তিনিই আছেন দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরে ছবি হয়ে বহাল তবিয়তে। তার মানবতার ছদ্মবেশে অসংখ্য গরিব অসহায় হিন্দুকে ধর্মান্তরিতের কাহিনী মোটামুটি আমরা সকলেই জানি। গত ২০১৮ সালে ঝাড়খণ্ডে তেরাসার প্রতিষ্ঠানের শিশু পাচারের অভিযোগে সারাভারতের মিডিয়া তোলপাড় হয়।তার মানবতার মুখোশকে উন্মোচন করে দিয়ে অনেক বই আছে। আগ্রহীরা পড়ে নেবেন প্রবির ঘোষের লেখা-"যুক্তিবাদীর চ্যালেঞ্জাররা" (দে'জ থেকে প্রকাশিত) এবং অমলেশ মিশ্রের লেখা- "টেরেসা আমাদের বদনাম করেছেন নিয়েছেন প্রচুর, দেননি কিছুই" -এ বই দুটি সহ আরো বেশ কয়েকটি বই।
তেরেসার সাথে সাথে দেখলাম যিশুখ্রিস্টের ছবি এবং হিন্দু থেকে খ্রিষ্টানে ধর্মান্তরিত মাইকেল মধুসূদন দত্তের ছবি। কালী মন্দিরে যিশুর ছবির যৌক্তিকতা কি আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না! ভ্যাটিকানসিটির কথা না হয় বাদই দিলাম, কিন্তু এই কোলকাতারই কোন চার্চে মাকালীর ছবি রাখা আছে কিনা সন্দেহ! আমার জানা মতে নেই।
বুঝতে পারলাম, হিন্দুদের মন্দিরগুলোর পরিচালনা পর্ষদ এবং বিভিন্ন মঠ মিশনের সাধুদের কাঁধেই একমাত্র সর্বধর্মের ঠিকাদারির দায়ভার।সর্বধর্মের গীত একা শুধুমাত্র হিন্দুরাই গেয়ে যাচ্ছে আমৃত্যু। এতে উৎসাহিত করছে, কিছু সাধুসন্ত।তথাকথিত হিন্দু সাধুরা হিন্দুদের টাকায় খেয়েদেয়ে গদিবালিশে সুয়ে আরাম আয়েশে জীবন অতিবাহিত করে সবাইকে সর্বধর্ম শেখাতে যেয়ে নিজের ধর্ম শূণ্য করে দিয়ে, কনফিউজড করে দিয়ে, নিজের অজান্তেই হিন্দু ছেলেমেয়েদের ধর্মান্তরের পথে প্রেরণা দিয়ে যাচ্ছে। এর অসংখ্য জাজ্বল্যমান উদাহরণ প্রতিনিয়ত আমরা আমাদের চারিপাশেই দেখছি বিশেষ করে বাংলাদেশে।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।