-->

ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

বিশ্বাসঘাতকতায় বিরক্ত হয়ে বিদ্যাসাগর, শেষজীবন আদিবাসীদের সাথে কাটিয়েছেন ।


ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন, ভারতবর্ষের উনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণের অগ্রনায়ক। সমাজ থেকে বিধবাবিবাহ সহ বিভিন্ন কুসংস্কার দূরীকরণের পথিকৃৎ; বাংলা বর্ণ তাঁর হাতেই সংস্কৃত হয়ে বর্তমান রূপ পরিগ্রহ করে। আধুনিক সার্থক বাংলা গদ্যের ছিলেন তিনিই স্থপতি। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর ;বাংলা ১২২৭ বঙ্গাব্দের ১২ আশ্বিন; মঙ্গলবার পশ্চিম মে
দিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঈশ্বরচন্দ্রের পিতার নাম ছিল, ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কলকাতায় একটি ছোট চাকরি করতেন। গ্রামে মা ভগবতী দেবীর কাছেই তিনি লালিত হন। তাই বিদ্যাসাগরের জীবনে তাঁর মা ভগবতী দেবীর প্রভাব ছিল অসীম। বলা হয়ে থাকে, তাঁর দৃঢচেতা স্বভাবটি তাঁর মায়ের থেকেই প্রাপ্ত। বিদ্যাসাগর নামে পরিচিত হলেও, প্রকৃতপক্ষে তাঁর নাম ছিল, ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঙালির জীবনে দেখা যায়, যে সকল মানুষেরা সবচেয়ে বেশী মানুষের সেবা করেছে,উপকার করেছে, লোককল্যাণ করেছে; অকৃতজ্ঞ বাঙালি তাদের পিছনেই পড়ে তাদের দুর্নাম রটিয়েছে। তাদের মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছে।এর অন্যতম বড় দৃষ্টান্ত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। বাইরের মানুষের সাথে সাথে পরিবারের আপনজনেরাও তার সাথে অনৈতিকতা করেছে।একমাত্র পুত্র নারায়ণচন্দ্রের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্যাসাগর ১৮৭২ সালে বিদ্যাসাগর তাঁকে ত্যাজ্য ঘোষণা করেন। কিছু দিন পরেই মারা যায় স্ত্রী দীনময়ী দেবী। প্রচণ্ড নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন তখন বিদ্যাসাগর। শহুরে কৃত্রিম জীবন থেকে মুক্তি পেতে একটু নির্জনতার সান্নিধ্য তাঁকে টানছিল প্রচণ্ডভাবে। নানা বিরূপ অভিজ্ঞতা, অকৃতজ্ঞতা, ঘাত-প্রতিঘাতে বীতশ্রদ্ধ হয়ে বিদ্যাসাগর চলে যান ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী সম্প্রদায়ের কাছে। প্রায় সতেরো বছর বসবাস করেন তাদের সাথে।
ঝাড়খণ্ডের কার্মাটাঁড়ে স্টেশনের কাছে পাঁচশো টাকায় স্থানীয় এক ইংরেজ মহিলার কাছ থেকে আমবাগান সমেত প্রায় ১৪ বিঘা জায়গা কিনে বসবাস শুরু করেন বিদ্যাসাগর।এখানেই একটি ছোট বাড়ি তৈরি করেন বিদ্যাসাগর। নাম দেন স্বর্গের বাগানের নামে, 'নন্দনকানন।' এখানে একটি রাত্রিকালীন স্কুলও চালু করেন। সাঁওতাল অধ্যুষিত কার্মাটাঁড়ে বসেই তিনি ‘সীতার বনবাস’, ‘বর্ণপরিচয়’-এর তৃতীয় সংস্করণের প্রুফ দেখেছেন।
কার্মাটাঁড়ে সাঁওতালদের সাথে বিদ্যাসাগরের শেষ জীবনের স্মৃতিচারণ করেছেন ভাই শম্ভুচন্দ্র। তিনি বলেছেন, ‘‘তিনি (বিদ্যাসাগর) প্রাতঃকাল হইতে বেলা দশ ঘটিকা পর্যন্ত সাঁওতাল রোগীদিগকে হোমিওপ্যাথি মতে চিকিৎসা করিতেন এবং পথ্যের জন্য সাগু, বাতাসা, মিছরি প্রভৃতি নিজে প্রদান করিতেন। অপরাহ্নে পীড়িত সাঁওতালদের পর্ণকুটিরে যাইয়া তত্ত্বাবধান করিতেন। তাহাদের কুটিরে যাইলে তাহারা সমাদরপূর্বক বলিত, ‘তুই আসেছিস!’ তাহাদের কথা অগ্রজের বড় ভালো লাগিত।’’
ভাই শম্ভুনাথকে কোলকাতার নাগরিক বিলাসী জীবন ছেড়ে গ্রামীণ আদিবাসীদের সাথে কাটানো প্রসঙ্গে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বলেন, ‘‘বড়লোকের বাটিতে খাওয়া অপেক্ষা এ সকল লোকের কুটিরে খাইতে আমার ভালো লাগে, ইহাদের স্বভাব ভাল, ইহারা কখনো মিথ্যা কথা বলে না। ইত্যাদি কারণে এখানে থাকিতে ভালোবাসি।’’
আদিবাসীদের নিস্পাপ সারল্যে মুগ্ধ হয়ে বিদ্যাসাগর বাকি জীবনটা সেখানেই কাটাবেন স্থির করেছিলেন। কিন্তু তা অবশ্য হয়নি। কার্মাটাঁড়ের সঙ্গে বিদ্যাসাগরের সম্পর্ক ছিল প্রায় সতেরো বছরের। শরীর-স্বাস্থ্যের ভগ্নদশার কারণে ১৮৯০ সালের শুরু থেকে আর কার্মাটাঁড়ে বাস করতে পারেননি বিদ্যাসাগর। চিকিৎসার জন্যে চলে আসতে হয়েছে কোলকাতা। এ কলকাতা শহরেই ১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই ৭১ বছর বয়সে বিদ্যাসাগর দেহত্যাগ করেন।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁