জগতের অধিকাংশ মানুষই স্বার্থপর এবং আত্মপ্রিয়। প্রত্যেকটি মানুষ প্রথমে নিজেকেই আগে ভালবাসে, এরপরে অন্যদের সাথে ভালবাসা ভালবাসা খেলা খেলে। তবে এই স্বার্থপর জগতে কিছু কিছু মানুষ মাঝেমধ্যে ব্যতিক্রম এবং দৃষ্টান্ত হিসেবে জন্ম নেয়। এ ব্যতিক্রমী মানুষগুলো অধিকাংশই ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়ে বেড়ায়। এ কারণে অনেকেই তাদের নিয়ে হাসিঠাট্টা করলেও, দিনশেষে মহৎপ্রাণ মানুষগুলো তাদের লোককল্যাণের কাজটি বিরতিহীনভাবে করেই যায়।
জগতে শান্তশিষ্ট সুবোধ বালকেরা পড়াশোনা সহ অন্যান্য ব্যক্তিগত জীবনের কাজগুলো ঠিকমত করলেও; দিনশেষে এরা অধিকাংশই আত্মকেন্দ্রিক এবং অত্যন্ত পরিণামদর্শী হয়। কোন কাজের প্রথমেই তারা পরিণাম চিন্তা করে। লাভ-ক্ষতি চিন্তা করে তবেই পা বাড়ায়। এ লাভ-ক্ষতির পরিণাম চিন্তা করতে গিয়ে তারা, যে কাজে জীবন সংশয় হতে পারে এরকম কোন সার্বজনীন কাজে তাদের মাথার টিকিটাও খুঁজে পাওয়া যায় না। পরিণামদর্শীতার প্রয়োজন আছে, কিন্তু অতিরিক্ত পরিণামদর্শীতা মানুষের কল্যাণকর কাজের ব্যাঘাত ঘটায়। কোন কাজে যদি সর্বপ্রথমেই নেতিবাচক বিষয়গুলো চিন্তা করা হয়; তবে কখনোই সে কাজগুলো সমাপ্তির দিকে যায় না।১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ঢাকার রাজপথে অধিকারের জন্যে যারা আত্মাহুতি দিয়েছেন দেশের জন্য, জাতির জন্য এবং মাতৃভাষার জন্য। তারা যদি অত্যন্ত পরিণামদর্শী হতেন তবে তারা আগেই মৃত্যু সহ বিভিন্ন নেতিবাচক চিন্তা করে আন্দোলন সংগ্রাম থেকে দূরে চলে যেতেন। তারা কখনোই এরকম আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতেন না, যে আন্দোলনে জীবননাশের একটি সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। যখনই আমরা অহেতুক পরিণাম চিন্তা করে আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রসর হতে চাই, তখনই আমরা কিছুটা এগিয়ে গিয়ে পরবর্তীতে থেমে যাই। কর্মস্পৃহা নষ্ট হয়ে যায়, কাজের মন মানসিকতা সংকুচিত হয়ে যায়। জগতের মানুষ মাত্রই স্বার্থপর, তবে এর মধ্যে বাঙালির স্বার্থপরতার জুড়ি নেই। বাঙালির উদারতা যেমন হিমালয়ের মত, তেমনি বাঙালির সংকীর্ণতা ভয়াবহ। বহু বছরের পরাধীন মানসিকতার কারণে বাঙালি চরিত্র এমন বিষয়গুলো প্রবেশ করেছে। বাঙালি সাধারণত এক ঘাটে সকলে মিলেমিশে জল খেতে চায় না। তাই দেখা যায়, যেখানেই বাঙালি, সেখানেই দলাদলি। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য টমাস বেবিংটন মেকলে বা লর্ড মেকলে (১৮০০-১৮৫৯) ব্রিটিশ হাউজ অব কমন্সে বাঙালির জাতীয় চরিত্র সম্পর্কে সুস্পষ্ট কয়েকটি কথা বলেছিলো। যদিও লর্ড মেকলে বিদেশি সাম্রাজ্যবাদী। তিনি ভারতবর্ষ এবং বাঙালির খুব একটা সুহৃদ ছিলেন না। এরপরেও তার সকল কথাই পরিত্যাজ্য নয়। বাঙালি সম্পর্কে তিনি বলেন, "বাঙালিরা দৈহিক দিক থেকে ভঙ্গুর ও দুর্বল, নৈতিক দিক থেকে কাপুরুষ। তাঁর মতে, বাঙালিরা অভ্যাসগতভাবে মিথ্যাবাদী, প্রতারক, যোগসাজশকারী ও জালিয়াত। তিনি বাঙালির এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন, শতকের পর শতক সামন্তবাদী স্বৈরতন্ত্রের কবলে থাকার ফলে বাঙালির এ ধরনের চারিত্রিক অবক্ষয় ঘটেছে"
(বাংলাপিডিয়া)।
যদিও লর্ড মেকলের কথা সম্পূর্ণভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।এরপরেও, ব্রিটিশ হাউজ অব কমন্সে দেয়া তার বক্তব্যের কয়েকটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন যে, বাঙালি শতকের পর শতক সামন্তবাদী স্বৈরতন্ত্রের কবলে থাকার ফলে বাঙালির দৈহিক দিক থেকে ভঙ্গুর, দুর্বল, নৈতিক কাপুরুষ, মিথ্যাবাদী, প্রতারক, যোগসাজশকারী ও জালিয়াত। কথাগুলো বাঙালির ক্ষেত্রে অনেকটাই সত্য।রাতদিন ভেবে ভেবে সূত্রবদ্ধভাবে জীবন এবং জীবনের সংগ্রাম যেমন করা অসম্ভব।তেমনি অসম্ভব অতিরিক্ত পরিনামদর্শী হয়ে জাতির কল্যাণে আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করা। শ্রীচৈতন্যদেব, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সহ বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্বগণ অধিকাংশই বাল্যকালে প্রচণ্ড দুষ্ট প্রকৃতির ছিলেন। তাঁদের বাল্যকাল থেকেই মানুষের সাথে বেড়ে উঠা সম্পর্কটি ছিল স্বতঃস্ফূর্ত এবং স্বাভাবিক। কোন কৃত্রিমতায় আবদ্ধ ছিল না, তাদের জীবন। বিষয়টি অত্যন্ত সুন্দর করে লক্ষ্য করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর 'চারিত্রপূজা' গ্রন্থের 'বিদ্যাসাগর চরিত' প্রবন্ধে বাল্যকালে শ্রীচৈতন্যদেব এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দুরন্তপনা নিয়ে অসাধারণ এক উদ্দীপনাময় মন্তব্য করেছেন। যা বর্তমান সময়ে আমাদের জন্যে অনেক বেশী প্রাসঙ্গিক।
"নিরীহ বাংলাদেশে গোপালের মতো সুবোধ ছেলের অভাব নাই। এই ক্ষীণতেজ দেশে রাখাল এবং তাহার জীবনীলেখক ঈশ্বরচন্দ্রের মতো দুর্দান্ত ছেলের প্রাদুর্ভাব হইলে বাঙালিজাতির শীর্ণচরিত্রের অপবাদ ঘুচিয়া যাইতে পারে। সুবোধ ছেলেগুলি পাস করিয়া ভালো চাকরি-বাকরি ও বিবাহকালে প্রচুর পণ লাভ করে সন্দেহ নাই, কিন্তু দুষ্ট অবাধ্য অশান্ত ছেলেগুলির কাছে স্বদেশের জন্য অনেক আশা করা যায়। বহুকাল পূর্বে একদা নবদ্বীপের শচীমাতার এক প্রবল দুরন্ত ছেলে এই আশা পূর্ণ করিয়াছিলেন।"
দেশে আমাদের আশেপাশে গোপালের মত সুবোধ ছেলের অভাব নাই। কিন্তু প্রচণ্ড অভাব আছে, রাখালের মত দুর্দান্ত দুষ্ট ছেলের। যারা মানুষের বিপদে নিজের স্বার্থ চিন্তা না করে ঝাপিয়ে পরে। বহুবছরের পরাধীন মানসিকতার থেকে উৎপন্ন সংকীর্ণতা পরিত্যাগ করে বাঙালিকে এগিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে সুবোধ বালক টাইপের "মিনমিনে চালাকের ভুষি খাওয়ার যম" ছেলেদের দিয়ে হবে হবে না। আমরা যদি বিপ্লবীদের জীবন দেখি, তবে দেখতে পাই অধিকাংশ বিপ্লবীরাই বাল্যকালে কৈশোরে অত্যন্ত দুষ্ট এবং নির্ভীক স্বভাবের ছিলেন। তাই তারা জীবনে যা করেছেন তা সকলই নির্ভীক চিত্তে করে গিয়েছেন। এক্ষেত্রে একটি বড় দৃষ্টান্ত যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, যাঁকে আমরা সকলেই বিপ্লবী বাঘা যতীন নামেই চিনি। তিনি ১৮৭৯ সালের ৭ ডিসেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বাংলায় বর্তমান কুষ্টিয়ার কয়াগ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ব্রিটিশশাসিত পরাধীন ভারতবর্ষে ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনের অন্যতম রূপকার। বিপ্লবীদের প্রধান সংগঠন 'যুগান্তর' দলের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। সশরীরে যুদ্ধ করে মাত্র পয়ত্রিশ বছর বয়সেই নিজের জীবনকে দেশের জন্যে আত্মাহুতি দেন। তিনি কৈশোরে সামান্য একটি ভোজালি দিয়ে একাই একটি বাঘকে হত্যা করেন। এ দুঃসাহসিক কাজ করতে গিয়ে তিনি নিজেও প্রচণ্ড আহত হন। তাঁর যতীনের চিকিৎসা করেন কলকাতার তৎকালীন খ্যাতিমান চিকিৎসক ডা. সুরেশপ্রসাদ। তিনি যতীনের দুঃসাহসিক কাযে বিস্মিত হয়ে তাঁর নাম দেন বাঘা যতীন। বাঙালি বীরের জাতি হলেও, সাময়িক বিভিন্ন সংকীর্ণতা স্বার্থপরতার মায়াজালে তাদের বীরত্বের গৌরবকে ঘুমিয়ে যায়। মাঝেমধ্যে রাজা প্রতাপাদিত্য, ক্ষুদিরাম বসু, সুভাষ বসু, বাঘা যতীন, মাস্টারদা সূর্যসেন, প্রীতিলতার মত মানুষেরা এসে ঘুম থেকে তুলে জাগিয়ে দেয়। তখন বাঙালি স্বার্থপরতার, সংকীর্ণতা পরিত্যাগ করে জেগে উঠে। ডি এল রায়, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত অনেক কবিরাই বাঙালির বীরত্বগাঁথা তাদের কবিতা, সংগীত এবং সাহিত্যে লিখে গেছেন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য হলো সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের 'আমরা' কবিতা। কবিতাটির প্রত্যকটি শব্দে তিনি বাঙালি যা কিছু মহান, যা কিছু গর্বের তা সকলই তুলে ধরেছেন
।
"সাগর যাহার বন্দনা রচে শত তরঙ্গ ভঙ্গে,-
আমরা বাঙ্গালী বাস করি সেই বাঞ্ছিত ভূমি বঙ্গে।
বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া আমরা বাঁচিয়া আছি,
আমরা হেলায় নাগেরে খেলাই, নাগেরি মাথায় নাচি।
আমাদের সেনা যুদ্ধ ক'রেছে সজ্জিত চতুরঙ্গে,
দশাননজয়ী রামচন্দ্রের প্রপিতামহের সঙ্গে।
আমাদের ছেলে বিজয়সিংহ লঙ্কা করিয়া জয়
সিংহল নামে রেখে গেছে নিজ শৌর্য্যের পরিচয়।
এক হাতে মােরা মগেরে রুখেছি, মােগলেরে আর হাতে,
চাঁদ-প্রতাপের হুকুমে হঠিতে হ'য়েছে দিল্লীনাথে।"
বাঙালির ইতিহাস এবং পুরাতত্ত্ব প্রমাণ করে যে, বাঙালি বীরের জাতি। বাংলার গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রত্নস্থল পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বিদ্যাধরী নদীর কূল ঘেঁষে চন্দ্রকেতুগড় এর অন্যতম বড় দৃষ্টান্ত। এই পুরাতাত্ত্বিক স্থানটি খ্রিস্টাব্দ পূর্ববর্তী তো বটেই, এমনকি গৌতম বুদ্ধেরও পূর্ববর্তী। চন্দ্রকেতুগড়ের মাটির এই টেরাকোটাগুলো বাঙালি সংস্কৃতির এক প্রাচীন নিদর্শন। সেই টেরাকোটার মধ্যে একটি পাত্রের টেরকোটায় দেখা যাচ্ছে বাঙালি নারীরা দলবদ্ধভাবে ঘোড়ার পিঠে এগিয়ে যাচ্ছেন। দেখে মনে হচ্ছে যুদ্ধসজ্জায় প্রমিলাবাহিণী। প্রাচীন পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণে নারীপুরুষের সমতা এবং বীরত্ব আমাদের মুগ্ধ করে। সে যুগে নারী ছিলো না গৃহবন্দী, ছিলো না কোন পোশাকের আবরণে বন্দী। মুক্ত বিহঙ্গের মত ছিলো তাদের স্বাচ্ছন্দ্য গতি, তাদের বীরত্ব। বাঙালি নারীর পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করার দৃষ্টান্ত আমরা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়েও দেখেছি। পুরুষের সাথে সাথে অসংখ্য নারী যোদ্ধারা যুদ্ধ করেছেন এবং প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন।
তবে একথা নির্মম সত্য যে, বাঙালি বীরের জাতি হলেও বিভিন্ন সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা এবং আত্মকেন্দ্রিকতার জালে জড়িয়ে তারা পশ্চাদপদ হয়ে যাচ্ছে দিনেদিনে। বাঙালির মধ্যে সুবোধ বালক টাইপের মিনমিনে স্বার্থপরের সংখ্যাই বেশি। অধিকাংশই দু'মুখো; তাদের মুখ এবং মুখোশ আলাদা। অন্যায় দেখলেও তারা প্রতিবাদ করে না। গত শত বছরে রাজনৈতিক সামাজিক কত ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সেই ঘটনাগুলো কি তাদের জীবনে কি প্রভাব পড়েছে। বাঙালি কি ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়েছে। না নেয় নি। তাই বাঙালির ইতিহাসের ভুলের পুনরাবৃত্তি বারবার। ১৯৪৭ সালে দেশভাগকে কেন্দ্র করে কত মানুষ গণহত্যায় নিহত হয়েছে, বাস্তুচ্যুত হয়েছে, কত নারী ধর্ষিত হয়েছে, কত ধর্মস্থলী বিধ্বস্ত হয়েছে-এর সঠিক পরিসংখ্যান পর্যন্ত সংরক্ষণ করা হয়নি। এই ঘটনাগুলো পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, এর যথাযথ উদ্যোগ আজ পর্যন্ত নেয়া হয়নি। বাঙালি তার নিজের কল্পজগতে বসবাস করে বিশ্বনাগরিক হতে ব্যতিব্যস্ত। কিন্তু বোকা বাঙালি জানে না, বিশ্বনাগরিক হওয়ার আগে শাশ্বত সংস্কৃতির উত্তরসূরী হিসেবে প্রকৃত বাঙালি হওয়া প্রয়োজন, সর্বোপরি মানুষ হওয়া প্রয়োজন । বাঙালির এ চরিত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চোখেও ধরা পড়েছে। বিষয়টি তিনি অনেকটা হতাশ হয়ে ২৬ চৈত্র, ১৩০২ বঙ্গাব্দে 'বঙ্গমাতা' নামে একটি কবিতা লেখেন। সেই কবিতায় পাপে-পুণ্যে, সুখে-দুঃখে এবং উত্থান-পতন সহ জীবনের সকল ক্ষেত্রেই তিনি বাঙালিকে আগে মানুষ হতে বলেছেন। তিনি বঙ্গমাতাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ভালো ছেলে নামে অবিহিত করে প্রতি পদক্ষেপে ছোটো ছোটো নিষেধের ডোরে বেঁধে না রেখে দুঃখ স'য়ে প্রাণ দিয়ে হলেও যেন মন্দের সাথে সংগ্রাম করে পরিশেষে ভালোকে বেঁছে নিতে পারে।
"পূণ্যে পাপে দুঃখে সুখে পতনে উত্থানে
মানুষ হইতে দাও তোমার সন্তানে
হে স্নেহার্ত বঙ্গভূমি-তব গৃহক্রোড়ে
চিরশিশু ক'রে আর রাখিয়ো না ধরে।
দেশদেশান্তর-মাঝে যার যেথা স্থান
খুঁজিয়া লইতে দাও করিয়া সন্ধান।
পদে পদে ছোটো ছোটো নিষেধের ডোরে
বেঁধে বেঁধে রাখিয়ো না ভালো ছেলে ক'রে।
প্রাণ দিয়ে, দুঃখ স'য়ে, আপনার হাতে
সংগ্রাম করিতে দাও ভালোমন্দ-সাথে।
শীর্ণ শান্ত সাধু তব পুত্রদের ধ'রে
দাও সবে গৃহছাড়া লক্ষ্মীছাড়া ক'রে।
সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী,
রেখেছ বাঙালী করে, মানুষ কর নি।"
অধিকাংশ বাঙালি নৌকার সেই নির্বোধ যাত্রীর মত। নৌকার অন্যপাশে ছিদ্র হতে দেখে সে নিশ্চিন্ত মনে বসে থাকে যে, আমার পাশে তো ছিদ্র হয়নি। কিন্তু সে জানে না, নৌকার যেকোন একটি দিকেই ছিদ্র হলে নৌকায় জল ঢুকে যাবে। তা সে সামান্য ছিদ্র হোক বা বৃহৎ ছিদ্র হোক। ছোট বড় ছিদ্রে কিছুই যায় আসে না; ছিদ্র হলেও জল ঢুকে নৌকা ঢুবে যাবে এটাই স্বাভাবিক।