তোমরা যে সব ধেড়ে খোকা বাঙলা ভেঙে ভাগ করো!
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে বাংলা ভাগ হয়। ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে ১৪ আগস্ট এবং ১৫ আগস্ট ভারত পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। দেশভাগের অভিঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয় পূর্ববঙ্গের হিন্দু সম্প্রদায়। হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্ভ্রান্ত অভিজাত অংশটি তাদের হাজার হাজার বছরের পূর্বপুরুষদের ভিটেমাটি ত্যাগ করে পশ্চিমবঙ্গে চলে যেতে বাধ্য হয়।মাতৃভূমি ত্যাগ করা মানুষদের বিশাল একটি অংশ প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও সাম্প্রদায়িক আক্রমণের প্রেক্ষাপটে দেশান্তরিত হয়। পিতৃপুরুষের ভিটেমাটি পরিত্যাগ করে দেশান্তরিত হওয়ার যে কি যন্ত্রণা, যারা এর শিকার হয়েছে শুধু তারাই জানে। কেউ তাদের বুকের যন্ত্রণা কোনদিনও উপলব্ধিও করতে পারবে না। দেশভাগের পরে বাংলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ অংশ পূর্ববঙ্গ, পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পূর্বপাকিস্তান নাম ধারণ করে। ১৯৪৭ এর অনাকাঙ্ক্ষিত দেশভাগ নিয়ে কবি অন্নদাশঙ্কর রায় 'খুকু ও খোকা' নামক বিখ্যাত একটি কবিতা রচনা করেন। কবিতাটিতে দেশভাগের মর্মান্তিক যাতনা প্রকাশ পেয়েছে।
যদিও কবিতাটিতে কবি অন্নদাশঙ্কর রায় 'বুড়ো খোকা' এবং 'ধেড়ে খোকা' বলে তৎকালীন কিছু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে দায়ী করেছেন। এবং সেই অকর্মণ্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতি রাগ ঝেড়েছেন। কিন্তু এতে কি আসে যায়? তারা যা ক্ষতি করার, তা তো করেই দিয়েছেন। এ সমস্ত অযোগ্য সুবিধাভোগী দালাল নেতৃত্ব যুগে যুগেই ছিল। যুগে যুগেই তারা নিজের সংকীর্ণ স্বার্থে সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ক্ষতি করেছে। সেই পরম্পরায় তাদের ভাবাদর্শের উত্তর পুরুষেরা আজও ক্ষতি করে যাচ্ছে। সেই সকল পূর্বজদের অপরিণামদর্শী কৃতকর্মের অভিঘাতে সম্প্রদায়ের ভুক্তভোগী মানুষেরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম দেশভাগের দারুণ যন্ত্রণা ভোগ করে চলছে।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।