-->

ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

কুকুরে কামড়ানো কিরে মানুষের শোভা পায়?

কুকুরে কামড়ানো কিরে  মানুষের শোভা পায়?  ত্রিগুণের সমন্বয় থেকেই উত্তম, মধ্যম এবং অধমের উৎপত্তি। আমরা অনেক সময়েই অধমদের এড়িয়ে যেতে যাই; এতে তারা আরও বেশি নিন্দনীয় কাজ করে দূরে চলে যায়। উত্তমের সঙ্গ না পাওয়াতে তারা, সংশোধনের সুযোগ পায় না। সঙ্গ একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ সঙ্গের মাধ্যমেই মানুষ প্রভাবিত হয়। উত্তম যখন সত্যিকারের দৃঢ়চেতা উত্তম হবে, তবেই সে অধমকে সঙ্গ দিয়ে সংশোধিত করার প্রচেষ্টা করবে। পক্ষান্তরে উত্তম যদি দৃঢ়চেতা সাত্ত্বিক স্বভাবের না হয়, তবে সঙ্গগুণে অধম উত্তমকে টেনে তমসাপূর্ণ জগতে নিয়ে যেতে পারে। উত্তম যিনি তার যদি নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস থাকে, তবে তিনি নিশ্চিন্তে স্বাচ্ছন্দ্যে অধমের সাথে চলতে পারেন। বিষয়টি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কণিকা কাব্যগ্রন্থে 'মাঝারির সতর্কতা' নামক দুই পঙক্তির একটি ছোট্ট কবিতায় বলেছেন: "উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে, তিনিই মধ্যম যিনি চলেন তফাতে।" অধমকে দূরে ঠেলে দেয়া নয়, তার পাশে থেকে সর্বদা তাকে সংশোধনের প্রচেষ্টা করতে হবে। প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে ব্যক্তিটি সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। কিন্তু যাকে সংশোধন করতে হবে, তিনি যেন ঘুনাক্ষরেও টের না পান যে তাকে সংশোধনের প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। তবে সে বেঁকে বসতে পারে হীতে বিপরীত হতে পারে। নিজেকে স্থির রেখে জগতে আশেপাশের সকলের সাথেই মেশা উচিত। জগতে দুধ এবং জল একসাথে থাকলে দুধেজলে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তখন আর তাদের স্বতন্ত্রতা আলাদা করে টের পাওয়া যায় না। কিন্তু আলাদাভাবে যদি দুধের মাখন তুলে জলে রাখা হয়, তবে কখনো দুধের সার মাখন এবং জল এ দুটি উপাদান মিলেমিশে কখনো একাকার হয় না। জগতে প্রত্যেকটি মানুষ তো বটেই, এমনকি প্রত্যেকটি প্রাণী থেকেও ব্যাপক শিক্ষনীয় বিষয় রয়েছে। তাই উত্তম, মধ্যম, অধম সকলের সাথেই মিশতে হবে, তবে নিজের স্বতন্ত্রতা বজায় রেখে। উপকারের প্রতিদান হিসেবে অনেক অধম ব্যক্তি উপকারীর ক্ষতি করার চেষ্টা করে। আবার অনেকে স্বভাবের গুণে শুধুই অকারণে অন্যের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। এমন মানুষের সংখ্যাও জগতে কম নয়। সেই সকল তামসিক ভাবাপন্ন অধম ব্যক্তিদের প্রথমে যথাসম্ভব বুঝাতে হবে যে, তাদের পথটি সঠিক নয়। তারা অন্যার পথ অবলম্বন করছে। যদি তারা নিজেদের ভুল উপলব্ধি করতে না পারে, তবে তাদের থেকে দূরে থাকাই মঙ্গল। যাদের নিজদের প্রবৃত্তি তামসিক এবং হানিকর, তারা অন্যের ক্ষতি বা ক্ষতিচিন্তা করবেই। অনেকে এই তামসিক অধম প্রবৃত্তি বংশীয়ভাবে লাভ করে। সেই ব্যক্তিগণ অন্যের ক্ষতিচিন্তা ছাড়া একদণ্ড সুস্থ থাকতে পারে না। অধম ব্যক্তিগণ অন্যের ক্ষতি করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু উত্তমকে উত্তমের মর্যাদা গৌরব রক্ষা করতে হবে।বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর কপালকুণ্ডলা উপন্যাসে বলেছেন, "তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন?" এটা সত্য যে কাকের দেশে ময়ূর সেঁজে লাভ নেই। অথবা ময়ূয়ের দেশে কাক হয়ে সারাক্ষণ 'কাকা' করে লাভ নেই। আবার একথাও সত্য সকলেই সকল স্তরে নেমে সকল কাজ করতে পারে না। নিম্ন কুরুচিপূর্ণ কেউ যদি, কোন মহৎপ্রাণ উত্তম ব্যক্তির সাথে অসভ্যতা করে। তবে উত্তম ব্যক্তি কখনো সেই অধম ব্যক্তির পর্যায়ে নেমে সমশ্রেণীর কুরুচিপূর্ণ আচরণ কখনো করে না এবং কখনো করতেও পারবে না। বিবেক তাকে বাঁধা দিবে। বিবেকের দংশনে সে অস্থির হয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে বাংলা সাহিত্যে 'ছন্দের যাদুকর' খ্যাত কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ( ১১ ফেব্রুয়ারি, ১৮৮২ - ২৫ জুন, ১৯২২) 'উত্তম ও অধম' নামে একটি বিখ্যাত কবিতা রয়েছে। সে কবিতায় কবি বলেছেন: "কষ্টে হাসিয়া আর্ত কহিল 'তুই রে হাসালি মোরে, দাঁত আছে বলে কুকুরের পায়ে দংশি কেমন করে?' কুকুরের কাজ কুকুর করেছে কামড় দিয়েছে পায়, তা বলে কুকুরে কামড়ানো কিরে মানুষের শোভা পায়?" কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতার বাস্তবতায় বলতে হয়, কুকুরের কাজ কুকুর করবেই। সে অকারণে বা কারণে সুযোগ পেলে কামড়ে দিবেই। কিন্তু বিপরীতে মানুষ কখনো কুকুরকে কামড়ে দেয় না। এটা মানুষের শোভা পায় না। মানুষ নামে জন্ম হলেই, সবাই মানুষ হয় না; তাকে আগে মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হয়। মনুষ্যত্ববোধ থাকলে, তবেই তাকে মানুষ বলে অবিহিত করা হয়। অবশ্য কবিতাটিতে কুকুরের সাথে তুলনা না করে অন্য প্রাণীর সাথে করলে, আরও যৌক্তিক হত। কবি কামড়ানো বৈশিষ্ট্যের কারণে, কুকুরের সাথে তুলনা টেনেছেন। কুকুর মানুষকে কামড়ে দেয়, একথা সত্য। কিন্তু এরপরেও বলতে হয়, আমাদের আশেপাশের অধিকাংশ কুকুরেরাই বিশ্বস্ত। তা সে নেড়ে কুকুর হোক, আর বিদেশি কুকুর হোক। তারা সহজে মনিবের সাথে বিস্বাসঘাতকতা করে না। তবে পাগলা কুকুর ব্যতিক্রম। কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী  সহকারী অধ্যাপক,  সংস্কৃত বিভাগ,  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

ত্রিগুণের সমন্বয় থেকেই উত্তম, মধ্যম এবং অধমের উৎপত্তি। আমরা অনেক সময়েই অধমদের এড়িয়ে যেতে যাই; এতে তারা আরও বেশি নিন্দনীয় কাজ করে দূরে চলে যায়। উত্তমের সঙ্গ না পাওয়াতে তারা, সংশোধনের সুযোগ পায় না। সঙ্গ একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ সঙ্গের মাধ্যমেই মানুষ প্রভাবিত হয়। উত্তম যখন সত্যিকারের দৃঢ়চেতা উত্তম হবে, তবেই সে অধমকে সঙ্গ দিয়ে সংশোধিত করার প্রচেষ্টা করবে। পক্ষান্তরে উত্তম যদি দৃঢ়চেতা সাত্ত্বিক স্বভাবের না হয়, তবে সঙ্গগুণে অধম উত্তমকে টেনে তমসাপূর্ণ জগতে নিয়ে যেতে পারে। উত্তম যিনি তার যদি নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস থাকে, তবে তিনি নিশ্চিন্তে স্বাচ্ছন্দ্যে অধমের সাথে চলতে পারেন। বিষয়টি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কণিকা কাব্যগ্রন্থে 'মাঝারির সতর্কতা' নামক দুই পঙক্তির একটি ছোট্ট কবিতায় বলেছেন:

"উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে,
তিনিই মধ্যম যিনি চলেন তফাতে।"
অধমকে দূরে ঠেলে দেয়া নয়, তার পাশে থেকে সর্বদা তাকে সংশোধনের প্রচেষ্টা করতে হবে। প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে ব্যক্তিটি সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। কিন্তু যাকে সংশোধন করতে হবে, তিনি যেন ঘুনাক্ষরেও টের না পান যে তাকে সংশোধনের প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। তবে সে বেঁকে বসতে পারে হীতে বিপরীত হতে পারে। নিজেকে স্থির রেখে জগতে আশেপাশের সকলের সাথেই মেশা উচিত। জগতে দুধ এবং জল একসাথে থাকলে দুধেজলে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তখন আর তাদের স্বতন্ত্রতা আলাদা করে টের পাওয়া যায় না। কিন্তু আলাদাভাবে যদি দুধের মাখন তুলে জলে রাখা হয়, তবে কখনো দুধের সার মাখন এবং জল এ দুটি উপাদান মিলেমিশে কখনো একাকার হয় না। জগতে প্রত্যেকটি মানুষ তো বটেই, এমনকি প্রত্যেকটি প্রাণী থেকেও ব্যাপক শিক্ষনীয় বিষয় রয়েছে। তাই উত্তম, মধ্যম, অধম সকলের সাথেই মিশতে হবে, তবে নিজের স্বতন্ত্রতা বজায় রেখে। উপকারের প্রতিদান হিসেবে অনেক অধম ব্যক্তি উপকারীর ক্ষতি করার চেষ্টা করে। আবার অনেকে স্বভাবের গুণে শুধুই অকারণে অন্যের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। এমন মানুষের সংখ্যাও জগতে কম নয়। সেই সকল তামসিক ভাবাপন্ন অধম ব্যক্তিদের প্রথমে যথাসম্ভব বুঝাতে হবে যে, তাদের পথটি সঠিক নয়। তারা অন্যার পথ অবলম্বন করছে। যদি তারা নিজেদের ভুল উপলব্ধি করতে না পারে, তবে তাদের থেকে দূরে থাকাই মঙ্গল। যাদের নিজদের প্রবৃত্তি তামসিক এবং হানিকর, তারা অন্যের ক্ষতি বা ক্ষতিচিন্তা করবেই। অনেকে এই তামসিক অধম প্রবৃত্তি বংশীয়ভাবে লাভ করে। সেই ব্যক্তিগণ অন্যের ক্ষতিচিন্তা ছাড়া একদণ্ড সুস্থ থাকতে পারে না। অধম ব্যক্তিগণ অন্যের ক্ষতি করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু উত্তমকে উত্তমের মর্যাদা গৌরব রক্ষা করতে হবে।বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর কপালকুণ্ডলা উপন্যাসে বলেছেন, "তুমি অধম তাই বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন?" এটা সত্য যে কাকের দেশে ময়ূর সেঁজে লাভ নেই। অথবা ময়ূয়ের দেশে কাক হয়ে সারাক্ষণ 'কাকা' করে লাভ নেই। আবার একথাও সত্য সকলেই সকল স্তরে নেমে সকল কাজ করতে পারে না। নিম্ন কুরুচিপূর্ণ কেউ যদি, কোন মহৎপ্রাণ উত্তম ব্যক্তির সাথে অসভ্যতা করে। তবে উত্তম ব্যক্তি কখনো সেই অধম ব্যক্তির পর্যায়ে নেমে সমশ্রেণীর কুরুচিপূর্ণ আচরণ কখনো করে না এবং কখনো করতেও পারবে না। বিবেক তাকে বাঁধা দিবে। বিবেকের দংশনে সে অস্থির হয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে বাংলা সাহিত্যে 'ছন্দের যাদুকর' খ্যাত কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ( ১১ ফেব্রুয়ারি, ১৮৮২ - ২৫ জুন, ১৯২২) 'উত্তম ও অধম' নামে একটি বিখ্যাত কবিতা রয়েছে। সে কবিতায় কবি বলেছেন:
"কষ্টে হাসিয়া আর্ত কহিল
'তুই রে হাসালি মোরে,
দাঁত আছে বলে কুকুরের পায়ে
দংশি কেমন করে?'
কুকুরের কাজ কুকুর করেছে
কামড় দিয়েছে পায়,
তা বলে কুকুরে কামড়ানো কিরে
মানুষের শোভা পায়?"
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতার বাস্তবতায় বলতে হয়, কুকুরের কাজ কুকুর করবেই। সে অকারণে বা কারণে সুযোগ পেলে কামড়ে দিবেই। কিন্তু বিপরীতে মানুষ কখনো কুকুরকে কামড়ে দেয় না। এটা মানুষের শোভা পায় না। মানুষ নামে জন্ম হলেই, সবাই মানুষ হয় না; তাকে আগে মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হয়। মনুষ্যত্ববোধ থাকলে, তবেই তাকে মানুষ বলে অবিহিত করা হয়। অবশ্য কবিতাটিতে কুকুরের সাথে তুলনা না করে অন্য প্রাণীর সাথে করলে, আরও যৌক্তিক হত। কবি কামড়ানো বৈশিষ্ট্যের কারণে, কুকুরের সাথে তুলনা টেনেছেন। কুকুর মানুষকে কামড়ে দেয়, একথা সত্য। কিন্তু এরপরেও বলতে হয়, আমাদের আশেপাশের অধিকাংশ কুকুরেরাই বিশ্বস্ত। তা সে নেড়ে কুকুর হোক, আর বিদেশি কুকুর হোক। তারা সহজে মনিবের সাথে বিস্বাসঘাতকতা করে না। তবে পাগলা কুকুর ব্যতিক্রম।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।

মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁