-->

ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

"পণ্ডিতাঃ সমদর্শিনঃ," গীতায় সাম্যবাদী প্রেরণা ।

"পণ্ডিতাঃ সমদর্শিনঃ," গীতায় সাম্যবাদী প্রেরণা  প্রত্যেক জীবের মাঝেই পরমেশ্বর বিরাজমান। বিষয়টি কেউ অনুভব করতে পারে, কেউ অনুভবকে তীব্রতর করে তাঁকে নিজ অন্তঃকরণে দর্শন করে। তবে অধিকাংশই থাকে অন্ধকারে। প্রত্যেকের মধ্যে একই ব্রহ্মসত্ত্বা থাকার পরেও আমরা একজন অন্যজনের সাথে প্রতিনিয়ত ভেদ সৃষ্টি করছি, বিভেদ করছি।কিন্তু একজন সাধক জীবন্মুক্ত বা স্থিতপ্রজ্ঞ হয়ে গেলে তাঁর মাঝে আর ভেদ থাকে না। তিনি যে অখণ্ড শক্তির অংশ এবং প্রকাশ -এ তত্ত্বটি প্রতিক্ষণ উপলব্ধি করেন। তখন প্রত্যেকটি জীবের প্রতি তিনি সমদর্শী হয়ে ওঠেন।শ্রীমদ্ভগবদগীতা অনুসারে, এ অবস্থায় মানুষ বিদ্যা-বিনয়সম্পন্ন ব্রাহ্মণ, গাভী, হস্তী, কুকুর ও চণ্ডাল জগতের ক্ষুদ্র বৃহৎ সকলকেই সমানদৃষ্টিতে দেখেন। বিদ্যাবিনয়সম্পন্নে ব্রাহ্মণে গবি হস্তিনি । শুনি চৈব শ্বপাকে চ পণ্ডিতাঃ সমদর্শিনঃ ॥ ইহৈব তৈর্জিতঃ সর্গো যেষাং সাম্যে স্থিতং মনঃ । নির্দোষং হি সমং ব্রহ্ম তস্মাদ্ ব্রহ্মণি তে স্থিতাঃ॥  (গীতা:৫. ১৮-১৯) "আত্মবিৎ পণ্ডিতেরা বিদ্যা-বিনয়সম্পন্ন ব্রাহ্মণ, গাভী, হস্তী, কুকুর ও চণ্ডাল সকলের প্রতি সমদর্শী হন।যাঁদের মন সমস্ত জীবের প্রতি সমদর্শী, ইহলোকে থেকেই তাঁরা জন্ম ও মৃত্যুর সংসার জয় করেছেন। তাঁরা ব্রহ্মের মত নির্দোষ। তাই সেই সমদর্শী মহাপুরুষেরা ব্রহ্মেই অবস্থিত হয়ে আছেন।" এ সমদর্শী কথাগুলো আমাদের ধর্মগ্রন্থের অসংখ্য স্থানেই আছে। কিন্তু কথাগুলোর খুব একটা প্রয়োগ আমরা বর্তমানকালে আমাদের সম্প্রদায়ে মাঝে দেখি না। আমরা ইনিয়ে বিনিয়ে, যতই আলোচনা হোক, দিনশেষে "তালগাছটা আমার" এ তত্ত্বে স্থির। আর এ সকল শাস্ত্রকথা যদি শুনিও, তবে এককান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বাহির করে দেই। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে একটি গল্পের কথা: এক পরিবারের বউ এবং শাশুড়ী দুজনে মিলে ভাগবত পাঠ শুনতে গিয়েছে। ভাগবত পাঠক বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে জীবে প্রেম, হিংসা না করা, মানুষকে ভালবাসা, পশুপাখি প্রাণীকুলকে ভালবাসা, মানুষ এবং প্রাণীদের প্রতিদিন সাধ্যমত অন্নদান করা এতে ভগবান গোবিন্দ প্রসন্ন হন ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে পাঠে বিস্তারিত বললেন। সারারাত আসরে পাঠ শুনে বউ শাশুড়ী সকালেই বাড়ি ফিরেছে। গরীব কৃষক পরিবার, ঘরে তো কাজের অন্ত নেই। তখন ধান শুকানোর সময় চলছে। বউ উঠানে ধান শুকাতে দিয়েছে। ধান শুকাতে দিয়ে বউ ঘরের রান্নার কাজ করছে এবং শাশুড়ী ঘরের লক্ষ্মীর আসনের পূজা দিচ্ছে। কিছুটা পরে বউ এসে দেখে উঠানে শুকাতে দেয়া ধানগুলো চড়ুই সহ বিভিন্ন পাখিরা মনের আনন্দে খাচ্ছে। পাখিদের ধান খেতে দেখে,বউয়ের গতকালের পাঠক ঠাকুরের বলা কথাগুলো মনে পড়লো। তিনি বলেছেন, প্রত্যেকটি জীবের মাঝেই প্রাণগোবিন্দ বিরাজ করে, তাই জীবের আনন্দ মানে গোবিন্দের আনন্দ। কৃষক গৃহবধূ এ কথাগুলো স্মরণ করে আনন্দিত হয়ে উঠলো। তিনি মনে করলেন তার ধান গোবিন্দরূপ চড়ুইরা খেয়ে যাচ্ছে;এতে তার মহাপুণ্য হচ্ছে।তিনি তখন উচ্চস্বরে বারেবারে জয়ধ্বনি দিতে থাকলেন,"গোবিন্দায় নমঃ, গোবিন্দায় নমঃ, গোবিন্দায় নমঃ!" বউমার কন্ঠে জয়ধ্বনি শুনে শাশুড়ী একরাশ কৌতুহল নিয়ে পূজা থেকে চলে আসলেন। এসে দেখলেন উঠানের ধান প্রায় অর্ধেক নেই। একঝাঁক পাখি মিলে আনন্দে খাচ্ছে। এবং তার পুত্রবধূ পাখিদের না তাড়িয়ে উল্টো গোবিন্দায় নমঃ, জয়ধ্বনি দিচ্ছে। শাশুড়ী তখন পুত্রবধূকে বললেন, "মা তোমার কি হয়েছে, এমন করছ কেন?" তখন পুত্রবধূ বললো, "মা কাল ভাগবত ঠাকুর বললেন প্রত্যেকটি জীবের মাঝেই গোবিন্দ বিরাজ করে, তাই তাদের সেবা করা প্রাণগোবিন্দেরই সেবা।" শাশুড়ী তখন পুত্রবধূকে বললেন, "হায়রে আমার কপাল, এতকাল আমিই ভাগবত শুনতে যেতাম, শুধু কালই তোমাকে নিয়ে গেলাম, তার কারণেই আমার এত ক্ষতি হল, পাখিগুলো অর্ধেক ধান খেয়ে ফেললো।" পুত্রবধূ বললেন," মা, এটা তো আমাদের আনন্দের, সৌভাগ্যের, গোবিন্দ পাখিরূপে আমাদের অন্ন গ্রহণ করলেন।" ক্ষুব্ধ হতভম্ব শাশুড়ী তখন বললেন, "বউমা আমরা কাল সারারাত ভাগবত শুনে আজ যে বাড়ি এসেছি কি পাড়ি দিয়ে এসেছি?" পুত্রবধূ বললেন, "নদী পাড়ি দিয়ে।" শাশুড়ী বললেন, "ঠিক বলেছ মা, আমি কাল ভাগবত ঠাকুর যা বলেছে তা সকলই নদীর ওপারে রেখে এসেছি। কিন্তু তুমি তার কথাগুলো আমাদের বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে এসেছ, তাই আজ আমার এমন সর্বনাশ হল, গরীবের ধানগুলো পাখিতে খেয়ে নিল। ধর্মকথা শাস্ত্রকথা সকলি শুধু মন্দিরে বসে শুনে, ওখানেই রেখে আসতে হয়, বাড়ির মধ্যে আনতে নেই। যদি আন, তবে এমনিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।" আমাদের সমাজের অবস্থা অনেকটা এ বউ-শাশুড়ীর কথোপকথনের মত। আমরা জানি অনেক কিছুই, কিন্তু পালন করি না, আচরণ করি না। শুধু তাই করি এবং বলি যার সাথে আমাদের ব্যক্তিস্বার্থ জড়িত। ঋগ্বেদের শেষ সূক্তে আমাদের জাতপাত নির্বিশেষে এক হতে বলা হয়েছে, কিন্তু আমরা কতটা হতে পেরেছি?সর্বভূতে আত্মাকে দর্শন করতে হবে এবং নিজ আত্মাতেই সর্বভূতকে দর্শন করতে হবে তবেই আমাদের এ সমদর্শী বোধ হবে ৷ মানুষ যেমন নিজের প্রতি নিজে বিদ্বেষ করে না। এ কারণেই একবার যদি সকল আত্মাতে নিজ আত্মা বোধ হয়, তবে আর মনে বিভেদ থাকে না। একটি ঘরের চারিদিকে যদি একটি আয়না স্থাপন করা থাকে এবং যে ব্যক্তি সে ঘরে থাকবে তিনি শুধু আয়নাতে নিজেকেই দেখবেন। সে যদি সার্বক্ষণিক নিজেকেই দেখে তবে আর বিভেদ করবে কার সাথে? শ্রীমদ্ভগবদগীতার ষষ্ঠ অধ্যায়ে বিষয়টি অত্যন্ত সুন্দর করে বলা আছে। সর্বভূতস্থমাত্মানং সর্বভূতানি চাত্মনি ৷ ঈক্ষতে যোগযুক্তাত্মা সর্বত্র সমদর্শনঃ ॥ যো মাং পশ্যতি সর্বত্র সর্বং চ ময়ি পশ্যতি। তস্যাহং ন প্রণশ্যামি স চ মে ন প্রণশ্যতি।। সর্বভূতস্থিতং যো মাং ভজত্যেকত্বমাস্থিতঃ ৷ সর্বথা বর্তমানোঽপি স যোগী ময়ি বর্ততে ॥ (গীতা:৬. ২৯-৩১) "প্রকৃত যোগী সমদর্শী হয়ে সর্বভূতে আত্মাকে দর্শন করেন এবং নিজ আত্মাতেই সর্বভূতকে দর্শন করেন ৷  যিনি আমাকে সর্বভূতে অবস্থিত দেখেন এবং আমাতে সর্বভূতের অবস্থিত দেখেন, আমি তাঁর অদৃশ্য হই না এবং তিনিও আমার অদৃশ্য হন না। যে যোগী সমত্ববুদ্ধি অবলম্বন করে সর্বভূতে ভেদজ্ঞান পরিত্যাগ করে সর্বভূতস্থিত পরমাত্মারূপে আমাকে জেনে আমার ভজনা করেন, তিনি সর্ব অবস্থাতে আমাতেই অবস্থান করেন" সনাতন ধর্ম একটি উচ্চ মানবিক বোধের উপরে প্রতিষ্ঠিত। হয়ত সে উচ্চ ভাবটি অনেক সময়ে আমাদের সমাজের শেকড় পর্যন্ত পৌঁছে না ; তখনই এ সমদর্শী ভাবের ব্যত্যয় ঘটে। বিদ্বেষ বেড়ে চলে। ধর্মের সাথে যখন তন্ত্র যুক্ত হয় তখন ধর্মতন্ত্র হয়; একইভাবে সাধুর সাথে তন্ত্র যুক্ত হয়ে সাধুতন্ত্র হয়। ধর্ম এবং সাধুত্ব থেকে ধর্মতন্ত্র এবং সাধুতন্ত্র এনেকটাই আলাদা। এর সাথে যুক্ত থাকে ব্যক্তিস্বার্থের খেলে। তখন তা অনেক সময়ে মানুষ নিপিড়নের হাতিয়ার হয়ে ওঠে।সর্বদা অন্তঃস্থিত সাত্ত্বিক ভাবের উদ্বোধন প্রয়োজন। হৃদয়ে এ সাত্ত্বিক ভাব আসলে, বহুধা বিভক্ত সকল প্রাণীর অভ্যন্তরে এক অবিভক্ত চিন্ময় ভাব দর্শন হয়। তখন মানুষ নিজের মাঝে অন্যকে দেখতে পায় এবং অন্যের মাঝে নিজেকে। তখন প্রাণীমাত্রই বিদ্বেষ ভাব আপনিই চলে যায়। সর্বভূতেষু যেনৈকং ভাবমব্যয়মীক্ষতে । অবিভক্তং বিভক্তেষু তজ্ জ্ঞানং বিদ্ধি সাত্ত্বিকম্॥  (গীতা:১৮.২০) "যে জ্ঞানের দ্বারা বহুধা বিভক্ত সমস্ত প্রাণীতে এক অবিভক্ত চিন্ময় ভাব দর্শন হয়, জীব আপাতদৃষ্টিতে পরস্পর ভিন্ন হলেও চিন্ময় সত্তায় তারা এক, সে জ্ঞানকে সাত্ত্বিক বলে জানবে।" সত্ত্বগুণ বা সাত্ত্বিক ভাবের জাগরণ যদি ব্যক্তির মধ্যে না হয়, তবে সে অধঃপতিত হয়। সত্ত্বগুণে যেমন সমদর্শীতা লাভ হয় এবং মুক্তির পথে অগ্রসর হয়, তেমনি তামসিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তিগণ অধোগামী হয়ে তমিস্রাদি নরক বা পশ্বাদি যোনিতে গমন করে। তারা দিনেদিনে জন্মেজন্মে অন্ধকার থেকে অন্ধকারতর, অন্ধকারতম লোকের দিকে ধাবিত হতে থাকে।  ঊর্ধ্বং গচ্ছন্তি সত্ত্বস্থা মধ্যে তিষ্ঠন্তি রাজসাঃ।  জঘন্যগুণবৃত্তিস্থা অধো গচ্ছন্তি তামসাঃ।। (গীতা: ১৪.১৮) "সত্ত্বগুণ-সম্পন্ন ব্যক্তিগণ ঊর্ধ্বে উচ্চতর লোকে গমন করে, রজোগুণ-সম্পন্ন ব্যক্তিগণ মধ্যে নরলোকে অবস্থান করে এবং তামসিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তিগণ অধোগামী হয়ে তমিস্রাদি নরক বা পশ্বাদি যোনিতে গমন করে।" বাহ্যিক আচরণ নয়, ভগবান গীতার দ্বাদশ অধ্যায় ভক্তিযোগে এ মানবিক গুণাবলিকেই অমৃতময় ধর্ম বলেছেন এবং বলেছেন যিনি এগুলো পালন তিনিই তাঁর প্রিয় ভক্ত। সর্বভূতের অন্তঃস্থিত হরিকে আমরা উপলব্ধি করতে পারিনা বলেই আমাদের মধ্যে ভেদ জন্মায়, বিভিন্ন অহংকার অভিমান জন্মায়। যা মুক্তির পথে প্রচণ্ড অন্তরায়। আমাদের সমদর্শী হতে হবে, উপলব্ধি করতে হবে প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই তিনি আছেন,তবেই আমাদের মনের বিদ্বেষের বরফ গলবে, নচেৎ নয়।  অদ্বেষ্টা সর্বভূতানাং মৈত্রঃ করুণ এব চ । নির্মমো নিরহঙ্কারঃ সমদুঃখসুখঃ ক্ষমী ।। সন্তুষ্টঃ সততং যোগী যতাত্মা দৃঢ়নিশ্চয়ঃ। ময্যর্পিতমনোবুদ্ধির্যো মদ্ভক্তঃ স মে প্রিয়ঃ।। (গীতা:১২.১৩-১৪) "যিনি সর্বভূতে দ্বেষহীন, বন্ধুভাবাপন্ন, দয়ালু, সমত্ববুদ্ধিযুক্ত, অহংকার বর্জিত, যিনি সুখে দুঃখে সমভাবাপন্ন, সর্বদা সন্তুষ্ট, সবসময় সমাহিত চিত্ত, সংযতস্বভাব, দৃঢবিশ্বাসী এবং যাঁর মন ও বুদ্ধি সর্বদা আমাতে অর্পিত এই প্রকার ব্যক্তিই আমার প্রিয় ভক্ত।" জগতে এমন কোন স্থান নেই যে স্থানে ঈশ্বর নেই, যেখানেই চোখ পড়ে সেখানেই তিনি, জগতে তিনি ছাড়া আর কিছুই নেই। আমার মধ্যেও তিনি, সকলের মধ্যেই তিনি, তবে এ অহেতুক বিদ্বেষ কেন? আমরা ভুলে যাই, আগুন দিয়ে কখনও আগুন নেভানো যায় না। বিদ্বেষের আগুন মনের মধ্যে পুষে রাখলে, সে আগুনে নিজেকেই দগ্ধ হতে হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, বিমল হৃদয়ে সর্বজীবে সমদর্শী হয়ে প্রেম বিতরণ করলেই এ হিংসাদ্বেষ, ছদ্মবেশ, মান-অভিমান চলে যায়। "হৃদয় বিমল হোক, প্রাণ সবল হোক, বিঘ্ন দাও অপসারি॥ কেন এ হিংসাদ্বেষ, কেন এ ছদ্মবেশ, কেন এ মান-অভিমান। বিতর' বিতর' প্রেম পাষাণহৃদয়ে, জয় জয় হোক তোমারি॥" শ্রীমদ্ভগবদগীতার "পণ্ডিতাঃ সমদর্শিনঃ," -এ বাক্যে বৈশ্বিক সাম্যবাদী প্রেরণা দেয়া হয়েছে। যেখানে কোন নারীপুরুষ ভেদ নেই, জাতিতে জাতিতে ভেদ নেই, মানবে মানবে ভেদ নেই ; প্রত্যকটি জীবের মধ্যে ব্রহ্মের উপস্থিতি এবং সমদর্শীতার কথা বলা হয়েছে।সাম্যবাদের প্রবর্তক হিসেবে জগতে যারা খ্যাতিমান, আমি ঠিক জানি না তারা বেদ-গীতার সাম্যবাদী তত্ত্বের বাইরে নতুন কথা কি বলেছেন? অধুনা সাম্যবাদীদের পদ্ধতি পরিকল্পনা হয়ত আলাদা। কিন্তু সাম্যবাদের তত্ত্ব এবং প্রেরণার অপাপবিদ্ধ গঙ্গাস্রোত বেদ-গীতা বাহিত হয়ে জগতে আবহমান প্রবাহিত।  শ্রীকুশল বরণ চক্রবর্ত্তী সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ। ফেসবুক পোস্ট লিঙ্ক : Facebook ফেসবুক পেজ লিঙ্ক :  Shri Kushal Baran Chakraborty | Facebook  প্রত্যেক জীবের মাঝেই পরমেশ্বর বিরাজমান। বিষয়টি কেউ অনুভব করতে পারে, কেউ অনুভবকে তীব্রতর করে তাঁকে নিজ অন্তঃকরণে দর্শন করে। তবে অধিকাংশই থাকে অন্ধকারে। প্রত্যেকের মধ্যে একই ব্রহ্মসত্ত্বা থাকার পরেও আমরা একজন অন্যজনের সাথে প্রতিনিয়ত ভেদ সৃষ্টি করছি, বিভেদ করছি।কিন্তু একজন সাধক জীবন্মুক্ত বা স্থিতপ্রজ্ঞ হয়ে গেলে তাঁর মাঝে আর ভেদ থাকে না। তিনি যে অখণ্ড শক্তির অংশ এবং প্রকাশ -এ তত্ত্বটি প্রতিক্ষণ উপলব্ধি করেন। তখন প্রত্যেকটি জীবের প্রতি তিনি সমদর্শী হয়ে ওঠেন।শ্রীমদ্ভগবদগীতা অনুসারে, এ অবস্থায় মানুষ বিদ্যা-বিনয়সম্পন্ন ব্রাহ্মণ, গাভী, হস্তী, কুকুর ও চণ্ডাল জগতের ক্ষুদ্র বৃহৎ সকলকেই সমানদৃষ্টিতে দেখেন। বিদ্যাবিনয়সম্পন্নে ব্রাহ্মণে গবি হস্তিনি । শুনি চৈব শ্বপাকে চ পণ্ডিতাঃ সমদর্শিনঃ ॥ ইহৈব তৈর্জিতঃ সর্গো যেষাং সাম্যে স্থিতং মনঃ । নির্দোষং হি সমং ব্রহ্ম তস্মাদ্ ব্রহ্মণি তে স্থিতাঃ॥  (গীতা:৫. ১৮-১৯) "আত্মবিৎ পণ্ডিতেরা বিদ্যা-বিনয়সম্পন্ন ব্রাহ্মণ, গাভী, হস্তী, কুকুর ও চণ্ডাল সকলের প্রতি সমদর্শী হন।যাঁদের মন সমস্ত জীবের প্রতি সমদর্শী, ইহলোকে থেকেই তাঁরা জন্ম ও মৃত্যুর সংসার জয় করেছেন। তাঁরা ব্রহ্মের মত নির্দোষ। তাই সেই সমদর্শী মহাপুরুষেরা ব্রহ্মেই অবস্থিত হয়ে আছেন।" এ সমদর্শী কথাগুলো আমাদের ধর্মগ্রন্থের অসংখ্য স্থানেই আছে। কিন্তু কথাগুলোর খুব একটা প্রয়োগ আমরা বর্তমানকালে আমাদের সম্প্রদায়ে মাঝে দেখি না। আমরা ইনিয়ে বিনিয়ে, যতই আলোচনা হোক, দিনশেষে "তালগাছটা আমার" এ তত্ত্বে স্থির। আর এ সকল শাস্ত্রকথা যদি শুনিও, তবে এককান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বাহির করে দেই। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে একটি গল্পের কথা: এক পরিবারের বউ এবং শাশুড়ী দুজনে মিলে ভাগবত পাঠ শুনতে গিয়েছে। ভাগবত পাঠক বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে জীবে প্রেম, হিংসা না করা, মানুষকে ভালবাসা, পশুপাখি প্রাণীকুলকে ভালবাসা, মানুষ এবং প্রাণীদের প্রতিদিন সাধ্যমত অন্নদান করা এতে ভগবান গোবিন্দ প্রসন্ন হন ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে পাঠে বিস্তারিত বললেন। সারারাত আসরে পাঠ শুনে বউ শাশুড়ী সকালেই বাড়ি ফিরেছে। গরীব কৃষক পরিবার, ঘরে তো কাজের অন্ত নেই। তখন ধান শুকানোর সময় চলছে। বউ উঠানে ধান শুকাতে দিয়েছে। ধান শুকাতে দিয়ে বউ ঘরের রান্নার কাজ করছে এবং শাশুড়ী ঘরের লক্ষ্মীর আসনের পূজা দিচ্ছে। কিছুটা পরে বউ এসে দেখে উঠানে শুকাতে দেয়া ধানগুলো চড়ুই সহ বিভিন্ন পাখিরা মনের আনন্দে খাচ্ছে। পাখিদের ধান খেতে দেখে,বউয়ের গতকালের পাঠক ঠাকুরের বলা কথাগুলো মনে পড়লো। তিনি বলেছেন, প্রত্যেকটি জীবের মাঝেই প্রাণগোবিন্দ বিরাজ করে, তাই জীবের আনন্দ মানে গোবিন্দের আনন্দ। কৃষক গৃহবধূ এ কথাগুলো স্মরণ করে আনন্দিত হয়ে উঠলো। তিনি মনে করলেন তার ধান গোবিন্দরূপ চড়ুইরা খেয়ে যাচ্ছে;এতে তার মহাপুণ্য হচ্ছে।তিনি তখন উচ্চস্বরে বারেবারে জয়ধ্বনি দিতে থাকলেন,"গোবিন্দায় নমঃ, গোবিন্দায় নমঃ, গোবিন্দায় নমঃ!" বউমার কন্ঠে জয়ধ্বনি শুনে শাশুড়ী একরাশ কৌতুহল নিয়ে পূজা থেকে চলে আসলেন। এসে দেখলেন উঠানের ধান প্রায় অর্ধেক নেই। একঝাঁক পাখি মিলে আনন্দে খাচ্ছে। এবং তার পুত্রবধূ পাখিদের না তাড়িয়ে উল্টো গোবিন্দায় নমঃ, জয়ধ্বনি দিচ্ছে। শাশুড়ী তখন পুত্রবধূকে বললেন, "মা তোমার কি হয়েছে, এমন করছ কেন?" তখন পুত্রবধূ বললো, "মা কাল ভাগবত ঠাকুর বললেন প্রত্যেকটি জীবের মাঝেই গোবিন্দ বিরাজ করে, তাই তাদের সেবা করা প্রাণগোবিন্দেরই সেবা।" শাশুড়ী তখন পুত্রবধূকে বললেন ,"হায়রে আমার কপাল, এতকাল আমিই ভাগবত শুনতে যেতাম, শুধু কালই তোমাকে নিয়ে গেলাম, তার কারণেই আমার এত ক্ষতি হল, পাখিগুলো অর্ধেক ধান খেয়ে ফেললো।" পুত্রবধূ বললেন," মা, এটা তো আমাদের আনন্দের, সৌভাগ্যের, গোবিন্দ পাখিরূপে আমাদের অন্ন গ্রহণ করলেন।" ক্ষুব্ধ হতভম্ব শাশুড়ী তখন বললেন, "বউমা আমরা কাল সারারাত ভাগবত শুনে আজ যে বাড়ি এসেছি কি পাড়ি দিয়ে এসেছি?" পুত্রবধূ বললেন, "নদী পাড়ি দিয়ে।" শাশুড়ী বললেন, "ঠিক বলেছ মা, আমি কাল ভাগবত ঠাকুর যা বলেছে তা সকলই নদীর ওপারে রেখে এসেছি। কিন্তু তুমি তার কথাগুলো আমাদের বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে এসেছ, তাই আজ আমার এমন সর্বনাশ হল, গরীবের ধানগুলো পাখিতে খেয়ে নিল। ধর্মকথা শাস্ত্রকথা সকলি শুধু মন্দিরে বসে শুনে, ওখানেই রেখে আসতে হয়, বাড়ির মধ্যে আনতে নেই। যদি আন, তবে এমনিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।" আমাদের সমাজের অবস্থা অনেকটা এ বউ-শাশুড়ীর কথোপকথনের মত। আমরা জানি অনেক কিছুই, কিন্তু পালন করি না, আচরণ করি না। শুধু তাই করি এবং বলি যার সাথে আমাদের ব্যক্তিস্বার্থ জড়িত। ঋগ্বেদের শেষ সূক্তে আমাদের জাতপাত নির্বিশেষে এক হতে বলা হয়েছে, কিন্তু আমরা কতটা হতে পেরেছি?সর্বভূতে আত্মাকে দর্শন করতে হবে এবং নিজ আত্মাতেই সর্বভূতকে দর্শন করতে হবে তবেই আমাদের এ সমদর্শী বোধ হবে ৷ মানুষ যেমন নিজের প্রতি নিজে বিদ্বেষ করে না। এ কারণেই একবার যদি সকল আত্মাতে নিজ আত্মা বোধ হয়, তবে আর মনে বিভেদ থাকে না। একটি ঘরের চারিদিকে যদি একটি আয়না স্থাপন করা থাকে এবং যে ব্যক্তি সে ঘরে থাকবে তিনি শুধু আয়নাতে নিজেকেই দেখবেন। সে যদি সার্বক্ষণিক নিজেকেই দেখে তবে আর বিভেদ করবে কার সাথে? শ্রীমদ্ভগবদগীতার ষষ্ঠ অধ্যায়ে বিষয়টি অত্যন্ত সুন্দর করে বলা আছে। সর্বভূতস্থমাত্মানং সর্বভূতানি চাত্মনি ৷ ঈক্ষতে যোগযুক্তাত্মা সর্বত্র সমদর্শনঃ ॥ যো মাং পশ্যতি সর্বত্র সর্বং চ ময়ি পশ্যতি। তস্যাহং ন প্রণশ্যামি স চ মে ন প্রণশ্যতি।। সর্বভূতস্থিতং যো মাং ভজত্যেকত্বমাস্থিতঃ ৷ সর্বথা বর্তমানোঽপি স যোগী ময়ি বর্ততে ॥ (গীতা:৬. ২৯-৩১) "প্রকৃত যোগী সমদর্শী হয়ে সর্বভূতে আত্মাকে দর্শন করেন এবং নিজ আত্মাতেই সর্বভূতকে দর্শন করেন ৷  যিনি আমাকে সর্বভূতে অবস্থিত দেখেন এবং আমাতে সর্বভূতের অবস্থিত দেখেন, আমি তাঁর অদৃশ্য হই না এবং তিনিও আমার অদৃশ্য হন না। যে যোগী সমত্ববুদ্ধি অবলম্বন করে সর্বভূতে ভেদজ্ঞান পরিত্যাগ করে সর্বভূতস্থিত পরমাত্মারূপে আমাকে জেনে আমার ভজনা করেন, তিনি সর্ব অবস্থাতে আমাতেই অবস্থান করেন" সনাতন ধর্ম একটি উচ্চ মানবিক বোধের উপরে প্রতিষ্ঠিত। হয়ত সে উচ্চ ভাবটি অনেক সময়ে আমাদের সমাজের শেকড় পর্যন্ত পৌঁছে না ; তখনই এ সমদর্শী ভাবের ব্যত্যয় ঘটে। বিদ্বেষ বেড়ে চলে। ধর্মের সাথে যখন তন্ত্র যুক্ত হয় তখন ধর্মতন্ত্র হয়; একইভাবে সাধুর সাথে তন্ত্র যুক্ত হয়ে সাধুতন্ত্র হয়। ধর্ম এবং সাধুত্ব থেকে ধর্মতন্ত্র এবং সাধুতন্ত্র এনেকটাই আলাদা। এর সাথে যুক্ত থাকে ব্যক্তিস্বার্থের খেলে। তখন তা অনেক সময়ে মানুষ নিপিড়নের হাতিয়ার হয়ে ওঠে।সর্বদা অন্তঃস্থিত সাত্ত্বিক ভাবের উদ্বোধন প্রয়োজন। হৃদয়ে এ সাত্ত্বিক ভাব আসলে, বহুধা বিভক্ত সকল প্রাণীর অভ্যন্তরে এক অবিভক্ত চিন্ময় ভাব দর্শন হয়। তখন মানুষ নিজের মাঝে অন্যকে দেখতে পায় এবং অন্যের মাঝে নিজেকে। তখন প্রাণীমাত্রই বিদ্বেষ ভাব আপনিই চলে যায়। সর্বভূতেষু যেনৈকং ভাবমব্যয়মীক্ষতে । অবিভক্তং বিভক্তেষু তজ্ জ্ঞানং বিদ্ধি সাত্ত্বিকম্॥  (গীতা:১৮.২০) "যে জ্ঞানের দ্বারা বহুধা বিভক্ত সমস্ত প্রাণীতে এক অবিভক্ত চিন্ময় ভাব দর্শন হয়, জীব আপাতদৃষ্টিতে পরস্পর ভিন্ন হলেও চিন্ময় সত্তায় তারা এক, সে জ্ঞানকে সাত্ত্বিক বলে জানবে।" সত্ত্বগুণ বা সাত্ত্বিক ভাবের জাগরণ যদি ব্যক্তির মধ্যে না হয়, তবে সে অধঃপতিত হয়। সত্ত্বগুণে যেমন সমদর্শীতা লাভ হয় এবং মুক্তির পথে অগ্রসর হয়, তেমনি তামসিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তিগণ অধোগামী হয়ে তমিস্রাদি নরক বা পশ্বাদি যোনিতে গমন করে। তারা দিনেদিনে জন্মেজন্মে অন্ধকার থেকে অন্ধকারতর, অন্ধকারতম লোকের দিকে ধাবিত হতে থাকে।  ঊর্ধ্বং গচ্ছন্তি সত্ত্বস্থা মধ্যে তিষ্ঠন্তি রাজসাঃ।  জঘন্যগুণবৃত্তিস্থা অধো গচ্ছন্তি তামসাঃ।। (গীতা: ১৪.১৮) "সত্ত্বগুণ-সম্পন্ন ব্যক্তিগণ ঊর্ধ্বে উচ্চতর লোকে গমন করে, রজোগুণ-সম্পন্ন ব্যক্তিগণ মধ্যে নরলোকে অবস্থান করে এবং তামসিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তিগণ অধোগামী হয়ে তমিস্রাদি নরক বা পশ্বাদি যোনিতে গমন করে।" বাহ্যিক আচরণ নয়, ভগবান গীতার দ্বাদশ অধ্যায় ভক্তিযোগে এ মানবিক গুণাবলিকেই অমৃতময় ধর্ম বলেছেন এবং বলেছেন যিনি এগুলো পালন তিনিই তাঁর প্রিয় ভক্ত। সর্বভূতের অন্তঃস্থিত হরিকে আমরা উপলব্ধি করতে পারিনা বলেই আমাদের মধ্যে ভেদ জন্মায়, বিভিন্ন অহংকার অভিমান জন্মায়। যা মুক্তির পথে প্রচণ্ড অন্তরায়। আমাদের সমদর্শী হতে হবে, উপলব্ধি করতে হবে প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই তিনি আছেন,তবেই আমাদের মনের বিদ্বেষের বরফ গলবে, নচেৎ নয়।  অদ্বেষ্টা সর্বভূতানাং মৈত্রঃ করুণ এব চ । নির্মমো নিরহঙ্কারঃ সমদুঃখসুখঃ ক্ষমী ।। সন্তুষ্টঃ সততং যোগী যতাত্মা দৃঢ়নিশ্চয়ঃ। ময্যর্পিতমনোবুদ্ধির্যো মদ্ভক্তঃ স মে প্রিয়ঃ।। (গীতা:১২.১৩-১৪) "যিনি সর্বভূতে দ্বেষহীন, বন্ধুভাবাপন্ন, দয়ালু, সমত্ববুদ্ধিযুক্ত, অহংকার বর্জিত, যিনি সুখে দুঃখে সমভাবাপন্ন, সর্বদা সন্তুষ্ট, সবসময় সমাহিত চিত্ত, সংযতস্বভাব, দৃঢবিশ্বাসী এবং যাঁর মন ও বুদ্ধি সর্বদা আমাতে অর্পিত এই প্রকার ব্যক্তিই আমার প্রিয় ভক্ত।" জগতে এমন কোন স্থান নেই যে স্থানে ঈশ্বর নেই, যেখানেই চোখ পড়ে সেখানেই তিনি, জগতে তিনি ছাড়া আর কিছুই নেই। আমার মধ্যেও তিনি, সকলের মধ্যেই তিনি, তবে এ অহেতুক বিদ্বেষ কেন? আমরা ভুলে যাই, আগুন দিয়ে কখনও আগুন নেভানো যায় না। বিদ্বেষের আগুন মনের মধ্যে পুষে রাখলে, সে আগুনে নিজেকেই দগ্ধ হতে হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, বিমল হৃদয়ে সর্বজীবে সমদর্শী হয়ে প্রেম বিতরণ করলেই এ হিংসাদ্বেষ, ছদ্মবেশ, মান-অভিমান চলে যায়। "হৃদয় বিমল হোক, প্রাণ সবল হোক, বিঘ্ন দাও অপসারি॥ কেন এ হিংসাদ্বেষ, কেন এ ছদ্মবেশ, কেন এ মান-অভিমান। বিতর' বিতর' প্রেম পাষাণহৃদয়ে, জয় জয় হোক তোমারি॥" শ্রীমদ্ভগবদগীতার "পণ্ডিতাঃ সমদর্শিনঃ," -এ বাক্যে বৈশ্বিক সাম্যবাদী প্রেরণা দেয়া হয়েছে। যেখানে কোন নারীপুরুষ ভেদ নেই, জাতিতে জাতিতে ভেদ নেই, মানবে মানবে ভেদ নেই ; প্রত্যকটি জীবের মধ্যে ব্রহ্মের উপস্থিতি এবং সমদর্শীতার কথা বলা হয়েছে।সাম্যবাদের প্রবর্তক হিসেবে জগতে যারা খ্যাতিমান, আমি ঠিক জানি না তারা বেদ-গীতার সাম্যবাদী তত্ত্বের বাইরে নতুন কথা কি বলেছেন? অধুনা সাম্যবাদীদের পদ্ধতি পরিকল্পনা হয়ত আলাদা। কিন্তু সাম্যবাদের তত্ত্ব এবং প্রেরণার অপাপবিদ্ধ গঙ্গাস্রোত বেদ-গীতা বাহিত হয়ে জগতে আবহমান প্রবাহিত।  শ্রীকুশল বরণ চক্রবর্ত্তী সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ। ফেসবুক পোস্ট লিঙ্ক : Facebook ফেসবুক পেজ লিঙ্ক :  Shri Kushal Baran Chakraborty | Facebook

প্রত্যেক জীবের মাঝেই পরমেশ্বর বিরাজমান। বিষয়টি কেউ অনুভব করতে পারে, কেউ অনুভবকে তীব্রতর করে তাঁকে নিজ অন্তঃকরণে দর্শন করে। তবে অধিকাংশই থাকে অন্ধকারে। প্রত্যেকের মধ্যে একই ব্রহ্মসত্ত্বা থাকার পরেও আমরা একজন অন্যজনের সাথে প্রতিনিয়ত ভেদ সৃষ্টি করছি, বিভেদ করছি।কিন্তু একজন সাধক জীবন্মুক্ত বা স্থিতপ্রজ্ঞ হয়ে গেলে তাঁর মাঝে আর ভেদ থাকে না। তিনি যে অখণ্ড শক্তির অংশ এবং প্রকাশ -এ তত্ত্বটি প্রতিক্ষণ উপলব্ধি করেন। তখন প্রত্যেকটি জীবের প্রতি তিনি সমদর্শী হয়ে ওঠেন।শ্রীমদ্ভগবদগীতা অনুসারে, এ অবস্থায় মানুষ বিদ্যা-বিনয়সম্পন্ন ব্রাহ্মণ, গাভী, হস্তী, কুকুর ও চণ্ডাল জগতের ক্ষুদ্র বৃহৎ সকলকেই সমানদৃষ্টিতে দেখেন।
বিদ্যাবিনয়সম্পন্নে ব্রাহ্মণে গবি হস্তিনি ।
শুনি চৈব শ্বপাকে চ পণ্ডিতাঃ সমদর্শিনঃ ॥
ইহৈব তৈর্জিতঃ সর্গো যেষাং সাম্যে স্থিতং মনঃ ।
নির্দোষং হি সমং ব্রহ্ম তস্মাদ্ ব্রহ্মণি তে স্থিতাঃ॥
(গীতা:৫. ১৮-১৯)
"আত্মবিৎ পণ্ডিতেরা বিদ্যা-বিনয়সম্পন্ন ব্রাহ্মণ, গাভী, হস্তী, কুকুর ও চণ্ডাল সকলের প্রতি সমদর্শী হন।যাঁদের মন সমস্ত জীবের প্রতি সমদর্শী, ইহলোকে থেকেই তাঁরা জন্ম ও মৃত্যুর সংসার জয় করেছেন। তাঁরা ব্রহ্মের মত নির্দোষ। তাই সেই সমদর্শী মহাপুরুষেরা ব্রহ্মেই অবস্থিত হয়ে আছেন।"
এ সমদর্শী কথাগুলো আমাদের ধর্মগ্রন্থের অসংখ্য স্থানেই আছে। কিন্তু কথাগুলোর খুব একটা প্রয়োগ আমরা বর্তমানকালে আমাদের সম্প্রদায়ে মাঝে দেখি না। আমরা ইনিয়ে বিনিয়ে, যতই আলোচনা হোক, দিনশেষে "তালগাছটা আমার" এ তত্ত্বে স্থির। আর এ সকল শাস্ত্রকথা যদি শুনিও, তবে এককান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বাহির করে দেই।
এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে একটি গল্পের কথা: এক পরিবারের বউ এবং শাশুড়ী দুজনে মিলে ভাগবত পাঠ শুনতে গিয়েছে। ভাগবত পাঠক বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে জীবে প্রেম, হিংসা না করা, মানুষকে ভালবাসা, পশুপাখি প্রাণীকুলকে ভালবাসা, মানুষ এবং প্রাণীদের প্রতিদিন সাধ্যমত অন্নদান করা এতে ভগবান গোবিন্দ প্রসন্ন হন ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে পাঠে বিস্তারিত বললেন। সারারাত আসরে পাঠ শুনে বউ শাশুড়ী সকালেই বাড়ি ফিরেছে। গরীব কৃষক পরিবার, ঘরে তো কাজের অন্ত নেই। তখন ধান শুকানোর সময় চলছে। বউ উঠানে ধান শুকাতে দিয়েছে। ধান শুকাতে দিয়ে বউ ঘরের রান্নার কাজ করছে এবং শাশুড়ী ঘরের লক্ষ্মীর আসনের পূজা দিচ্ছে। কিছুটা পরে বউ এসে দেখে উঠানে শুকাতে দেয়া ধানগুলো চড়ুই সহ বিভিন্ন পাখিরা মনের আনন্দে খাচ্ছে। পাখিদের ধান খেতে দেখে,বউয়ের গতকালের পাঠক ঠাকুরের বলা কথাগুলো মনে পড়লো। তিনি বলেছেন, প্রত্যেকটি জীবের মাঝেই প্রাণগোবিন্দ বিরাজ করে, তাই জীবের আনন্দ মানে গোবিন্দের আনন্দ। কৃষক গৃহবধূ এ কথাগুলো স্মরণ করে আনন্দিত হয়ে উঠলো। তিনি মনে করলেন তার ধান গোবিন্দরূপ চড়ুইরা খেয়ে যাচ্ছে;এতে তার মহাপুণ্য হচ্ছে।তিনি তখন উচ্চস্বরে বারেবারে জয়ধ্বনি দিতে থাকলেন,"গোবিন্দায় নমঃ, গোবিন্দায় নমঃ, গোবিন্দায় নমঃ!" বউমার কন্ঠে জয়ধ্বনি শুনে শাশুড়ী একরাশ কৌতুহল নিয়ে পূজা থেকে চলে আসলেন। এসে দেখলেন উঠানের ধান প্রায় অর্ধেক নেই। একঝাঁক পাখি মিলে আনন্দে খাচ্ছে। এবং তার পুত্রবধূ পাখিদের না তাড়িয়ে উল্টো গোবিন্দায় নমঃ, জয়ধ্বনি দিচ্ছে। শাশুড়ী তখন পুত্রবধূকে বললেন, "মা তোমার কি হয়েছে, এমন করছ কেন?"
তখন পুত্রবধূ বললো, "মা কাল ভাগবত ঠাকুর বললেন প্রত্যেকটি জীবের মাঝেই গোবিন্দ বিরাজ করে, তাই তাদের সেবা করা প্রাণগোবিন্দেরই সেবা।"
শাশুড়ী তখন পুত্রবধূকে বললেন ,"হায়রে আমার কপাল, এতকাল আমিই ভাগবত শুনতে যেতাম, শুধু কালই তোমাকে নিয়ে গেলাম, তার কারণেই আমার এত ক্ষতি হল, পাখিগুলো অর্ধেক ধান খেয়ে ফেললো।"
পুত্রবধূ বললেন," মা, এটা তো আমাদের আনন্দের, সৌভাগ্যের, গোবিন্দ পাখিরূপে আমাদের অন্ন গ্রহণ করলেন।"
ক্ষুব্ধ হতভম্ব শাশুড়ী তখন বললেন, "বউমা আমরা কাল সারারাত ভাগবত শুনে আজ যে বাড়ি এসেছি কি পাড়ি দিয়ে এসেছি?"
পুত্রবধূ বললেন, "নদী পাড়ি দিয়ে।"
শাশুড়ী বললেন, "ঠিক বলেছ মা, আমি কাল ভাগবত ঠাকুর যা বলেছে তা সকলই নদীর ওপারে রেখে এসেছি। কিন্তু তুমি তার কথাগুলো আমাদের বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে এসেছ, তাই আজ আমার এমন সর্বনাশ হল, গরীবের ধানগুলো পাখিতে খেয়ে নিল। ধর্মকথা শাস্ত্রকথা সকলি শুধু মন্দিরে বসে শুনে, ওখানেই রেখে আসতে হয়, বাড়ির মধ্যে আনতে নেই। যদি আন, তবে এমনিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।"
আমাদের সমাজের অবস্থা অনেকটা এ বউ-শাশুড়ীর কথোপকথনের মত। আমরা জানি অনেক কিছুই, কিন্তু পালন করি না, আচরণ করি না। শুধু তাই করি এবং বলি যার সাথে আমাদের ব্যক্তিস্বার্থ জড়িত। ঋগ্বেদের শেষ সূক্তে আমাদের জাতপাত নির্বিশেষে এক হতে বলা হয়েছে, কিন্তু আমরা কতটা হতে পেরেছি?সর্বভূতে আত্মাকে দর্শন করতে হবে এবং নিজ আত্মাতেই সর্বভূতকে দর্শন করতে হবে তবেই আমাদের এ সমদর্শী বোধ হবে ৷ মানুষ যেমন নিজের প্রতি নিজে বিদ্বেষ করে না। এ কারণেই একবার যদি সকল আত্মাতে নিজ আত্মা বোধ হয়, তবে আর মনে বিভেদ থাকে না। একটি ঘরের চারিদিকে যদি একটি আয়না স্থাপন করা থাকে এবং যে ব্যক্তি সে ঘরে থাকবে তিনি শুধু আয়নাতে নিজেকেই দেখবেন। সে যদি সার্বক্ষণিক নিজেকেই দেখে তবে আর বিভেদ করবে কার সাথে? শ্রীমদ্ভগবদগীতার ষষ্ঠ অধ্যায়ে বিষয়টি অত্যন্ত সুন্দর করে বলা আছে।
সর্বভূতস্থমাত্মানং সর্বভূতানি চাত্মনি ৷
ঈক্ষতে যোগযুক্তাত্মা সর্বত্র সমদর্শনঃ ॥
যো মাং পশ্যতি সর্বত্র সর্বং চ ময়ি পশ্যতি।
তস্যাহং ন প্রণশ্যামি স চ মে ন প্রণশ্যতি।।
সর্বভূতস্থিতং যো মাং ভজত্যেকত্বমাস্থিতঃ ৷
সর্বথা বর্তমানোঽপি স যোগী ময়ি বর্ততে ॥
(গীতা:৬. ২৯-৩১)
"প্রকৃত যোগী সমদর্শী হয়ে সর্বভূতে আত্মাকে দর্শন করেন এবং নিজ আত্মাতেই সর্বভূতকে দর্শন করেন ৷
যিনি আমাকে সর্বভূতে অবস্থিত দেখেন এবং আমাতে সর্বভূতের অবস্থিত দেখেন, আমি তাঁর অদৃশ্য হই না এবং তিনিও আমার অদৃশ্য হন না।
যে যোগী সমত্ববুদ্ধি অবলম্বন করে সর্বভূতে ভেদজ্ঞান পরিত্যাগ করে সর্বভূতস্থিত পরমাত্মারূপে আমাকে জেনে আমার ভজনা করেন, তিনি সর্ব অবস্থাতে আমাতেই অবস্থান করেন"
সনাতন ধর্ম একটি উচ্চ মানবিক বোধের উপরে প্রতিষ্ঠিত। হয়ত সে উচ্চ ভাবটি অনেক সময়ে আমাদের সমাজের শেকড় পর্যন্ত পৌঁছে না ; তখনই এ সমদর্শী ভাবের ব্যত্যয় ঘটে। বিদ্বেষ বেড়ে চলে। ধর্মের সাথে যখন তন্ত্র যুক্ত হয় তখন ধর্মতন্ত্র হয়; একইভাবে সাধুর সাথে তন্ত্র যুক্ত হয়ে সাধুতন্ত্র হয়। ধর্ম এবং সাধুত্ব থেকে ধর্মতন্ত্র এবং সাধুতন্ত্র এনেকটাই আলাদা। এর সাথে যুক্ত থাকে ব্যক্তিস্বার্থের খেলে। তখন তা অনেক সময়ে মানুষ নিপিড়নের হাতিয়ার হয়ে ওঠে।সর্বদা অন্তঃস্থিত সাত্ত্বিক ভাবের উদ্বোধন প্রয়োজন। হৃদয়ে এ সাত্ত্বিক ভাব আসলে, বহুধা বিভক্ত সকল প্রাণীর অভ্যন্তরে এক অবিভক্ত চিন্ময় ভাব দর্শন হয়। তখন মানুষ নিজের মাঝে অন্যকে দেখতে পায় এবং অন্যের মাঝে নিজেকে। তখন প্রাণীমাত্রই বিদ্বেষ ভাব আপনিই চলে যায়।
সর্বভূতেষু যেনৈকং ভাবমব্যয়মীক্ষতে ।
অবিভক্তং বিভক্তেষু তজ্ জ্ঞানং বিদ্ধি সাত্ত্বিকম্॥
(গীতা:১৮.২০)
"যে জ্ঞানের দ্বারা বহুধা বিভক্ত সমস্ত প্রাণীতে এক অবিভক্ত চিন্ময় ভাব দর্শন হয়, জীব আপাতদৃষ্টিতে পরস্পর ভিন্ন হলেও চিন্ময় সত্তায় তারা এক, সে জ্ঞানকে সাত্ত্বিক বলে জানবে।"
সত্ত্বগুণ বা সাত্ত্বিক ভাবের জাগরণ যদি ব্যক্তির মধ্যে না হয়, তবে সে অধঃপতিত হয়। সত্ত্বগুণে যেমন সমদর্শীতা লাভ হয় এবং মুক্তির পথে অগ্রসর হয়, তেমনি তামসিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তিগণ অধোগামী হয়ে তমিস্রাদি নরক বা পশ্বাদি যোনিতে গমন করে। তারা দিনেদিনে জন্মেজন্মে অন্ধকার থেকে অন্ধকারতর, অন্ধকারতম লোকের দিকে ধাবিত হতে থাকে।
ঊর্ধ্বং গচ্ছন্তি সত্ত্বস্থা মধ্যে তিষ্ঠন্তি রাজসাঃ।
জঘন্যগুণবৃত্তিস্থা অধো গচ্ছন্তি তামসাঃ।।
(গীতা: ১৪.১৮)
"সত্ত্বগুণ-সম্পন্ন ব্যক্তিগণ ঊর্ধ্বে উচ্চতর লোকে গমন করে, রজোগুণ-সম্পন্ন ব্যক্তিগণ মধ্যে নরলোকে অবস্থান করে এবং তামসিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তিগণ অধোগামী হয়ে তমিস্রাদি নরক বা পশ্বাদি যোনিতে গমন করে।"
বাহ্যিক আচরণ নয়, ভগবান গীতার দ্বাদশ অধ্যায় ভক্তিযোগে এ মানবিক গুণাবলিকেই অমৃতময় ধর্ম বলেছেন এবং বলেছেন যিনি এগুলো পালন তিনিই তাঁর প্রিয় ভক্ত। সর্বভূতের অন্তঃস্থিত হরিকে আমরা উপলব্ধি করতে পারিনা বলেই আমাদের মধ্যে ভেদ জন্মায়, বিভিন্ন অহংকার অভিমান জন্মায়। যা মুক্তির পথে প্রচণ্ড অন্তরায়। আমাদের সমদর্শী হতে হবে, উপলব্ধি করতে হবে প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই তিনি আছেন,তবেই আমাদের মনের বিদ্বেষের বরফ গলবে, নচেৎ নয়।
অদ্বেষ্টা সর্বভূতানাং মৈত্রঃ করুণ এব চ ।
নির্মমো নিরহঙ্কারঃ সমদুঃখসুখঃ ক্ষমী ।।
সন্তুষ্টঃ সততং যোগী যতাত্মা দৃঢ়নিশ্চয়ঃ।
ময্যর্পিতমনোবুদ্ধির্যো মদ্ভক্তঃ স মে প্রিয়ঃ।।
(গীতা:১২.১৩-১৪)
"যিনি সর্বভূতে দ্বেষহীন, বন্ধুভাবাপন্ন, দয়ালু, সমত্ববুদ্ধিযুক্ত, অহংকার বর্জিত, যিনি সুখে দুঃখে সমভাবাপন্ন, সর্বদা সন্তুষ্ট, সবসময় সমাহিত চিত্ত, সংযতস্বভাব, দৃঢবিশ্বাসী এবং যাঁর মন ও বুদ্ধি সর্বদা আমাতে অর্পিত এই প্রকার ব্যক্তিই আমার প্রিয় ভক্ত।"
জগতে এমন কোন স্থান নেই যে স্থানে ঈশ্বর নেই, যেখানেই চোখ পড়ে সেখানেই তিনি, জগতে তিনি ছাড়া আর কিছুই নেই। আমার মধ্যেও তিনি, সকলের মধ্যেই তিনি, তবে এ অহেতুক বিদ্বেষ কেন? আমরা ভুলে যাই, আগুন দিয়ে কখনও আগুন নেভানো যায় না। বিদ্বেষের আগুন মনের মধ্যে পুষে রাখলে, সে আগুনে নিজেকেই দগ্ধ হতে হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, বিমল হৃদয়ে সর্বজীবে সমদর্শী হয়ে প্রেম বিতরণ করলেই এ হিংসাদ্বেষ, ছদ্মবেশ, মান-অভিমান চলে যায়।
"হৃদয় বিমল হোক, প্রাণ সবল হোক,
বিঘ্ন দাও অপসারি॥
কেন এ হিংসাদ্বেষ, কেন এ ছদ্মবেশ,
কেন এ মান-অভিমান।
বিতর' বিতর' প্রেম পাষাণহৃদয়ে,
জয় জয় হোক তোমারি॥"
শ্রীমদ্ভগবদগীতার "পণ্ডিতাঃ সমদর্শিনঃ," -এ বাক্যে বৈশ্বিক সাম্যবাদী প্রেরণা দেয়া হয়েছে। যেখানে কোন নারীপুরুষ ভেদ নেই, জাতিতে জাতিতে ভেদ নেই, মানবে মানবে ভেদ নেই ; প্রত্যকটি জীবের মধ্যে ব্রহ্মের উপস্থিতি এবং সমদর্শীতার কথা বলা হয়েছে।সাম্যবাদের প্রবর্তক হিসেবে জগতে যারা খ্যাতিমান, আমি ঠিক জানি না তারা বেদ-গীতার সাম্যবাদী তত্ত্বের বাইরে নতুন কথা কি বলেছেন? অধুনা সাম্যবাদীদের পদ্ধতি পরিকল্পনা হয়ত আলাদা। কিন্তু সাম্যবাদের তত্ত্ব এবং প্রেরণার অপাপবিদ্ধ গঙ্গাস্রোত বেদ-গীতা বাহিত হয়ে জগতে আবহমান প্রবাহিত।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
ফেসবুক পোস্ট লিঙ্ক : Facebook ফেসবুক পেজ লিঙ্ক : Shri Kushal Baran Chakraborty | Facebook
মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁