সনাতন শাস্ত্র অনুসারের পিতামাতার সকলেই সন্তান। কিন্তু পুত্র সকলেই নয়। পুত্র তাকেই বলে যিনি পিতামাকে জীবিত অবস্থায় দেবতাজ্ঞানে সেবাশুশ্রূষা করেন। এবং বৃদ্ধাবস্থায় পিতামাতা যদি মৃত্যুবরণ করেন তবে তাদের মৃত্যু পরবর্তীতে পারলৌকিক কৃত্যাদি করে পিতা-মাতা বা পিতৃপুরুষকে 'পুৎ' নামক নরক থেকে যিনি উদ্ধার করেন ; শাস্ত্রে শুধু তাকেই 'পুত্র' বলে অবিহিত করা হয়েছে। পিতৃপুরুষগণকে সর্বপ্রকারে রক্ষা করে।
অথ ত্রয়ো বাব লোকা মনুষ্যলোকঃ পিতৃলোকো
দেবলোক ইতি সোঽয়ং মনুষ্যলোকঃ পুত্রেণৈব
জয্যো নান্যেন কমণা কর্মণা পিতৃলোকো
বিদ্যয়া দেবলোকো দেবলোকো বৈ লোকানাং
শ্রেষ্ঠস্তস্মাদ্ বিদ্যাং প্ৰশংসন্তি।।
অথাতঃ সম্প্রত্তির্যদা প্ৰৈষ্যন্মন্যতেঽথ পুত্রমাহ
ত্বং ব্রহ্ম ত্বং যজ্ঞস্ত্বং লোক ইতি স পুত্রঃ
প্রত্যাহাহং ব্রহ্মাহং যজ্ঞোঽহম্ লোক ইতি
যদ্বৈ কিঞ্চানূক্তং তস্য সর্বস্য ব্রহ্মেত্যেকতা।
যে বৈ কে চ যজ্ঞাস্তেষাং।
সর্বেষাং যজ্ঞ ইত্যেকতা যে বৈ কে চ লোকাস্তেষাং
সর্বেষাং লোক ইত্যেকতৈতাবদ্বা ইদং সর্বমেতন্মা
সবং সন্নয়মিতোঽভুনজদিতি তস্মাৎ
পুত্ৰমনুশিষ্টং লোক্যমাহুস্তস্মাদেনমনুশাসতি স
যদৈবংবিদম্মাল্লোকাৎ প্রৈত্যথৈভিরেব প্রাণৈঃ
সহ পুত্রমাবিশতি৷ স যদ্যনেন কিঞ্চিদক্ষ্ণয়াঽকৃতং
ভবতি তস্মাদ্ এনং সর্বস্মাৎ পুত্রো মুঞ্চতি
তস্মাৎ পুত্রো নাম স পুত্রেণৈবাস্মিঁল্লোকে
প্রতিতিষ্ঠত্যথৈনমেতে দৈবাঃ প্ৰাণা অমৃতা আবিশন্তি ॥
(বৃহদারণ্যক উপনিষদ: ১.৫.১৬-১৭)
"মনুষ্যলোক, পিতৃলোক ও দেবলোক- এই তিনটি লোক রয়েছে। উক্ত এই মনুষ্যলোক একমাত্র পুত্রের দ্বারা জয় করতে পারা যায়, অন্য কারো দ্বারা নয়। পিতৃলোক কেবল কর্মের দ্বারা এবং দেবলোক কেবল বিদ্যা দ্বারা জয় করতে হয়। লোকত্রয়ের মধ্যে দেবলোকই সর্বোত্তম; তাই সকলেই বিদ্যার প্রশংসা করে।
এরপর পিতা যখন মনে করবেন তার মৃত্যুকাল সন্নিকটে, তখন পুত্রকে আহ্বান করে বলবেন, 'তুমি ব্রহ্ম, তুমি যজ্ঞ, তুমি লোক৷' পিতার বাক্য ধুনে প্রত্যুত্তর পুত্র বলবে, 'আমি ব্রহ্ম, আমি যজ্ঞ, আমি লোক।' অর্থাৎ পিতার বক্তব্য এই—'আমার অধীতব্য যা কিছু বেদাধ্যয়ন ছিল, তা ব্রহ্ম এই শব্দে সংগৃহীত হল; আমার অনুষ্ঠেয় যত কিছু যজ্ঞ ছিল, তা যজ্ঞ এই শব্দে সংগৃহীত হল; আমার গৃহীর কর্তব্য যা কিছু রয়েছে সমস্তই এই পরিমাণ। এই সমস্ত হয়ে এই পুত্র আমাকে ইহলোক থেকে রক্ষা করবে৷' এভাবে পিতা পুত্রের সাথে একত্ব স্থাপন করেন। এ কারণেই যথোপদিষ্ট পুত্রকে লোকে লোকলাভের হেতু বলে থাকে। সুতরাং এই পুত্রকে পিতা শিক্ষা দিয়ে থাকেন। এ জ্ঞান লাভ করে পিতা যখন ইহলোক ত্যাগ করেন, তখন তিনি এই বাক্, মন ও প্রাণ অবলম্বনে পুত্রে অনুপ্রবিষ্ট হন। যদি কখনও কোনও ত্রুটিরূপ ভুলবশত কোন করণীয় কর্তব্য কর্ম সম্পাদন না করে থাকেন, তবে এই পুত্র তা থেকে পিতাকে পরিত্রাণ করেন।এই কারণেই তাকে পুত্র নামে অবিহিত করা হয়। পিতা পুত্রকে অবলম্বন করেই এ জগতে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। অনন্তর অমর ও দৈব ঐসকল বাক্, মন ও প্রাণ পিতাকে ব্যাপ্ত করে৷"
পুৎ নামক নরক থেকে পিতাসহ পিতৃপুরুষেদের উদ্ধারের বিষয়টি বেদের সাথে সাথে রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ স্মৃতিশাস্ত্রসহ প্রায় সকল শাস্ত্রের মধ্যেই পাই। এ প্রসঙ্গে রামায়ণের অযোধ্যাকাণ্ডের একটি অত্যন্ত সুন্দর দৃষ্টান্ত রয়েছে। বনবাসকালে শ্রীরামচন্দ্রকে অযোধ্যায় ফিরিয়ে নিতে ছোটভাই ভরত পরিষদ বর্গসহ আসে, তখন শ্রীরামচন্দ্র চৌদ্দবছর বনবাস সমাপ্ত না করে অযোধ্যায় ফিরে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। তিনি ভরতকে বলেন, শীঘ্রই রাজ্যাভিষেকের মাধ্যমে পিতৃবাক্যকে সত্য-প্রতিপন্ন করতে। এবং সাথে পিতা দশরথের অবশিষ্ট পারলৌকিক কৃত্যাদি করে তাঁকে মুক্ত করতে বলেন। তিনি গয়া প্রদেশে গিয়ে ভরতকে পিতার উদ্দেশ্যে পিণ্ডদানসহ বিবিধ পারলৌকিক কৃত্যাদি করতে নির্দেশনা প্রদান করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি পূর্বকালে 'গয়' নামে এক যশস্বী ধীমান রাজা গয়দেশে যজ্ঞ করার সময় পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে কি বলেছিলেন তা ভরতকে শোনান। গয় রাজার উক্তিটিই পুনরায় ভরতের কাছে ব্যক্ত করেন ভগবান শ্রীরামচন্দ্র। তিনি বলেন, যে সন্তান পিতাসহ সমগ্র পিতৃপুরুষকে 'পুৎ' নামক নরক থেকে ত্রাণ করে বলেই তাকে 'পুত্র' বলে অবিহিত করা হয়। তাই এমন পুত্রের কামনা করা উচিত, যে পুত্র গয়া প্রদেশে গিয়ে পিতৃপুরুষেরা উদ্দেশ্য পিণ্ডদান করবে।
ভবানপি তথেত্যেব পিতরং সত্যবাদিনম্।
কর্তুমর্হসি রাজেন্দ্র ক্ষিপ্রমেবাভিষিঞ্চনাৎ॥
ঋণান্মোচয় রাজানং মৎকৃতে ভরত প্রভুম্।
পিতরং ত্রাহি ধর্মজ্ঞ মাতরং চাভিনন্দয়৷।
শ্রয়তে ধীমতা তাত শ্রুতির্গীতা যশস্বিনা।
গয়েন যজমানেন গয়েম্বেষ্বেব পিতৃন্ প্ৰতি৷৷
পুন্নাম্নো নরকাদ্ যস্মাৎ পিতরং ত্রায়তে সুতঃ।
তস্মাৎ পুত্র ইতি প্রোক্তঃ পিতৃন্ যঃ পাতি সৰ্বতঃ৷৷
এষ্টব্যা বহবঃ পুত্ৰা গুণবন্তো বহুশ্রুতাঃ।
তেষাং বৈ সমবেতানামপি কশ্চিদ্ গয়াং ব্রজেৎ৷৷
এবং রাজষয়ঃ সর্বে প্রতীতা রঘুনন্দন।
তস্মাৎ ত্রাহি নরশ্রেষ্ঠ পিতরং নরকাৎ প্ৰভো॥
(রামায়ণ: অযোধ্যা, ১০৭.৯-১৪)
"হে রাজেন্দ্র ! তুমিও শীঘ্র রাজ্যাভিষেকের মাধ্যমে পিতৃবাক্যকে সত্য-প্রতিপন্ন করো।
হে ধর্মজ্ঞ ভরত ! তুমিও আমার জন্যই আমাদের প্রভু ও রাজা পিতৃদেবকে ঋণমুক্ত করো এবং মাতার আনন্দ বর্ধিত করো।
বৎস ! 'গয়' নামে এক যশস্বী ধীমান রাজা গয়দেশে (গয়ায়) যজ্ঞ করার সময় পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে গান করে বলেছিলেন:
যে সন্তান পিতাকে (পিতৃপুরুষকে) 'পুৎ' নামক নরক থেকে ত্রাণ করে তাকেই 'পুত্র' বলে – সে পিতৃপুরুষগণকে সর্বপ্রকারে রক্ষা করে।
এজন্য গুনবান বিদগ্ধ বহু পুত্রের কামনা করতে হয় কারণ, তাদের মধ্যে অন্তত একজনও গয়ায় যাবে এবং পূর্ব পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে গয়ায় পিণ্ড দান করবে।"
গরুড়পুরাণে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গরুড়কে উদ্দেশ্য করে বলেন:
পিতৃমাতৃসমং লোকে নাস্তান্যদ্দৈবত পরম।
তস্মাৎ সর্বপ্রযত্নেন পূজয়েত পিতরৌ সদা।।
হিতানামুপদেষ্টা হি প্রত্যক্ষদৈবতং পিতা।
অন্য যা দেবতা লোকে ন দেহপ্রভব হি সা।।
শরীরমেব জন্তুনাং স্বর্গমোক্ষৈকসাধনম্।
দেহো দত্তো হি যেনৈবং কোঽন্যঃ পুজ্যতমস্ততঃ।।
ইতি সঞ্চিন্ত্য হৃদয়ে পক্ষিন্ যদ্ যৎ প্রজচ্ছতি।
তৎ সর্বমাত্মনা ভুঙক্তে দানং বেদবিদো বিদুঃ।।
পুন্নামনরকাদ্ যস্মাৎ পিতরং ত্রায়তে সুতঃ।
তস্মাৎ পুত্র ইতি প্রোক্ত ইহ চাপি পরত্র চ।।
(গরুড় পুরাণ:উত্তর খণ্ড,২১.২৭-৩১)
"কোন লোকেই পিতামাতার তুল্য পরম দেবতা আর কেউ নেই।অতএব সর্বপ্রযত্নে পিতামাতার যথাসাধ্য সেবা করবে।পিতা সর্বদা হিতোপদেশ প্রদান করেন অতএব তিনি প্রত্যক্ষ দেবতারূপী পরম গুরু। অন্য দেবতা ইহলোকে শরীর প্রভব নয়।শরীরই জীবগণের নরকভোগ,স্বর্গলাভ ও মোক্ষপ্রাপ্তির হেতু; সেই শরীর যিনি প্রদান করেছেন তদপেক্ষা পূজ্যতম আর কে অধিক জগতে হতে পারে? নিজ হৃদয়ে এমন চিন্তা করে, যিনি পিতৃগণের উদ্দেশ্যে দানাদিক্রিয়া সম্পন্ন করেন, পরকালে তিনি সেই সকল দানীয় দ্রব্য স্বয়ং ভোজন করেন। বেদবিদ পণ্ডিতেরা একেই দান বলে আখ্যায়িত করেন।পুত্রগণ পুৎ নামক নরক থেকে পিতাকে পরিত্রাণ করে বলেই স্বয়ম্ভু 'পুত্র' নামটি নির্দেশ করেছেন।"
গরুড়পুরাণের উত্তরখণ্ডে আরও বলা হয়েছে, আত্মাই পুত্র নামে আবির্ভূত হয়। সে পুত্রই যমালয়ে পিতার পরিত্রাণকর্তা রূপে আবির্ভূত হয়। পিতার মৃত্যুর পরে তার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পারলৌকিক কৃত্যাদি করে পুত্রই পিতাকে ভয়ংকর নরকযন্ত্রণা থেকে মুক্ত করে। নিজের জন্মদাতা পিতাকে পরিত্রাণ করে বলেই 'পুত্র' নামে অবিহিত। পুত্র নিষ্ঠার সাথে পিতার শ্রাদ্ধসহ সকল প্রকারের পারলৌকিক কৃত্যাদি আমৃত্যু করবে।পুত্রের পিতার উদ্দেশ্যে পারলৌকিক বিবিধ কর্মে সূক্ষ্ম শরীরে পুত্রপ্রদত্ত দ্রব্য ভোগ করে পরিতৃপ্ত হয়।
সুবর্ণ-মণি-মুক্তাদি-বস্ত্রাণ্যাভিরণানি চ।
তেন সর্বমিদং দত্তং যেন দত্তা বসুন্ধরা ।
যানি যানি চ ভূতানি দত্তানি ভুবি মানবৈঃ।
যমলোকপথে তানি তিষ্ঠন্ত্যেষাং সমীপতঃ ॥
ব্যঞ্জনানি বিচিত্রাণি ভক্ষ্য-ভোজ্যানি যানি চ।
দদাতি বিধিনা পুত্রঃ প্রেতে তস্থপতিষ্ঠতি ॥
আত্মা বৈ পুত্ৰনামাস্তি পুত্রস্ত্রাতা যমালয়ে ।
তারয়েৎ পিতরং ঘোরাৎ তেন পুত্রঃ প্রচক্ষ্যতে।।
অতো দেয়ঞ্চ পুত্ৰেণ শ্রাদ্ধমাজীবিতাবধি।।
আতিবাহস্তদা প্রেতো ভোগান বৈ লভতে হি সঃ।।
দহ্যমানস্য প্ৰেতস্য স্বজনৈর্যো জলাঞ্জলিঃ।
দীয়তে প্রেতরূপোঽসৌ প্রীতো যাতি যমালয়ে।।
(গরুড়পুরাণ: উত্তরখণ্ড,৩৪.৬-১১)
"যে ইহলোকে ভূমি দান করে, সে সুবর্ণ, মণি, রত্ন, বস্ত্র ও আভরণ প্রভৃতি সর্ব দ্রব্যদানের ফল লাভ করে। যে ব্যক্তি যে যে দ্রব্য দান করে, সেই সকল দ্রব্য যমলোকের পথে অগ্রে পৌঁছে যায়। পুত্র পিতার উদ্দেশে বিধি ব্যঞ্জন ও ভোজ্যদ্রব্য দান করলে পিতা যখন যমলোকে গমন করে, তখন তার সমীপে সেই সকল দ্রব্য উপস্থিত হয়। আত্মাই পুত্র নামে আবির্ভূত হয়, তাই সে পুত্রই যমালয়ে পিতার পরিত্রাণকর্তা। নরক হতে পিতাকে পরিত্রাণ করে বলেই 'পুত্র'নাম হয়েছে। অতএব পুত্র জীবিত কালাবধি নিষ্ঠার সাথে পিতার শ্রাদ্ধ করবে। মৃত পিতা আতিবাহিক বা সূক্ষ্ম শরীরে পুত্রপ্রদত্ত সেই সকল দ্রব্য ভোগ করে পরিতৃপ্ত হয়।যমালয়ের অগ্নিতে প্রেত যখন দগ্ধ হয়, তখন পুত্র পিতার উদ্দেশে যে জলাঞ্জলি প্রদান করে, সেই জলাঞ্জলিতে সূক্ষ্মশরীরধারী পিতা অত্যন্ত প্রীত হয়।"
স্মৃতিশাস্ত্রের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ঋষি মনু উক্ত মনুসংহিতা। মনুসংহিতায় পুত্র প্রসঙ্গে বেদ পুরাণাদি শাস্ত্রের মত একই কথা বলা হয়েছে। ঋষি মনু বলেন, পুত্র জন্মগ্রহণ করে পিতার পারলৌকিক বিবিধ প্রকারের কর্ম সম্পাদন দ্বারা পিতার স্বর্গাদি শোকদুঃখহীন লোক প্রাপ্ত করান। আবার পৌত্রের দ্বারা ঐ মানুষ স্বর্গাদি ঐ সব লোকে চিরকাল অবস্থিতি লাভ করে। আর পুত্রের পৌত্র অর্থাৎ পৌত্রের পুত্র অর্থাৎ প্রপৌত্রের দ্বারা মানুষ সূর্যলোক প্রাপ্ত হয় অর্থাৎ প্রকাশাত্মা জ্যোতির্ময় হয়ে যায়। তখন কোন তমোরূপ আবরণ তার থাকে না। পুত্র পিতাকে 'পুৎ' নামক নরক থেকে উদ্ধার করে বলেই পিতামহ ব্রহ্মা নিজেই এই ‘পুত্র’ নামকরণটি করেছেন। পৃথিবীতে যে সব প্রাণীর উৎপত্তি হয় তাদের সেই উৎপত্তিটাকেই পুৎ নামক নরক বলা হয়। পুত্র জন্মালে পিতাকে তা থেকে পরিত্রাণ করে অর্থাৎ পিতা তখন পৃথিবীতে পুনর্জন্ম গ্রহণ না করে দেবলোকে জন্মপ্রাপ্ত হয়।
পুত্রেণ লোকান্ জয়তি পৌত্রেণানন্ত্যমশ্নুতে।
অথ পুত্রস্য পৌত্রেণ ব্ৰধ্নস্যাপ্নোতি বিষ্টপম্।।
পুন্নাম্নো নরকাদ যস্মাৎ ত্রায়তে পিতরং সুতঃ।
তস্মাৎ পুত্র ইতি প্রোক্তঃ স্বয়মের স্বয়ম্ভুবা৷৷
(মনুসংহিতা:৯.১৩৭-১৩৮)
"পুত্রের দ্বারা স্বর্গাদি লোক জয় করে, পৌত্রদ্বারা মোক্ষ প্রাপ্ত হয়, পুত্রের পৌত্রদ্বারা সূর্যলোক প্রাপ্ত হয় ।
যেহেতু পুত্র পিতাক 'পুৎ' নামক নরক থেকে রক্ষা করে, তাই স্বয়ং প্রজাপতি ব্রহ্মা পুত্র নামকরণ করেছেন।"
পুত্র সম্পর্কে মনুসংহিতার বিখ্যাত টীকাকার কুল্লূকভট্ট তাঁর টীকায় বলেছেন:
"পুন্নাম্ন ইতি। যম্মাৎ পুন্নামধেয়নরকাৎ সুতঃ পিতরং ত্রায়তে তস্মাৎ ত্রাণাৎ আত্মনৈব ব্ৰহ্মণা পুত্র ইতি প্রোক্তঃ। তন্মান্মহোপকারকত্বাৎ পুত্রস্য যুক্তং তদীয়পুংসন্তানস্য দায়ভাগিত্বমিতি পূর্বদার্ঢ্যাথমিদম্।"
মনুসংহিতার মত বিষ্ণুসংহিতাতেও একই কথা বলা হয়েছে। তবে সেখানে পিতার উদ্দেশ্যে পুত্রের পারলৌকিক কৃত্যাদি সম্পর্কে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলা হয়েছে। তা হল মৃত পিতার যদি কোন ধনসম্পত্তি না থাকে অথবা পিতা যদি পুত্রকে ধনসম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে, তবেও পুত্রকে পিতার উদ্দেশ্যে পারলৌকিক কৃত্যাদি করতে হবে।মনুসংহিতার মত বিষ্ণু সংহিতায়ও বলা হয়েছে যে, পুত্রের দ্বারাই সর্বলোক আয়ত্ত করা যায়, পুত্রের সন্তান পৌত্রের দ্বারা অনন্ততা প্রাপ্ত হওয়া যায় এবং পুত্রের পৌত্র অর্থাৎ প্রপৌত্র দ্বারা সূর্যলোক প্রাপ্ত হওয়া যায়।
পুত্রঃ পিতৃবিত্তালাভে পি পিণ্ডং দদাৎ।।
পুন্নাম্নো নরকাদ্ যস্মাৎ পিতরং ত্রায়তে সুতঃ ।
তস্মাৎ পুত্র ইতি প্রোক্তঃ স্বয়মেব স্বয়ম্ভুবা ॥
ঋণমস্মিন্ সন্নয়তি অমৃতত্বগ্ধ গচ্ছতি।
পিতা পুত্রস্থ জাতস্ত পশ্যেচ্চেজ্জীবতো মুখম্ ॥
(বিষ্ণুসংহিতা: ১৫.৪৩-৪৪)
"পুত্র পিতার ধনাধিকারী না হইলেও পিতার উদ্দেশ্যে পিণ্ড প্রদান করবে । যেহেতু সুত, পিতাকে 'পুৎ' নামক নরক হইতে পরিত্রাণ করে, তাই স্বয়ং ব্রহ্মা তাকে 'পুত্র' নামটি প্রদান করেছেন৷ পিতা যদি জীবিত পুত্রের মুখাবলোকন করেন, তবে পুত্রেতেই পিতৃঋণ সংক্রামিত করেন (অর্থাৎ সন্তানের প্রতি বংশের দায়ভার অর্পণ করেন)। স্বয়ং পিতৃঋণমুক্ত হয়ে অমরত্ব লাভ করতে সমর্থ হন।"
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।