-->

ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

প্রতিবন্ধীদের নিয়ে পরিহাস নয়, তাদের 'দিব্যাঙ্গ' নামে অবিহিত করুন।

প্রতিবন্ধীদের নিয়ে পরিহাস নয়, তাদের 'দিব্যাঙ্গ' নামে অবিহিত করুন আধুনিককালে মানুষ দেশ বিদেশের থেকে শিক্ষা নিচ্ছে। কিন্তু মানুষ যতই আধুনিক হচ্ছে, ততই মানুষের মধ্যে কৃত্রিমতা, অমানবিকতা নিষ্ঠুরতা বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু এর সাথে আরেকটি বিষয় হচ্ছে, তা হলো লোকদেখানো হলেও, মানুষের মনুষ্যত্ব বোধেরও বৃদ্ধি হচ্ছে। প্রাচীনকালের মত, সমাজে কাউকে দেহের অক্ষমতাসহ বিভিন্ন প্রকারের অক্ষমতাকে চিহ্নিত করে সংকীর্ণতাপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করা হয় না।সমাজের সাথে সাথে মানুষের মানবিক বোধ এবং ভাষাও পরিবর্তিত হচ্ছে, আগে শারীরিক বিভিন্ন প্রতিবন্ধীদের যারযার সমস্যা অনুসারে অন্ধ, লেংড়া, কানা, খোড়া বলে অভিহিত করা হত। কিন্তু বর্তমানে এ অমানবিক নিষ্ঠুর শব্দগুলো সচরাচর ব্যবহার করা হয় না। বর্তমানে কেউ যদি শারীরিকভাবে অক্ষম হয়, তবে তার শারীরিক অক্ষমতাকে নির্দেশ করে এমন শব্দে অবিহিত না করে তাকে প্রতিবন্ধী বলা হয়। যেমন কেউ যদি চোখে দেখতে না পায়, তবে তাকে পূর্বের মত অন্ধ না বলে বর্তমানে 'দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী' নামে অবিহিত করা হয়। এমনিভাবে কেউ যদি অস্বাভাবিক আচরণ করে, তবে পূর্বের মত উন্মাদ, বদ্ধ উন্মাদ, পাগল ইত্যাদি নামে অবিহিত না করে তাকে 'বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী' বলা হয়। তবে ইদানীং প্রতিবন্ধী শব্দটি ব্যবহার না করে কেউ কেউ আরও মানবিক দৃষ্টিতে সকল প্রতিবন্ধীদের জন্য 'দিব্যাঙ্গ' শব্দটি ব্যবহার করছে। দৈবী কারণে সে শারীরিকভাবে অসুস্থ, তাই তাকে দিব্যাঙ্গ বলা হয়।যদিও দিব্যাঙ্গ শব্দটি একটি নতুন শব্দ। শব্দটি ভারতবর্ষের বাঙালির ক্ষেত্রে পরিচিত হলেও, বাংলাদেশে আপাতত শব্দটি জনপ্রিয় নয়। তবে দিব্যাঙ্গ শব্দটি দেশে জনপ্রিয় হলে যথাযথ হয়।কারণ শব্দটি অত্যন্ত যৌক্তিক। এর মধ্যে কোন অক্ষমতা বা তুচ্ছতাচ্ছিল্যের মাধ্যমে ছোট করার বিষয় নেই। শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী, পাগল, অপরাধী, অসুন্দর, দরিদ্র এবং দুর্বলদের নিয়ে কোন পরিহাস করা উচিৎ নয়। আমাদের উপলব্ধি করতে হবে, যে কোন পরিস্থিতিতে আমরা যে কোন তথাকথিত সুস্থ মানুষও এমন অস্বাভাবিক হয়ে যেতে পারি। ভাবতে অবাক লাগে, প্রতিবন্ধীদের নিয়ে পরিহাস না করতে; মানসিক অসুস্থকে পাগল না বলতে; দরিদ্র ও অসুন্দরদের নিয়ে নিন্দা না করতে -এ মানবিক বিধানগুলো মহাভারতে পাঁচহাজার বছর পূর্বেই দেয়া আছে। বিষয়গুলো আজ বৈশ্বিক মানবিক মূল্যবোধের অংশ। এ প্রসঙ্গে মহাভারতের অনুশাসন পর্বে বলা হয়েছে: হীনাঙ্গানতিরিক্তাঙ্গান্ বিদ্যাহীনান্ বিগর্হিতান্ ।  রূপদ্রবিণহীনাংশ্চ সত্ত্বহীনাংশ্চ নাক্ষিপেৎ ॥ (মহাভারত:অনুশাসন পর্ব, ৯১.৩৪) "হীনাঙ্গ, অতিরিক্তাঙ্গ,বিদ্যাহীন, অত্যন্ত নিন্দিত, শ্রীহীন কদাকার, নিঃস্ব ও দুর্বল ব্যক্তিগণকে নিয়ে নিন্দা বা পরিহাস করবে না।" বিষয়টি স্মৃতিশাস্ত্রেও বিশেষ করে মনুসংহিতাতেও সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে: হীনাঙ্গানতিরিক্তাঙ্গান্ বিদ্যাহীনান্ বয়োঽধিকান্। রূপদ্রব্যবিহীনাংশ্চ জাতিহীনাংশ্চ নাক্ষিপেৎ৷৷   (মনুসংহিতা:৪.১৪১) "যারা হীনাঙ্গ (অর্থাৎ যাদের কোনও অঙ্গের হীনতা আছে; যেমন, কাণা, খোঁড়া ইত্যাদি), অতিরিক্তাঙ্গ (অর্থাৎ যাদের অঙ্গের আধিক্য আছে, যেমন, হাতে বা পায়ে ছয়টি আঙ্গুল আছে), যারা বিদ্যাহীন, যারা ‘বয়োধিক’ অর্থাৎ অত্যন্ত বৃদ্ধ, যারা রূপহীন (অর্থাৎ যাদের অঙ্গ-সন্নিবেশ বিকৃত, যেমন টেরা প্রভৃতি), যারা ধনহীন এবং জন্মপরিচয়হীন —তাদের নিয়ে ব্যঙ্গ বা নিন্দা করবে না।" মহর্ষি মনু মনুসংহিতার চতুর্থ অধ্যায়ে শুধু প্রতিবন্ধী বা দিব্যাঙ্গদের নিয়ে ব্যঙ্গ বা নিন্দা করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু শাস্ত্রের এই নিষেধ বাক্য পালন না করে যারা প্রতিবন্ধী বা দিব্যাঙ্গদের নিয়ে উপহাস করে তাদের তিনি কমপক্ষে এক কার্ষাপণ অর্থদণ্ড বিধান করেছেন। কাণং বাপ্যথবা খঞ্জমন্যং বাপি তথাবিধম্। তথ্যেনাপি ব্রুবন্ দাপ্যে দণ্ডং কার্ষাপণাবরম্।। (মনুসংহিতা:৮.২৭৪) "কাণা, খোঁড়া অথবা ঐ প্রকার বিকলাঙ্গ ব্যক্তিকে কেউ যদি বিদ্রুপ করে কাণা, খোঁড়া বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে তবে কমপক্ষে এক কার্ষাপণ অর্থদণ্ড বিধান করতে হবে।" বর্তমান ভোগবাদী সমাজে আমাদের চাওয়া পাওয়ার অন্ত নেই। সকল চাওয়া পাওয়া যখন পূর্ণ হয় না, তখন সেই চাওয়া পাওয়াকে কেন্দ্র করে আমাদের দুঃখেরও অন্ত নেই। এ প্রসঙ্গে কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের 'দুখের তুলনা' নামে একটি বিখ্যাত কবিতা রয়েছে। কবিতায় বলা হয়েছে, একদা এক ব্যক্তির পায়ে জুতা না থাকায় দুঃখ, বেদনা এবং ক্ষোভের অন্ত ছিল না। সেই ব্যক্তিই একদিন এক ভজনাললে গিয়ে দেখতে পেলেন যে, এক ব্যক্তির দুইপা নেই। তখন তিনি বুঝতে করলেন, জগতে কত মানুষ যে এভাবে শারীরিক মানসিক অক্ষমতাকে সাথী করে দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে আছেন, এর শেষ নেই। সর্বদা নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত যারা ব্যস্ত থাকে তারা অন্যের দুঃখকষ্ট উপলব্ধি করতে পারে না। কিন্তু পরের দুঃখকষ্ট, অভাব এবং অক্ষমতা চিন্তা করলে, নিজের অভাব ক্ষোভ সকলই বিদূরিত হয়ে যায়। কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের ভাষায়: "একদা ছিল না ‘জুতো’ চরণ-যুগলে দহিল হৃদয় মম সেই ক্ষোভানলে। ধীরে ধীরে চুপি চুপি দুঃখাকুল মনে, গেলাম ভজনালয়ে ভজন কারণে ! দেখি তথা এক জন, পদ নাহি তার, অমনি ‘জুতো’র খেদ ঘুচিল আমার, পরের অভাব মনে করিলে চিন্তন নিজের অভাব ক্ষোভ রহে কতক্ষণ?" প্রত্যেকটি দিব্যাঙ্গ বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দুঃখকষ্টকে নিজের নিজের মত করে না দেখে অসহায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিটির দৃষ্টিতে দেখতে হবে। তবেই মানুষ কিছুটা তাদের বেদনা উপলব্ধি করতে পারবে। তখন আর তাদের সীমাবদ্ধতা নিয়ে কেউ হাসি ঠাট্টা করবে না।প্রতিবন্ধী বা দিব্যাঙ্গদের প্রসঙ্গে ব্রহ্মপুরাণে বলা হয়েছে: দম্ভাভিমানং তৈক্ষ্ব্যঞ্চ ন কুর্বীত বিচক্ষণঃ। মূর্খোন্মত্তব্যসনিনো বিরূপানপি বা তথা।। ন্যূনাঙ্গাংশ্চাধনাংশ্চৈব নোপহাসেন দূষয়েৎ। পরস্য দণ্ডং নোদ্ যচ্ছেচ্ছিক্ষার্থ শিষ্যপুত্রয়োঃ।। ( ব্রহ্মপুরাণ: ২২১.৪৫-৪৬) " মূর্খ, উন্মত্ত, ব্যসনাসক্ত, বিরূপ, অঙ্গহীন ও দীনজনকে নিয়ে কখনো উপহাস করবে না। শিক্ষা দানের জন্য পুত্র এবং শিষ্য ব্যতীত অপর কারো প্রতি কখনো দণ্ডধারণ করবে না।" একথা মনে রাখতে হবে যে, প্রতিবন্ধী মানেই প্রতিভাবন্ধী নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রতিবন্ধী মানুষের কোন না কোন অনন্য বিশেষ গুণ থাকে। হয়ত একটি অঙ্গ তার অক্ষম। কিন্তু অন্যান্য অনেক বিষয়ে সে অনেকের থেকেই আগানো। তাই তাদের উদ্দেশ্যে আপত্তিকর ভাষা প্রয়োগ না করে, তাদের যথাসাধ্য প্রোৎসাহিত করতে হবে। যেন তারা সমাজের তথাকথিত সক্ষমদের ভীড়ে হারিয়ে না গিয়ে, অসম জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে পারেন। কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী  সহকারী অধ্যাপক,  সংস্কৃত বিভাগ,  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
আধুনিককালে মানুষ দেশ বিদেশের থেকে শিক্ষা নিচ্ছে। কিন্তু মানুষ যতই আধুনিক হচ্ছে, ততই মানুষের মধ্যে কৃত্রিমতা, অমানবিকতা নিষ্ঠুরতা বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু এর সাথে আরেকটি বিষয় হচ্ছে, তা হলো লোকদেখানো হলেও, মানুষের মনুষ্যত্ব বোধেরও বৃদ্ধি হচ্ছে। প্রাচীনকালের মত, সমাজে কাউকে দেহের অক্ষমতাসহ বিভিন্ন প্রকারের অক্ষমতাকে চিহ্নিত করে সংকীর্ণতাপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করা হয় না।সমাজের সাথে সাথে মানুষের মানবিক বোধ এবং ভাষাও পরিবর্তিত হচ্ছে, আগে শারীরিক বিভিন্ন প্রতিবন্ধীদের যারযার সমস্যা অনুসারে অন্ধ, লেংড়া, কানা, খোড়া বলে অভিহিত করা হত। কিন্তু বর্তমানে এ অমানবিক নিষ্ঠুর শব্দগুলো সচরাচর ব্যবহার করা হয় না। বর্তমানে কেউ যদি শারীরিকভাবে অক্ষম হয়, তবে তার শারীরিক অক্ষমতাকে নির্দেশ করে এমন শব্দে অবিহিত না করে তাকে প্রতিবন্ধী বলা হয়। যেমন কেউ যদি চোখে দেখতে না পায়, তবে তাকে পূর্বের মত অন্ধ না বলে বর্তমানে 'দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী' নামে অবিহিত করা হয়। এমনিভাবে কেউ যদি অস্বাভাবিক আচরণ করে, তবে পূর্বের মত উন্মাদ, বদ্ধ উন্মাদ, পাগল ইত্যাদি নামে অবিহিত না করে তাকে 'বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী' বলা হয়। তবে ইদানীং প্রতিবন্ধী শব্দটি ব্যবহার না করে কেউ কেউ আরও মানবিক দৃষ্টিতে সকল প্রতিবন্ধীদের জন্য 'দিব্যাঙ্গ' শব্দটি ব্যবহার করছে। দৈবী কারণে সে শারীরিকভাবে অসুস্থ, তাই তাকে দিব্যাঙ্গ বলা হয়।যদিও দিব্যাঙ্গ শব্দটি একটি নতুন শব্দ। শব্দটি ভারতবর্ষের বাঙালির ক্ষেত্রে পরিচিত হলেও, বাংলাদেশে আপাতত শব্দটি জনপ্রিয় নয়। তবে দিব্যাঙ্গ শব্দটি দেশে জনপ্রিয় হলে যথাযথ হয়।কারণ শব্দটি অত্যন্ত যৌক্তিক। এর মধ্যে কোন অক্ষমতা বা তুচ্ছতাচ্ছিল্যের মাধ্যমে ছোট করার বিষয় নেই।
শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী, পাগল, অপরাধী, অসুন্দর, দরিদ্র এবং দুর্বলদের নিয়ে কোন পরিহাস করা উচিৎ নয়। আমাদের উপলব্ধি করতে হবে, যে কোন পরিস্থিতিতে আমরা যে কোন তথাকথিত সুস্থ মানুষও এমন অস্বাভাবিক হয়ে যেতে পারি। ভাবতে অবাক লাগে, প্রতিবন্ধীদের নিয়ে পরিহাস না করতে; মানসিক অসুস্থকে পাগল না বলতে; দরিদ্র ও অসুন্দরদের নিয়ে নিন্দা না করতে -এ মানবিক বিধানগুলো মহাভারতে পাঁচহাজার বছর পূর্বেই দেয়া আছে। বিষয়গুলো আজ বৈশ্বিক মানবিক মূল্যবোধের অংশ। এ প্রসঙ্গে মহাভারতের অনুশাসন পর্বে বলা হয়েছে:
হীনাঙ্গানতিরিক্তাঙ্গান্ বিদ্যাহীনান্ বিগর্হিতান্ ।
রূপদ্রবিণহীনাংশ্চ সত্ত্বহীনাংশ্চ নাক্ষিপেৎ ॥
(মহাভারত:অনুশাসন পর্ব, ৯১.৩৪)
"হীনাঙ্গ, অতিরিক্তাঙ্গ,বিদ্যাহীন, অত্যন্ত নিন্দিত, শ্রীহীন কদাকার, নিঃস্ব ও দুর্বল ব্যক্তিগণকে নিয়ে নিন্দা বা পরিহাস করবে না।"
বিষয়টি স্মৃতিশাস্ত্রেও বিশেষ করে মনুসংহিতাতেও সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে:
হীনাঙ্গানতিরিক্তাঙ্গান্ বিদ্যাহীনান্ বয়োঽধিকান্। রূপদ্রব্যবিহীনাংশ্চ জাতিহীনাংশ্চ নাক্ষিপেৎ৷৷
(মনুসংহিতা:৪.১৪১)
"যারা হীনাঙ্গ (অর্থাৎ যাদের কোনও অঙ্গের হীনতা আছে; যেমন, কাণা, খোঁড়া ইত্যাদি), অতিরিক্তাঙ্গ (অর্থাৎ যাদের অঙ্গের আধিক্য আছে, যেমন, হাতে বা পায়ে ছয়টি আঙ্গুল আছে), যারা বিদ্যাহীন, যারা ‘বয়োধিক’ অর্থাৎ অত্যন্ত বৃদ্ধ, যারা রূপহীন (অর্থাৎ যাদের অঙ্গ-সন্নিবেশ বিকৃত, যেমন টেরা প্রভৃতি), যারা ধনহীন এবং জন্মপরিচয়হীন —তাদের নিয়ে ব্যঙ্গ বা নিন্দা করবে না।"
মহর্ষি মনু মনুসংহিতার চতুর্থ অধ্যায়ে শুধু প্রতিবন্ধী বা দিব্যাঙ্গদের নিয়ে ব্যঙ্গ বা নিন্দা করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু শাস্ত্রের এই নিষেধ বাক্য পালন না করে যারা প্রতিবন্ধী বা দিব্যাঙ্গদের নিয়ে উপহাস করে তাদের তিনি কমপক্ষে এক কার্ষাপণ অর্থদণ্ড বিধান করেছেন।
কাণং বাপ্যথবা খঞ্জমন্যং বাপি তথাবিধম্।
তথ্যেনাপি ব্রুবন্ দাপ্যে দণ্ডং কার্ষাপণাবরম্।।
(মনুসংহিতা:৮.২৭৪)
"কাণা, খোঁড়া অথবা ঐ প্রকার বিকলাঙ্গ ব্যক্তিকে কেউ যদি বিদ্রুপ করে কাণা, খোঁড়া বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে তবে কমপক্ষে এক কার্ষাপণ অর্থদণ্ড বিধান করতে হবে।"
বর্তমান ভোগবাদী সমাজে আমাদের চাওয়া পাওয়ার অন্ত নেই। সকল চাওয়া পাওয়া যখন পূর্ণ হয় না, তখন সেই চাওয়া পাওয়াকে কেন্দ্র করে আমাদের দুঃখেরও অন্ত নেই। এ প্রসঙ্গে কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের 'দুখের তুলনা' নামে একটি বিখ্যাত কবিতা রয়েছে। কবিতায় বলা হয়েছে, একদা এক ব্যক্তির পায়ে জুতা না থাকায় দুঃখ, বেদনা এবং ক্ষোভের অন্ত ছিল না। সেই ব্যক্তিই একদিন এক ভজনাললে গিয়ে দেখতে পেলেন যে, এক ব্যক্তির দুইপা নেই। তখন তিনি বুঝতে করলেন, জগতে কত মানুষ যে এভাবে শারীরিক মানসিক অক্ষমতাকে সাথী করে দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে আছেন, এর শেষ নেই। সর্বদা নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত যারা ব্যস্ত থাকে তারা অন্যের দুঃখকষ্ট উপলব্ধি করতে পারে না। কিন্তু পরের দুঃখকষ্ট, অভাব এবং অক্ষমতা চিন্তা করলে, নিজের অভাব ক্ষোভ সকলই বিদূরিত হয়ে যায়। কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের ভাষায়:
"একদা ছিল না ‘জুতো’ চরণ-যুগলে
দহিল হৃদয় মম সেই ক্ষোভানলে।
ধীরে ধীরে চুপি চুপি দুঃখাকুল মনে,
গেলাম ভজনালয়ে ভজন কারণে !
দেখি তথা এক জন, পদ নাহি তার,
অমনি ‘জুতো’র খেদ ঘুচিল আমার,
পরের অভাব মনে করিলে চিন্তন
নিজের অভাব ক্ষোভ রহে কতক্ষণ?"
প্রত্যেকটি দিব্যাঙ্গ বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দুঃখকষ্টকে নিজের নিজের মত করে না দেখে অসহায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিটির দৃষ্টিতে দেখতে হবে। তবেই মানুষ কিছুটা তাদের বেদনা উপলব্ধি করতে পারবে। তখন আর তাদের সীমাবদ্ধতা নিয়ে কেউ হাসি ঠাট্টা করবে না।প্রতিবন্ধী বা দিব্যাঙ্গদের প্রসঙ্গে ব্রহ্মপুরাণে বলা হয়েছে:
দম্ভাভিমানং তৈক্ষ্ব্যঞ্চ ন কুর্বীত বিচক্ষণঃ।
মূর্খোন্মত্তব্যসনিনো বিরূপানপি বা তথা।।
ন্যূনাঙ্গাংশ্চাধনাংশ্চৈব নোপহাসেন দূষয়েৎ।
পরস্য দণ্ডং নোদ্ যচ্ছেচ্ছিক্ষার্থ শিষ্যপুত্রয়োঃ।।
( ব্রহ্মপুরাণ: ২২১.৪৫-৪৬)
" মূর্খ, উন্মত্ত, ব্যসনাসক্ত, বিরূপ, অঙ্গহীন ও দীনজনকে নিয়ে কখনো উপহাস করবে না। শিক্ষা দানের জন্য পুত্র এবং শিষ্য ব্যতীত অপর কারো প্রতি কখনো দণ্ডধারণ করবে না।"
একথা মনে রাখতে হবে যে, প্রতিবন্ধী মানেই প্রতিভাবন্ধী নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রতিবন্ধী মানুষের কোন না কোন অনন্য বিশেষ গুণ থাকে। হয়ত একটি অঙ্গ তার অক্ষম। কিন্তু অন্যান্য অনেক বিষয়ে সে অনেকের থেকেই আগানো। তাই তাদের উদ্দেশ্যে আপত্তিকর ভাষা প্রয়োগ না করে, তাদের যথাসাধ্য প্রোৎসাহিত করতে হবে। যেন তারা সমাজের তথাকথিত সক্ষমদের ভীড়ে হারিয়ে না গিয়ে, অসম জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে পারেন।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।

মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁