-->

ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

ক্ষমতা একটি হট সিট, ক্ষমতার ভালো-মন্দ দুটি দিক।

ক্ষমতা একটি হট সিট,  ক্ষমতার ভালো-মন্দ দুটি দিক।  ক্ষমতা একটি হট সিট। তাই কেউ বেশীক্ষণ সেই সিটে বসে থাকতে পারেনা। উষ্ণতা চলে গেলে পোকামাকড় আরশোলা সিটটিতে বাসা বাঁধে। ক্ষমতা সাময়িক, এরপরেও আমরা ক্ষমতা এবং ক্ষমতাবানদের সাথে সর্বদা সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করি। ক্ষমতার যেমন গৌরব থাকে তেমনি সেই গৌরবের সাথে থাকে পাহাড়ের সমতুল্য ভার। কিছুকিছু ক্ষেত্রে সেই ভার পাহাড় সমান হয়ে থাকে। ক্ষমতাবান সেই সেই ভার যথাযথভাবে বইতেও পারে না। হাতি যেমন বৃহৎ দেহের, তেমনি তার খাবারের তালিকাটিও বৃহৎ। তাই গৌরব নিতে হলে গৌরবের ভার বহন করতে হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'কণিকা' কাব্যগ্রন্থে 'ভার' নামক একটি কবিতা রয়েছে। কবিতাটি টুনটুনি পাখি এবং ময়ূরের কথোপকথন। টুনটুনি পাখি ময়ূরকে বলে- দেখ ভাই ময়ূর তোমাকে দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়। তোমার দেহের থেকে লেজটি বড়, যা দেখতে বেআড়া। তাই তুমি লেজের ভারে ঠিকমত চলতেও পারো না।কিন্তু বিপরীতে আমি দেখ কেমন নির্ঝঞ্ঝাট লঘুভারে দিনরাত ঘুরেফিরে বেড়াই। অথচ তুমি লেজের উৎপাতে চলতেই কষ্ট হয়। টুনটুনির কথায় ময়ূরের হাসি পায়। ময়ূর বলে দেখ ভাই টুনটুনি, তোমার আমাকে নিয়ে মিছামিছি শোক করতে হবে না, চিন্তা করতে হবে না। শুধু এতটুকু জেনে রাখ, সকলের গৌরবের পিছনের ভার থাকে। সেই ভারকে বহন করে নিতে হয়। টুনটুনি কহিলেন, রে ময়ূর, তোকে দেখে করুণায় মোর জল আসে চোখে। ময়ূর কহিল, বটে! কেন, কহ শুনি, ওগো মহাশয় পক্ষী, ওগো টুনটুনি টুনটুনি কহে, এ যে দেখিতে বেআড়া, দেহ তব যত বড়ো পুচ্ছ তারে বাড়া। আমি দেখো লঘুভারে ফিরি দিনরাত, তোমার পশ্চাতে পুচ্ছ বিষম উৎপাত। ময়ূর কহিল, শোক করিয়ো না মিছে, জেনো ভাই, ভার থাকে গৌরবের পিছে। ক্ষমতার ভালো-মন্দ দুটি দিক রয়েছে। ক্ষমতাতে যেমন অত্যন্ত আরাম ভোগের বিষয় আছে, তেমনি যুগপৎভাবে সেই আরামের সাথে একটি ব্যারামও রয়েছে। তাই ক্ষমতাবানদের আরাম উপভোগের সাথে সাথে, ব্যারামটিও ভোগ করতে হয়। কিন্তু আমরা চোখবুঁজে শুধুই আরাম উপভোগ করতে চাই। কিন্তু একবারও উপলব্ধি করতে পারি না যে, এভাবে শুধুই ব্যারাম বিহীন আরাম উপভোগ হয় না।আমার মনে পড়ে একটি ঘটনা। ২০১২ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় ফেব্রুয়ারি ৯ এবং ১০ তারিখ মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরে চিহ্নিত সুপরিচিত মৌলবাদী গ্রুপ আক্রমণ করে। তারা নন্দীরহাটের লোকনাথ ব্রহ্মচারী মন্দির, মগধেশ্বরী মন্দির, আনন্দময়ী কালী মন্দির, জগন্নাথ মন্দির এবং হাটহাজারী শহরের সুপ্রাচীন সীতাকালী মন্দির সহ প্রায় দশ-বারোটি মন্দিরে আক্রমণ করে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এরমধ্যে নন্দীর হাটের ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরের এক কর্তাব্যক্তির সাথে কথা হয়।  তাকে আমি প্রশ্ন করি-"আপনি তো একটি মন্দিরের দায়িত্বে আছেন।আপনাদের মন্দির সহ এক হাটহাজারী উপজেলার সকলের চোখের সামনে এতগুলো মন্দিরকে যারা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তাদের বিরুদ্ধে আপনারা প্রত্যেকটি মন্দির কমিটি থেকে কেন মামলা করেননি?"   উত্তরে তিনি আমাকে বলেন- "দেখুন স্যার, এই মন্দিরটি পরিচালনা করতে এমনিতেই আমার নিজের পকেট থেকে অনেক টাকা খরচ হয়। এর পরে আবার মন্দির ধ্বংস করে জ্বালিয়ে দেয়ায় নতুনভাবে মন্দির তৈরি করতে আরও খরচ হবে। সেখানেও দেখা যাবে আমাকেই বড় অঙ্কের টাকা দিতে হবে। যদি ওদের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করি, তবে ওরা আমাকে বা আমার পরিবারের ক্ষতি করতে পারে"। আমি তখন বলি -"দাদা, আপনারা যদি এই সকল ঘটনার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা না নেন, তবে এই চিহ্নিত মৌলবাদী শক্তি তো এমন ঘটনা ঘটাতেই থাকবে"।   আমার কথার উত্তরে মন্দির কমিটির নেতৃত্বস্থানীয় দাদা বললেন- "দেখুন, স্যার আমি এই মন্দিরে যুক্ত হয়েছি সেবা দিতে। এমনিতেই মন্দিরে দায়িত্বের জন্যে অনেক টাকা পয়সা খরচ হয়ে যাচ্ছে, এরপরে আমি মামলা মোকাদ্দমা করে অহেতুক ঝামেলায় জড়াতে চাই না। যারা এগুলো করেছে, ঠাকুর তাদের শাস্তি দিবে।  আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে মন্দির কমিটির সেই দাদাকে বললাম- " দাদা জগতে সকল আরামের সাথে সাথেই, সেই আরামের সাথে সংযুক্ত কিছু ব্যারাম আছে। আরাম ভোগের সাথে সাথে সেই ব্যারামগুলোও ভোগ করতে হয়। কিন্তু আমরা চোখবুঁজে যদি শুধু, ব্যারাম বাদ দিয়ে আরামই ভোগ করতে চাই; তবে ব্যারামের সাথে সাথে আরামও আমাদের হাতছাড়্য হয়ে যাবে।দাদা, আপনি যে এই মন্দিরটির দায়িত্বে আছেন, এর একটা শুনাম আছে না? তাই সেই সুনামের সাথে সাথে কিছু দায়িত্ব কর্তব্য পালন করে দায়িত্বশীল আচরণ তো করবেন। দাদা মনে রাখবেন এই হাটহাজারীতে মন্দিরে আক্রমণকারী মৌলবাদী শক্তিটি চিহ্নিত। তাদের দেশের প্রশাসন সহ সকলেই চেনে। এদের বিরুদ্ধে একবার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া না হলে, এই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি করতেই থাকবে"।  আমার কথা শুনে দাদাটি বললেন- "বুঝি সকলই, কিন্তু আমাদের হাত বিভিন্ন স্থানে বাঁধা"।  কথাগুলো বলে তিনি নিরুত্তাপ উদাসীন হয়ে গেলেন। আমি বুঝতে পারলাম তার বাস্তবতা। যে ক্ষোভ নিয়ে তাকে কথাগুলো বলেছিলাম, পরবর্তীতে সেই ক্ষোভের অনেকটাই প্রশমিত হয়ে গেলো।  শ্রীকুশল বরণ চক্রবর্ত্তী সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
ক্ষমতা একটি হট সিট। তাই কেউ বেশীক্ষণ সেই সিটে বসে থাকতে পারেনা। উষ্ণতা চলে গেলে পোকামাকড় আরশোলা সিটটিতে বাসা বাঁধে। ক্ষমতা সাময়িক, এরপরেও আমরা ক্ষমতা এবং ক্ষমতাবানদের সাথে সর্বদা সম্পর্ক তৈরি করার চেষ্টা করি। ক্ষমতার যেমন গৌরব থাকে তেমনি সেই গৌরবের সাথে থাকে পাহাড়ের সমতুল্য ভার। কিছুকিছু ক্ষেত্রে সেই ভার পাহাড় সমান হয়ে থাকে। ক্ষমতাবান সেই সেই ভার যথাযথভাবে বইতেও পারে না। হাতি যেমন বৃহৎ দেহের, তেমনি তার খাবারের তালিকাটিও বৃহৎ। তাই গৌরব নিতে হলে গৌরবের ভার বহন করতে হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'কণিকা' কাব্যগ্রন্থে 'ভার' নামক একটি কবিতা রয়েছে। কবিতাটি টুনটুনি পাখি এবং ময়ূরের কথোপকথন। টুনটুনি পাখি ময়ূরকে বলে- দেখ ভাই ময়ূর তোমাকে দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়। তোমার দেহের থেকে লেজটি বড়, যা দেখতে বেআড়া। তাই তুমি লেজের ভারে ঠিকমত চলতেও পারো না।কিন্তু বিপরীতে আমি দেখ কেমন নির্ঝঞ্ঝাট লঘুভারে দিনরাত ঘুরেফিরে বেড়াই। অথচ তুমি লেজের উৎপাতে চলতেই কষ্ট হয়। টুনটুনির কথায় ময়ূরের হাসি পায়। ময়ূর বলে দেখ ভাই টুনটুনি, তোমার আমাকে নিয়ে মিছামিছি শোক করতে হবে না, চিন্তা করতে হবে না। শুধু এতটুকু জেনে রাখ, সকলের গৌরবের পিছনের ভার থাকে। সেই ভারকে বহন করে নিতে হয়।
টুনটুনি কহিলেন, রে ময়ূর, তোকে
দেখে করুণায় মোর জল আসে চোখে।
ময়ূর কহিল, বটে! কেন, কহ শুনি,
ওগো মহাশয় পক্ষী, ওগো টুনটুনি
টুনটুনি কহে, এ যে দেখিতে বেআড়া,
দেহ তব যত বড়ো পুচ্ছ তারে বাড়া।
আমি দেখো লঘুভারে ফিরি দিনরাত,
তোমার পশ্চাতে পুচ্ছ বিষম উৎপাত।
ময়ূর কহিল, শোক করিয়ো না মিছে,
জেনো ভাই, ভার থাকে গৌরবের পিছে।
ক্ষমতার ভালো-মন্দ দুটি দিক রয়েছে। ক্ষমতাতে যেমন অত্যন্ত আরাম ভোগের বিষয় আছে, তেমনি যুগপৎভাবে সেই আরামের সাথে একটি ব্যারামও রয়েছে। তাই ক্ষমতাবানদের আরাম উপভোগের সাথে সাথে, ব্যারামটিও ভোগ করতে হয়। কিন্তু আমরা চোখবুঁজে শুধুই আরাম উপভোগ করতে চাই। কিন্তু একবারও উপলব্ধি করতে পারি না যে, এভাবে শুধুই ব্যারাম বিহীন আরাম উপভোগ হয় না।আমার মনে পড়ে একটি ঘটনা। ২০১২ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় ফেব্রুয়ারি ৯ এবং ১০ তারিখ মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরে চিহ্নিত সুপরিচিত মৌলবাদী গ্রুপ আক্রমণ করে। তারা নন্দীরহাটের লোকনাথ ব্রহ্মচারী মন্দির, মগধেশ্বরী মন্দির, আনন্দময়ী কালী মন্দির, জগন্নাথ মন্দির এবং হাটহাজারী শহরের সুপ্রাচীন সীতাকালী মন্দির সহ প্রায় দশ-বারোটি মন্দিরে আক্রমণ করে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এরমধ্যে নন্দীর হাটের ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরের এক কর্তাব্যক্তির সাথে কথা হয়।
তাকে আমি প্রশ্ন করি-"আপনি তো একটি মন্দিরের দায়িত্বে আছেন।আপনাদের মন্দির সহ এক হাটহাজারী উপজেলার সকলের চোখের সামনে এতগুলো মন্দিরকে যারা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তাদের বিরুদ্ধে আপনারা প্রত্যেকটি মন্দির কমিটি থেকে কেন মামলা করেননি?"

উত্তরে তিনি আমাকে বলেন- "দেখুন স্যার, এই মন্দিরটি পরিচালনা করতে এমনিতেই আমার নিজের পকেট থেকে অনেক টাকা খরচ হয়। এর পরে আবার মন্দির ধ্বংস করে জ্বালিয়ে দেয়ায় নতুনভাবে মন্দির তৈরি করতে আরও খরচ হবে। সেখানেও দেখা যাবে আমাকেই বড় অঙ্কের টাকা দিতে হবে। যদি ওদের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করি, তবে ওরা আমাকে বা আমার পরিবারের ক্ষতি করতে পারে"।
আমি তখন বলি -"দাদা, আপনারা যদি এই সকল ঘটনার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা না নেন, তবে এই চিহ্নিত মৌলবাদী শক্তি তো এমন ঘটনা ঘটাতেই থাকবে"।

আমার কথার উত্তরে মন্দির কমিটির নেতৃত্বস্থানীয় দাদা বললেন- "দেখুন, স্যার আমি এই মন্দিরে যুক্ত হয়েছি সেবা দিতে। এমনিতেই মন্দিরে দায়িত্বের জন্যে অনেক টাকা পয়সা খরচ হয়ে যাচ্ছে, এরপরে আমি মামলা মোকাদ্দমা করে অহেতুক ঝামেলায় জড়াতে চাই না। যারা এগুলো করেছে, ঠাকুর তাদের শাস্তি দিবে।
আমি কিছুটা বিরক্ত হয়ে মন্দির কমিটির সেই দাদাকে বললাম- " দাদা জগতে সকল আরামের সাথে সাথেই, সেই আরামের সাথে সংযুক্ত কিছু ব্যারাম আছে। আরাম ভোগের সাথে সাথে সেই ব্যারামগুলোও ভোগ করতে হয়। কিন্তু আমরা চোখবুঁজে যদি শুধু, ব্যারাম বাদ দিয়ে আরামই ভোগ করতে চাই; তবে ব্যারামের সাথে সাথে আরামও আমাদের হাতছাড়্য হয়ে যাবে।দাদা, আপনি যে এই মন্দিরটির দায়িত্বে আছেন, এর একটা শুনাম আছে না? তাই সেই সুনামের সাথে সাথে কিছু দায়িত্ব কর্তব্য পালন করে দায়িত্বশীল আচরণ তো করবেন। দাদা মনে রাখবেন এই হাটহাজারীতে মন্দিরে আক্রমণকারী মৌলবাদী শক্তিটি চিহ্নিত। তাদের দেশের প্রশাসন সহ সকলেই চেনে। এদের বিরুদ্ধে একবার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া না হলে, এই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ঘটনাগুলোর পুনরাবৃত্তি করতেই থাকবে"।
আমার কথা শুনে দাদাটি বললেন- "বুঝি সকলই, কিন্তু আমাদের হাত বিভিন্ন স্থানে বাঁধা"।
কথাগুলো বলে তিনি নিরুত্তাপ উদাসীন হয়ে গেলেন। আমি বুঝতে পারলাম তার বাস্তবতা। যে ক্ষোভ নিয়ে তাকে কথাগুলো বলেছিলাম, পরবর্তীতে সেই ক্ষোভের অনেকটাই প্রশমিত হয়ে গেলো।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁