-->

ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

"পশ্যত্তাং বরাহাে ভূত্বাঽহরত্তাং বিশ্বকর্মা"; বৈদিক সংহিতায় বর্ণিত বরাহ অবতার প্রসঙ্গ।

ঈশ্বর অনন্ত তিনি সাকার এবং নিরাকার উভয়রূপেই বিরাজমান। অনেকে বলেন, সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর সাকার মূর্তি হতে পারেন না। কথাটি সত্য নয়। যদি তিনি সাকার হতে না পারেন, তবে তিনি সর্বশক্তিমান নন। যিনি সর্বশক্তিমান তিনি সব পারেন। অনন্ত, অচিন্ত্য, অব্যক্ত হয়েও তিনি ভক্ত রক্ষায় অবতাররূপে লীলাময়, দয়াময় এবং কৃপাময়। জগতকে রক্ষার্থে অবতাররূপে ভগবান বারেবারেই অবতীর্ণ হন। 'অবতার তত্ত্ব' সনাতন ধর্মের একটি অবিচ্ছেদ্য তত্ত্ব। ভগবানের অবতাররূপ ধারণ করে জগতকে রক্ষার বিষয়টি বেদের সংহিতা-ব্রাহ্মণের একাধিক স্থানেই পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা অনেকেই বিষয়গুলো না জানায় বিভ্রান্ত হয়ে যাই। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, ইদানিং আমরা আমাদের এদেশীয় ধর্ম-সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদানকে বৈদেশিক চশমা পরে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা শুরু করে দিয়েছি। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ বৈদেশিক দৃষ্টির অভিঘাতে অজ্ঞাতসারে আমরা নিজেরাই নিজেদের ছোট করে ফেলছি প্রতিনিয়ত। ঋগ্বেদ সংহিতার ষষ্ঠ মণ্ডলে ইন্দ্ররূপ পরমেশ্বরের মায়াদ্বারা বিবিধরূপে প্রকাশিত হওয়ার কথা আছে। এ মন্ত্রটিতে ঈশ্বরের অবতাররূপে সাধুদের পরিত্রাণ এবং আসুরিক শক্তিকে বিনাশের জন্যে ভগবানের বিবিধ মূর্তিতে আবির্ভূত হওয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাই।

রূপং রূপং প্রতিরূপো বভূব
তদস্য রূপং প্রতিচক্ষণায় ৷
ইন্দ্রো মায়াভিঃ পুরুরূপ ঈয়তে
যুক্তা হ্যস্য হরয়ঃ শতা দশ৷৷
(ঋগ্বেদ সংহিতা: ৬.৪৭.১৮)
"সমস্ত দেবগণের প্রতিনিধিভূত এ ইন্দ্র বিবিধ মূর্তি ধারণ করেন এবং সে রূপ পরিগ্রহ করে তিনি পৃথকভাবে প্রকাশিত হন।তিনি মায়াদ্বারা বিবিধ রূপ ধারণ করে যজমানগণের নিকট উপস্থিত হন। কারণ সহস্র অশ্ব সংযুক্ত (অনন্ত শক্তি) তাঁর রথ।"
ঈশ্বরের অবতারের মধ্যে প্রথমদিকের অবতারগণ হলেন, মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামনাদি অবতার। এ অবতারদের কথা সুস্পষ্টভাবে বেদের সংহিতা এবং ব্রাহ্মণের বিবিধ স্থানেই আছে। এরপরেও অনেকে বলে থাকেন বেদের মধ্যে অবতার প্রসঙ্গ নেই। বিষয়টি সত্য নয়।অবতারগণের মধ্যে অন্যতম হলেন, বরাহ অবতার যিনি অবতাররূপে এ জগতকে রক্ষা করেছেন। কৃষ্ণ যজুর্বেদ সংহিতায় অত্যন্ত সুন্দর করে বরাহ অবতারের উল্লেখ আছে। সেখানে এ পৃথিবীর উৎপত্তি এবং রক্ষা প্রসঙ্গে বরাহ অবতারের কথা বলা হয়েছে। পাহাড়, পর্বত, নদী, সমুদ্র সহ অনন্ত বৈচিত্র্যময় এ পৃথিবী উৎপত্তির পূর্বে জলমগ্ন ছিল। কোন প্রাণীর অস্তিত্বমাত্র ছিল না। একমাত্র ঈশ্বরই ছিলেন। ধীরেধীরে তাঁর মধ্যে সৃষ্টির ইচ্ছা জাগে, বহু হওয়ার বাসনা জাগে। প্রজাপতি শরীরবিহীন বায়ুরূপ ধারণ করে বিরাজমান ছিলেন। সেই অনন্ত অসীম সলিল জলরাশি থেকে জলনিমগ্ন ভূমি দর্শন করে স্বয়ং বরাহরূপ ধারণ করে সেই ভূমিকে উদ্ধার করেন। ভূমিকে উদ্ধার করে বরাহরূপ পরিত্যাগ করে বিশ্বকর্মা রূপধারণ করে জগতের প্রজাসহ বিবিধ সৃষ্টি প্রক্রিয়া শুরু করেন। সেই জলনিমগ্ন ভূমিকে বিশেষভাবে মার্জন করে তার দ্রবদ্রব্য অপনীত করে সেই ভূমিকে বিস্তৃত করেন। তখনই সর্বপ্রাণীর আধারভূতা পৃথিবী প্রদান করা হয়। অর্থাৎ পৃথিবী নামকটিও বেদ থেকে আগত। সৃষ্টির শুরুতে থেকে আজও সেই যেমন পৃথিবী নামটি নিরবচ্ছিন্ন বহমান হয়ে সৃষ্টির শুরু থেকেই যে সনাতন ধর্ম বহমান, সে সাক্ষী বহন করে চলছে।
আপাে বা ইদমগ্রে সলিলমাসীত্তম্মিন্ প্রজাপতির্বায়ূ্র্ভূত্বাঽচরৎ স ইমামপশ্যত্তাং বরাহাে ভূত্বাঽহরত্তাং বিশ্বকর্মা ভূত্বা ব্যামার্ট্ সাঽপ্রথত সা পৃথিবীভবত্তং পৃথিব্যে পৃথিবিত্বং তস্যামশ্রাম্যৎ প্রজাপতিঃ স দেবানসৃজত বসূন্ রুদ্রানাদিত্যান্তে দেবাঃ প্রজাপতিমব্রুবন্ প্র জায়ামহা ইতি সােঽব্রবীৎ যথাঽহং যুষ্মাংস্তপসাঽসৃক্ষ্যেবং তপসি প্রজননমিচ্ছধ্বামিতি।
(কৃষ্ণ যজুর্বেদ সংহিতা:০৭.০১.০৫)
"(পৃথিবীর উৎপত্তি প্রসঙ্গে আখ্যায়িকা)—ইদানীং দৃশ্যমান এই গিরি-নদী-সমুদ্রযুক্ত পৃথিবী উৎপত্তির পূর্বে কেবল সলিল (জল) ছিল। সেই সলিলে কোন প্রাণীর অস্তিত্বমাত্র ছিল না। তখন প্রজাপতি মুর্ত (ভূতাত্মক) শরীরের অবস্থানযােগ্য স্থানের অভাবে বায়ুরূপ ধারণ পূর্বক সেই সলিলের সর্বত্র বিচরণ করতে থাকেন। এবং এইভাবে বিচরণ করতে করতে সেই সলিলে নিমগ্ন ভূমি দর্শন করে স্বয়ং বরাহরূপী হয়ে দন্তের অগ্রভাগের দ্বারা সেই ভূমিকে ধারণ করে সলিলের উপরে আহরণ করে আনেন। এবং আহরণের পর বরাহরূপ পরিত্যাগ করে বিশ্বকর্মা রূপধারী হয়ে সেই ভূমিকে বিশেষভাবে পরিষ্কার (মার্জনং) পূর্বক তার দ্রবদ্রব্য (বা আর্ত্রতা) অপনীত করে তাকে বিস্তৃত করেন। তখন সর্বপ্রাণীর আধারভূতা এই পৃথিবী দৃশ্যমান হয়। সেই হতে এই পৃথিবী নামটি সম্পন্ন হয়।(অতঃপর ক্রমে দেবসৃষ্টি ও গােসৃষ্টি দেখানাে হচ্ছে) তখন সেই ভূমিতে আপন মুর্তিতে অবস্থিত হয়ে সৃষ্টি করতে ইচ্ছুক হয়ে তপস্যা করতে থাকেন। সেই তপস্যার সামর্থ্যে তিনি প্রথমে বসুগণ, রুদ্রগণ ও আদিত্যগণকে সৃষ্টি করেন। সেই বসু ইত্যাদি দেববর্গ প্রজাপতির প্রতি প্রজা উৎপাদনের উপায় জিজ্ঞাসা করলেন (পপ্রচ্ছ)।"
পরমেশ্বর ভগবানের এ বিবিধ অবতাররূপ ধারণের কারণ সম্পর্কে শ্রীমদ্ভাগবতের ষষ্ঠস্কন্ধে দক্ষ প্রজাপতি অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে বলেছেন। তিনি ইন্দ্রিয়াতীত ভগবানকে 'হংসগুহ্য' নামক একটি স্তোত্রে বিষয়টি বলেন। সম্পূর্ণ জগৎ ভগবানেরই সৃষ্টি। আবার তিনিই উপাদান কারণ হয়ে তাঁর সৃষ্টির মধ্যেই অবস্থিত হয়ে আছেন। সৃষ্টির নিমিত্ত কারণ সহ সকল বিধিই তিনি। কার্য ও কারণের ভেদ যখন ছিল না তখনও ঈশ্বরই স্বয়ংসিদ্ধ স্বরূপে স্থিত ছিল। ঈশ্বর জীব-জগতের ভেদ ও স্বগতভেদ থেকে সর্বদাই মুক্ত এক ও অদ্বিতীয় স্বয়ং ব্রহ্ম। তিনিই মায়া, অবিদ্যা প্রভৃতি শক্তিসমূহ। বাদিপ্রতিবাদিগণের মধ্যে কখনাে বিবাদ কখনাে সংবাদ (ঐকমত্য)-এর বিষয় হয় এবং সেই সকল বাদী- প্রতিবাদীগণের অন্তঃকরণে পুনঃপুন মােহ উৎপাদন করে। তিনি অনন্ত, অপ্রাকৃত নিত্যগুণযুক্ত এবং নিজেও অনন্ত। সাকার মূর্তিতে উপাসকদের মতে তিনি হস্ত-পদাদিযুক্ত সাকার বিগ্রহ এবং তিনিই আবার হস্তপদবিহীন নিরাকার অচিন্ত্য। সাধনজগতে এমন বহুপ্রকার বিরুদ্ধমতাবলম্বী দেখা গেলেও সকলশাস্ত্রের লক্ষ্য একই। সেই লক্ষ্যের লক্ষ্যবস্তুতে তাদের কোন বিরােধ নেই। কারণ সকল শাস্ত্রের প্রতিপাদ্য বিষয়ই একই ; তা হল একমেবাদ্বিতীয়ম্ ভগবান।তিনি সকল বিধি নিষেধ এবং আধারের অতীত। তিনি সাকার-নিরাকার দুই অবিরুদ্ধসম্মতরূপেই চিন্তার অতীত পরব্রহ্ম। ভগবানের কোন প্রাকৃত নামও নেই, প্রাকৃত রূপও নেই ; তবুও যে ব্যক্তি তাঁকে ভজনা করে, তাদের প্রতি কৃপা করে তিনি মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামনাদি অবতার সহ নানারূপ ধারণ করে বিবিধ লীলা সম্পাদন করেন।বায়ু যেমন গন্ধের আশ্রয় নিয়ে সুগন্ধি বলে প্রতীত হলেও বাস্তবিকপক্ষে বায়ু নিজে সুগন্ধি নয়। এইভাবে সকলের সাধনার ধারানুসারে বাসনা পূরণকারী প্রভু বিভিন্নরূপে প্রকাশিত হয়ে ভক্তকে রক্ষা করলেও সেই রূপগুলো সাময়িক ক্ষণিকের।
যস্মিন্ যতাে যেন চ যস্য যস্মৈ
যদ্ যাে যথা কুরুতে কার্যতে চ।
পরাবরেষাং পরমং প্রাক্ প্রসিদ্ধং
তদ্ ব্ৰহ্ম তদ্ধেতুরনন্যদেকম্।।
যচ্ছক্তয়াে বদতাং বাদিনাং বৈ
বিবাদসংবাদভুবাে ভবন্তি।
কুর্বন্তি চৈষাং মুহুরাত্মমােহং
তস্মৈ নমােঽনন্তগুণায় ভূম্নে৷৷
অস্তীতি নাস্তীতি চ বস্তুনিষ্ঠয়াে-
রেকস্থয়াের্ভিন্নবিরুদ্ধর্ময়ােঃ।
অবেক্ষিতং কিঞ্চন যােগসাংখ্যয়ােঃ
সমং পরং হ্যানুকূলং বৃহত্তৎ৷।
যােহনুগ্রহার্থং ভজতাং পাদমূল-
মনামরূপাে ভগবাননন্তঃ।
নামানি রূপাণি চ জন্মকর্মভি-
র্ভেজে স মহ্যং পরমঃ প্রসাদতু৷৷
যঃ প্রাকৃতৈর্জ্ঞানপথৈর্জনানাং
যথাশয়ং দেহগতাে বিভাতি।
যথানিলঃ পার্থিবমাশ্রিতো গুণং
স ঈশ্বরাে মে কুরুতান্মনােরথম্৷
(শ্রীমদ্ভাগবত:০৬.০৪.৩০-৩৪)
"হে ভগবান! এই সম্পূর্ণ জগৎ আপনার মধ্যেই অবস্থিত; আপনার থেকেই এর উৎপত্তি এবং অপর কারাের সাহায্য ছাড়া আপনিই এর নির্মাণ করেছেন। এ জগৎ আপনারই আর আপনারই জন্য। আপনিই জগতরূপে সৃষ্ট হচ্ছেন এবং সৃষ্টিকর্তাও আপনিই। এই সৃষ্ট হওয়া এবং সৃষ্টিকার্যের বিধিও আপনিই। আপনিই সকলকে দিয়ে কাজ করাবার প্রভু। কার্য ও কারণের ভেদ যখন ছিল না তখনও আপনি স্বয়ংসিদ্ধ স্বরূপে স্থিত ছিলেন। এজন্য সকল কিছুর কারণও আপনিই। প্রকৃত সত্য এই যে আপনি জীব
জগতের ভেদ ও স্বগতভেদ থেকে সর্বদাই মুক্ত এক ও অদ্বিতীয়। আপনি স্বয়ং ব্রহ্ম, আপনি আমার প্রতি প্রসন্ন হােন।
হে প্রভু! আপনারই মায়া, অবিদ্যা প্রভৃতি শক্তিসমূহ বাদিপ্রতিবাদিগণের মধ্যে কখনাে বিবাদ কখনাে সংবাদ (ঐকমত্য)-এর বিষয় হয় এবং সেই সকল বাদী- প্রতিবাদীগণের অন্তঃকরণে পুনঃপুন মােহ উৎপাদন করে। আপনি অনন্ত, অপ্রাকৃত নিত্যগুণযুক্ত এবং নিজেও অনন্ত। আমি আপনাকে প্রণাম করি।
হে ভগবান ! উপাসকদের মতে আপনি হস্ত-পদাদিযুক্ত সাকার বিগ্রহ আর সাংখ্যশাস্ত্র মতে হস্তপদবিহীন নিরাকার। এইরকম বিভিন্ন প্রকার বিরুদ্ধমতাবলম্বী হলেও ওই উভয়শাস্ত্রের লক্ষ্য একই, তাদের লক্ষ্যবস্তুতে বিরােধ নেই। কারণ দুটির প্রতিপাদ্য বিষয় একই পরমবস্তু ভগবান। আধার ছাড়া হাত পা থাকা সম্ভব নয় আর বিধি নিষেধেরও একটা সীমা আছে। আপনি সেই আধার এবং নিষেধের অতীত। তাই আপনি সাকার-নিরাকার দুইয়েরই অবিরুদ্ধসম্মত সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিপাদ্য পরব্রহ্ম।
হে প্রভু ! আপনি অনন্ত। আপনার কোনাে প্রাকৃত নামও নেই, প্রাকৃত রূপও নেই ; তবুও যে ব্যক্তি আপনার চরণকমল ভজনা করে, তাদের প্রতি কৃপা করার জন্য আপনি নানারূপ ধারণ করে বিবিধ লীলা সম্পাদন করেন এবং সেই সেই রূপ এবং লীলানুরূপ নাম গ্রহণ করে থাকেন। হে পরমাত্মন ! আপনি আমাকে কৃপা করুন।
মানুষের উপাসনা প্রায়শই সাধারণ স্তরের হয়ে থাকে। তাই আপনি তাদের সকলের হৃদয়ে থেকে তাদের ধ্যান অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন দেবতার রূপে প্রতীত হয়ে থাকেন বায়ু যেমন গন্ধের আশ্রয় নিয়ে সুগন্ধি বলে প্রতীত হয় ; কিন্তু বাস্তবিকপক্ষে বায়ু তাে আর নিজে সুগন্ধি নয়। এইভাবে সকলের সাধনার ধারানুসারে বাসনা পূরণকারী প্রভু আমার অভিলাষ পূর্ণ করুন৷"
ভগবানের বরাহরূপ অবতার শরীর ধারণ করাকে আমরা লীলা বলতে পারি। সৃষ্টির শুরুতে তিনি এমন ভয়ংকর বরাহরূপ ধারণ করে মূর্তিমান হয়ে জগতকে রক্ষা করেছেন। অথবা এমনও হতে পারে যে তাঁর এ বরাহরূপ কাহিনীর অন্তরালে কোন মহাজাগতিক নাক্ষত্রিক সত্য লুকিয়ে আছে। জগত সৃষ্টির রহস্য লুকিয়ে আছে। ভগবান বরাহরূপ ধারণ করেছিলেন, কি করেননি এ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। যেহেতু বৈদিক ধর্ম কোন অন্ধত্ব শিক্ষা দেয় না।তবে এ বিষয়টি নিশ্চিত যে, বরাহ অবতারে ভগবান এ পৃথিবীকে রক্ষা করেছেন। সেই পৃথিবীকে রক্ষাকারী বরাহ অবতার শরীরধারী অথবা তত্ত্বীয় যে রূপেই হোক সকলই ভগবানের ইচ্ছা এবং লীলা। কারণ তিনি ইচ্ছাময় এবং লীলাময়। প্রায় সহস্রবছর পূর্বে সেনযুগে লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি জয়দেব গোস্বামী বরাহরূপ অবতারকে নিয়ে অসাধারণ একটি স্তোত্র লিখেছিলেন তাঁর সুবিখ্যাত 'গীতগোবিন্দ' গ্রন্থের শুরুতেই। দশাবতারস্তোত্রের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে স্তোত্রটি আজও মন্দিরে ভক্তগৃহে উচ্চারিত।
বসতি দশনশিখরে ধরণী তব লগ্না।
শশিনি কলঙ্ককলেব নিমগ্না।।
কেশবধৃত-শূকররূপ জয় জগদীশ হরে।।
(গীতগোবিন্দ:০১.০৭)
"তামার দর্শন-শিখরে ধরণী যেদিন লগ্না হয়েছিল চাঁদের কলঙ্কচিহ্ন সম, সেদিন তােমার ছিল বরাহমূর্তি; হে কেশব, হে জগদীশ, হে শ্রীহরি, তামারই হোক জয়।"
সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি:
১.রমেশচন্দ্র দত্ত অনূদিত ঋগ্বেদ সংহিতা
২.দুর্গাদাস লাহিড়ী অনূদিত কৃষ্ণ যজুর্বেদ সংহিতা
২. শ্রীমদ্ভাগবত, গীতাপ্রেস
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁