-->

ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

চিন্তাসূত্রের খেরোখাতা (ষষ্ঠ পর্ব)।

(ষষ্ঠ পর্ব)

চিন্তাসূত্রের খেরোখাতা   (ষষ্ঠ পর্ব)।

২৫১.মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় যে শত্রু, তাকে কখনই সহজে চেনা যায় না। শত্রুরূপে প্রকাশের আগে পর্যন্ত সে বন্ধুরূপেই থাকে। স্বার্থের প্রশ্নে অথবা কখনো অকারণে যখন বন্ধুত্বের মুখোশটি খুলে পরে যায়, তখনই মানুষ বুঝতে পারে; যাকে এতদিন বন্ধুত্বের নিবিড় বন্ধনে জড়িয়ে ধরে ছিল, সে আসলে বন্ধু নয়, শত্রু।
২৫২.সামান্যতেই যাদের অনুভূতির দেয়াল
ভেঙে চুরমার হয়ে যায়,
বুঝতে হবে তাদের বিশ্বাসটি
দৃঢ় নয়, শুধুই ঠুনকো
সামান্য বাতাসেই যে বিশ্বাস হিল্লোলিত হয়,
সে বিশ্বাস কখনো
ভবিষ্যৎ জ্ঞানরাজ্যের ঝড়কে
মুখোমুখি মোকাবিলা করতে পারে না
এবং ভবিষ্যতেও পারবে না।
২৫৩.শত্রু কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করে না, সে বিশ্বাসঘাতকতা করার সুযোগও খুব একটাপায় না। বিশ্বাসঘাতকতা করে বন্ধুর ছদ্মবেশে বহুরূপীরা।
২৫৪.বন্ধু বা প্রিয় আপনজন শত্রু হলে এর থেকে ভয়ংকর আর কিছুই হতে পারে না। জগতের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত বা কুখ্যাত ব্যক্তি বিপদে পরেছে শুধু আপনজনদের দ্বারা।
২৫৫.যাদের কিছুই করার নেই, বলার নেই,
জগতকে কিছুই দেয়ার নেই;
সেই নষ্টদের, সেই ভ্রষ্টদের
আছে শুধুই নিম্নাঙ্গ ভর্তি অনুভূতির বাণিজ্য।
২৫৬.এ জগতের সিংহভাগই অন্ধকার। আলো খুবই কম। জগত অন্ধকারের খেলাঘর। তাইতো জগতের পিতা-মাতা কালোরূপেই কল্পনা করা হয়েছে। আদিপুরুষ গোবিন্দ কালো এবং মহাকালের শক্তি জগন্মাতা কালীও কালো।
২৫৭. সনাতন ধর্ম বিশ্বাসের সাথে প্রকৃতির এমন সম্পর্ক যে, চাইলেই এ সম্পর্ককে আলাদা করা যায় না। প্রকৃতির স্বতঃস্ফূর্ত রূপ রূপান্তরে সনাতন সংস্কৃতি আবর্তিত হয়, প্রয়োজনে যুগোপযোগী রূপান্তরিত হয়। এ কারণেই জগতের ব্যক্তিকেন্দ্রিক মতবাদগুলো সনাতন ধর্ম এবং সংস্কৃতিকে শত প্রচেষ্টা করেও সামান্যতম বিচ্যুতি করতে পারেনি। সনাতন ধর্মকে বিচ্যুত বা ধ্বংস করতে হলে আগে এ বৈচিত্র্যময় প্রকৃতিকে ধ্বংস করতে হবে।কিন্তু তা যেহেতু কোনদিনই সম্ভবপর নয়; তাই সনাতন ধর্মেরও বিনাশ করা সম্ভব নয়।
২৫৮. জীবন চলার পথে কাউকেই অপরিহার্য মনে করে বেশি পাত্তা দিতে নেই। তবে সে পেয়ে বসবে। সে ভালবাসাকে কলঙ্কিত করে প্রভুত্ব শুরু করবে। ভালবাসার প্রতি সমর্পিত মানুষকে তার করায়ত্ব মনে করে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে। জীবনে যেমন আশেপাশের প্রত্যেককেই প্রয়োজন; তেমনি কেউ অপরিহার্য নয়। শ্রাদ্ধশান্তি বিধিতে কাকের প্রয়োজন হয়।কিন্তু যে দেশে কাক নেই সেদেশে কি শ্রাদ্ধশান্তি হয় না? অবশ্যই হয়। তাই জীবন চলতে সকলেই প্রয়োজনীয়, আবার কেউ অপরিহার্য নয়।
২৫৯. নেতা এবং পরিচালকের মধ্যে অনেক পার্থক্য। নেতা নিজে স্বপ্ন তৈরি করে সে স্বপ্নের পথে অন্যকে হাটতে শেখায়। কিন্তু পরিচালক কর্মসূত্র অনুসারে সকল কিছু বাস্তবায়নে সহায়তা করে।
২৬০. আন্দোলন সংগ্রাম কোন একক ব্যক্তির উপরেই শুধু নির্ভর করে না। নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তি হলেন সে যুগের ফসল; বহু মানুষের চিন্তা আকাঙ্ক্ষার ঘনিভূত রূপ। তিনি আন্দোলন সংগ্রামকে শুধুই ত্বরান্বিত করেন ; আর কিছুই নয়। মা যখন গর্ভবতী হয়, তখন এমনিতেই সন্তান প্রসব করে। সে সময়ে ধাত্রী বা ডাক্তারের উপস্থিতি সন্তানপ্রসবকে নির্বিঘ্ন করে। কিন্তু ভাগ্যচক্রে তারা না থাকলেও গর্ভবতী মা সন্তান প্রসব করেন।
২৬১. যে শত্রু দশহাজার কৌশল জানে তাকে নিয়ে ভয়ের কিছুই নেই। তার লক্ষ্য বহুদিকে বিক্ষিপ্ত। কিন্তু যে শত্রু একটি কৌশল দশহাজার বার অনুশীলন করেছে, সেই শত্রুর মত ভয়ংকর আর কিছুই নেই।
২৬২.মূর্খ যখন প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী হয়ে সবাইকে অবলীলায় জ্ঞান দান করতে থাকে; এর থেকে ভয়াবহ বিপদজনক আর কিছুই হয় না।
২৬৩. পরাধীন ব্যক্তি স্বপ্নের মধ্যেও সুখ পায় না। পরাধীনতা তার সকল মানবিক সুকুমার বৃতিগুলোকে ক্ষয়িষ্ণু করে দেয়।
২৬৪. জগতে বাস করে অভ্যুদয় পেতে হলে সমবাহু ত্রিভুজের তিনটি শীর্ষবিন্দুর মত জীবনে ধর্ম, অর্থ এবং কাম এ তিনটি বিষয়েরই একটি থেকে অন্যদের সমদূরত্বে রেখে তাদের ব্যবহার করা প্রয়োজন। জীবনে তিনটি বিষয়েরই অত্যন্ত প্রয়োজন আছে। আবার একটি অন্যটির সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত হলে সমস্যা। তখন লেজেগোবরে হয়ে সকল কিছুকেই পণ্ড করে দেয়।
২৬৫.মানুষের বিবেকগুলি দিনদিন ভোঁতা হয়ে অসহিষ্ণু হয়ে যাচ্ছে; কাউকে তার যৌক্তিক ভুল ধরিয়ে দিলে সে তাকে উল্টো শত্রু মনে করে।
২৬৬. বর্তমানে ফেসবুকের লেখা চোরদের সংখ্যা যেভাবে দিনেদিনে বাড়ছে, তাতে এই চোর এবং তাদের সম্মানিত সদস্যদের নিয়ে 'বঙ্গীয় অন্তর্জালিক কুম্ভীলক পরিষদ' নামে একটি সংগঠন করা যায়।
২৬৭. ভগবানের কৃপা পেতে হলে তাঁর প্রতি একটি সুতীব্র বিশ্বাস এবং আত্মসমর্পণ প্রয়োজন। তা না হলে কিছুই করা সম্ভব নয়। একটি গ্রামে বহুদিন অনাবৃষ্টিতে খেতের ফসল সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তখন একদিন সকল গ্রামবাসী মিলে সিদ্ধান্ত নিল বৃষ্টির জন্য তারা আগামীকাল যজ্ঞ করবে। পরেরদিন সকল গ্রামবাসীই যজ্ঞস্থলে সমবেত হল বৃষ্টির প্রত্যাশায়। ব্যতিক্রম শুধু একটি ছেলে। সে ছাতা সহ যজ্ঞস্থানে আসলো। ছেলেটির দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, যজ্ঞের পরে বৃষ্টি হবে। সে বৃষ্টিতে তার যেন ভিজে বাড়িতে যেতে না হয়, তাই সে ছাতাসহ এসেছে। জীবনে দৈবীকৃপা এ ছেলেটির মত সরল বিশ্বাস একান্ত প্রয়োজন।
২৬৮.হাসি পায় যখন দেখি, আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য বিভিন্ন উপাদানের পক্ষে উদাহরণ ধার করে নিয়ে আসতে হয় বিভিন্ন যাযাবর সংস্কৃতির পক্ষ থেকে। এইদেশে আজও প্রতিনিয়ত দেশের কোথাও না কোথাও থেকে মাঠির নিচে থেকে পাওয়া যায় মূর্তি। মাটি খুড়লেই মূর্তি, পুরনো পুকুরে সংস্কার করতে গেলে পাওয়া যায় মূর্তি, পুরনো কোন বসতবাড়ি খুড়তেও পাওয়া যায় মূর্তি। অর্থাৎ এ ভূখণ্ড মূর্তিময়। এ ভূখণ্ডের মাটিতে সর্ব প্রাচীন পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনও মূর্তি। দেশের পুরাতাত্ত্বিক স্থাপনার সাথে সাথে জাদুঘরগুলোও মূর্তিময়। যে মাটি থেকে প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও থেকে পাওয়া যাচ্ছে অপূর্ব সৌন্দর্যমণ্ডিত মূর্তি; অথচ আমরা সেই মাটিতে বসবাস করে লালিতপালিত হয়ে মূর্তির বিরোধিতা করছি, ভাস্কর্যের বিরোধিতা করছি।
২৬৯. নেতৃত্ব যখন কৃত্রিমতাবিহীন আবেগঘন থাকে, তখন সে সংগঠন এবং নেতা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে যায়। পরিণামে সংগঠন বহু বিস্তৃতি লাভ করে। কিন্তু বিষয়টি শাখের করাতের মত, উভয় দিকেই কাটে। যে আবেগতাড়িত নেতৃত্ব সংগঠনকে তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়, সেই নেতার আবেগঘন সহজলভ্যতাই দিনশেষে নেতার বিপদের কারণ হয়।
২৭০. সম্পর্কের মাখামাখিতে সম্পর্কটি সুতীব্র হয়, ঘনিষ্ট হয়। আবার অতিরিক্ত অপ্রয়োজনীয় মাখামাখিতে সম্পর্কটি ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।পান খেতে পরিমাণ মত চুনের প্রয়োজন।যদিও পান-চুন একটি অন্যটির পরিপূরক হলেও পানের মধ্যে চুনের আধিক্য বেড়ে গেলে আর পান খাওয়া যায় না। মুখের মধ্যে অস্বস্তি শুরু হয়; তখন পানটি মুখ থেকে ফেলে দিতে হয়।
২৭১.জগতের প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যেই ভালো শুদ্ধদিকের সাথেসাথে নেতিবাচক দিকও রয়েছে। এর থেকে কেউ মুক্ত নয়; শুধু কম আর বেশি। কিন্তু আমরা অধিকাংশ সময়ে জ্ঞানত বা অজ্ঞানত কারো সাজানোগোছানো ড্রয়িংরুমের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে আগেই ওয়াশরুমের দিকে দৃষ্টি দিয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে ফেলি। তবে একথা নিঃসন্দেহে সত্য যে, প্রত্যেকটি ঘরেই ড্রয়িংরুম, বেডরুম এবং ওয়াশরুম ইত্যাদি আছে। প্রত্যেকটি রুমের কাজই আলাদা আলাদা এবং প্রত্যেকটিই প্রয়োজনীয়। তাই ঘরের রুমগুলো যথাসম্ভব পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা প্রয়োজন।
২৭২. কেটে যাওয়া দাগ অধিকাংশ সময়ে মিলিয়ে গেলেও ; সর্বদা যায় না। কিছুকিছু ক্ষেত্রে ক্ষতদাগ রয়েই যায় শরীরে।
২৭৩. গন্তব্য ভাগ্যে না মিললেও ভালবাসার পিছনে আমৃত্যু দৌড়ানো যায়।কিন্তু ছায়ার পিছনে একদণ্ডও দৌড়াতে নেই। শুধুই সময় এবং শ্রমের অপচয়।
২৭৪.সন্তান তার জন্মদায়িনী মাকে অস্বীকার করলে, মায়ের কিছুই আসে যায় না; সন্তান নিজেই তার পরিচয়ের সংকটে পরে যায়। মাতৃরূপা এদেশীয় সংস্কৃতিকে অস্বীকার করে ঠিক এ কাজটিই করছে এদেশের সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তি।
২৭৫. মশারীর মধ্যে যেমন মশারী টানানো অপ্রয়োজনীয়; তেমনি কোন সংগঠনের মধ্যে সংগঠনের জন্ম হলে মূল সংগঠনটি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে যায়।
২৭৬. মানবজীবনে গোপনীয়তা থাকবেই, প্রত্যেকের জীবনেই কোন কোন না কোন গোপনীয়তা আছে। যতই প্রিয় হোক বা যতই কাছের হোক জীবনের সম্পূর্ণ গোপনীয়তা কাউকেই বলা উচিত নয়।এ মহাপুরুষেরা বলেছেন, "যত গুপ্ত তত পোক্ত; যত ব্যক্ত তত ত্যক্ত"। জীবনে যে কখন কোন বন্ধু-আপনজন শত্রুরূপে আবির্ভূত হবে তা কেউ নির্দিষ্টভাবে বলতে পারে না।
২৭৭.জগতের কোন কিছু নিয়েই আশাহত হওয়া উচিত নয়। আপাতদৃষ্টিতে সকল দ্বার রুদ্ধ হলেও, যদি তীব্রতর আত্মবিশ্বাস থাকে তবে কোন না কোন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবেই। ভয়ের কিছুই নেই।পেঁপেফল অপরিপক্ক কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকে। এই সবুজ পেঁপেটির জীবন চক্রের শুরুতে এবং শেষেই গৈরিক। মধ্যে কিছুটা সময় সবুজ। একটি পাঁকা টসটসে গৈরিক রঙের সুস্বাদু পেঁপের গর্ভের বীজ থেকেই অসংখ্য পেঁপের জন্ম। আবার সদ্য জন্ম নেয়া সবুজ পেঁপেটিই কালের প্রবাহে বীজপূর্ব গৈরিক রূপ ধারণ করবে। এ প্রাকৃতিক জীবনচক্র কেউ হাজার প্রচেষ্টা করেও রুদ্ধ করে রাখতে পারবে না।
২৭৮.অপমান, দুর্ব্যবহার কালের পরিক্রমায় ক্ষমা করে দিলেও সম্পূর্ণ ভুলে যাওয়া উচিত নয়। ভুলে গেলে ঘটনাগুলোর একই পুনরাবৃত্তি পরবর্তী প্রজন্মের সাথেও বারবার হয়।
২৭৯.লাখ টাকা হারালে কষ্ট পাই না,
কষ্ট পাই মানুষের অকৃতজ্ঞতায়;
বিশ্বাসঘাতকতায়, ছদ্মবেশী প্রবঞ্চনায়।
২৮০.মানুষ নামে জন্ম নিয়ে
পৃথিবীতে হেটেচলে বেড়ানো
প্রত্যেকেই মানুষ নয়,
এদের কেউ কেউ হয়ত মানুষ ;
অধিকাংশই দু'পায়ের হিংস্র প্রাণী।
২৮১. প্রতিনিয়ত সর্বক্ষেত্রে সমস্যার সন্ধানে সমস্যাই আরও বেড়ে যায়। কারণ, জগতময় সমস্যার দুষ্ট জাল অযাচিতভাবে সর্বত্র বিছানো। তাই সমস্যা অনুসন্ধানের থেকে যথাসম্ভব সমাধান অনুসন্ধানই একান্ত আবশ্যক।
২৮২. সমানাধিকার সমানাধিকার বলে সর্বদা চিৎকার করার পূর্বে ব্যক্তি এবং পারিবারিক সহ নিজ পরিমণ্ডলে আগে সমানাধিকার প্রয়োগ হতে নয়। নচেৎ বিষয়টি ফলপ্রসূ না হয়ে হাস্যকর হয়।
২৮৩.ভালবাসা যখন পূর্ণ হয়, তখন এ পূর্ণতাই নিয়ে আসে বিচ্ছেদ। ফলের বীজ যত পূর্ণ হতে থাকে, পরিপক্ব হতে থাকে, ততই তার বাইরের আবরণ ম্লান হয়ে যেতে থাকে। আদরের সাময়িক বিরতিতে তীব্র হয়, পূর্ণ হয়, রঙিন হয় এবং গন্তব্যে পৌছায় ভালবাসা।
২৮৪.দিনের জাজ্জ্বল্যমান আলোতেও যারা চোখে দেখতে পায় না, সেই দিবান্ধদের দেশে, চশমা অপ্রয়োজনীয়, আয়না অপ্রয়োজনীয়।
২৮৫.একগ্রন্থের জগতে,
গ্রন্থাগার শুধুই বিলাসিতা।
২৮৬.কুচকুচে কালো কাকের দেশে, সুন্দর ময়ূরকে নিয়ে সবাই পরিহাস করে। এটা ময়ূরের দুর্বলতা নয়, বরং কাকদের মূর্খতা।
২৮৭.অন্ধ অনুভূতির দেশে,
যুক্তি-তর্ক অপ্রয়োজনীয়।
২৮৮.জগতে কেউ হীন,দুর্বল নয়,
স্থান-কাল-পাত্রের ব্যবধান শুধু।
২৮৯.প্রদীপের টিমটিমে সলতের মত যারা বাঁচতে চায়, তারা বাঁচতে পারে না; পক্ষান্তরে যারা বাঁচা-মরাকে তোয়াক্কা করেনা, তারাই অমর হয়ে বেঁচে থাকে। তাই ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।
২৯০. সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ কখনও অপেক্ষা করতে চায় না। তবে অপেক্ষা মনুষ্যের একটি বড় গুণ।তাই অপেক্ষা প্রসঙ্গে একটি বাঙালি প্রবাদবাক্য আছে," সবুরে মেওয়া ফলে"। কোন সামাজিক বা রাজনৈতিক ক্ষমতাবান, সম্পদশালী এবং উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি সচরাচর অপেক্ষা করতে চায় না। এরা ব্যস্ত না থাকলেও ব্যস্ততার ভাণ করে নিজের কাজটি দ্রুততম সময়ে করে নিতে চায়। কিন্তু পক্ষান্তরে সুযোগ পেলেই অন্যদের এরা অকারণ অপেক্ষা করায়। তবে ক্ষমতাবানদের অন্যদের অপেক্ষা করানোর বিষয়টি কিছুটা বাস্তবতা বা প্রয়োজনীয় হলেও, অধিকাংশই মনস্তাত্ত্বিক রোগ।
২৯১. মানুষের জীবনের বিন্দুগুলো একটু একটু করে পথ চলে, একটি বৃত্ত পূর্ণ করে সেই বৃত্তকে পিছনে ফেলে বিন্দুগুলো অন্য একটি নতুন বৃত্তের সন্ধানে বেড়িয়ে পড়ে। এভাবেই প্রত্যেকটি জীবনে আমৃত্যু চলে বিন্দু এবং বৃত্তের অভিযাত্রা।
২৯২.আমাদের এ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতের ঊর্ধ্বে এক অন্য জগত আছে, সেই জগতের নাম দৈবীজগত। সে জগতের ভাষাও দৈবী। তাই আমরা সেই জগতের অধিকাংশ ভাষাই বুঝতে পারি না। এ দৈবীভাষা বীজের আবরণের মত। আবরণকে উন্মোচিত করেই বীজকে পেতে হয়। এই ভাষাটি আলো আঁধারী হওয়ায়, কখনো বোঝা যায় অথবা কখনো শুধুই অন্ধকার। পরমেশ্বরের বাণী বেদ এই দৈবী ভাষায় রচিত। তাই সকলেই বেদমন্ত্রের অন্তর্নিহিত অর্থ উপলব্ধি করতে পারে না। মন্ত্রের বাহ্যিক দৃষ্টিতে বিভ্রান্ত হয়ে যায়।
২৯৩.পরমেশ্বরের বাণী বেদের ভাষাটি দৈবী এবং পরোক্ষনির্ভর।বেদ পরোক্ষ ভাষায় রচিত। তাই বেদের সকল মন্ত্রেরই আভিধানিক বা আক্ষরিক অর্থ হবে না। অধিকাংশ মন্ত্রেরই পরোক্ষ বা আধ্যাত্মিক অর্থ হবে।
২৯৪.বিদ্যার পিছনে যে দৌড়ে চলে সে ইন্দ্রিয়ের সুখকে গ্রাহ্য করে না। এই ইন্দ্রিয়ের সুখ হলো এমন যে, যত উপভোগ করে ততই বেড়ে চলে। আগুনের মধ্যে ঘি দিলে আগুন যেমন দিনে দিনেই বেড়েই চলে, তেমনি ভোগের আগুনে দাউদাউ করে ভোগের আকাঙ্ক্ষাই বেড়ে চলে। এর থেকে মুক্তি পেতে হলে নিরাসক্তির জল ভোগে ঢেলে দিতে হবে।
২৯৫.মানুষের জীবনের সময়, সুযোগ, সাধ্য এ সকল কিছুই পরিপূর্ণভাবে থাকে না। কিছুটা ঘাটতি থাকে। এ ঘাটতি কখনই পূর্ণ হয় না। যেমন ছয়ফিটের মানুষের সম্পূর্ণ দেহ ঢাকতে যদি পাঁচফিটের একটি কাপড় দেয়া হয়, তবে সেই পাঁচফিটের কাপড় দিয়ে কখনই দেহ সম্পূর্ণভাবে ঢাকা যায় না। এবং ঢাকা আদৌ সম্ভব নয়। পা ঢাকতে গেলে মাথা বের হয়ে আসে এবং মাথা ঢাকতে গেলে পা বেরিয়ে আসে। এভাবেই জীবন এগিয়ে যায় জীবনের পথরেখায়।
২৯৬. বিদ্যার্থীদের কখনই সুখ এবং ভোগে জীবন অতিবাহিত করা উচিত নয়।যে বিদ্যার্থী সুখার্থী হয়ে সর্বদা সুখের পিছনে দৌড়ায়, সে কখনও বিদ্যা লাভ করতে পারে না।
২৯৭.অতিরিক্ত সুখভোগের পিছনে দৌড়ানোর পরে মানুষ যদি একদণ্ডও সুখকে বেঁধে রাখতে পারে, তবে দিনশেষে দেখা যায় সেই সেই সুখই প্রচণ্ড দুঃখের কারণ হয়। তখন মানুষ সেই মোহরূপ সুখের মিছরির কারাগার থেকে মুক্তি চায়।
২৯৮. জগতের অনেকেই নিজেকে ঠিক চিনতে পারে না। নিজের ভিতরের আত্মশক্তিকে উপলব্ধি করতে পারে না। নিজে কি করতে পারে তাও জানে না। যেহেতু নিজেকে চেনে না, তাই নিজের ভবিষ্যতকেও দেখতে পায় না।এরাই হারিয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, মহাকালের মহাস্রোতে খড়কুটোর মত।
২৯৯. সনাতন ধর্ম কোন এক ব্যক্তির জুজুর ভয় দেখানো ব্যক্তিগত মতবাদ নয়। এ ধর্ম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। তাই ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ নামক চতুর্বর্গেরই সমানুপাতিক অবস্থান রয়েছে সনাতন ধর্মে।
সহকারী অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ, বাংলাদেশ।

(সূত্রগুলি পরিবর্তনযোগ্য, আপনাদের সুস্পষ্ট মতামতের প্রেক্ষিতে। কোন কোন সূত্রগুলো ভাল লেগেছে, মন্দ লেগেছে নিচে কমেন্টে জানান) 

চিন্তাসূত্রের খেরোখাতার সকল পর্বের লিংক নিচে দেয়া হলো:





মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁