'গুরু' শব্দটি 'গু' এবং 'রু' সংস্কৃত দুটি শব্দ দ্বারা গঠিত; 'গু' শব্দের অর্থ 'অন্ধকার' এবং 'রু' শব্দের অর্থ অন্ধকারকে বিদূরিত করা। অর্থাৎ, যিনি হৃদয়ের অন্ধকারকে বিদূরিত করেন, তিনিই গুরু।আমাদের শাস্ত্রে গুরু নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে, কখনও সৃষ্টিকর্তা পরমেশ্বরকে গুরু বলা হয়েছে, কখনও বেদাদি শাস্ত্রগ্রন্থকে গুরু বলা হয়েছে, আবার প্রচলিত মনুষ্য গুরুর কথাও বারেবারে বলা হয়েছে। শ্রীমদ্ভাগবতের একাদশ স্কন্দের সপ্তম অধ্যায়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আরও দুই প্রকার গুরুর কথা বলেছেন। দুই প্রকার গুরুর মধ্যে প্রথমে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, মানুষ নিজেই নিজের গুরু; কারণ প্রাণীসকলের মধ্যে বিশেষত মানব আত্মাই নিজ হিতাহিত বুঝতে সক্ষম, তাই সে নিজেই নিজের গুরু হতে পারে।
শ্রীমদ্ভাগবতের ১১.০৭.২০ শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রথমে মানুষ নিজেই নিজের গুরু বলে, এরপরে দ্বিতীয়তে জীবজগত ও প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নিতে চব্বিশ গুরুর কথা বলেছেন। বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে বোঝাতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর পূর্বপুরুষ যদুর সাথে অবধূত দত্তাত্রেয়ের কথোপকথন উল্লেখ করেছেন। অবধূত সন্ন্যাসী জীবন চলার পথে যাঁদের আচরণ থেকে শিক্ষা পেয়েছেন, তাদেরই গুরু বলে প্রণাম করেছেন। শ্রীকৃষ্ণের পূর্বপুরুষ মহারাজ যদু সর্বস্ব ত্যাগী ব্রহ্মবেত্তা অবধূত দত্তাত্রেয় সন্ন্যাসীকে প্রশ্ন করলেন, "হে ব্রহ্মবেত্তা,আপনি কর্মে লিপ্ত না থেকেই, কেমন করে এ সুনিপুণ জ্ঞান বুদ্ধি অর্জন করলেন? আপনি পরম বিদ্বান হয়েও বালককের মত সংসারে বিরাজ করেন কার আশ্রয়ে? আমি জানতে ইচ্ছা করি, আপনি কেমন করে আপন আত্মাতেই এমন অনির্বচনীয় আনন্দ অনুভব করেন?" উত্তরে ব্রহ্মবেত্তা দত্তাত্রেয় অবধূত সন্ন্যাসী তখন বললেন, "আমি নিজ বুদ্ধি সহযোগে বহুগুরুর কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছি। এর ফলে আমি জগতে মুক্তভাবে স্বচ্ছন্দে বিচরণ করতে সক্ষম। আমি তোমাকে আমার জীবন চলার পথে সে সকল গুরুদের পরিচয় দিব এবং তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষার কথাও বলব। আমার শিক্ষাগুরুগণ হলেন,
১.পৃথিবী, ২.বায়ু, ৩.আকাশ,৪. জল, ৫.অগ্নি, ৬.চন্দ্র, ৭.সূর্য, ৮.কপোত,৯.অজগর, ১০.সমুদ্র,১১. পতঙ্গ, ১২. ভ্রমর বা মৌমাছি,১৩. হাতি, ১৪. মধু সংগ্রাহক, ১৫.হরিণ, ১৬.মাছ, ১৭.পিঙ্গলা বেশ্যা, ১৮.কুহর পাখি, ১৯.বালক,২০. কুমারীকন্যা, ২১.বাণনির্মাতা,২২. সর্প,২৩. ঊর্ণনাভি, ২৪.কাঁচ পোকা।
এ চব্বিশ গুরুর শরণাগত হয়ে তাঁদের আচরণ থেকেই আমি সকল শিক্ষা লাভ করেছি।"মহারাজ যদু এবং অবধূত সন্ন্যাসীর গুরু প্রসঙ্গের কথোপকথনে আমরা দেখলাম, শুধু মানুষ নয়, জগতের পরিবেশ প্রকৃতির সবার থেকেই আমরা শিক্ষা লাভ করতে পারি। প্রকৃতি থেকেই প্রতিনিয়তই আমরা শিক্ষা লাভ করছি এবং করে চলছি। যাদের থেকেই কিছু না কিছু শিখছি, তাঁরাই আমাদের জীবনের একজন গুরু,এটি একটি মহান শিক্ষা। গুরু নিয়ে আমাদের শাস্ত্রে কোন এককেন্দ্রীক সিদ্ধান্ত নেই। জীবনে শুধু একজন গুরুর আবশ্যকতা শাস্ত্রের সকল স্থানেই একইভাবে বলা নেই। শ্রীমদ্ভাগবতে চব্বিশ গুরুর প্রসঙ্গের ঠিক আগেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে, মানুষ নিজেই নিজের গুরু। মানুষের মধ্যে হিতাহিতজ্ঞান আছে, করণীয় অকরণীয় জ্ঞান আছে, তাই মানুষ একটু একাগ্র হলে এমনিতেই বুঝতে পারে তার করণীয় ও বর্জনীয়।
প্রায়েণ মনুজা লোকে লোকতত্ত্ববিচক্ষণাঃ।
সমুদ্ধরন্তি হ্যাত্মানমাত্মনৈবাশুভাশয়াৎ।।
আত্মনো গুরুরাত্মৈব পুরুষস্য বিশেষতঃ।
যৎ প্রত্যক্ষানুমানাভ্যাং শ্রেয়োঽসাবনুবিন্দতে।। (শ্রীমদ্ভাগবত:১১.৭.১৯-২০)
"ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন, হে উদ্ধব এ জগতে যাঁরা জগৎ কি? এর মধ্যে আছেই বা কি? এই সব বিচারে সুনিপুণ, তাঁরা বিবেকশক্তির সাহায্যে চিত্তের অশুভ বাসনাসকল থেকে প্রায়শ রক্ষা পেয়ে থাকেন।প্রাণীসকলের মধ্যে বিশেষত মানব আত্মাই নিজ হিতাহিত বুঝতে সক্ষম, তাই সে নিজেই নিজের গুরু; কারণ সে নিজের প্রত্যক্ষ অনুভব ও অনুমান দ্বারা নিজ হিতাহিত নির্ধারণে পূর্ণরূপে সক্ষম।"
এ প্রসঙ্গে আমরা মহাভারতের একলব্যের উদাহরণ দিতে পারি।একলব্য মহাভারতের একটি ছোট চরিত্র, খুব বেশী সময়ে এ চরিত্রটিকে পাওয়া যায় না ৷ কিন্তু স্বল্প পরিসরেও একলব্যের উপস্থিতি আজও আমাদের মনে দাগ কাটে। আত্মবিশ্বাস এবং একাগ্রতার জ্বাজ্জল্যমান উদাহরণ তিনি। রাজবংশের সদস্য না হওয়ায় তৎকালীন নিয়মানুসারে অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্য তাঁকে ধনুর্বিদ্যা শিক্ষা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। বিষয়টিতে একলব্য প্রচণ্ড কষ্ট পেলেও, থেমে যাননি৷ গুরু দ্রোণাচার্যের প্রতিমা তৈরী করে শুরু করলেন নিবিড় অস্ত্রসাধনা ৷ একদিন এক যুদ্ধে দ্রোণাচার্যের প্রিয় শিষ্য অর্জুনের সাথে যুদ্ধের সম্মুখীন হয় একলব্য ৷ দুজনেই প্রায় সমান মহারথী, কারো থেকে কেউ কম নয়৷ এমন সময় দ্রোণাচার্য জানতে পারেন, একলব্য তাঁরই ভাবশিষ্য। একলব্য মনে মনে তাকে গুরুরূপে গ্রহণ করেছেন।
একলব্যের ঘটনাটি আমাদের শ্রীমদ্ভাগবতের "আত্মাই নিজ হিতাহিত বুঝতে সক্ষম, নিজেই নিজের গুরু; কারণ সে নিজের প্রত্যক্ষ অনুভব ও অনুমান দ্বারা নিজ হিতাহিত নির্ধারণে পূর্ণরূপে সক্ষম।" -এ সিদ্ধান্তের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। গুরু দ্রোণাচার্য যেহেতু রাজপরিবারের বেতনভোগী অস্ত্রের শিক্ষক। আজকে আমাদের সকল চাকুরির শর্তাবলী অনুসারে চাইলেই আমরা সকল কাজ করতে পারি না, শিক্ষক হলেও নিজ প্রতিষ্ঠানের অনুমতি ছাড়া অন্য সকল প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের শেখাতে পারি না ; তেমনি কুরুবংশের অস্ত্রের শিক্ষক দ্রোণাচার্যও পারেননি। কিন্তু একলব্য গুরুকে স্মরণ করে, শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করে নিজেই নিজের অস্ত্রগুরু হয়েছিলেন। তাঁর ভেতরের আত্মশক্তিকে জাগরিত করতে পেরেছিলেন। ফলশ্রুতিতে, অর্জুনের সমতুল্য ধনুর্ধর হয়েছিলেন। মহাভারতের প্রায় লক্ষাধিক চরিত্রের মধ্যে তাই আজও তাঁকে আমরা পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করি।
ভগবান বিবেকশক্তির জাগরণে চিত্তের অশুভ বাসনা থেকে মুক্ত হতে বলেছেন। শ্রীমদ্ভাগবত অনুসারে জগতে জীবের মধ্যে মানবের আত্মারই বিবেক জাগ্রত, ভালমন্দ বুঝতে সক্ষম। তাই মানব চাইলে নিজেই নিজের গুরু হতে পারে। নিজেই নিজেকে পথ দেখাতে পারে, শুধু আত্মবিশ্বাস, নিষ্ঠা এবং একাগ্রতা প্রয়োজন। অন্যের আশায় না থেকে আমাদের স্মরণে রাখতে হবে, নিজদের পাপপুণ্য নিজেদেরই ভোগ করতে হবে এবং নিজের মুক্তির পথে নিজেকেই অগ্রসর হতে হবে। আমরা রামায়ণ রচয়িতা বাল্মিকী মুনির জীবনে দেখি, তিনি যখন পরিবার পরিজনকে পোষণ করতে রত্নাকর দস্যু হয়েছিলেন। দস্যু অবস্থায় অনেক নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছিলেন, সর্বস্ব লুণ্ঠন করেছিলেন। পরবর্তীতে যাদের জন্যে তিনি এ দুষ্কর্ম করছেন সেই মা-বাবা -স্ত্রী-সন্তান পরিবার পরিজন কেউই তাঁর পাপের ভাগিদার হতে রাজি হয়নি। তখন তাঁর আত্মজ্ঞানের উপলব্ধি হল এবং তিনি রত্নাকর দস্যু নামক অন্ধকার জীবন থেকে মহর্ষি বাল্মিকী হয়ে পরবর্তীতে রামায়ণ গ্রন্থ রচনা করলেন। একারণেই শ্রীমদ্ভগবদগীতাতে বলা আছে, "আত্মাই আত্মার বন্ধু, আত্মাই আত্মার শত্রু।" শ্লোকগুলো আমরা অনেকেই নিয়মিত পড়ি, কিন্তু উপলব্ধি করিনা।
উদ্ধরেদাত্মনাত্মানং নাত্মানমবসাদয়েৎ।
আত্মৈব হ্যাত্মনো বন্ধুরাত্মৈব রিপুরাত্মনঃ।।
"আত্মার দ্বারাই আত্মাকে বিষয়কূপ হতে উদ্ধার করবে, আত্মাকে অধঃপতনের দিকে যেতে দিবে না; কারণ, আত্মাই আত্মার বন্ধু, আত্মাই আত্মার শত্রু।"
ভগবান আত্মার দ্বারাই আত্মাকে বিষয়কূপ হতে উদ্ধার হতে বলেছেন। অর্থাৎ অন্য কেউ আমার কর্মফল খণ্ডন করে দিতে পারবে না, নির্বাণমুক্তি দিতে পারবে না, যতক্ষণ না নিজে নিজেকে চালিত করে আমি মুক্তির পথে অগ্রসর হই। এ প্রসঙ্গে একটি গল্প মনে হচ্ছে আমার। একটি ছেলে একদম পড়াশোনা করেনা। পড়াশোনায় তার মনই নেই, শুধুই খেলাধুলা করে বেড়ায়। তাই প্রতিবারই পরীক্ষায় ফেল করে। পড়ায় অমনোযোগী একমাত্র ছেলেটিকে নিয়ে মা-বাবার দুঃশ্চিন্তার অন্ত নেই। হতাশ হয়ে ছেলেটির মা-বাবা একদিন পার্শ্ববর্তী এক সাধু বাবার কাছে ছেলেটিকে নিয়ে গেল। সাধুবাবা সব দেখেশুনে ওকে একটি কবচ গলায় ধারণ করতে বলেন এবং কানেকানে একটি অমোঘ মন্ত্র দিলেন। মন্ত্রটি হল:
ছেলেটির মা জিজ্ঞাসা করলেন, "বাবা এই কবচটি গলায় ধারণ করতে হবে তাই না?" সাধু বললেন, "প্রতিদিন সজাগ থেক,দৃষ্টি রেখ, ভক্তি রেখ।" ছেলেটির মা বললেন, "বুঝেছি বাবা প্রতিদিন ভক্তি রাখতে বলেছেন মানে, প্রতিদিন কবচটিকে দুধ দিয়ে স্নান করিয়ে পূজা করতে হবে এবং সে কবচ স্নানের জল পান করাতে হবে।" সাধুবাবা ঈষৎ রহস্যময় হেসে বললেন, "দেহ-মন-চিন্তার দ্বারগুলিকে একটু খোলা রেখ মা, তা না হলে পাখিতো উড়ে যাবে,মরে যাবে।" সাধুবাবার কথাগুলো কেমন হেঁয়ালিপূর্ণ লাগলো ছেলেটির মা-বাবার কাছে। পরে সাধুবাবাকে প্রণাম করে তারা বাড়ি ফিরে আসলো। বাড়ি ফিরে ছেলেটিকে প্রচণ্ড আশা নিয়ে দুধজলে কবচ স্নান করিয়ে, পূজা দিয়ে প্রতিদিন ছেলেটিকে সে জল ভক্তি সহকারে খাওয়াতে লাগলো। কিন্তু এবারও ছেলেটি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হল। এবার ছেলেটির মা-বাবার সাধুবাবার উপরে প্রচণ্ড ক্ষোভ জন্মাল।তারা আবার সাধুর আশ্রমে গেলেন, দেখতে পেলেন তিনি ধ্যান করছেন। ধ্যানভঙ্গ হলে পরে তারা অভিযোগের সুরে সাধুকে কবচ ধারণ করা সত্ত্বেও, গত একবছরে দিনরাত এত প্রচেষ্টা করার পরেও তার ছেলের পরীক্ষায় অকৃতকার্যতার কথা বললেন। সাধু আবার রহস্যময় ঈষৎ হেসে বললেন, "তোমাদেরকে আমি দেহ-মন-চিন্তার দ্বারগুলিকে একটু খোলা রাখতে বলেছিলাম, তা না হলে পাখি উড়ে যাবে মরে যাবে- এ কথাটি বলেছিলাম মনে আছে? তোমরা কি কথাগুলো যথাযথ পালন করেছিলে?"
উৎকণ্ঠিত ছেলেটি সাধুকে বললো, "আপনার কথামত মা-বাবার নির্দেশ মত আমি সকলই অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলাম, এরপরেও আমি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলাম।" সাধু বললেন, "তুমি এবং তোমার পরিবার কেউ আমার নির্দেশ পালন করনি, যদি করতে তবে অবশ্যই কৃতকার্য হতে।তোমাকে কবচটির সাথে সাথে একটি মন্ত্র দিয়েছি, এ মন্ত্রের মধ্যেই সকল নির্দেশনা ছিল। এ মন্ত্রের মধ্যে, 'জাগবে কৌতুহল', 'ভেঙে ফেলবি', 'সিন্দুকে পাবি মন্ত্র', 'চলবে সকল যন্ত্র'- এ বাক্যগুলো তুমি গত একবছরে দিনরাত জপ করেছে কখনও কি একটিবারের জন্যে সেগুলোর অন্তর্নিহিত অর্থ তোমার উপলব্ধিতে এসেছে?" ছেলেটি তখন বললো, "সাধুবাবা আপনি কবচ দিয়েছেন, আমি গলায় ধারণ করেছি, মন্ত্র দিয়েছেন দিনরাত্রি জপ করেছি এর বাইরে আর উপলব্ধির কি আছে!" সাধুবাবা তখন ছেলেটিকে বললেন, "বাবা তোমার কবচটি গলা থেকে খুলে, এবার এই পাথরটি দিয়ে কবচটি ভেঙে ফেল।" ছেলেটি একরাশ ভয় এবং অনিচ্ছায় কবচটি ভেঙে ফেললো। ভাঙার পরে কবচের ভেতর থেকে বের হল একটি তুলট কাগজের ধূসর বর্ণের চিরকুট। চিরকুটের ভেতরে বড় করে লেখা, 'ছাত্রানাং অধ্যয়নং তপঃ' এবং এর ঠিক নিচেই লেখা, "বাবা তুমি যেদিন এ কবচটিকে ভেঙে তোমার নিজের পড়াশোনায় মন দিবে এবং নিজের শক্তিকে উপলব্ধি করতে পারবে, সেদিন থেকেই তোমার দ্বিতীয় জন্ম হবে। সর্বদা মনে রাখবে তুমি নিজেই নিজের গুরু, নিজেই নিজের বন্ধু এবং নিজেই নিজের শত্রু।"
ওঁ অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া।
চক্ষুরুন্মিলিত যেন তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ ।।
অজ্ঞানরূপ তিমির অন্ধকারে আত্মজ্ঞানের শলাকা দিয়ে যদি আমাদের জ্ঞানচক্ষুকে উন্মোচিত করতে পারি, তবেই শ্রীমদ্ভাগবতে বলা আমাদের মধ্যে অবস্থিত আত্মগুরু জেগে উঠবে। আমাদের পথ দেখাবে। এক্ষেত্রে মনুষ্য সদগুরু যদি পাওয়া যায়,তবে ক্ষুরের অগ্রভাগের মত মুক্তির সাধনপথে চলতে হয়ত আমাদের সহায়তা হবে। কিন্তু যদি যোগ্য সদগুরু বা তাঁদের শিক্ষা না পাওয়া যায়, তবে একলব্যের মত আত্মদীপকে প্রজ্জ্বলিত করে আত্মগুরুকে অবলম্বন করে অগ্রসর হতে হবে। তা না হলে কানার হাটবাজারে নিজে কানা হয়েও, অন্যকে ভবপারে যেতে আহ্বান করা কানাদের দ্বারা প্রতিনিয়ত ধোঁকা খেতে হবে। কারণ মানুষকে শিক্ষা দেয়ায় নামে বহু কানাই গুরু নামে আমাদের আশেপাশে। বিষয়টি অত্যন্ত সুন্দর করে উপলব্ধি করেছিলেন লালন সাঁই।
"এক কানা কয় আর এক কানারে
একটি বৃহৎ পাথরকে কেটে কেটে যেভাবে প্রচণ্ড নিষ্ঠা এবং একাগ্রতায় একটি মানুষের মূর্তি তৈরি করা হয় ; ঠিক সেভাবেই আমাদের আত্মজ্ঞানকে সম্বল করে মুক্তির পথে অগ্রসর হতে হয়। মানুষ নিজেই নিজের শত্রু, নিজেই নিজের মিত্র, নিজেই নিজের গুরু। মুক্তির পথে মানুষ নিজেই পাথর, নিজেই পাথর কাটার ছেনি হাতুড়ি , নিজেই ইচ্ছা, নিজেই কর্মপদ্ধতি, নিজেই একাগ্রতা। তাই সংসাররূপ কঠিন পাথর থেকে নিজের স্বরূপ নিজেকেই খোদাই করে বের করে নিতে হয়; অন্য কেউ দেয় না বা দিতে পারে না।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।