-->

ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

'সত্য, প্রেম, পবিত্রতা' এ তিনটি মূলমন্ত্রে; আধুনিক বরিশালের রূপকার অশ্বিনীকুমার।


মহাত্মা অশ্বিনীকুমার দত্ত বরিশালের গৌরনদীর বাটাজোর গ্রামে ১৮৫৬ সালের ২৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন খ্যাতিমান বাঙালি রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক এবং লেখক।তার পিতা ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের সাব-জজ ব্রজমোহন দত্ত। মা প্রসন্নময়ী ছিলেন বানরীপাড়ার বনেদি পরিবারের রাধাকিশোর গুহের কন্যা। তাঁর পিতামাতা উভয়ই ছিলেন সৎ, নিষ্ঠাবান এবং দেশপ্রেমিক। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে অসুস্থ শরীর নিয়ে মহাত্মা অশ্বিনীকুমার দত্ত উন্নত চিকিৎসার জন্যে কলকাতায় যান। কোলকাতায় ডাক্তার নীলরতন দে-র কাছে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯২৩ সালের ৭ই নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।সারাজীবন তিনি নিঃস্বার্থভাবে দেশ-জাতির সেবা করে চেতনার উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। সে কারণে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস তাঁকে "Our friend philosopher and guide" বলে অবিহিত করেছেন। স্বাধীনতাসংগ্রামী বিপিন চন্দ্র পাল তাঁকে "বাংলার একমাত্র লোকনায়ক" বলে আখ্যায়িত করেছেন। ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধী বরিশালে এসে অশ্বিনীকুমার দত্তকে অদ্বিতীয় নেতা হিসেবে, 'মহাত্মা' বলে সম্বোধন করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর 'ফণি-মনসা' কাব্যগ্রন্থের 'অশ্বিনীকুমার' নামে অশ্বিনীকুমার দত্তকে শ্রদ্ধা জানিয়ে দীর্ঘ কবিতা লেখেন। কবি নজরুল ইসলামের কবিতার প্রত্যেকটি ছত্রে সুস্পষ্ট হয়ে উঠে অশ্বিনীকুমার দত্তের অনন্য কর্মযজ্ঞের ঔজ্জ্বল্য। "আজ যবে প্রভাতের নব যাত্রীদল ডেকে গেল রাত্রিশেষে, ‘চল আগে চল’, – ‘চল আগে চল’ গাহে ঘুম-জাগা পাখি, কুয়াশা-মশারি ঠেলে জাগে রক্ত-আঁখি নবারুণ নব আশা। আজি এই সাথে, এই নব জাগরণ-আনা নব প্রাতে তোমারে স্মরিনু বীর প্রাতঃস্মরণীয় ! স্বর্গ হতে এ স্মরণ-প্রীতি অর্ঘ্য নিয়ো ! নিয়ো নিয়ো সপ্তকোটি বাঙালির তব অশ্রু-জলে স্মৃতি-পূজা অর্ঘ‌্য অভিনব! অগ্রে তুমি জেগেছিলে অগ্রজ শহিদ, তুমি ঋষি, শুভ প্রাতে টুটেছিল নিদ, তব পথে যাত্রী যারা রাত্রি-দিবা ধরি ঘুমাল গভীর ঘুম, আজ তারা মরি বেলাশেষে জাগিয়াছে! সম্মুখে সবার অনন্ত তমিস্রাঘোর দুর্গম কান্তার! পশ্চাতে ‘অতীত’ টানে জড় হিমালয়, সংশয়ের ‘বর্তমান’ অগ্রে নাহি হয়, তোমা-হারা দেখে তারা অন্ধ ‘ভবিষ্যৎ’, যাত্রী ভীরু, রাত্রি গুরু, কে দেখাবে পথ! হে প্রেমিক, তব প্রেম বরিষায় দেশে এল ঢল বীরভূমি বরিশাল ভেসে। সেই ঢল সেই জল বিষম তৃষায় যাচিছে ঊষর বঙ্গ তব কাছে হায়! পীড়িত এ বঙ্গ তব কাছে হায়! পীড়িত এ বঙ্গ পথ চাহিছে তোমার, অসুর নিধনে কবে আসিবে আবার!" ছাত্রজীবনে অসাধারণ মেধাবী ছিলেন অশ্বিনীকুমার দত্ত। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফ এ পাশ করে ১৮৭৯ সালে এলাহাবাদ থেকে মাত্র ২৩ বছর বয়েসে আইন (বি.এল) পাশ করেন তিনি।  বরিশালে বিভিন্ন সমাজহিতৈষী ও জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে তাঁকে আধুনিক বরিশালের রূপকার বলে অভিহিত করা হয়। বরিশাল শহরে নিজের দান করা ভূমিতে পিতার নামে ১৮৮৪ সালে ব্রজমোহন বিদ্যালয় স্থাপন করেন। তিনি তাঁর আদর্শিক স্বপ্নের বিদ্যালয়টিকে সারা দেশের আদর্শ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। বিষয়টি ১৮৯৭-৯৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রজমোহন বিদ্যালয়ের সরকারি বার্ষিক শিক্ষাবিবরণীতেও দেখা যায়। সে বার্ষিক বিবরণীতে ব্রজমোহন বিদ্যালয় সম্পর্কে অশ্বিনীকুমার দত্ত বলেন, ‘The school is unrivalled in point of discipline and efficiency. It is an institution that ought to serve as a model to all schools, government and private’. একই নামে ১৮৮৯ সালে ব্রজমোহন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ২০ বছর বিনা বেতনে ব্রজমোহন কলেজে অবৈতনিক শিক্ষাদান করেন, যা একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত আমাদের জন্যে।'সত্য প্রেম পবিত্রতা' এ মূলমন্ত্রে উদ্দীপিত করে মহাত্মা অশ্বিনীকুমার দত্ত তাঁর যাবতীয় সৎকর্মের সঙ্গে ব্রজমোহন বিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের যুক্ত করেছিলেন। বাংলা ১৩১৩ সনে বরিশালে এক ভয়ংকর দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তখন দুর্ভিক্ষপীড়িতদের রক্ষা এবং সাহায্যার্থে অশ্বিনীকুমার দত্ত 'জনসাধারণ সভা,বরিশাল' নামে সংগঠন তৈরি করেন। সে সংগঠনটির কাজ ছিল দুর্ভিক্ষপীড়িতদের জন্যে যথাসম্ভব একটি ফান্ড গঠন করা। তিনি সে সংগঠনের সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। ১৮ই ভাদ্র ১৩১৩ বঙ্গাব্দে 'জনসাধারণ সভা, বরিশাল' এর কার্যবিবরণী সভায় অশ্বিনীকুমার দত্ত বলেন: "সমস্ত জেলায় চাউলের অভাব উপস্থিত হইয়াছে। অনেক হাটে অগ্নিমূল্য দিয়াও চাউল পাওয়া যাইতেছে না। এদিকে বস্ত্রাভাবে দুর্ভিক্ষপীড়িত ব্যক্তিগণের কি কষ্ট হইতেছে তাহা বর্ণনাতীত। শতখণ্ড ছিন্নবস্ত্রও জুটিতেছে না। আমাদিগের নাজিরপুর থানার চাউল বিতরণকারী কর্মচারী প্রকাশ করিলেন যে, স্ত্রীলােক অবধি কলা ও মানপত্র দ্বারা কথঞ্চিৎ লজ্জা নিবারণ করিয়া তাহার নিকট চাউলের জন্য উপস্থিত হইতেছে। বাখরগঞ্জের অবস্থা এরূপ শোচনীয় হইবে কেহ কখন স্বপ্নেও ভাবিতে পারে নাই। একমাত্র সাহায্যকারী মহাত্মাগণের কৃপায়ই এতদিন কোন রূপে চলিতেছে।" বরিশাল শহরে স্ত্রী শিক্ষার্থে ১৮৮৭ সালে একটি বালিকা বিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৮৬-তে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য 'পিপলস্‌ অ্যাসোসিয়েশন' স্থাপন করেন।১৮৮৭-তে তাঁর প্রচেষ্টায় বরিশাল ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড স্থাপিত হয়।১৯০৫-১৯১১ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময়ে দেশের জাতীয় নেতার মর্যাদা লাভ করেন তিনি। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে মাদ্রাজ অধিবেশনে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। জাতীয় কংগ্রেসকে ব্রিটিশের প্রসাদভোজি আনুগত্যের প্রাসাদ রাজনীতি থেকে মুক্তি দিয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যে নিয়ে আসার প্রথম কারিগর হলেন মহাত্মা অশ্বিনীকুমার দত্ত। তাঁর প্রতিষ্ঠিত 'স্বদেশ বান্ধব সমিতি' এর স্বেচ্ছাসেবকদের সাহায্যে বরিশালকে স্বদেশী আন্দোলনের একটি শক্তিশালী কেন্দ্রে পরিণত করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় বরিশালে চারণ কবি মুকুন্দদাসের মত বিপ্লবীরা বিপ্লবের অগ্নিমন্ত্রে সবাইকে প্রেরণাদীপ্ত করতে পেরেছে। মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত ছিলেন একজন বড় মাপের দার্শনিক, যা তাঁর মৌলিক রচনায় প্রতিফলিত। বিভিন্ন বিষয়ের উপরে তিনি অত্যন্ত গুরুত্ববহ কয়েকটি গ্রন্থ লিখেছেন, সে গ্রন্থগুলো হল: ভক্তিযোগ, কর্মযোগ,ভারতগীতি, আত্মপ্রতিষ্ঠা, দুর্গোৎসবতত্ত্ব, প্রেম। কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী  সহকারী অধ্যাপক,  সংস্কৃত বিভাগ,  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

মহাত্মা অশ্বিনীকুমার দত্ত বরিশালের গৌরনদীর বাটাজোর গ্রামে ১৮৫৬ সালের ২৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন খ্যাতিমান বাঙালি রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক এবং লেখক।তার পিতা ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের সাব-জজ ব্রজমোহন দত্ত। মা প্রসন্নময়ী ছিলেন বানরীপাড়ার বনেদি পরিবারের রাধাকিশোর গুহের কন্যা। তাঁর পিতামাতা উভয়ই ছিলেন সৎ, নিষ্ঠাবান এবং দেশপ্রেমিক।
১৯২২ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে অসুস্থ শরীর নিয়ে মহাত্মা অশ্বিনীকুমার দত্ত উন্নত চিকিৎসার জন্যে কলকাতায় যান। কোলকাতায় ডাক্তার নীলরতন দে-র কাছে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯২৩ সালের ৭ই নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।সারাজীবন তিনি নিঃস্বার্থভাবে দেশ-জাতির সেবা করে চেতনার উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। সে কারণে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস তাঁকে "Our friend philosopher and guide" বলে অবিহিত করেছেন। স্বাধীনতাসংগ্রামী বিপিন চন্দ্র পাল তাঁকে "বাংলার একমাত্র লোকনায়ক" বলে আখ্যায়িত করেছেন। ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধী বরিশালে এসে অশ্বিনীকুমার দত্তকে অদ্বিতীয় নেতা হিসেবে, 'মহাত্মা' বলে সম্বোধন করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর 'ফণি-মনসা' কাব্যগ্রন্থের 'অশ্বিনীকুমার' নামে অশ্বিনীকুমার দত্তকে শ্রদ্ধা জানিয়ে দীর্ঘ কবিতা লেখেন। কবি নজরুল ইসলামের কবিতার প্রত্যেকটি ছত্রে সুস্পষ্ট হয়ে উঠে অশ্বিনীকুমার দত্তের অনন্য কর্মযজ্ঞের ঔজ্জ্বল্য।
"আজ যবে প্রভাতের নব যাত্রীদল
ডেকে গেল রাত্রিশেষে, ‘চল আগে চল’, –
‘চল আগে চল’ গাহে ঘুম-জাগা পাখি,
কুয়াশা-মশারি ঠেলে জাগে রক্ত-আঁখি
নবারুণ নব আশা। আজি এই সাথে,
এই নব জাগরণ-আনা নব প্রাতে
তোমারে স্মরিনু বীর প্রাতঃস্মরণীয় !
স্বর্গ হতে এ স্মরণ-প্রীতি অর্ঘ্য নিয়ো !
নিয়ো নিয়ো সপ্তকোটি বাঙালির তব
অশ্রু-জলে স্মৃতি-পূজা অর্ঘ‌্য অভিনব!
অগ্রে তুমি জেগেছিলে অগ্রজ শহিদ,
তুমি ঋষি, শুভ প্রাতে টুটেছিল নিদ,
তব পথে যাত্রী যারা রাত্রি-দিবা ধরি
ঘুমাল গভীর ঘুম, আজ তারা মরি
বেলাশেষে জাগিয়াছে! সম্মুখে সবার
অনন্ত তমিস্রাঘোর দুর্গম কান্তার!
পশ্চাতে ‘অতীত’ টানে জড় হিমালয়,
সংশয়ের ‘বর্তমান’ অগ্রে নাহি হয়,
তোমা-হারা দেখে তারা অন্ধ ‘ভবিষ্যৎ’,
যাত্রী ভীরু, রাত্রি গুরু, কে দেখাবে পথ!
হে প্রেমিক, তব প্রেম বরিষায় দেশে
এল ঢল বীরভূমি বরিশাল ভেসে।
সেই ঢল সেই জল বিষম তৃষায়
যাচিছে ঊষর বঙ্গ তব কাছে হায়!
পীড়িত এ বঙ্গ তব কাছে হায়!
পীড়িত এ বঙ্গ পথ চাহিছে তোমার,
অসুর নিধনে কবে আসিবে আবার!"
ছাত্রজীবনে অসাধারণ মেধাবী ছিলেন অশ্বিনীকুমার দত্ত। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফ এ পাশ করে ১৮৭৯ সালে এলাহাবাদ থেকে মাত্র ২৩ বছর বয়েসে আইন (বি.এল) পাশ করেন তিনি।
বরিশালে বিভিন্ন সমাজহিতৈষী ও জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে তাঁকে আধুনিক বরিশালের রূপকার বলে অভিহিত করা হয়। বরিশাল শহরে নিজের দান করা ভূমিতে পিতার নামে ১৮৮৪ সালে ব্রজমোহন বিদ্যালয় স্থাপন করেন। তিনি তাঁর আদর্শিক স্বপ্নের বিদ্যালয়টিকে সারা দেশের আদর্শ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। বিষয়টি ১৮৯৭-৯৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রজমোহন বিদ্যালয়ের সরকারি বার্ষিক শিক্ষাবিবরণীতেও দেখা যায়। সে বার্ষিক বিবরণীতে ব্রজমোহন বিদ্যালয় সম্পর্কে অশ্বিনীকুমার দত্ত বলেন, ‘The school is unrivalled in point of discipline and efficiency. It is an institution that ought to serve as a model to all schools, government and private’. একই নামে ১৮৮৯ সালে ব্রজমোহন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ২০ বছর বিনা বেতনে ব্রজমোহন কলেজে অবৈতনিক শিক্ষাদান করেন, যা একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত আমাদের জন্যে।'সত্য প্রেম পবিত্রতা' এ মূলমন্ত্রে উদ্দীপিত করে মহাত্মা অশ্বিনীকুমার দত্ত তাঁর যাবতীয় সৎকর্মের সঙ্গে ব্রজমোহন বিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের যুক্ত করেছিলেন।
বাংলা ১৩১৩ সনে বরিশালে এক ভয়ংকর দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তখন দুর্ভিক্ষপীড়িতদের রক্ষা এবং সাহায্যার্থে অশ্বিনীকুমার দত্ত 'জনসাধারণ সভা,বরিশাল' নামে সংগঠন তৈরি করেন। সে সংগঠনটির কাজ ছিল দুর্ভিক্ষপীড়িতদের জন্যে যথাসম্ভব একটি ফান্ড গঠন করা। তিনি সে সংগঠনের সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। ১৮ই ভাদ্র ১৩১৩ বঙ্গাব্দে 'জনসাধারণ সভা, বরিশাল' এর কার্যবিবরণী সভায় অশ্বিনীকুমার দত্ত বলেন:
"সমস্ত জেলায় চাউলের অভাব উপস্থিত হইয়াছে। অনেক হাটে অগ্নিমূল্য দিয়াও চাউল পাওয়া যাইতেছে না।
এদিকে বস্ত্রাভাবে দুর্ভিক্ষপীড়িত ব্যক্তিগণের কি কষ্ট হইতেছে তাহা বর্ণনাতীত। শতখণ্ড ছিন্নবস্ত্রও জুটিতেছে না। আমাদিগের নাজিরপুর থানার চাউল বিতরণকারী কর্মচারী প্রকাশ করিলেন যে, স্ত্রীলােক অবধি কলা ও মানপত্র দ্বারা কথঞ্চিৎ লজ্জা নিবারণ করিয়া তাহার নিকট চাউলের জন্য উপস্থিত হইতেছে। বাখরগঞ্জের অবস্থা এরূপ শোচনীয় হইবে কেহ কখন স্বপ্নেও ভাবিতে পারে নাই। একমাত্র সাহায্যকারী মহাত্মাগণের কৃপায়ই এতদিন কোন রূপে চলিতেছে।"
বরিশাল শহরে স্ত্রী শিক্ষার্থে ১৮৮৭ সালে একটি বালিকা বিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৮৬-তে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য 'পিপলস্‌ অ্যাসোসিয়েশন' স্থাপন করেন।১৮৮৭-তে তাঁর প্রচেষ্টায় বরিশাল ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড স্থাপিত হয়।১৯০৫-১৯১১ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময়ে দেশের জাতীয় নেতার মর্যাদা লাভ করেন তিনি। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে মাদ্রাজ অধিবেশনে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। জাতীয় কংগ্রেসকে ব্রিটিশের প্রসাদভোজি আনুগত্যের প্রাসাদ রাজনীতি থেকে মুক্তি দিয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যে নিয়ে আসার প্রথম কারিগর হলেন মহাত্মা অশ্বিনীকুমার দত্ত। তাঁর প্রতিষ্ঠিত 'স্বদেশ বান্ধব সমিতি' এর স্বেচ্ছাসেবকদের সাহায্যে বরিশালকে স্বদেশী আন্দোলনের একটি শক্তিশালী কেন্দ্রে পরিণত করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় বরিশালে চারণ কবি মুকুন্দদাসের মত বিপ্লবীরা বিপ্লবের অগ্নিমন্ত্রে সবাইকে প্রেরণাদীপ্ত করতে পেরেছে। মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত ছিলেন একজন বড় মাপের দার্শনিক, যা তাঁর মৌলিক রচনায় প্রতিফলিত। বিভিন্ন বিষয়ের উপরে তিনি অত্যন্ত গুরুত্ববহ কয়েকটি গ্রন্থ লিখেছেন, সে গ্রন্থগুলো হল: ভক্তিযোগ, কর্মযোগ,ভারতগীতি, আত্মপ্রতিষ্ঠা, দুর্গোৎসবতত্ত্ব, প্রেম।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁