-->

ধর্ম নির্ণয়ে বেদই একমাত্র প্রমাণ; পুরাণ এবং স্মৃতি সহায়ক মাত্র

বর্তমানে সনাতন ধর্মাবলম্বী কিছু ব্যক্তি প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদকে পাশ কাটিয়ে শুধু পৌরাণিক গ্রন্থ অথবা বিভিন্ন বাবাগুরুদের লেখা ছড়ার বই, গ...

মাৎস্যন্যায় বাস্তবতায়, কয়েকটি বোকা মাছের গল্প।

এক সাধুবাবার বড় দিঘির মত একটি পুকুর ছিল। পুকুরের পাড়ে কতগুলি সারি-সারি তালগাছ ছিল, তাই পুকুরটি নাম হয় তালপুকুর। যেহেতু সাধুবাবা মাছমাংস খেতেন না, তাই অত্যন্ত সম্প্রীতির সাথে পুকুরে মাছগুলি বেড়ে উঠেছিল। সকল মাছগুলির মধ্যেই একটা সম্প্রীতি ভালবাসার বন্ধন ছিল।ছোট মাছকে ধরে যে বড় মাছেরা খেয়ে ফেলে, এ জাতীয় কোন মাৎস্যন্যায় ছিলো না পুকুরটিকে। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল সময়।

এক সাধুবাবার বড় দিঘির মত একটি পুকুর ছিল। পুকুরের পারে কতগুলি সাড়িসাড়ি তালগাছ ছিল, তাই পুকুরটি নাম হয় তালপুকুর। যেহেতু সাধুবাবা মাছমাংস খেতেন না, তাই অত্যন্ত সম্প্রীতির সাথে পুকুরে মাছগুলি বেড়ে উঠেছিল। সকল মাছগুলির মধ্যেই একটা সম্প্রীতি ভালবাসার বন্ধন ছিল।ছোট মাছকে ধরে যে বড় মাছেরা খেয়ে ফেলে, এ জাতীয় কোন মাৎস্যন্যায় ছিলো না পুকুরটিকে। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল সময়।  মাৎস্যন্যায় বাস্তবতায়,  কয়েকটি বোকা মাছের গল্প।   হটাৎ করে সেই অঞ্চল বন্যাবিধ্বস্ত হয়ে যায়। সকল পুকুরগুলিতেই বন্যার জল প্রবেশ করে। এই বন্যাবাহিত হয়েই পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে কিছু হিংস্র রাক্ষসী মাছের প্রবেশ ঘটে তালপুকুরে। রাক্ষসী মাছগুলি প্রথমে পুকুরের স্থানীয় মাছগুলোর সাথে মিলেমিশে থাকার ভান করে, কিন্তু গোপনে গোপনে জন্মগত অভ্যাসবশত একটি দুটি করে ছোট মাছগুলিকে খেতে থাকে।  একটি দু'টি করে ছোটমাছগুলিকে খাওয়ার বিষয়টি আস্তে আস্তে পুকুরে জানাজানি হয়ে যায়। পুকুরের স্থানীয় মাছগুলো রাক্ষসী বড় মাছগুলির পেটে নিজের সন্তান সন্ততি চলে যাওয়াকে নিজেদের ভাগ্য হিসেবেই মেনে নিতে থাকে । তারা এর জন্যে নিজের ভাগ্য এবং ভগবানকে দোষারোপ করতে থাকে। এভাবে সময় অতিবাহিত হতে হতে পুকুরের স্থানীয় মাছগুলির মধ্যে ভালবাসা, আন্তরিকতা লোপ পেতে থাকে। ধীরেধীরে একরকম জীবন্মৃত হয়ে যায় তারা। আস্তে আস্তে বিষয়টি সাধুর দৃষ্টিগোচর হয়। সাধুও এ অসহায় মাছগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে যায়। সাধুর এক মাড়োয়াড়ি সেবক ছিল। সে তখন বল্ল, "বাবা আপনি চিন্তা করবেন না। এ রাক্ষসী মাছগুলিকে সোজা করার ওষুধ আমার কাছে আছে।"যেই কথা সেই কাজ। মাড়োয়াড়ি সেবক তখন রাক্ষসী মাছগুলিকে আলাদা করতে সম্পূর্ণ পুকুরে এক জাল পাতেন। সকল মাছগুলিই জালের মধ্যে আটকা পরে যায়। প্রথমে মাছগুলি মনে করে সকল মাছকেই বুঝি জালে আটকে বাজারে বিক্রি করে দেয়া হবে। কিন্তু তারা আস্তে আস্তে বুঝতে পারে, এ জাল থেকে শুধুমাত্র রাক্ষসী মাছগুলিকেই আলাদা করে তুলে নেয়া হবে।  ঠিক তখনই ঘটে এক অভাবনীয় ঘটনা। রাক্ষসী মাছগুলি তখন শুরু করে দেয় স্বজাতি প্রচারণা, আমরা সবাই এই তালপুকুরের মাছ। পুঁটি, সিং, কৈ, চিংড়ী, রুই, কাতলা, পটকা সহ আমরা সকলেই মাছ। মাছই আমাদের একমাত্র পরিচয়। এই তালপুকুর আমাদের অস্তিত্ব। রাক্ষুসে মাছদের মায়া কান্না এবং সফল প্রচারণায় সাধারণ শান্তিপ্রিয় মাছগুলি ভুলে যায় যে, কাল পর্যন্ত এই রাক্ষসী মাছগুলি ছোটমাছ একটা দুটো করে খেয়ে তাদের শরীর পরিপুষ্ট করেছে। রাক্ষুসে মাছের সাথে জুটে যায় তাদের কিছু এজেন্ট। সুবিধাবাদী বাইন মাছ, যে কাদাতে থেকেও যার গায়ে একবিন্দু কাদা লাগে না। মানুষের মলমূত্রাদি খাদক ঘাউড়া মাছ, যারা নিজ স্বার্থে সব করতে পারে। এদের নেতৃত্বে থাকে এক পটকা বুড়ি মাছ। পটকা মাছটি পাগল হয়ে যায় রাক্ষুসে মাছদের রক্ষা করতে। রাক্ষসী মাছ এবং কিছু স্বার্থান্বেষী-তেলবাজ-আত্মঘাতী মাছের পাল্লায় পরে এবং তাদের নির্দেশ মতো পুকুরের সকল সাধারণত মাছগুলো তাদের পিছনে গড্ডালিকা প্রবাহে অংশগ্রহণ করে। সকলে সমন্বিতভাবে রাক্ষসী মাছকে পুকুর থেকে আলাদা করার জন্যে পাতা জালটি ছিন্নভিন্ন করে দেয়।  সাধুবাবার মাড়োয়াড়ি সেবকও বিরক্ত হয়ে সাধুবাবাকে বলে, "বাবা আমি এই সাধারণ মাছেদের কল্যাণে, তাদের রক্ষার্থে রাক্ষসী মাছদের আলাদা করতে চেয়েছি তাদের থেকে, কারণ প্রতিদিনই একটি দুটি করে ছোটমাছ রাক্ষুসে মাছদের পেটে চলে যাচ্ছ। কিন্তু সাধারণ মাছগুলি যদি নিজের ভালমন্দ না বোঝে তবে আমার কিছুই করার নেই। মধ্যেথেকে আমার লাখো টাকার জালটা সম্পূর্ণভাবে ছিড়ে নষ্ট হয়ে গেলো।" সাধুবাবা তখন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন," সবই কর্ম আর কর্মের ভবিতব্য বাবা, যার কর্ম তাকেই তার ফল ভোগ করতে হবে।আমরা কিছুই করতে পারিনা, শুধুমাত্র সৎপরামর্শ ছাড়া।" তালপুকুর থেকে সাধু এবং মাড়োয়াড়ি ভক্তের দৃষ্টি যখন সম্পূর্ণভাবে সরে যায় তখনই রাক্ষসী মাছগুলি আসল স্বরূপে এসে পূর্ণ উদ্যোমে সাধারণ মাছগুলিকে পেটে চালান করে দিতে থাকে। সবার আগে সাবার করে আত্মঘাতী পটকা মাছটিকে। এরপরে কালান্তরে শুধুমাত্র রাক্ষসী মাছগুলিই থাকে পুকুরে , আর সকল মাছই চলে যায় রাক্ষুসে মাছের পেটে। ভয়াবহ মাৎস্যন্যায়ের অভিঘাতে পরিসমাপ্তি ঘটে একটি শান্তিপ্রিয় পুকুরের কিছু সহজ-সরল-বোকা মাছেদের জীবন। শেষ হয়ে যায় একটি ইতিহাস, একটি গল্পের। রাক্ষুসে মাছগুলিও যে শান্তিতে ছিলো, তা নয়। সকল সাধারণ মাছগুলিকে পেটে গলাধঃকরণ করার পরে, যখন একটিও ছোটমাছ পুকুরে রইলো না, তখন রাক্ষসী মাছগুলি নিজেরাই নিজেদের খেতে শুরু করে। এর ধারাবাহিক পরিণতিতে ওরা নিজেরাও আস্তে ধ্বংস হয়ে যেতে থাকে। কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী  সহকারী অধ্যাপক,  সংস্কৃত বিভাগ,  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

হটাৎ করে সেই অঞ্চল বন্যাবিধ্বস্ত হয়ে যায়। সকল পুকুরগুলিতেই বন্যার জল প্রবেশ করে। এই বন্যাবাহিত হয়েই পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে কিছু হিংস্র রাক্ষসী মাছের প্রবেশ ঘটে তালপুকুরে। রাক্ষসী মাছগুলি প্রথমে পুকুরের স্থানীয় মাছগুলোর সাথে মিলেমিশে থাকার ভান করে, কিন্তু গোপনে গোপনে জন্মগত অভ্যাসবশত একটি দুটি করে ছোট মাছগুলিকে খেতে থাকে।
একটি দু'টি করে ছোটমাছগুলিকে খাওয়ার বিষয়টি আস্তে আস্তে পুকুরে জানাজানি হয়ে যায়। পুকুরের স্থানীয় মাছগুলো রাক্ষসী বড় মাছগুলির পেটে নিজের সন্তান সন্ততি চলে যাওয়াকে নিজেদের ভাগ্য হিসেবেই মেনে নিতে থাকে । তারা এর জন্যে নিজের ভাগ্য এবং ভগবানকে দোষারোপ করতে থাকে। এভাবে সময় অতিবাহিত হতে হতে পুকুরের স্থানীয় মাছগুলির মধ্যে ভালবাসা, আন্তরিকতা লোপ পেতে থাকে। ধীরেধীরে একরকম জীবন্মৃত হয়ে যায় তারা।
আস্তে আস্তে বিষয়টি সাধুর দৃষ্টিগোচর হয়। সাধুও এ অসহায় মাছগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে যায়। সাধুর এক মাড়োয়াড়ি সেবক ছিল। সে তখন বল্ল, "বাবা আপনি চিন্তা করবেন না। এ রাক্ষসী মাছগুলিকে সোজা করার ওষুধ আমার কাছে আছে।"যেই কথা সেই কাজ। মাড়োয়াড়ি সেবক তখন রাক্ষসী মাছগুলিকে আলাদা করতে সম্পূর্ণ পুকুরে এক জাল পাতেন। সকল মাছগুলিই জালের মধ্যে আটকা পরে যায়। প্রথমে মাছগুলি মনে করে সকল মাছকেই বুঝি জালে আটকে বাজারে বিক্রি করে দেয়া হবে। কিন্তু তারা আস্তে আস্তে বুঝতে পারে, এ জাল থেকে শুধুমাত্র রাক্ষসী মাছগুলিকেই আলাদা করে তুলে নেয়া হবে।
ঠিক তখনই ঘটে এক অভাবনীয় ঘটনা। রাক্ষসী মাছগুলি তখন শুরু করে দেয় স্বজাতি প্রচারণা, আমরা সবাই এই তালপুকুরের মাছ। পুঁটি, সিং, কৈ, চিংড়ী, রুই, কাতলা, পটকা সহ আমরা সকলেই মাছ। মাছই আমাদের একমাত্র পরিচয়। এই তালপুকুর আমাদের অস্তিত্ব। রাক্ষুসে মাছদের মায়া কান্না এবং সফল প্রচারণায় সাধারণ শান্তিপ্রিয় মাছগুলি ভুলে যায় যে, কাল পর্যন্ত এই রাক্ষসী মাছগুলি ছোটমাছ একটা দুটো করে খেয়ে তাদের শরীর পরিপুষ্ট করেছে।
রাক্ষুসে মাছের সাথে জুটে যায় তাদের কিছু এজেন্ট। সুবিধাবাদী বাইন মাছ, যে কাদাতে থেকেও যার গায়ে একবিন্দু কাদা লাগে না। মানুষের মলমূত্রাদি খাদক ঘাউড়া মাছ, যারা নিজ স্বার্থে সব করতে পারে। এদের নেতৃত্বে থাকে এক পটকা বুড়ি মাছ। পটকা মাছটি পাগল হয়ে যায় রাক্ষুসে মাছদের রক্ষা করতে। রাক্ষসী মাছ এবং কিছু স্বার্থান্বেষী-তেলবাজ-আত্মঘাতী মাছের পাল্লায় পরে এবং তাদের নির্দেশ মতো পুকুরের সকল সাধারণত মাছগুলো তাদের পিছনে গড্ডালিকা প্রবাহে অংশগ্রহণ করে। সকলে সমন্বিতভাবে রাক্ষসী মাছকে পুকুর থেকে আলাদা করার জন্যে পাতা জালটি ছিন্নভিন্ন করে দেয়।
সাধুবাবার মাড়োয়াড়ি সেবকও বিরক্ত হয়ে সাধুবাবাকে বলে, "বাবা আমি এই সাধারণ মাছেদের কল্যাণে, তাদের রক্ষার্থে রাক্ষসী মাছদের আলাদা করতে চেয়েছি তাদের থেকে, কারণ প্রতিদিনই একটি দুটি করে ছোটমাছ রাক্ষুসে মাছদের পেটে চলে যাচ্ছ। কিন্তু সাধারণ মাছগুলি যদি নিজের ভালমন্দ না বোঝে তবে আমার কিছুই করার নেই। মধ্যেথেকে আমার লাখো টাকার জালটা সম্পূর্ণভাবে ছিড়ে নষ্ট হয়ে গেলো।" সাধুবাবা তখন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন," সবই কর্ম আর কর্মের ভবিতব্য বাবা, যার কর্ম তাকেই তার ফল ভোগ করতে হবে।আমরা কিছুই করতে পারিনা, শুধুমাত্র সৎপরামর্শ ছাড়া।"
তালপুকুর থেকে সাধু এবং মাড়োয়াড়ি ভক্তের দৃষ্টি যখন সম্পূর্ণভাবে সরে যায় তখনই রাক্ষসী মাছগুলি আসল স্বরূপে এসে পূর্ণ উদ্যোমে সাধারণ মাছগুলিকে পেটে চালান করে দিতে থাকে। সবার আগে সাবার করে আত্মঘাতী পটকা মাছটিকে। এরপরে কালান্তরে শুধুমাত্র রাক্ষসী মাছগুলিই থাকে পুকুরে , আর সকল মাছই চলে যায় রাক্ষুসে মাছের পেটে। ভয়াবহ মাৎস্যন্যায়ের অভিঘাতে পরিসমাপ্তি ঘটে একটি শান্তিপ্রিয় পুকুরের কিছু সহজ-সরল-বোকা মাছেদের জীবন। শেষ হয়ে যায় একটি ইতিহাস, একটি গল্পের।
রাক্ষুসে মাছগুলিও যে শান্তিতে ছিলো, তা নয়। সকল সাধারণ মাছগুলিকে পেটে গলাধঃকরণ করার পরে, যখন একটিও ছোটমাছ পুকুরে রইলো না, তখন রাক্ষসী মাছগুলি নিজেরাই নিজেদের খেতে শুরু করে। এর ধারাবাহিক পরিণতিতে ওরা নিজেরাও আস্তে ধ্বংস হয়ে যেতে থাকে।
সহকারী অধ্যাপক,সংস্কৃত বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সভাপতি, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ।
মন্তব্যগুলো দেখুনমন্তব্যগুলো লুকান🙁